শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১ || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

যে বানর গান গায়

শেখ আনোয়ার

২১:৫৬, ২৪ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ২১:৫৭, ২৪ মার্চ ২০২৩

৯৬৬

যে বানর গান গায়

নিরীহ, ভীতু প্রকৃতির প্রাণী লেমুর। শরীরের তুলনায় এদের চোখ বেশ বড়। চোখ যেনো সব সময় জ্বলন্ত কাঠ কয়লার মতো সব সময় জ্বলতেই থাকে। ওদের চোখের দৃষ্টি যেমন তীক্ষ, শ্রবণশক্তিও তেমনই প্রখর। ‘আইআই’ প্রজাতির লেমুররা পচা গাছে হেঁটে বেড়ানো লার্ভার পায়ের শব্দ পর্যন্ত শুনতে পায়। রেকুনের মতো দেখতে আইআই লেমুরদের শিকারের একমাত্র অস্ত্র হলো হাড্ডিসার থাবা। এদের খুব পছন্দের খাবার হলো নারকেল আর আখ।

আইআই লেমুররা প্রায় ধ্বংসের পথে। প্রায় তিন দশক আগে, প্যারিসের ন্যাশনাল মিউজিয়ামের গবেষক এবং লেমুর পর্যবেক্ষণকারী জ্যাঁ জ্যাকুইস পিটার বলেছিলেন- মাদাগাস্কারে আইআই প্রজাতির লেমুর রয়েছে সব মিলিয়ে পঞ্চাশটির মতো। তিনি আশংকা প্রকাশ করেছিলেন, আইআই লেমুররা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। বর্তমানে এ প্রজাতির  দু’জোড়া লেমুর শুধু উত্তর ক্যারোলিনার ডিউক ইউনিভার্সিটির প্রাইমেট সেণ্টার এবং প্যারিসের ভিনেস চিড়িয়াখানায় রয়েছে। মাদাগাস্কারে আইআই লেমুর চোখে দেখতে পাওয়া এখন নিতান্তই ভাগ্যের ব্যাপারে হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

লেমুররা আসলে বানরদের মতোই। লেমুরদের প্রথম পূর্ব পুরুষের সন্ধান মিলেছে চল্লিশ মিলিয়ন বছর আগে। সোয়া’শ বছর আগে মাদাগাস্কার আফ্রিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে। আর আফ্রিকা থেকেই গাছের ডাল বা কাঠের গুড়িঁতে ভেসে হাজার মাইল লম্বা দ্বীপটিতে স্বল্প যে ক’টি স্তন্যপায়ীর প্রথম আগমন ঘটে, লেমুর তাদের একজন। মোটামুটিভাবে আটাশ প্রজাতির লেমুর রয়েছে মাদাগাস্কারে। সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে এগুলো আকারে কোনটা বড় হয়েছে, আবার কোনটা ছোট। কেউ স্বভাব পেয়েছে নি:সঙ্গচারীর, কেউবা হয়েছে সঙ্গলিপ্সু। 

মাউস লেমুরের কথাই ধরা যাক। এরা প্রকৃতিতে খুবই নি:সঙ্গচারী আর নিশাচর। ফলমুল, পোকা-মাকড় খেয়ে জীবন ধারণ করে। পাতা খেকো এক ধরনের লেমুর রয়েছে। ওদের গায়ের রঙ সাদায়-কালোয় মেশানো। আকারে ছোট শিশু বাচ্চাদের সমান। সারাক্ষণ গাছে গাছে, ঘুর ঘুর করে ঘুরে বেড়াতেই তাদের আনন্দ। নাক দিয়ে এক ধরনের অদ্ভূত শব্দ করে। যা এদের গান বলে বিবেচিত। রেড বেলি বা লাল পেটের লেমুররা শিফাকা নামের এক ধরনের পাতা আর ফল খেয়ে থাকে। পাতার গায়ে শিশির চেটে এরা তৃষ্ণা মেটায়। সারাদিনে একবার খাবার খেলেই ওদের দিন চলে যায়। ওরা সব সময় তিন থেকে ন’জন মিলে দল বেঁধে চলাফেরা করে। মাটিতে শত্রæ দেখলে  জোরে চিৎকার দিয়ে সঙ্গীদের হুশিয়ার করে দেয়।  

মাদাগাস্কারের জঙ্গলে ব্যাম্বু লেমুর নামে এক ধরনের বিশালদেহী লেমুর রয়েছে। যাদের প্রিয় খাবার বাঁশ আর ঘাস। প্রচুর খেতে পারে ওরা। ওদের জ্ঞাতি ভাই খুদে ব্যাম্বু লেমুরদের এখন আর দেখা মেলেনা। গবেষকদের ধারণা- পাঁচ পাউন্ড ওজনের এই লেমুর প্রজাতি শত বছর আগেই নির্বংশ হয়ে গেছে। 

বেশিরভাগ লেমুরই একবারে মাত্র একটি সন্তানের জন্ম দেয়। তবে বড় আকারের কোন কোন প্রজাতির লেমুরের সর্বাধিক পাঁচটি সন্তানের জন্ম দেয়ার রেকর্ডও রয়েছে। সন্তানদের দেখাশোনার ভার সাধারণত নিয়ে থাকে মা এবং খালারা। জন্মের এক মাসের মধ্যেই লেমুর বাচ্চা স্বনির্ভর হতে শেখে। লেমুররা নিজেদের প্রজাতির আত্মীয়-স্বজনদের চিনতে কখনও ভুল করে না। বানরের মতো লেমুরদেরও সামাজিক জ্ঞান খুব প্রখর। ওরা বুদ্ধিও রাখে বটে। তবে বানরের মতো যে কোন সমস্যা দ্রæত সমাধান করার চাতুর্য ওদের নেই।

এক সময় গরিলা সাইজের লেমুরও মাদাগাস্কারের বন-জঙ্গল দাপিয়ে বেড়াতো। দানব আকৃতির সেই লেমুর নিশ্চিহ্ন হয়েছে সেই কবে। পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম উপরাষ্ট্র মাদাগাস্কারের মানুষের প্রথম আগমনের পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত একশ’ চল্লি¬শ প্রজাতির লেমুর সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বর্তমানে মাদাগাস্কারের পূর্বের শহর রানোমাফানার ন্যাশনাল পার্কে এগার প্রজাতির লেমুরের বাস। আরও বেশ কিছু লেমুর এদেশের জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তবে এদের সংখ্যা খুবই কম। জীবন বিপন্ন হয়ে ওঠা বিচিত্র এই প্রাণীগুলো যাতে তাদের পূর্ব পুরুষদের মতো নিশ্চিহৃ না হয়ে যায় সেজন্যে মাদাগাস্কার সরকার প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক। এম.ফিল স্কলার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank