বুধবার   ২৭ আগস্ট ২০২৫ || ১১ ভাদ্র ১৪৩২ || ২৯ সফর ১৪৪৭

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

বায়োস্কোপের নেশায় আমায় ছাড়ে না

হৃদয়বীণা`র হৃদয়গ্রাহী পরিবেশনা, মুগ্ধ সকলেই

মাহমুদ মেনন, ভার্জিনিয়া, যুক্তরাষ্ট্র থেকে

২৩:১৮, ২৬ আগস্ট ২০২৫

বায়োস্কোপের নেশায় আমায় ছাড়ে না

হৃদয়বীণা`র হৃদয়গ্রাহী পরিবেশনা, মুগ্ধ সকলেই

বাহ! অসাধারণ! দারুন! বেশ ভালো! এই শব্দগুলোই একটু পর পর দর্শকসারি থেকে ভেসে আসছিলো। আর সাথে ছিলো- একেকটি পরিবেশনার পর মূহুর্মূহু করতালি।

সন্ধ্যাটি যে উপভোগ্য হয়ে উঠবে, সে ধারণা হয়তো সকলেরই ছিলো। সে কারণেই বোধ হয় ভার্জিনিয়ার আলেক্সান্দ্রিয়ার ন্যানি জে. লি রিক্রিয়েশন সেন্টারের রিচার্ড কফম্যান অডিটরিয়ামটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠেছিলো অনুষ্ঠান শুরুর আগেই। ২৪ আগস্ট রবিবার বিকেলে তারা উপভোগ করতে এসেছিলেন হৃদয়বীণা'র বাৎসরিক আয়োজন। ডিসি-মেরিল্যান্ড-ভার্জিনিয়ার বাংলাদেশি কমিউনিটির পরিচিত মুখগুলো দেখা গেলো দর্শক সারিতে। তবে আরও যারা পরিচিত, যারা এরই মধ্যে তাদের সাংস্কৃতিক দক্ষতা যোগ্যতার প্রমাণ দেখিয়েছেন নানাভাবে, মঞ্চে তারা অসাধারণ সব পারফরম্যান্স দিয়ে ভালোলাগায় ভরিয়ে তুললেন, তুলে নিলেন দর্শকের প্রশংসার সব উচ্চারণ।

অনুষ্ঠানের মূল থিম ছিলো- 'বায়োস্কোপের নেশায় আমায় ছাড়ে না'। সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, মানেই তা বিষয়বৈচিত্র্যে ভরা থাকবে! ছিলোও তাই। কিন্তু যা সকলের কাছে শ্রেষ্ঠ হয়ে ধরা দেয়, তা হলো এর আয়োজনের মান ও উপস্থাপনার নৈপুণ‍্য। অত্যন্ত গোছানো একটি অনুষ্ঠান। যার জন্য ধন্যবাদ এর আয়োজকদেরই প্রাপ্য।

নামকরণের প্রসঙ্গ টেনে উপস্থাপক অনুষ্ঠানের গোড়াতেই বলে দিলেন, বায়োস্কোপ তথা চলচ্চিত্রকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। পেছনের ব্যানারও সে কথাই বলছিলো। বায়োস্কোপের নেশায় আমায় ছাড়ে না- কথাটির দুই পাশে লাইট- ক্যামেরা- অ্যাকশন লেখাও সে ধারনাই দেয়। কিন্তু অনেক কিছুই তো হয় ব্যানার সর্বস্ব। হলফ করে বলা যায়- এই আয়োজন তেমনটা ছিলো না। মঞ্চে এদিন যা কিছু হলো তা স্রেফ মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করার মতোই।

শুরুতেই থিম সংয়ের ওপর শিশু-কিশোরদের পরিবেশনা। তারা মঞ্চ জুড়ে জমিয়ে তুললো রঙের মেলা… কেউ চুড়িওয়ালা, কেউ সাপুড়ে, কেউ খেলনার ফেরিওয়ালা। সব ছাপিয়ে ছিলো বায়োস্কোপওয়ালা। তাকে ঘিরেই শিশুরা নাচলো, নানা অঙ্গভঙ্গি, আর অভিব্যক্তিতে দর্শকদের মুগ্ধ করলো। গানের দলের গান চলছিলো- তোমার বাড়ির রঙের মেলায় দেখে এলাম বায়োস্কোপ, বায়োস্কোপের নেশায় আমায় ছাড়েনা। আয়োজনের প্রতিপাদ‍্যের সাথে মিলিয়ে এর চেয়ে ভালো শুরু আর কিই হতে পারে!

বায়োস্কোপ- মেলায় শুরু হলো- এরপর শুধু সিনেমা আর সিনেমা। কেউ অভিনয় করছেন তো, কেউ গাইছেন। কেউ নাচছেন তো কেউ বাজাচ্ছেন। সবমিলিয়ে এক অনন্য ঝংকার।

সেরা চলচ্চিত্রের সেরা চরিত্রগুলোর দেখা মিললো মঞ্চে উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে। সংলাপ পাঠের বিপরীতে অভিনয় পর্ব দিয়ে।

কেউ হাজির হয়েছিলেন শৈবাল-শর্বরী জুটি হয়ে, কেউবা গুপী গাইন-বাঘা বাইন হয়ে। আবার অন্য দুজন এসেছিলেন পথে হলো দেরীর জয়ন্ত-মল্লিকা হয়ে। সকলেই ছিলেন অভিনয়ে পাকা। সংলাপ ছুঁড়তে ছিলো না জড়তা। বরং ছিলো তা হৃদয়গ্রাহী। তাই তো গোলাপী আলাপী সেজে 'সংসার যেনো আমার একার' এই সংলাপের অভিনয়ে কুঁড়িয়ে আনা গাছের ডালগুলো মঞ্চে ছুড়ে মেরে কুঁড়িয়ে নিলেন দর্শক প্রশংসা। তাদের করতালিই বলে দিলো সে অভিনয় ছিলো কতটা নিখুঁত, কতটা উপভোগ্য।

কিংবা যারা নাচলেন ছায়াছবির গানে। তাঁরাও মঞ্চ মাতিয়ে তুললেন ক্ষণে ক্ষণে। বাড়ির মানুষ কয় আমায় তাবিজ করেছে... কিংবা আমি আছি থাকবো... অথবা যদি সুন্দর একটা মুখও পাইতাম, ঢাকার শহর আইসা আমার আশা পুরাইছে কিংবা ভালো আর মন্দের দ্বন্দ্ব জানি না...কে ভালো কে মন্দ যে তার খবর রাখি নার মতো গানগুলোয়।

নাচ কিংবা অভিনয় ছাড়াও স্রেফ গান দিয়ে মাতিয়ে তোলা মূহূর্তগুলোও ছিলো দারুণ উপভোগ্য.... চলচ্চিত্রের কত কালজয়ী সেসব গান- সারেং বউ'র ওরে নীল দরিয়া, আমার দেরে দে ছাড়িয়া, গোলাপী এখন ট্রেনে'র হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ এসব শুনে দর্শক ততক্ষণে পুরোই নস্টালজিক। কিন্তু তারই মাঝে যখন 'ওরে বাংলাদেশের মেয়ে রে তুই হেইলা দুইলা যাস...একবারে যে ঘুইরা তাকাস... লাগ্গে ঝাক্কাস...পদ্মা নদীর ইলিশ খাইয়া রুপ খানা কি ঝকঝকে বানাস' এই গান বেজে উঠলো আর মঞ্চ মাতিয়ে নাচলো একটি বাংলাদেশের মেয়ে- সে নাচে যেনো সকলেই অতীত ছেড়ে বর্তমানে ফিরলেন।

ভাবছেন শুধুই বাংলা গান আর নাচ? না তা নয়! পুরো আয়োজনে একাকার হয়ে উঠেছিল হলিউড, বলিউড, টালিউড, ঢালিউড!

টাইটানিকের সেই বিখ‍্যাত গান ‘মাই হার্ট উইল গো অন’ এর হৃদয়কাড়া সুর কিংবা মামা মিয়া’র মিউজিকের তালে তালে পাশ্চাত্য ঢংয়ের সাথে বাংলাদেশি নাচের মুদ্রার মিশ্রনে মনকাড়া নাচের পারফরম্যান্স মঞ্চটাকে মাতিয়ে তুললো, আর দর্শকসারিতে লাগলো আনন্দ দোলা।

দেবদাসের চন্দ্রমুখী সেজে নাচের দল মঞ্চ মাতিয়ে একই সাজ পোশাকেই তারা নেচে গেলো থ্রি ইডিয়টের জানে নেহি দেঙ্গে তুঝে…। একটা উপস্থাপনায় তাল-লয়, সুরের ঝংকার, নুপুরের নিক্কনের সাথে তার নিজস্ব যে একটা শক্তি থাকে তা এই উপস্থাপনা থেকে দর্শক স্পষ্টই উপলব্ধি করতে পারবে।

শুধু কি নাচের শক্তি, গানের শক্তিও দর্শকের হৃদয়কে দোলা দিয়ে যেতে থাকে।

গানের সুরে কখনো মঞ্চ আনন্দে ভেসে ওঠে- হলদি বাটো মেন্দি বাটো, বাটো ফুলের মৌ। তারই সাথে সাথে নাচে বিয়ের সাজে সেজে আসা কনে আর তার সখীরা!

আবার কখনো মঞ্চ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে রোম‍্যান্স- আমি চেয়ে চেয়ে দেখি সারাদিন, কিংবা বিরহ- ওপারে থাকবো আমি, তুমি রইবে এপারে’র মতো গানগুলো পরিবেশনার মধ‍্য দিয়ে।

আবার যখন, তু মেরে জোহরা জোভি, ম‍্যায়তো মালুম নেহি পরিবেশিত হয় তখন মঞ্চ জেগে ওঠে সুরের লহরীতে ।

আর সুরের সাথে পরাণের সকল দরদ মিলিয়ে যখন পরিবেশিত হয়, আমার সোনার ময়না পাখি, কোন বা দোষে গেলি চইলারে… তখন দর্শক সারির মন গুমরে ওঠে!

তবে মুজরা পরিবেশনার কথা না বললেই নয়! ঝলমলে পোশাক সজ্জায় মঞ্চ আলোকিত করে নারী-পুরুষের দলগত পরিবেশনা সত‍্যিই দর্শকমুগ্ধতা পেয়েছে।

এসবের মাঝে কোন ফাঁকে ঘড়ির কাটা বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টায় পৌঁছে গেলো তা ঠাহর করা গেলো না। অনুষ্ঠান শেষ হলো… কিন্তু দর্শক-শ্রোতা সঙ্গে করে নিয়ে গেলো এক দারুণ সন্ধ্যার অনুরণন।
Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)

আরও পড়ুন

Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
পরবাস বিভাগের সর্বাধিক পঠিত