ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রিকদের শেষ চিহ্ন [ভিডিও স্টোরি]
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রিকদের শেষ চিহ্ন [ভিডিও স্টোরি]
![]() |
ছবির মতো এককোণে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে হলুদরঙের একটি বর্গাকৃতির ঘর। গাছ-গাছালির ভিতর দিয়ে মাথা উঁচু করে ঘরটি যেনো নিজের কিছু কথা বলতে চায়। যেন বলতে চায়- আমার আছে কিছু ইতিহাস- আমিও এক সম্মৃদ্ধ সময়ের সাক্ষী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র-টিএসসির ভিতরে এই হলুদ ঘরটি কি চোখে পড়ে, সেখানে আড্ডায়-আনন্দে মেতে থাকা মানুষগুলোর? হয়তো পড়ে, হয়তো পড়ে না। কিন্তু অনেকেরই জানা নেই এটি গ্রিক মেমোরিয়াল বা গ্রিকদের সমাধিস্থল। ১৮০০-১৮৪০ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত এই সমাধি সৌধ স্থাপত্যকলারও এক অনন্য নিদর্শন। মুঘল আমলে সম্পদে ও সৌন্দর্য্যে সমৃদ্ধ হয়ে উঠছিল ‘শহর ঢাকা’। এরপর যখন ব্রিটিশরা এলো তাদের চোখ ছিলো ঢাকার ওপর। আসে গ্রিকরাও। তাদের একটি কমিউনিটি গড়ে ওঠে ঢাকায়।
ইতিহাস বলছে, ১৭৭০ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যে দুই শতাধিক গ্রিকের বাস ছিলো ঢাকায়। পাট, চুন, লবন ও কাপড়ের ব্যবসা ছিলো তাদের । ব্যবসার জন্য এখানে স্থায়ী বসবাসের চেষ্টাও ছিলো। তবে আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়াতে পারেননি অনেকে। ইতিহাস জানাচ্ছে, সর্বশেষ ১৮৪০ সালেও ঢাকায় ১২ টি গ্রিক পরিবার ছিল। এরপর ধীরে ধীরে কমিউনিটির বাকিরা হয়তো নিজ দেশেই ফিরে যান। কারো মৃত্যু হয়। তাদের স্মৃতিতেই গড়ে তোলা হয় এই সমাধিসৌধ।
তথ্যমতে একটি গ্রিক পরিবারের ৯ সদস্যদের সমাধি এখানে। বর্গকার এ স্থাপনায় প্রাচীন গ্রিসের ডরিক রীতি অনুসরণে তৈরি এই সৌধ। চার কোণের দেয়াল সংক্ষিপ্ত ফাঁকা রেখে একমাত্র প্রবেশদ্বার।
সমাধিসৌধের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো এপিটাফটি সুলতানা আলেকজান্ডারের। যার মৃত্যু হয় ১৮০০ সালে। সমাধিস্থলে গোল করে বসানো এপিটাফগুলোর ঘড়ির কাটায় দ্বিতয়টি থিয়োডোসিয়ার। এরপর একে একে রয়েছে- মাদালিয়েন- সোহিয়া জর্ডানের। শেষটি নিকোলাস ডিমেট্রাস এলিসের। এই সমাধি প্রস্তরটি সর্বশেষ সংস্কার কারা হয় ১৯৯৭ সালে, ঢাকায় গ্রিক হাই কমিশনারের অর্থায়নে।
প্রবেশ পথে একটি মার্বেল ফলক। যেখানে গ্রিক ভাষায় লেখা- ‘যাদের তুমি (ঈশ্বর) বেছে নিয়েছ এবং সঙ্গে নিয়েছ, তারা ভাগ্যবান’। সৌধের দেয়ালে ৯টি কালো পাথরের লিপি রয়েছে যার ৫টি গ্রিক ভাষায় এবং বাকী ৪টি ইংরেজি ভাষায় লেখা। ইতিহাসবেত্তা মুনতাসীর মামুন তার 'কর্নেল ডেভিডসন যখন ঢাকায়' বইতে উল্লেখ করেছেন, কর্নেল ডেভিডসন ১৮৪০ সালে ঢাকা সফরের সময় এই সমাধিস্থল পরিদর্শন করেন। ডেভিডসনের ভ্রমণকাহিনিতেই ঢাকায় গ্রিকদের এই সৌধটির উল্লেখ পাওয়া যায়।
গ্রিকদের এই স্মৃতিচিহ্ন বলে দেয়, অসাম্প্রদায়িক চেতনার এই বঙ্গভূমিতে একসময় ছিল সব জাতির এক নিরাপদ নীড়।
দেখুন ভিডিও স্টোরি

আরও পড়ুন
- বিড়াল ভয়ংকর!
- আপনি কি একজন এমবিভার্ট?
- মাটি খাওয়া মানুষ
- বিষাক্ত পাতাবাহার গাছ
- পটকা মাছ কেন বিষাক্ত?
- বঙ্গবন্ধুর যেসব অনন্য উক্তি জাগিয়ে তোলে প্রাণশক্তি
- নাগলিঙ্গম ফুলের সৌরভে...
- বিশ্বব্যাপী গাছে গাছে জুতা ঝুলানো হয় কেন?
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রিকদের শেষ চিহ্ন [ভিডিও স্টোরি]
- টাইটানিক ডোবার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেন বিজ্ঞানী!