শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

মাছের মেয়ে ডুগং

শেখ আনোয়ার

২১:৩৬, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ২১:৩৮, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

৬৮৮

মাছের মেয়ে ডুগং

সাগরের একধরনের প্রানীর নাম ডুগং। কলম্বাস যখন আমেরিকা আবিষ্কারের জন্য জাহাজে গোটা পৃথিবী ভ্রমণ করছিলেন তখন তার সঙ্গীরা ডুগংকে দেখে মৎস্যকন্যা ভেবেছিলেন। এদের বিজ্ঞান সম্মত নাম ডুগং ডুগন। এদের দেখা  মেলে পূর্ব গোলার্ধের গ্রীষ্ম মন্ডলীয় অঞ্চলের সাগরের কিনারে এবং নদীর মোহনায়। লোহিত সাগর, আফ্রিকার পূর্ব উপক‚ল ও বঙ্গোপসাগরের ক’টি দ্বীপের নিকটবর্তী এলাকায় ওদের হরহামেশাই দেখা যায়। এছাড়াও ওদের দেখতে পাওয়া যায় শীলঙ্কার উত্তর পশ্চিম সাগর তীর ও অস্ট্রেলীয়ার উত্তরে অবস্থিত সাগর তীরে। 

অবশ্য সীল এর  সঙ্গে ডুগং এর কিছুটা আকৃতিগত পার্থক্য রয়েছে। পিপার মতো গোলাকার এবং মেদবহুল নাদুস নুদুস চেহারা। পূর্ণবয়স্ক ডুগং আড়াই থেকে চার মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। আর ওজন ত্রিশ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। মেয়ে ডুগং অবশ্য লম্বায় খাটো এবং ওজনে কিছুটা কম হয়ে থাকে। সারা শরীর সূক্ষè লোমে ঢাকা থাকে। লোমের রঙ ধূসর। সামনের দিকে দু’পাশে বৈঠা বা দাঁতের মতো দু’টো পাখনা রয়েছে। তিমির মতোই পানির সমান্তরালভাবে ছড়ানো লেজের পাখনা বেশ চওড়া। তবে মাঝখানে একটু খাঁজ থাকে। খাঁজের দু’ প্রান্ত সুঁচালো। লেজের গড়ন অবশ্য মাছের মতো হলেও ঠিক তিমির মতো নয়। 

ডুগং এর ঘাড় বলে কিছু নেই। এদের মাথা বেশ বড়। মুখের গড়ন অনেকটা বুলডগের মতো একটু থ্যাবড়া। উপরের মাংসল ঠোঁট, ঘোড়ার মুখের মতো নিচের ঠোঁট ছাপিয়ে আরও নিচে নেমে এসেছে। ঠোঁটের উপরে, গালের দু’পাশে, অনেকগুলো শক্ত সংবেদনশীল গোঁফ রয়েছে। উপরদিকে নাকের দুটো ছিদ্র রয়েছে। এগুলো ইচ্ছে মতো বন্ধ করা যায়। আবার খোলা যায়। চোখ দু’টো যেনো ছোট ছোট দু’টো গুলির মতো। কান দু’টো কেবলই গোলাকার ছিদ্র মনে হয়। এদের কোন বাইরের কান নেই। 

ডুগং বেশ ধীর গতি সম্পন্ন এবং কিছুটা অলস প্রকৃতির প্রাণী। মাঝে মাঝে একলা, আবার মন চাইলে জোড়ায় জোড়ায় থাকতে ভালোবাসে। পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই প্রাণী খুবই প্রেম প্রবণ। একে অন্যের প্রতি খুবই অনুরক্ত থাকে। তবে কখনো কখনো তিনটি অথবা ছয়টি ডুগং একসঙ্গে দল বেঁধে বিচরণ করতে দেখা যায়।

ডুগং মাঝে মাঝে পানির উপরে ভেসে উঠে খুব তাড়াতাড়ি শ্বাস নেয়। তারপর নাকের ছিদ্র দু’টো পর্দা দিয়ে বন্ধ করে ।  এরপর ডুব সাঁতার দিয়ে পানির তলায় চলে যায় এবং ইতস্তত ঘুরে বেড়ায়। সাগরের শৈবাল এবং ঘাস পাতা এদের প্রিয় খাবার। এরা পানির তলায় সামুদ্রিক ঘাস পেলে তা  গোড়াসহ তুলে ফেলে এবং তাকে পানির মধ্যেই নাড়া চাড়া করে বালি মাটি ঝেড়ে ফেলে। তারপর সামান্য চিবিয়েই তা গিলে খায়।  আবার অনেক সময় সেগুলো নিয়ে পানির উপরে ভেসে উঠে এবং সাগর সৈকতে ্একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সেগুলো জমা করে রাখে। সারাদিন ইতস্তত ঘুরে খাবার জোগার করে আর রাতের বেলা, তীরে উঠে জমিয়ে রাখা ওসব খাবার ধীরে সুস্থে খায়। বাচ্চা দেয়ার জন্য ওদের নির্দিষ্ট কোনো সময়কাল নেই। বছরের যে কোন সময় বাচ্চা হতে পাড়ে। মেয়ে ডুগং প্রায় এগারো মাস  পেটে বাচ্চা ধারণ  করার পর, একটি মাত্র বাচ্চা জন্ম দেয়। পূর্ণ বয়স্ক মেয়ে ডুগং এর বুকে মেয়েদের মতো দু’টো সুগঠিত স্তন এবং স্তনবৃন্ত থাকে। বাচ্চা জন্ম দেয়ার পর পরই বুকে দুধ আসে। মেয়ে ডুগং পানির উপরে ভেসে ওঠে, মৎস্য কন্যার মতো। বাচ্চাকে পেলে কাছে নিয়ে দুধ খাওয়ায়, আদর করে। আবার কখনো কখনো পিঠে নিয়ে ভেসে বেড়ায়। এজন্য ডুগং দেখে অনেক সময় মৎস্য কন্যা বলে ভুল করে থাকেন ডুবুরীরা।

শেখ আনোয়ার: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক। এম.ফিল স্কলার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank