বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০ || ১৬ রমজান ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা! অদৃশ্য কর্মীদের দেখাও, তাদের কথা শোনো

সাই-টেক ডেস্ক

১২:৩৭, ২৮ মার্চ ২০২১

১০৮৫

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা! অদৃশ্য কর্মীদের দেখাও, তাদের কথা শোনো

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পেছনে রয়েছে অদৃশ্যকর্মীর বড় অবদান। ছবি: বিবিসি থেকে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পেছনে রয়েছে অদৃশ্যকর্মীর বড় অবদান। ছবি: বিবিসি থেকে

এই যে আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইংরেজিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টলিজেন্স বলে গালভরা নাম আওড়াই আর সংক্ষেপে এআই বলে প্রযুক্তিবিদদের অতিমাত্রায় পন্ডিতি দেখি তার পেছনে যে থাকে একগাদা মানুষের গতরখাটার কাজ তা কি আমরা জানি? হ্যাঁ নামি ও দামি প্রযুক্তিবিদরা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বটে, কিন্তু এর পেছনে থাকে হাজার হাজার স্বল্প-মজুরির শ্রমিকের বড় অবদান। যারা দিনরাত কাজ করে ড্যাটাগুলোকে শ্রেণিভুক্ত করে লেবেলিং করে দেন- যেটাই এই পদ্ধতির মূল সঞ্জিবনী শক্তি।  ধীরে ধীরে এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এই অদৃশ্য কিংবা ভূত-কর্মীরা কি বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন না?

আমরা যখন মেশিনকে আরও বেশি করে মানুষের আচরণ করার প্রশিক্ষণ দিয়ে চলছি, আমরা বস্তুত মানুষের কাজগুলোকেই আরো বেশি যন্ত্রের মতো করে তুলছি, এমনটাই মত দিয়েছেন বিবিসি ওয়ার্ল্ডের টেকনোলজি রিপোর্টার জেন ওয়েকফিল্ড। এক প্রতিবেদনে তিনি লিখেছেন, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অনেক কিছুই যখন এই এআই সিস্টেম দখলে কিংবা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিচ্ছে তখন আমাদের জানতে হবে এর পেছনে ওইসব মানবশক্তির কী কী ভূমিকা রয়েছে?

অ্যামাজন মেকানিকাল টার্ক'র কথাই ধরুন। এমন ক্রাউড সোর্সিংয়ে এখন সুপ্রতিষ্ঠিত। অনলাইন রেটেইলের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিস যার মালিকানায়। এছাড়াও রয়েছে সামাসোর্স, ক্রাউডফ্লাওয়ার ও মাইক্রোওয়ার্কার্স। এরা সকলেই বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে রিমোটেড কর্মী ভাড়া করে সেই সব কাজ করিয়ে নেয়, যা কম্পিউটার এখনই করতে পারছে না। এই কাজ হতে পারে যে কোনো কিছু- ইমেজের নামকরণ করে কম্পিউটার ভিশনের অ্যালগরিদম উন্নতকরণ, প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণে সহায়তা এমনকি ইউটিউব টুইটারের কনটেন্ট মডারেশন পর্যন্ত। 

এমটার্ক নামেই সকলে চেনে অ্যামজনের কোম্পানিটিকে। অষ্টাদশ শতকের একটি দাবার কোট অটোমেশনের জন্য প্রথম নাম করে এই প্রতিষ্ঠান, যা পরে জানা যায়, এর পেছনেও রয়েছে এক মানব সম্পদের ব্যবহার। এই প্ল্যাটফর্মটি একটি ক্রাউডসোর্সিং মার্কেটপ্লেস হিসেবেই তৈরি। যা মেশিন-লার্নিংয়ের প্রতিটি স্তরে খরচ ও সময় বাঁচানোর মোক্ষম উপায়। এটি একটি মার্কেটপ্লেস যেখানো প্রতাশীরা কর্মীদের একটি কাজ করার জন্য অনুরোধ করে। আর অধিকাংশ কর্মীই এমটার্ককে একটি খণ্ডকালীন কাজের ক্ষেত্র বলে মনে করে কিংবা সখের বসে কাজ হিসেবে ধরে, কাজটি কপছন্দ করার কিংবা কতক্ষণ করবে কি করবে না সেসবে ক্ষেত্রে যে ফ্লেক্সেবিলিটি রয়েছে সেটা উপভোগ করে, এডব্লিউএস অন্তত সেটাই সামনে আনতে চায়। কিন্তু শেরি স্ট্যানলিরর কথাই ধরুন না। এমটার্কের সঙ্গে তার কাজের অভিজ্ঞতা ছয় বছরের। আর এটা বলা চলে তার পূর্ণকালীন কাজের যায়গা। এখানে কাজ করেই তার তিন সন্তানের লালন-পালন, কিন্তু এখানে তাকে নিজেকে একটি বৃহৎ যন্ত্রের ক্ষুদ্রাকায় খাজ ছাড়া আর কিছুই বলে মনে হয় না। 

বিবিসির জেন ওয়েকফিল্ডকে শেরি বলছিলেন, "ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় এই টার্কিং স্বল্প কিছু কাজের সুযোগের একটি। আর আমরা টার্ক কর্মীরা এইটুকু কাজের জন্যই গর্বিত। যাই হোক না কেনো, আমরা অ্যামাজনের সঙ্গে কাজ করি। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি হিসেবে অ্যামাজনও আমাদের মতো কর্মীদের কাজের ওপর নির্ভর করে। তারা কখনোই কাজের শর্তগুলো নিয়ে প্রশ্নমাত্র তোলে না।"

শেরি স্ট্যানলি বলছিলেন, কাজ নিয়ে কথা বললে কি হয়, সে নিয়ে তারা এক ধরনের ভয়েও থাকেন। কাজ হলে মজুরি আছে, কাজ কম করলে মজুরি কম, বেশি করলে বেশি, এটাই তাদের জীবন। 

তবে এই কাজের কোনো ধরাবাধা দিক নেই। হরেক কাজই তাদের করতে হয়। ইমেজ ট্যাগিং, স্মার্ট অ্যাসিস্ট্যান্স যেমন অ্যালেক্সাকে আঞ্চলিক ডায়ালেক্টগুলো বুঝতে সহযোগিতা করা ইত্যাদি। 

কিছু বিষয়ে কর্মীদের কোনো ধারনাই থাকে না। যা এই কর্মীরা জানতে চান। যেমন-

- কেনো তাদের কাজগুলো বাতিল করা হয়। কেনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করার পরে কারো কারো কাজ ঠিক কোন মানে না পৌঁছার কারণে বাদ দেওয়া হলো। 
- কোনো একটি অ্যাকাউন্ট কেনো হঠাৎ, কোনো নোটিশ ছাড়াই বন্ধ কিংবা স্থগিত করে দেওয়া হয়। এই সব সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার পথ কি? কার কাছে অভিযোগ করতে হবে। 
- কেনো কেউ কেউ কোনো কোনো কাজের অতি অল্প মূল্য ধরছে এবং করিয়ে নিচ্ছে ইত্যাদি। 

শেরি বলেন, টার্ক কর্মীরা কাজের প্রক্রিয়াটিতে আরও বেশি স্বচ্ছতার দাবি রাখে। আমাদের কাজগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত কে, কি, কেনো এবং কোথায় এর উত্তর জানা জরুরি। কেনো কাজ বাতিল হলো, আমরা যে কাজ করছি তা দিয়ে কি হচ্ছে, কেনো আমাদের অ্যাকাউন্ট বাতিল করে দেওয়া হয়, যখন কোনো উপাত্ত তৈরি করার পর তার বিনিময়ে অর্থ পরিশোধ করা হয় না, তখন কোথায় যায় সে উপাত্তগুলো আর সর্বোপরি কার কিংবা কাদের জন্যই আমরা কাজ করছি।  

টার্কঅপটিকন নামে অবশ্য একটি ব্যবস্থা রয়েছে, যার মাধ্যমে কর্মীরা নিজেদের মধ্যে কিছুটা যোগাযোগ করতে পারে, এতে তাদের অদৃশ্যমানতা কিছুটা ঘোচে। শেরি জানান, তারা কিছু তহবিল সংগ্রহ করছে যাতে তা দিয়ে টার্কঅপটিকনে তারা কর্মীদের নিয়ন্ত্রিত একটি সার্ভার তৈরি করতে চায়, যেখানে নিজেদের মধ্যে কর্ম-পরিবেশ, শর্তাদি, এসব নিয়ে আলোচনা করতে পারে।

এ বিষয়ে অ্যামাজনের সঙ্গেও কথা বলেছে বিবিসি ওয়ারর্ল্ড। এতে অ্যামাজন জানিয়েছে, ২০১৯ সালে তারা একটি ফিচার চালু করে যাতে কর্মীরা কাজের অনুরোধারীদের সম্পর্কে তথ্য পেতে পারে, তাদের কাজের মূল্য হার জানতে পারে, এবং মূল্য পরিশোধ গড়-পড়তা সময় নিয়েও ধারণা নিতে পারে। 

অ্যামাজনের মতে, কাজ বাতিল করার হার ১ শতাংশেরও কম। আর বৃহত্তর পরিসরে কাজের সুযোগ করে দেয় এমটার্ক, যার ফলে সাধারণ পর্যায়েও অর্থ আয়ের সুযোগ তৈরি হয়, দাবি তাদের। 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
সাই-টেক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত