শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ || ৫ বৈশাখ ১৪৩১ || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

নিখোঁজ হওয়া বিমানের যত ইতিহাস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

২২:৩১, ৯ জানুয়ারি ২০২১

আপডেট: ২২:৪৫, ৯ জানুয়ারি ২০২১

১৭০৮

নিখোঁজ হওয়া বিমানের যত ইতিহাস

মালয়েশিয়া এয়ারলাইনের বোয়িং ৭৭৭
মালয়েশিয়া এয়ারলাইনের বোয়িং ৭৭৭

বিমান ভ্রমণ নতুন কারও কাছে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। রানওয়েতে বিমান চলতে চলতে যখন হঠাৎ করে উড়াল দেয় তখন মনের অবস্থা হয় অনিশ্চিত গন্তব্যে ছুটে চলার মতো। সফলভাবে অবতরণের পরেই শান্ত হয় মন। পরের বার থেকে অবশ্য সবকিছু স্বাভাবিকই হয়ে ওঠে। বোর্ডিং পাস নিয়ে বিমানে চড়ার মতো সেই অধীর আগ্রহ থাকেনা। তারচেয়ে বড় বিষয়, নিরাপত্তা নিয়ে দূর হয় দুশ্চিন্তা। 

সড়ক কিংবা নৌপথের চেয়ে তুলানমূলক নিরাপদই মনে করা হয় আকাশপথকে। কিন্তু মাঝে মাঝেই এমন কাহিনী ঘটে যা কাঁপিয়ে তোলে আত্মা। দুপাশে পাখা লাগানো বিশাল আকারের এক যান্ত্রিক পাখি যখন হয়ে যায় গায়েব তখন এমন ভয় পাওয়াই স্বাভাবিক। 

উড়োজাহাজের ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। আকাশে উড়াল দেওয়ার পর বিমানের আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। জানা যায়নি কি ঘটেছে সেই বিমান বা যাত্রীদের ভাগ্যে। সর্বশেষ এমনই এক বিমানের তথ্য পাওয়া গেলো শনিবার (৯ জানুয়ারি)। 

এদিন ইন্দোনেশিয়ায় ৬২ জন আরোহী নিয়ে নিখোঁজ হয় একটি যাত্রিবাহী উড়োজাহাজ। শ্রিবিজয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি জাকার্তা এয়ারপোর্ট থেকে উড্ডয়নের চার মিনিটের মাথায় নিখোঁজ হয়। আরোহীদের মধ্যে ৫৬ জন যাত্রী ও ৬ জন ক্রু ছিলেন। পরে অবশ্য বিমানটি সাগরে বিধ্বস্ত হয়েছে েএমন খবর মেলে।

ফ্লাইট ১৯

বিমান নিখোঁজ হওয়ার মতো রহস্যময় ঘটনা প্রথমবারের মতো ঘটেছিল আজ থেকে আরও ৭৫ বছর আগে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে যত গল্প প্রচলিত আছে তার শক্তিশালি ভীত গড়ে দেয় ফ্লাইট ১৯ এর পাঁচ বিমান। 

অনুশীলন করতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর বিমানগুলো ফ্লোরিডার নেভাল এয়ার স্টেশন ফোর্ট লডেরডেল থেকে যাত্রা শুরু করেছিল ১৯৪৫ সালের ৫ ডিসেম্বর। 

অনুশীলন শেষ করে ফেরার পথে আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করে। তাদের বিমানগুলোতে যান্ত্রিক গোলোযোগ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে ফ্লাইট ১৯ এর বৈমানিকরা বুঝতে পারেন যে, তারা হয়তো আর ফিরতে পারবেন না। তাদেরকে খুঁজে বের করার জন্য একাধিক বিমান এবং জাহাজকে সংকেত পাঠানো হয়।

এসময় বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে যাওয়ার পরপরই তারা যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেন। বিমানগুলোতে থাকা ১৪ জন বৈমানিকের কারোরই আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। 

এসময় তাদের উদ্ধার করতে যাওয়া বিবিএম-৫ বিমানও নিখোঁজ হয়ে যায়। এ ঘটনা নিয়ে পরবর্তীতে কয়েকবার তদন্ত হয়েছে। কিন্তু কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। 

এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ০৭২

১৯৪৮ সালের ৩১ জুলাই ফ্রান্সর ফোর্ড ডি ফ্রান্স থেকে গ্রিনিচ সময় ১৪ টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে যায় এয়ার ফ্রান্সের ফ্লাইট ০৭২। বিমানে ৪০ জন যাত্রী ও ১২ জন ক্রু ছিল। পশ্চিম আফ্রিকার পোর্ট অ্যাটিনে বিমানটি পৌঁছানোর কথা ছিল গ্রিনিচ সময় পহেলা আগস্ট রাত ১ টায়। কিন্তু মাঝরাতেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিমানটির। 

পরে আজোরসের একটি রেডিও স্টেশনের মাধ্যমে জানা যায়, কেপ ভার্দে দ্বীপপুঞ্জের ১১০০ নটিক্যাল মাইল উত্তরে সর্বশেষ বিমানটি তাদের রাডারে এসেছিল। 

তারপর থেকেই বিমানটি অনুসন্ধানে নেমে পড়ে ফ্রান্স। এছাড়া আমেরিকা এবং পর্তুগালও বিমান অনুসন্ধানে সহায়তা করে। 

বিমান নিখোঁজ হওয়ার দুদিন পর ৩ আগস্ট ফরাসি আবহাওয়া জাহাজ লিভার জানায় তারা একটি বার্তা পেয়েছে। পরবর্তীতে পোয়ের্তা রিকোর ১৫৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে পাওয় যায় বিমানের দুটি সিটের সন্ধান। বলা হয় বিমানের ধ্বংসাবশেষ ও পাওয়া গেছে। যদিও অনেকে এ তথ্য উড়িয়ে দিয়েছেন।

এঘটনায় পরবর্তীতে ল্যাটোকোয়ার ৬৩৩১ মডেলের বিমান  বানানোই বন্ধ করে দেয় ফ্রান্স।

ডগলাস সি-১২৪ ফ্লাইট

বিমান দূর্ঘটনায় সবচেয়ে রহস্যজনক ঘটনা এটি। বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়ার পর রক্ষা পায় সব যাত্রী। সিগনাল পায় অন্য বিমানও। কিন্তু তেল কম থাকায় ঘটনাস্থলে এসেও ফিরে যায় উদ্ধারকারী জাহাজ। পরবর্তীতে উদ্ধার করতে এসে দেখা যায় বিমান ও যাত্রী সবাই নিশ্চিহ্ন!

ঘটনা ১৯৫১ সালের ২৩শে মার্চ। সেদিন ৫৩ জন যাত্রী নিয়ে নিউ মেক্সিকো থেকে ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর ডাগলাস সি-১২৪ গ্লোবমাস্টার-টু নামের একটি বিমান। মাঝপথে আটলান্টিক মহাসাগরের উপরে থাকা অবস্থায় বিমানটির কার্গোতে আগুন ধরে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সমুদ্রের উপরেই বিমানটি অবতরণ করান পাইলট। নিরাপদেই তিনি বিমানটিকে অবতরণ করাতে সক্ষম হন।

বিমানটিতে সব যাত্রীর জন্য যথেষ্ট সংখ্যক জীবন রক্ষাকারী ভেলা ছিল। সেসব ভেলার প্রতিটিতে পর্যাপ্ত খাবার-দাবার, রেডিও সহ বিভিন্ন ধরনের জীবন রক্ষাকারী সামগ্রী ছিল। যাত্রীরা ভেলাগুলোতে উঠে রেডিওতে তাদের উদ্ধার করার আহ্বান জানান। 

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাত্রীদেরকে ভেলার উপরে অবস্থানরত দেখতে পায় মার্কিন বিমান বাহিনীর বি-৫০ বিমান। কিন্তু জ্বালানী কম থাকায় বিমানটি ফিরে যায়। পরেরদিন উদ্ধার করতে গিয়ে ৫৩ জন যাত্রী কিংবা বিমান কোনোটিরই আর চিহ্নই পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলে একটি পোড়া কাঠের টুকরা এবং ব্রিফকেস ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। পরবর্তী দিনগুলোতে সে অঞ্চলে ব্যাপক তল্লাশি চালানো হলেও কোনো যাত্রীর খোঁজ পাওয়া যায়নি। 

মালয়েশিয়া এয়ারলাইন বোয়িং ৭৭৭

বিমান নিখোঁজের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘটনা এটি। মালয়েশিয়া এয়ারলাইনের যাত্রীবাহী বিমান ফ্লাইট ৩৭০, ২০১৪ সালের ৮ই মার্চ কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্ট থেকে যাত্রা শুরু করে বেইজিং এয়ারপোর্টর উদ্দেশ্যে। কিন্তু মাঝ পথেই ২২৭ জন যাত্রী এবং ১২ জন ক্রু সহ নিখোঁজ হয়ে যায়।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে নিখোঁজ হওয়ার কোন কারণই পাওয়া যায়নি।  যাত্রাপথ পরিবর্তনেরও কোন তথ্য মিলেনি। 

এক পর্যায়ে বিমানটির সন্ধান পেতে একাধিক রাষ্ট্রের উদ্যোগে শুরু হয় অনুসন্ধান। প্রায় তিন বছর ধরে পরিচালিত অনুসন্ধান কার্যক্রমে আকাশপথ, জলপথ এবং পানির নিচে বিভিন্ন ধাপে এই অনুসন্ধান কার্যক্রমে সর্বমোট ব্যয় হয় আনুমানিক ১৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

ভারতীয় বিমান বাহিনীর এএন-৩২

২০১৬ সালের ২২ জুলাই। এদিন সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে চেন্নাইয়ের তাম্বারাম এয়ার ফোর্স স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে ভারতীয় বিমান বাহিনীর আন-৩২ বিমানটি। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের পোর্ট ব্লেয়ার ছিল তার গন্তব্য।

কিন্তু বেলা ৯টা ১২ মিনিটে চেন্নাইয়ের ২৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের উপরে থাকা অবস্থায় এটি রাডারের সাথে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। প্লেনটিতে ৬ জন ক্রু ও ২৩ জন সামরিক সদস্যসহ মোট ২৯ জন যাত্রী ছিল। 

মোট ১৬টি জাহাজ এবং ৬টি বিমান দুই মাস অনুসন্ধান করেও বিমান বা তার যাত্রীর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ১৫ই সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধানের সমাপ্তি ঘোষণা করে সব যাত্রীকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)

আরও পড়ুন

Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
বিশেষ সংবাদ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত