শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ধারাবাহিক অনুবাদ উপন্যাস

১৯৮৪ ।। মূল: জর্জ অরওয়েল ।। অনুবাদ: মাহমুদ মেনন [পর্ব-১৪]

মাহমুদ মেনন, সাংবাদিক ও শিক্ষক

১৪:৫৩, ২ জুলাই ২০২১

আপডেট: ১১:০৫, ১ সেপ্টেম্বর ২০২১

১০৬৮

ধারাবাহিক অনুবাদ উপন্যাস

১৯৮৪ ।। মূল: জর্জ অরওয়েল ।। অনুবাদ: মাহমুদ মেনন [পর্ব-১৪]

১৯৮৪, মূল- জর্জ অরওয়েল, অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
১৯৮৪, মূল- জর্জ অরওয়েল, অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

[পর্ব-এক] [পর্ব-দুই] [পর্ব-তিন] [পর্ব- চার] [পর্ব- পাঁচ] [পর্ব-ছয়] [পর্ব- সাত] [পর্ব-আট] [পর্ব-নয়] [পর্ব-দশ] [পর্ব-এগারো] [পর্ব-বারো] [পর্ব-তেরো]


পর্ব- চৌদ্দ

অধ্যায় আট

পথের নিচে কোথাও থেকে কফির পোড়া গন্ধ এসে সড়কময় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিক্টরি কফি নয়, প্রকৃতপক্ষে কফি বলতে যা বোঝায়, তা-ই! অজান্তেই থমকালো উইনস্টন। দুই সেকেন্ডের মতো হবে, এরই মধ্যে সে শৈশবের বিস্মৃতপ্রায় সেই জগতটিতে ফিরে গেলো। আর ঠিক তখুনি এখানে কাছে-ধারে কোথাও সপাটে দরজা লাগানোর একটা শব্দে কফির গন্ধটা কেটে গেলো। যেনো গন্ধটাও ছিলো ঠিক শব্দের মতো ইথারের কম্পন। 

ফুটপাত দিয়ে কয়েক কিলোমিটার হেঁটেছে সে। পায়ের ঘায়ের অংশে তখন ব্যাথায় টনটন করছে। গত তিন সপ্তাহে কমিউনিটি সেন্টারে সান্ধ্যকালীন কর্মসূচিতে এটি তার দ্বিতীয় অনুপস্থিতি। স্রেফ অপরিনামদর্শীরাই এমনটা করতে পারে। কারণ হাজিরার বিষয়ে সতর্ক নজরদারি চলে। নীতিগতভাবেই পার্টির সদস্যদের জন্য বাড়তি সময় বলে কিছু নেই। বিছানায় কাটানোর সময়টুকু ছাড়া অন্য কোনও সময়ই একা হয়ে যাওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। কাজ, খাওয়া আর ঘুমের বাইরে সাধারণ কিছু বিনোদনমূলক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া চলবে। একাকীত্বের আভাস দেয় এমন কিছু করা, এমনকি একা একা হেঁটে যাওয়াও কিছুটা বিপদের। নিউস্পিকে একটা শব্দ আছে ‘ওউনলাইফ’- যার এরা মানে দিয়েছে খামখেয়ালিপনা। কিন্তু আজ বিকেলে মন্ত্রণালয় থেকে বের হয়ে এলে এপ্রিলে মৃদুমন্দ বাতাস তাকে আহ্বান জানালো। আকাশটাকে এতটা উষ্ণনীল এবছর আর একদিনও দেখা যায়নি। তার মনে এলো কমিউনিটি সেন্টারে শোরগোলে সন্ধ্যার দৃশ্য, ঘর্মাক্ত হয়ে ঘিনঘিনে পরিবেশ চলবে খেলা, বকবকানি, ভাষণ, জিনের মদিরায় তেলতেলে সৌহার্দ্যতার ক্যাচক্যাচানি, এসবই অসহ্য ঠেকে তার কাছে। ভাবাবেগে আপ্লুত সে বাস-স্টপের উল্টোপথ ধরলো, পা বাড়ালোর গোলক ধাঁধার লন্ডন নগরীর পথে। প্রথমে দক্ষিণে সেখান থেকে পূবে এরপর আবারও উত্তরে। অজানা-অচেনা সড়কগুলোতে নিজেকে হারিয়ে ফেলে, পথ কোন দিকে যাচ্ছে, কোথায় গন্তব্য তা নিয়ে এতটুকু না ভেবে স্রেফ ঘুরে বেড়ালো।

‘আশা যদি কিছু থাকে,’ ডায়রিতে লিখেছিলো সে, ‘তা ওই প্রোলদের মধ্যেই প্রোথিত’, রহস্যাবৃত সত্য আর স্পষ্ট বোধগম্য অযৌক্তিকতা নিয়ে সে কথাগুলোই বার বার তার মনের মাঝে ফিরে ফিরে আসছিলো। তখন সে উত্তর-পূর্বদিকের একটা ধূসর-রঙা বস্তিতে। এক সময় এখানেই ছিলো সেন্ট প্যানক্র্যাস স্টেশন। কুচি পাথর বিছানো একটি সড়ক ধরে হাঁটছিলো। দুপাশে সারি সারি দ্বি-তল বাড়ি, ফুটপাত লাগোয়া ভাঙাচোরা দরজাপথগুলো ইঁদুরের গর্তসদৃশ। এখানে সেখানে নোংরা ঘিনঘিনে কাদাপানি, পাথরগুলোও কাদায় জড়ানো। সবগুলো দরজাপথই অন্ধকার, নিচে সরু গলিপথ থেকেও দুই দিকে ছড়িয়ে শাখাপথ। বিষ্ময়কর সংখ্যায় মানুষের গিজগিজ- শরীরে যৌবন ফুটিয়ে তুলে গাঢ় লিপস্টিক মাখা মেয়েদের ঘোরাঘুরি, তাদের সঙ্গে তরুণ-যুবকদের ঘেঁষাঘেঁষি, রূপ আর যৌবন উপচে দিয়ে নারীরা হেলেদুলে যেনো দেখাচ্ছে- নারীতো এমনই, বুড়ো হাবড়ারা চওড়া পা ফেলে এদিক সেদিক ঘুরছে, নোংরা নগ্নগায়ের শিশুরা কাদায় খেলছে, আর তাদের মায়েদের ক্রুদ্ধ চিৎকারে শিউরে শিউরে উঠছে। বাড়িগুলোর এক-চতূর্থাংশেরই জানালা ভাঙা, তাতে বোর্ড লাগানো। উইনস্টনের দিকে অধিকাংশেরই নজর নেই, তবে দু-একজন কৌতুহল নিয়ে তাকাচ্ছে বটে। দুই দৈত্যাকায় নারী তাদের ইষ্টকরঙা হাত অ্যাপ্রোনের ওপর ভাজ করে রেখে দরজাপথের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। কাছে দিয়ে যেতে যেতে সেই কথপোকথনের কিছুটা শুনতে পায় উইনস্টন:

‘আরে হ্যাঁ, আমি তারে বলেছি, তুমি যা বলছো সেটাই সঠিক। কিন্তু তুমি যদি আমার জায়গায় থাকতে, আমি যা করেছি তুমিও একই কাজ করতে। সমালোচনা করা সহজ। কিন্তু আমার যে সমস্যা তেমন সমস্যার মধ্যে দিয়ে তুমি যাচ্ছো না।’
‘ঠিক’ বললো অন্যজন। ‘তুমি ঠিক বলেছো, এটাই ঠিক’। 

উচ্চস্বরের কথপোকথন হঠাৎই থেমে গেলো। ঠিক যখন ওদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো উইনস্টন তখন দুই নারীই বৈরী নিরবতায় তাকে দেখছিলেন। ঠিক বৈরীতার নয়, প্রতিহিংসা আর ভয়ের এক ধরনের মিশ্রণ সে দৃষ্টিতে। কোনো অপরিচিত জন্তু দেখে নিমিষে শক্ত হয়ে যাওয়ার মতো। পার্টির নীল ওভারঅল পরিহিতদের কারো এদিকটায় খুব একটা দেখা মেলে না। তাছাড়া, সুনির্দিষ্ট কোনো কাজ না থাকলে এসব এলাকায় বিচরণ খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজও নয়। টহলপুলিশের নজরে পড়ে গেলে ওরা থামাবে। ‘তোমার কাগজপত্র দেখতে পারি, কমরেড? এখানে তোমার কি কাজ? কাজ কখন শেষ হয়েছে? এটা কি তোমার বাড়ি ফেরার পথ?’- এমন এমন সব প্রশ্ন চলতেই থাকবে। কোনও নিয়মমাফিক পথে বাড়ি ফিরতে হবে এমনটা বলা নেই: তবে থট পুলিশের দৃষ্টি কাড়তে এটুকু অস্বাভাবিকতাই যথেষ্ট।

হঠাৎ গোটা সড়ক জুড়ে এক ধরনের উত্তেজনা শুরু হল। চারিদিকে চিৎকার চ্যাঁচামেচি। মানুষগুলো খরগোশের মতো ছুটতে ছুটতে ঢুকে পড়ছে দরজাপথ দিয়ে। উইনস্টনের ঠিক সামনে দিয়ে এক যুবতী লাফিয়ে পড়লো সড়কের ওপর, দ্রুত কোলে তুলে নিলো কাদায় মাখামাখি হয়ে খেলায় রত শিশুটিরে। অ্যাপ্রনের ভেতরে দ্রুত লুকিয়ে ফের লাফ দিয়ে ঢুকে পড়লো দরজা পথে। চোখের পলকেই যেনো ঘটে গেলো সবকিছু। কনসার্টিনার মতো দেখতো কালো স্যুট পরা এক লোক পাশের গলি থেকে রেরিয়ে উপরপানে উত্তেজিত দৃষ্টি ফেলে উইনস্টনের দিকেই ছুটে আসছিলো। আর ‘স্টিমার! স্টিমার!’ বলে চিৎকার করছিলো।

উইনস্টনকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘দেখো গাভ’নার! মাথার উপরে ধামাকা! শুয়ে পড়ো তাড়াতাড়ি!’

রকেট বোমাকে কি কারণেই যেনো লোকে ‘স্টিমার’ বলে। ধপাস করে মুখগুজে শুয়ে পড়লো উইনস্টন। এসব ক্ষেত্রে প্রোলদের আশঙ্কাই ফলে যায়। মনে হয় ওদের যেনো কোনও এক অন্তর্নিহিত ক্ষমতা রয়েছে যা দিয়ে অন্তত কয়েক সেকেন্ড আগেই ধরে ফেলে রকেট বোমা আসছে। শব্দের গতির চেয়ে রকেট দ্রুত গতিতে ছোটে তারপরেও।

হাতদুটো দিয়ে যতটা সম্ভব মাথা ঢেকে রেখেছে উইনস্টন। বিকট শব্দে কিছু একটা ফুটপাতে ঝাঁকি তুললো। তার পিঠের ওপর আঘাত হেনে আছড়ে পড়ছে কতকিছু। যখন উঠে দাঁড়ালো দেখলো কাছের একটি জানালার কাচের ভাঙা ভাঙা টুকরো তার সারা গা থেকে ঝড়ে পড়ছে। 

হাঁটতে শুরু করলো উইনস্টন। বোমাটি পড়েছে সড়ক থেকে ২০০ মিটার দূরে। সেখানে বেশকিছু ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। কালো একটা ধোঁয়ার কুণ্ডলি আকাশে উঠে পড়েছে, আর তার নিচ দিয়ে আস্তর কণাগুলো মেঘসদৃশ হয়ে উড়ছে। ততক্ষণে ধ্বংসাবশেষের ওপর ভীড় জমে গেছে মানুষের। তার সামনে ফুটপাতের ওপরই স্তুপ হয়ে পড়ে আছে এক গাদা পলেস্তারা, যার ঠিক মাঝখানে চোখে পড়লো কড়া লাল একটা কিছু। কাছাকাছি গিয়ে দেখলো ওটি উড়ে আসা একটি হাত, কবজির কাছে কেটে রক্ত ঝরছে। ওই অংশটুকু ছাড়া হাতের বাকি অংশ আস্তরের ধুলো জমে সাদা হয়ে আছে।

লাথি দিয়ে ওটি নর্দমার ভেতর ছুঁড়ে দিলো সে, এরপর ভিড় এড়িয়ে ডান দিকের একটি পার্শ্বসড়কে ঢুকে পড়লো। তিন থেকে চার মিনিটের মধ্যে বোমাবিধ্বস্ত এলাকা থেকে বাইরে বেরিয়ে গেলো, আর ওই সড়কের নোংরা ঘিনঘিনে জীবন আবারও স্বাভাবিক গতিতে চলতে শুরু করলো, যেনো কিছুই হয়নি। তখন প্রায় আটটা বাজে, মদের দোকানগুলো (ওরা বলে পাব), প্রোলরা যেখানে ঘন-ঘনই যায়, ক্রেতায় ভরে উঠলো। এর নোংরা নড়বড়ে দরজাগুলো অবিরাম খুলছে-বন্ধ হচ্ছে, ভক ভক করে ছুটে আসছে প্রসাব, কাঠের গুঁড়া আর টক বিয়ারের মিলিত গন্ধ। কৌনিকভাবে তৈরি একটি বাড়ির সামনে ঘন হয়ে দাঁড়িয়ে তিনজন। মাঝের জন হাতে একটি ভাজ করা খবরের কাগজ ধরে আছে আর দু’পাশের দুজন তার ঘাড়ের ওপর দিয়ে চোখ ফেলে পড়ছে। মুখের অভিব্যক্তি বোঝা যাবে এমন দূরত্বে পৌঁছার আগেই, উইনস্টন ওদের নিমগ্নতাটা ধরে ফেললো। অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কোনও খবর তারা পড়ছে। তখনও সে কিছুটা দূরে, ঠিক তখনই তিনজনের মধ্যে ঝগড়া বেঁধে গেলো এবং দুজনের মধ্যে ভয়ানক তর্কাতর্কি শুরু হলো। অবস্থা এতটাই সঙ্গীণ হয়ে উঠলো যে মনে হচ্ছিলো যেকোনো মূহূর্তেই একজন অন্যজনকে ঘুষি বসিয়ে দেবে।
 
‘তোমার কানে যায় না, আমি কি বলছি? বলছি, গত চৌদ্দ মাসে বিজয়ী হয়েছে এমন একটি নাম্বারও সাত দিয়ে শেষ হয়নি!’
‘হ্যাঁ কানে যায়! তো কি হয়েছে!’
‘আমি বলছি ছিলো না! আমার সঙ্গে বাড়ি চলো, দেখবে গত দুই বছরের সবগুলো নাম্বার একটা কাগজে লিখে রেখেছি। ঘড়ির হিসাবে নিয়ম করে লিখেছি। আর আমি তোমাকে নিশ্চিত করছি, একটা নাম্বারও সাত দিয়ে শেষ হয়নি।’
‘আরে, সাত জিতেছে! আমিও মোটামুটি নিশ্চিত করেই বলছি তোমাকে। চার কিংবা সাতেই শেষ হয়েছে নাম্বারটি। এইতো গত ফেব্রুয়ারিতে- ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে হবে।’
‘ফেব্রুয়ারি না তোমার নানী!, সবকিছু কাগজে-কলমে হিসাব রেখেছি। আমি তোমাকে বলছি- একটি নাম্বারও...’
‘আরে থামো তো তোমরা!’ এবার মুখ খুললো তৃতীয় জন।

এই ঝগড়ার কেন্দ্র রয়েছে লটারি। ওদের ছাড়িয়ে প্রায় ত্রিশ মিটারের মতো পার হয়ে পেছনো তাকালো উইনস্টন। তখনো তর্ক চলছে, একই তীব্র-তারস্বরে। লটারির পুরস্কার ঘোষণা হয় প্রতি সপ্তায়, এ নিয়ে প্রোলদের মধ্যে আগ্রহ ভীষণ। মিলিয়ন মিলিয়ন প্রোল হবে, যারা তাদের বেঁচে থাকার উপজীব্য হিসেবে এই লটারিকেই বেছে নিয়েছে। এতেই তাদের হর্ষ, এতেই বিষাদ, এতেই মূঢ়তা, এতেই মুগ্ধতা, এতেই সান্ত্বনা, এতেই উদ্দীপনা। বিষয় যখন লটারি, তখন অতি অশিক্ষিত মানুষটি, যে পড়তে লিখতে পর্যন্ত জানে না, সেও পাক্কা হিসাবি, বিষ্ময়কর স্মৃতিশক্তির ধারক। একটি বিশাল গোষ্ঠী স্রেফ এই লটারির সিস্টেম, ভাগ্যগণনা, আর ভাগ্যকবচ বেচেই বেঁচে আছে। এই লটারির সঙ্গে উইনস্টনের কোনো যোগসাজশ নেই, ওটা প্রাচুর্য মন্ত্রণালয় দেখে। তবে সে জানে (পার্টির সবাই জানে) পুরস্কার জেতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনও একটি কাল্পনিক নাম্বার। ছোট ছোট অংকের পুরস্কারগুলো হয়তো কেউ কেউ পায়, বড় পুরস্কারের বিজয়ীদের কেউ চেনে না। আসলে তাদের কোনও অস্তিত্বই নেই। ওশেনিয়ার একাংশের সঙ্গে অন্য অংশের কোন বাস্তবিক আন্তঃযোগাযোগ না থাকায় বিষয়টি নিশ্চিত করা কঠিনও কিছু নয়।
 
তারপরেও আশা যদি কিছু থেকে থাকে তা ওই প্রোলদেরই আছে। আপনাকে ঠিক লেগে থাকতে হবে। ওদের কথায়ই মনে হবে ওরা আশাবাদী। আর ফুটপাতে উল্টো দিক থেকে হেঁটে আসা ওই মানব সন্তানগুলোর চেহারাই আপনার মধ্যে এই বিশ্বাস বদ্ধমূল করে দেবে।
 
এবার যে সড়কটিতে পা ফেললো সেটি নিচের দিকে নেমে গেছে। মনে হলো, এদিকটাতে একসময় থাকতো সে। মূল সড়কটিও এখান থেকে কাছেই। সামনে কোথাও থেকে কথাবার্তার শব্দ আসছে। রাস্তাটি একটি কড়া বাঁক নিয়েই একটি পায়েচলা পথে মিশলো আর সেখান থেকে আরেকটি গলিতে ঢুকে চোখে পড়লো নেতিয়ে যাওয়া কিছু সব্জির ডালা নিয়ে তখনও বসে আছে দোকানিরা। জায়গাটি চিনে ফেললো উইনস্টন। এই পথ ধরে মূল সড়কে যাওয়া যায়, আর পাঁচ মিনিটেরও পথ হবে না, নিচের দিকে পরের বাঁকেই সেই ভাঙারির দোকানটি যেখান থেকে সে একটি নোটবুক কিনেছিলো, যেটি এখন তার দিনপঞ্জি। অদূরেই ছোট একটি রকমারি দোকান আছে, ওখান থেকে কেনা হয়েছিলো একটি কলমদানি আর কালির দোয়াত। 
 
পা ফেলতে গিয়েও একটু থমকালো। রাস্তার উল্টোদিকে একটি নোংরা ছোট পাব। ধুলোর আস্তরে জানালাগুলো মনে হচ্ছে বরফে ঢাকা পড়েছে। দেখলো বয়সের ভারে কুঁজো তবে বেশ শক্ত-সামর্থ, সাদা গোঁফে মুখ ঢাকা এক বৃদ্ধ নড়বড়ে কপাট ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন। উইনস্টন দাঁড়িয়ে দেখছিলো, তার মনে হচ্ছিলো এই লোকের বয়স এখন আশি, আর বিপ্লবের সময় অবধারিতভাবেই তার মধ্যবয়স। এই বুড়োর মতোই কিছু মানুষ পূঁজিবাদের বিনাশের তথ্য নিয়ে এখনো বেঁচে আছে। পার্টিতেই এমন লোক পাওয়া যাবে না, যারা বিপ্লবের আগের সম্পর্কে ধারণা রাখে। অপেক্ষাকৃত জ্যেষ্ঠ প্রজন্মের অধিকাংশকেই পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের মহাশুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়ায় হাপিস করে দেওয়া হয়েছে। আর গুটিকয় যারা টিকে গেছে তারা অনেক আগেই বুদ্ধিবৃত্তিক আত্মসমর্পন করে বেঁচে আছে। আর কেউ যদি এখনো শতাব্দীর গোড়ার অংশে যা কিছু ঘটেছে তা সত্য করে বলার যোগ্যতা নিয়ে বেঁচে থাকে, সে হবে প্লোলদেরই কেউ। হঠাৎ করে ইতিহাস বই থেকে ডায়রিতে টুকে রাখা সেই অনুচ্ছেদটি মনে পড়লো উইনস্টনের। আর একটা পাগলামোও তাকে পেয়ে বসলো। সে এই পাবে যাবে, বুড়োর সাথে খাতির জমাবে, আর তার কাছে নানা কথা জানতে চাইবে। সে তাকে বলবে:‘আপনার ছেলেবেলার কথা বলুন। সেই দিনগুলো কেমন ছিলো? এখনকার চেয়ে ভালো ছিলো নাকি খারাপ?’ 

নিজেকে ভীত হয়ে পড়ার সময় না দিয়েই সরু রাস্তাটি চট করে পার হয়ে গেলো। কাজটি পাগলামো বৈ কিছু নয়। প্রোলদের সঙ্গে কথা বলা, সুঁড়িখানায় যাওয়া এগুলো নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তবে নজরদারি এড়িয়ে পার পেয়ে যাবেন এমনটা ভাবা ভুল। টহলদাররা এসে পড়লে তাকে মাতাল হয়ে যেতে হবে, তবে তাতেই ওরা বিশ্বাস করবে বলে মনে হয় না। দরজা ঠেলে ঢুকতেই টক বিয়ারের তীব্র গন্ধটা যেনো মুখের ওপর ঝাপটা মারলো। তার ভেতরে পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার চেচামেচির শব্দ অর্ধেকে নেমে এলো। না তাকিয়েও বুঝে নিতে পারে, সবার আগ্রহী চোখ আটকে আছে তার নীল ওভারঅলে। উল্টোদিকে যে গোল চাকতিতে বাণ নিক্ষেপের খেলা চলছিলো তাও অন্তত ত্রিশ সেকেন্ডের জন্য থমকে গেলো। বৃদ্ধ লোকটি ততক্ষণে বারের সামনে দাঁড়িয়ে বারম্যানের সঙ্গে ঝগড়ায় জড়িয়েছে। যুবক বারম্যানটির লম্বা, মোটা, আংটাকৃতির নাক, পেশিবহুল হাত। আশেপাশে অন্যরা গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে ঝগড়া দেখছে। 

তোমাকেতো ভদ্রভাবেই বলেছিলাম, বলো বলিনি? ঝগড়াটে ভঙ্গিমায় কাঁধ ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললো বুড়ো। তুমি বললে, এক পাইঁট মাপের মগ নেই। সুরিখানায় এসে এও শুনতে হলো!
‘পাইঁট মগ আবার কী জিনিষ?‘ আঙুলের মাথাগুলো কাউন্টারে ঠেসে একটু ঝুঁকে পড়ে বললো বারম্যান। 
‘সুঁড়িখানায় কাজ করো অথচ জানো না পাইঁট কি! এক পাইঁট হচ্ছে কোয়ার্টারের আধা, আর চার কোয়ার্টারে এক গ্যালন। তোমাকে বোধ হয় বর্ণমালা শেখানো শুরু করতে হবে।’ 
‘জন্মেও শুনিনি ওসব হিসাব,’ একটু গলা নামিয়ে বললো বারম্যান। ‘লিটার আর আধা লিটারের হিসাব। এর বাইরে আমাদের কাছে আর কোনও মাপ নেই। সামনের তাকে গ্লাস রাখা আছে।’ 
‘আমি চাই এক পাইঁট,’ জোর গলায় বললো বুড়ো। ‘তুমি সহজেই আমাকে দমাতে পারবে না। বয়সকালে আমরা এইসব ফালতু লিটারের মাপে মদ খাইনি।’
‘তুমি যখন যুবক ছিলো আমরা তখন গাছের মাচানে বাস করতাম’ আশেপাশে অন্য খদ্দেরদের দিকে চোখ ঘুরিয়ে এনে তবেই বললো বারম্যানটি।
চারিদিকে হা-হা হাসির তোড় ছুটলো। এতে উইনস্টন ঢোকার পর যে অস্বস্তি দেখা দিয়েছিলো সেটা উবে গেলো। সাদা খ্যাংড়ামুড়া দাড়ির বৃদ্ধচেহারাটি গোলাপি হয়ে উঠলো। গজগজ করতে করতে উল্টো ঘুরে উইনস্টনের সঙ্গে ধাক্কা খেলো সে। উইনস্টন আলতো করে হাত দিয়ে ধরে ফেললো।
‘আমি কি তোমাকে মদ খাওয়াতে পারি?’ বললো সে।
‘তুমি ভদ্রলোক,’ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো বুড়ো। মনে হলো উইনস্টনের নীল ওভারঅলে তখনো তার চোখ পড়ে নি। ‘পাইঁট!’ কড়া চোখে বারম্যানের দিকে তাকিয়ে উচ্চারণ করলো বুড়ো। ‘তোকে ব্যাটা এক পাইঁট ধোলাই লাগানো দরকার!’

কাউন্টারের নিচে রাখা বালতির পানিতে দুটি মোটা গ্লাস চুবিয়ে এনে আধা লিটার পরিমান কড়া-বাদামি বিয়ার ঢাললো বারম্যান। প্রোলদের পাবে কেবল বিয়ারই মেলে। এরা জিন পান করুক এমনটা কাম্য নয়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে জিন মেলে তাদের নাগালের মধ্যেই। চাকতির ওপর বাণ নিক্ষেপের খেলা ততক্ষণে ফের জমে উঠেছে, আর বারের অনেকেরই আলোচনার মূলে ফিরেছে লটারির টিকিট। উইনস্টনের উপস্থিতি এক দণ্ডে ভুলে গেলো সবাই। জানালার ধারে পাতা তাসের টেবিল, ওখানে বসলে বুড়োর সঙ্গে নিশঙ্ক কথা বলা যাবে কেউ শুনে ফেলার ভয় কম। কাজটা ভীষণ কঠিন কিছু হতে চলেছে, তবে এই পাবে যে কোনো টেলিস্ক্রিন নেই তা রুমে ঢুকে প্রথমেই নিশ্চিত হয়ে নিয়েছে সে। 

‘ব্যাটা আমাকে একটা পাইঁট দিতে পারলো না’ তখনও গজড়াচ্ছে বুড়ো। তবে ততক্ষণে লিটার মাপের গ্লাসেই তার মন মজেছে। 
‘আধা লিটারে মন ভরে না, আবার পুরো এক লিটার বেশি হয়ে যায়। দামের কথা না হয় বাদই দাও! ব্লাডারেওতো চাপ পড়ে!’
‘যুবক বয়সে যা দেখেছেন তার চেয়ে অনেক পরিবর্তন দেখছেন, নাকি?’ প্রথম সুযোগেই কথা পাড়লো উইনস্টন।
 
বুড়োর মলিন নীল চোখ দুটো বাণ খেলার বোর্ড থেকে গোটা বার ঘুরে পুরুষদের দরজায় স্থীর হলো, যেনো এই সুড়িখানার পরিবর্তনটাই ছিলো তার অন্যতম প্রত্যাশা। 
‘বিয়ার এখনকার চেয়ে অনেক ভালো ছিলো,’ অবশেষে বললো বুড়ো। ‘আর সস্তাও! যখন যুবক ছিলাম, আমরা বলতাম হালকা বিয়ার- চারপেন্সে এক পাইঁট মিলতো। তবে তা অবশ্যই যুদ্ধের আগে।’
কোন যুদ্ধ ছিলো সেটা? প্রশ্ন উইনস্টনের। 
‘সবগুলো যুদ্ধ,’ ভাসাভাসা উক্তি বুড়োর। বলতে বলতে গ্লাসটি তুলে নিলো, আর কাঁধ দুটি ফের ঝাঁকি দিয়ে সোজা করে নিলো আর ‘তোমার সুস্বাস্থ্য কামনায়!’ বলে মগটি বাড়িয়ে উইশ করলো একবার।

এরপর তার চিকন গলদেশের তীক্ষ্ণকণ্ঠা (অ্যাডাম অ্যাপেল) বিস্ময়করভাবে দ্রুত ওঠানামা করলো কয়েকবার। তাতেই খালি হয়ে গেলো বিয়ারের গ্লাস। উইনস্টন উঠে বারের দিকে গেলো এবং আরও দুই গ্লাস হাফ-লিটার নিয়ে ফিরলো। আর বুড়ো নিমিষেই তার ‘পুরো এক লিটার পান না করার’ সংস্কার ভুলে তুলে নিলো পরের গ্লাসটি।
 
‘আপনি আমার চেয়ে বয়সে ঢের বড়,’ বললো উইনস্টন। ‘আমার জন্মের আগেই আপনি পুরোদস্তুর বয়ষ্ক একজন ছিলেন। নিশ্চয়ই বিপ্লবের আগের দিনগুলোর আসল চেহারা কেমন ছিলো তা আপনার মনে আছে। আমাদের বয়সের লোকেরা আসলে ওই সময়ের কথা কিছুই জানে না। আমরা ওগুলো কেবল বইয়েই পড়ি, আর বইয়ের কথাতো সত্য নাও হতে পারে। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই। ইতিহাসের বইগুলো বলছে বিপ্লবের আগের জীবন ছিলো এখনকার জীবনের চেয়ে পুরোই আলাদা। ভয়াবহ নিষ্পেষণ, অবিচার আর দারিদ্র ছিলো, যা আমাদের কল্পনার অতীত। এই লন্ডনে বিশাল জনগোষ্ঠীর কেউই জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি কোনও দিন পেটপুরে খাবার পায়নি। অর্ধেক মানুষের পায়ে জুতো ছিলো না। তারা দিনে ১২ ঘণ্টা গতরখাটতো, নয় বছরেই তারা লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে কাজে যোগ দিতো, একটি ছোট্ট কামরায় ঘুমের স্থান সংকুলান হতো ১০ জনের। আর একই সময়ে গুটিকয় মানুষ, হতে পারে মোটে কয় হাজার- যারা পুঁজিপতি ছিলো- তারাই ছিলো ধনি আর ক্ষমতাধর। যা কিছু ছিলো তার সবই ছিলো তাদের মালিকানায়। তারা বিশাল প্রাসাদোপম বাড়িতে বাস করতো, জনাত্রিশেক চাকর-বাকর তাদের সেবায় সদা নিয়োজিত, তারা মোটর গাড়ি আর অশ্বশকটে চেপে ঘুরতো, শ্যাম্পেন পান করতো, টপ হ্যাট পরতো--’ 

চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো বুড়োর। 

‘টপ ’অ্যাটস!’ উষ্মার উচ্চারণ তার। ‘নামটি বলার সময় “অদ্ভুত” কথাটিও জুড়ে দাও। কেবল গতকালই বিষয়টি আমার মাথায় এসেছে, আমি জানি না কেন। কেবল ভাবছিলাম, অমন চোঙা হ্যাট অনেক বছর দেখি না। বিলিন হয়ে গেলো। শেষ একবার পরলাম আমার শ্যালিকার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়। সেটি কবে ছিলো!- ঠিক তারিখটা তোমাকে বলতে পারবো না। তবে বছর পঞ্চাশেক আগে তো হবেই। অবশ্যই ওই দিনের জন্য ধার করেছিলাম, আশা করি বুঝতে পারছো।’ 

‘টপ হ্যাটের বিষয়টি খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ না,’ শান্তস্বরে বললো উইনস্টন। ‘বিষয়টি হচ্ছে ওই পূঁজিপতিদের নিয়ে- তাদের গুটিকয় আইনজীবী আর ধর্মগুরুদের নিয়ে, যারা ওদের ঘাড়ে ভর করে টিকে থাকতো- ওরাইতো ছিলো ধরাধামের প্রভু। যা কিছু বিরাজমান ছিলো তা তাদেরই সুবিধার জন্য- সাধারণ মানুষ, কর্মজীবীরা- ছিলো ওদের কৃতদাস। তাদের যেমনটা মন চাইতো আপনার সঙ্গে ওরা তেমনটাই করতে পারতো। ওরা চাইলে আপনাকে গবাদির মতো জাহাজে চাপিয়ে কানাডা পাঠিয়ে দিতে পারতো। ওরা চাইলে আপনার মেয়েদের বিছানায় টেনে নিতে পারতো। ওরা আপনাকে নয়-লেজের চাবুকের ঘায়ে জর্জরিত করতে পারতো। আপনি ওদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মাথার টুপি খুলতে বাধ্য হতেন। প্রতিটি পুঁজিপতিই একদল চামচাবেষ্টিত হয়ে ঘুরতো-

ফের উজ্জ্বল হয়ে উঠলো বুড়োর মুখ। 

‘চামচার দল! হা হা... বেড়ে বলেছো!’ বললো সে। ‘ম্যালা দিন পর শুনলাম শব্দটা। চামচার দল! শব্দটি আমাকে পুরনো কথা মনে করিয়ে দিলো। আমি ঠিক স্মরণ করতে পারছি- অনেক বছর আগে- তখন রোববারের বিকেলগুলোতে মাঝে মধ্যেই হাইড পার্কে যেতাম বক্তৃতা শুনতে। উদ্ধারকারী সেনা, রোমান ক্যাথলিক, ইহুদি, ভারতীয়- সবারই সমাগম হতো। বক্তাদের একজন ছিলো- আমি ঠিক নামটি তোমায় বলতে পারবো না, তবে সে ছিলো সত্যিকারের এক শক্তিশালী বক্তা। তার মুখেই শুনেছিলাম এই চামচা দলের কথা। “বুর্জোয়াদের চামচারা! আর “শাসক শ্রেণির চাপরাশিরা!” আর একটা কথা বলতো “প্রভুভূক প্রাণী” আর “হায়নার দল”। ঠিক মনে পড়ে, লোকটি বলতো “হায়নার দল”। বুঝতেই পারছো, সে আসলে লেবার পার্টির কথাই বোঝাতে চাইতো।’ 

উইনস্টনের মনে হলো তাদের দুজনেরই ভাবনার মূল একই জায়গায় গাঁথা।

‘আমি ঠিক এই বিষয়টিই জানতে চাই,’ একটু উচ্ছ্বাসেরই প্রকাশ তার। ‘তোমার কি মনে হয়, অতীতের ওই দিনগুলোর চেয়ে এখন স্বাধীনতা বেশি ভোগ করছো? এখন কি তোমাকে মানুষ হিসেবে বেশি মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে? পুরোনো দিনগুলোতে, ধনাঢ্যরা, উচ্চ পর্যায়ের মানুষেরা...’

‘হাউস অব লর্ডস,’ যেনো স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে উচ্চারণ করলো বুড়ো।

‘হাউস অব লর্ডস, হতে পারে। আমি সেটাই জানতে চাইছি, এই মানুষগুলো কি তোমাকে অধস্তন ভাবতো কেবলই এই কারণে যে, তারা ধনি ছিলো আর তুমি ছিলে গরিব? যেমন ধরো, তাদের তোমরা “স্যার” বলতে, আর ওদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মাথার ক্যাপ খুলে নিতে, এ কথাগুলো কি সত্য?’ 

বুড়োকে মনে হলো গভীর চিন্তায় মগ্ন। এক চুমুকে বিয়ারের গ্লাসের সিকিভাগ শেষ করে তবেই মুখ খুললো।

‘হ্যাঁ,’ বললো সে। ‘তারা চাইতো তুমি ক্যাপটি খুলে নাও। এটা ঠিক সম্মান দেখানো। আমি কাজটিতে একমত ছিলাম না, কিন্তু অনেকবারই করেছি। তুমি বলতে পারো, করতে হয়েছে।’

‘ওটাও কি স্বাভাবিক ছিলো- আমি ঠিক ইতিহাস বইয়ে যা পড়েছি তা থেকে বলছি- তখন কি এই মানুষগুলো আর তাদের চাকরেরা তোমাদের ধাক্কা দিয়ে নর্দমায় ফেলে দিতো?’ 

‘একবার ওদের একজন আমাকে ফেলেছিলো,’ বললো বুড়ো। ‘আমার মনে আছে, যেনো ঘটনাটি ঠিক গতকালই ঘটেছে, এতটা স্পষ্ট মনে পড়ে। সে রাতে নৌকাবাইচ চলছিলো। নৌকাবাইচের রাতগুলোতে ওরা ভয়াবহ উশৃংখল হয়ে উঠতো। শ্যাফসবুরি এভিনিউতে এক যুবকের সঙ্গে ধাক্কা খেলাম। বেশ ভদ্র সাজ- ড্রেস শার্ট, টপ হ্যাট, কালো ওভারকোট পরা। ফুটপাতের ওপর দিয়ে একবার এদিক, একবার ওদিক (জিগজ্যাগ) করতে করতে পথ চলছিলো। আর আচমকা আমি ধাক্কা খেলাম তার সঙ্গে। চিৎকার করে উঠলো, “দেখে পথ চলতে পারো না?” আমি বললাম, “কি ভাবছো তুমি কি ফুটপাত কিনে নিয়েছো নাকি?” সে বললো, “আরেকবার ধাক্কা খেলে আমি তোমার ঘাড় মটকে দেবো”। আমি বললাম, “তুমি মাতাল”। ও বললো, “আধা মিনিটেই আমি তোমাকে এর মজা দেখাবো।” বিশ্বাস করো ব্যাটা আমাকে বুক বরাবর একটা ধাক্কা দিলো আর আমি ছিটকে একটি চলন্ত বাসের চাক্কার কাছে গিয়ে পড়লাম। আমিও যুবক ছিলাম, ব্যাটাকে একহাত দেখিয়েও দিতাম, কিন্তু আমি ছিলাম একা, স্রেফ একা... ।"            পরের অংশ পড়ুন এখানে

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank