শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০ || ১৭ রমজান ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ধারাবাহিক অনুবাদ উপন্যাস

১৯৮৪ ।। মূল: জর্জ অরওয়েল ।। অনুবাদ: মাহমুদ মেনন [পর্ব-৯]

মাহমুদ মেনন, সাংবাদিক ও শিক্ষক

০৮:৪২, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আপডেট: ১০:৫০, ১০ এপ্রিল ২০২১

১৫৭৭

ধারাবাহিক অনুবাদ উপন্যাস

১৯৮৪ ।। মূল: জর্জ অরওয়েল ।। অনুবাদ: মাহমুদ মেনন [পর্ব-৯]

১৯৮৪ । জর্জ অরওয়েল
১৯৮৪ । জর্জ অরওয়েল

[পর্ব-এক] [পর্ব-দুই] [পর্ব-তিন] [পর্ব- চার] [পর্ব- পাঁচ] [পর্ব-ছয়[পর্ব- সাত] [পর্ব-আট]

পর্ব- ৯

পঞ্চম অধ্যায়

গভীর পাতালঘরে অনুচ্চ ছাদের ক্যান্টিনে দুপুরের খাবার নেওয়ার লম্বা লাইনটি শম্বুকগতিতে এগুচ্ছে। ঘরটিতে মানুষ গিজগিজ করছে, শোরগোলে কান ঝালাপালা। কাউন্টারের লোহার বেড়ার ওপার থেকে ধাতব লবনের গন্ধমাখা স্ট্যুর ধোঁয়া এসে নাকে লাগছে, আর তা ছাপিয়ে ভিক্টরি জিনের কড়া গন্ধ। কামরার শেষের দিকে ছোট্ট বার সেখান থেকে দেয়ালের ছোট গলুই গলিয়ে আসছে জিন, ১০ সেন্টে মিলে যাবে বড় এক ঢোক।

‘ঠিক যাকে খুঁজছিলাম,’ পেছন থেকে কেউ একজনের গলা শুনতে পেলো উইনস্টন।
  
ঘুরে দেখে বন্ধু সাইম। গবেষণা বিভাগে কাজ করে। ‘বন্ধু’ শব্দটি সম্ভবত সঠিক নয়। আজকাল বন্ধু বলে কেউ নেই, সবাই কমরেড। তবে কিছু কমরেড আছেন যারা অন্যদের চেয়ে একটু ঘনিষ্ঠ। সাইম ভাষাতত্ত্ববিদ। নিউস্পিক বিশেষজ্ঞ। নিউস্পিক অভিধানের ১১তম সংস্করণ তৈরিতে যে বড় একটা কর্মীবাহিনী কাজ করছে তাদের একজন। ছোটখাটো গড়ন, উইনস্টনের চেয়েও ছোট। কালো লম্বাটে চুল, প্রস্ফীত চোখে মেখে থাকে শোকগ্রস্ত, ভীত চাহুনি। আপনি যখন ওর সঙ্গে কথা বলবেন, মনে হবে ও আপনার মুখমণ্ডলে কিছু একটা খুঁজছে।

‘তুমি রেজর ব্লেড পেয়েছো নাকি?,’ প্রশ্ন সাইমের।

‘নারে.. একটাও না, অপরাধীর গলা উইনস্টনের। বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা করেছি। মনে হয় আর পাওয়া যাবে না।’

সবাই কেবল রেজর ব্লেডের কথাই জানতে চায়। তার কাছে অবশ্য দুটো ছিলো, অব্যহৃত। আগেই তুলে রেখেছিলো। মাস কয়েক আগে যখন রেজর ব্লেডের মঙ্গা দেখা দিলো তখন। যে কোনও সময়ই বিশেষ কোনও প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহে পার্টির দোকানগুলো অপারগতা ঘোষণা করে দেয়। কখনো বোতাম, কখনো রিফুর উল, কখনো জুতোর ফিতে। এখন রেজর ব্লেড। পেতে পারেন, অতি সংগোপনে, ওদের চোখ ফাঁকি দিয়ে যদি ‘ফ্রি’ মার্কেটগুলোতে আপনি টুক করে ঢুকে পড়তে পারেন তাহলে। তবে তাতেও যে মিলেই যাবে তার নিশ্চয়তা নেই। 

‘আমি ছয় সপ্তাহ ধরে একই ব্লেড ব্যবহার করছি,’ মিথ্যা করেই বললো উইনস্টন। 
 
খাবারের জন্য লাইনটি আরেক ধাক্কা এগিয়ে ফের থমকালো। উইনস্টন ঘুরলো সাইমের দিকে। কাউন্টারের শেষ মাথা থেকে তেলতেলে দুটো ধাতব ট্রে তুলে নিলো দুজন। 

'গতকাল কারাবন্দিদের ফাঁসি দেখতে গিয়েছিলে নাকি?' প্রশ্ন সাইমের। 
‘কাজ ছিলো’ উত্তর উইনস্টনের। ‘ভিডিওচিত্রে দেখে নিতে পারবো, আশা করি।’  
‘বিকল্প হিসেবে এটাকে ভালো কিছু বলবো না’ গম্ভীর কণ্ঠ সাইমের। 

উইনস্টনের মুখের ওপর ঘুরছে তার বিদ্রুপাত্মক চাহুনি। ‘আমি তোমাকে চিনি,’ চোখ জোড়া যেনো সে কথাই বলতে চাইছে। ‘আমি তোমার ভেতরটা দেখতে পাই, আমি জানি কেনো তুমি কারাবন্দিদের ফাঁসি দেখতে যাওনি।’ বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে সাইম বিষাক্ত গোঁড়া কিসিমের। শত্রুপক্ষের গ্রামে যখন হেলিকপ্টার হামলা চালায়, চিন্তা-অপরাধীরা যখন স্বীকারোক্তি দেয় কিংবা বিচারের মুখোমুখি দাঁড়ায়, ভালোবাসা মন্ত্রণালয়ের কারাবন্দিদের যখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় আর সেসব নিয়ে ও যখন কথা বলে তখন কণ্ঠে সন্তুষ্টি ঝড়ে ঝড়ে পড়ে অবিশ্বাস্য সংকীর্ণতায়। ওর সঙ্গে কথা বলার সময় এসব বিষয় এড়িয়ে বরং সম্ভব হলে নিউস্পিকের খুঁটিনাটি দিকগুলো টেনে আনা ভালো। ওতে তার দখল যেমন আছে, মজাও পাওয়া যায়। বড় কালো দুটি চোখের অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি এড়াতে উইনস্টন মাথাটি ইষৎ ঘুরিয়ে নিলো।

‘দারুণ ফাঁসি হয়েছে’- শুনিয়ে দিতে চাওয়ার ভঙ্গিমা সাইমের কণ্ঠে। ‘অবশ্য ওদের প্রত্যেক দুই পা এক সাথে বেঁধে ঝোলানোর বিষয়টি ফালতু মনে হয়েছে। মৃত্যুযন্ত্রণায় ওরা পা গুলো ছোঁড়াছুড়ি করছে এমনটা দেখতেই ভালো লাগতো। তবে দারুণ লেগেছে যখন ওদের জিহ্বাগুলো মুখ থেকে বেরিয়ে এলো আর কড়া নীল হয়ে গেলো সেই দৃশ্যটা দেখতে। এই বিষয়টি আমার মধ্যে একটা আবেদন তৈরি করে।’

‘নেক্স’ প্লিজ! হাতা হাতে চিৎকার পাড়লো সাদা অ্যাপ্রোন পরা প্রোলদের একজন।

উইনস্টন ও সাইম গ্রিলের নীচ দিয়ে দুজনের ট্রে দু'টি ঠেলে দিলো। তাতে দ্রুতই ভরে দেওয়া হলো দুপুরের বরাদ্দ খাবার- ছোট ধাতব পেয়ালায় ধূসর-গোলাপি স্ট্যু, এক খামচা রুটি, এক টুকরো পনির, দুধহীন এক মগ ভিক্টরি কফি আর একটি স্যাকারিন ট্যাবলেট।
 
'চলো টেলিস্ক্রিনের নিচে একটি টেবিল ফাঁকা আছে,' বললো সাইম। ‘যাওয়ার পথে জিন নিয়ে নেই।’

হাতলবিহীন চীনা পাত্রে ওদের জিন এলো। ভিড় ঠেলে গিয়ে খাবার নিয়ে বসলো ধাতব পাতের পাটাতনের টেবিলে, যার এক কোনায় কারো ফেলে যাওয়া থকথকে স্ট্যু পড়ে আছে, দেখে মনে হবে কেউ বমি করে রেখেছে। জিনের পাত্রটাই প্রথম তুলে নিলো উইনস্টন। একটু দম টেনে শরীরটাকে শক্ত করে নিলো, আর তেল-স্বাদের তরলটুকু ঢেলে দিলে গলদেশের গভীরে। চোখ দিয়ে বেরিয়ে আসা পানি মুছতে মুছতে তার মনে হলো ভীষণ ক্ষুধার্ত সে। চামচ ডুবিয়ে স্ট্যু তুলে গলায় ঢালতে লাগলো। তরল স্যুপের মধ্যে গোলাপী মতো দেখতে যে ছোট ছোট পিচ্ছিল টুকরোগুলো দেখা যাচ্ছে ওগুলো মাংসে তৈরি। স্ট্যুর পেয়ালা পুরোটা শেষ করার আগে দু‘জনের মুখে রা’ শব্দটিও উচ্চারিত হলো না। উইনস্টনের বায়ে একটু পেছনের দিকের একটি টেবিলে একজন টানা বকবক করে যাচ্ছিলো। হাঁসের প্যাক-প্যাক শব্দের মতে ছিলো সে উচ্চারণ। গোটা কক্ষে যে হৈচৈ চলছে তা ছাপিয়েও কানে লাগছিলো সে শব্দ। 

‘অভিধানের কাজ কেমন এগুচ্ছে? শোরগোলের মাঝে একটু উঁচুকণ্ঠেই জিজ্ঞেস করলো উইনস্টন। 

‘ধীরে ধীরে,’ বললো সাইম। ‘বিশেষণ নিয়ে কাজ করছি, ভালোই লাগছে।’

নিউস্পিকের প্রসঙ্গে খুব দ্রুতই উজ্জ্বল হয়ে উঠলো ওর মুখ। স্ট্যুর পেয়ালাটা একদিকে ঠেলে রেখে এক হাতে রুটি আর হাতে পনিরের টুকরোটি তুলে নিয়ে টেবিলের ওপর অনেকখানি ঝুঁকে গেলো যাতে না চিল্লিয়ে কথা বলা যায়।

‘একাদশ সংস্করণটিই চূড়ান্ত’ বললো সে। ‘আমরা ভাষাটির একটা পূর্ণাঙ্গ রূপ পাচ্ছি- এমন একটা রূপ যে এর বাইরে মানুষের কথ্য আর কিছু থাকবে না। আমরা কাজ শেষ করলে তোমাদের মতো লোকেদের এর গোটাটাই ভালো করে শিখতে হবে। সবাই জানে, আমাদের প্রধান কাজ নতুন নতুন শব্দ তৈরি। কিন্তু আসলে যা হচ্ছে, আমরা প্রতিদিন শব্দ ধ্বংস করছি- ঝাঁকে-ঝাঁকে শব্দ, শত শত শব্দ। আমরা ভাষাটির হাড্ডি ছেঁটে ছোট করে দিচ্ছি। আমি বলতে চাই, এগারোতম সংস্করণে এমন একটি শব্দও থাকবে না যা ২০৫০ সালের আগে বিলীন বা অকেজো হবে।

ক্ষুধার্তের মতো বড় গ্রাসে রুটিতে কামড় বসালো, আর গিললো সাইম। আর কথা চলতে থাকলো পণ্ডিতি ধাচে। চিমসানো কালো চেহারাটা যেনো অঙ্কিত ছবির রূপ নিলো আর চোখের সেই সারাক্ষণের খুঁজে বেড়ানোর ভাবটা কেটে স্বপ্নময় হয়ে উঠলো। ‘শব্দ ধ্বংস অসাধারণ একটা কাজ! ক্রিয়া আর বিশেষণগুলোর বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে এটা ঠিক, কিন্তু শত শত বিশেষ্য থেকে মুক্তি মিলছে। সমার্থক শব্দগুলোই কেবল নয়, বাদ যাচ্ছে বিপরীতার্থকগুলোও। অন্য একটা শব্দের বিপরীত, এইতো, এর এমনকি প্রয়োজন বলো। প্রতিটি শব্দই তার বিপরীতার্থ ধারন করে। যেমন ধরো “গুড”, এর জন্য “ব্যাড” শব্দের প্রয়োজন কি? “আনগুড” য়েই চলে যায়। আর কেবল চলবেই কেনো, আমি বলি এটাই অপেক্ষাকৃত সঠিক, কারণ এতে বৈপরীত্বটা স্পষ্ট হয় যা “ব্যাড” শব্দে হয় না। আবার তুমি যদি “গুড”র আরও শক্ত কোনও ব্যঞ্জনা চাও, তখন “এক্সিলেন্ট”, “স্প্লেন্ডিড” এমন আরও কিছু ফালতু শব্দের প্রয়োজন দেখি না। বলে দাও “প্লাসগুড” ওতেই অর্থ পরিষ্কার অথবা যদি কিনা আরও জোর দিয়ে ভালোত্বের প্রকাশ ঘটাতে চাও “ডাবলপ্লাসগুড” বলো। এরই মধ্যে আমরা এগুলোর ব্যবহার শুরু করেছি, তবে নিউস্পিকের যে চূড়ান্ত সংস্করণ হচ্ছে এর বাইরে আর কিছুই থাকবে না। আর শেষমেষ ভালোত্ব আর মন্দত্বের সকল ধারনাই মাত্র ছয়টি শব্দের মাঝে সন্নিবেশিত হবে- প্রকৃতপক্ষে একটি শব্দে। ভাষার এই সৌন্দর্যটা তোমার চোখে পড়ছে না, উইনস্টন? আর অতি অবশ্যই, প্রধানত এটা বি.বি.’র অভিপ্রায়,’ যেন অনুগতচিন্তার অনিবার্য প্রকাশের অংশ হিসেবেই যোগ করলো সে।
 
বিগ ব্রাদারের নাম উঠতেই চেহারায় মেকি একটা আগ্রহের ছাপ মেখে নিলো উইনস্টন। হলে কি হবে, সাইম দ্রুতই ধরে ফেললো তার মধ্যে উচ্ছ্বাসের খামতি আছে।

‘নিউস্পিক নিয়ে তোমার ভিতরে কোনও আগ্রহ দেখি না, উইনস্টন,’ করুণ ব্যাথিত সুরে বললো সে। ‘এমনকি যখন লেখো তখনও তোমার মধ্যে পুরোনো ভাষাই ভর করে থাকে। “দ্য টাইমসে” তোমার কিছু কিছু লেখা মাঝে মধ্যে পড়ি। ভালোই লেখো কিন্তু ওগুলো স্রেফ অনুবাদ ছাড়া আর কিছু হয় না। তোমার হৃদয়ের গহীনে পুরোনো ভাষারীতির সব ফালতু আর অপ্রয়োজনীয় অর্থগুলো ধরে রাখার ইচ্ছাটাই প্রবল দেখি। তুমি কি জানো এই নিউস্পিক হতে যাচ্ছে বিশ্বের একমাত্র ভাষা যার শব্দভাণ্ডার হরবছর হ্রাস পাচ্ছে।

উইনস্টন বিষয়টি ভালোই জানে। সে হাসলো, অনুকম্পার হাসি, তবে মনে হলো না তার কথা বলার দরকার আছে। সাইম কালচে রুটিতে আরো একটা কামড় বসালো, কিছুটা চিবিয়ে নিয়ে ফের শুরু করলো: 

'তুমি দেখছো না, নিউস্পিকের লক্ষই হচ্ছে চিন্তার পরিধিটি ছোট করে আনা। আর এর মধ্য দিয়ে শেষমেষ আমরা চিন্তা অপরাধ সংঘটন আক্ষরিক অর্থে অসম্ভব করে তুলবো। কারণ, বস্তুত তখন বিষয়টি প্রকাশের জন্য কোনও শব্দই থাকবে না। প্রয়োজন হতে পারে এমন প্রতিটি ধারনাই একটি মাত্র শব্দে ব্যক্ত হবে যার অর্থও কঠোরভাবে সংজ্ঞায়িত থাকবে আর এর সম্পূরক অর্থগুলো মুছে ফেলা হবে, ভুলে যাওয়া হবে। 'হবে নয়', বলতে পারো 'হয়ে গেছে'। একাদশ সংস্করণে আমরা এর থেকে আর খুব দূরে নই। তবে প্রক্রিয়া চলবে আরও দীর্ঘ সময় ধরে, তোমার আমার মৃত্যুরও অনেক পরে পর্যন্ত। এটা স্রেফ আত্ম-শৃঙ্খলাবদ্ধতার প্রশ্ন, বাস্তবতা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন। তবে শেষ পর্যন্ত এর আদৌ কোনও প্রয়োজনও আর হবে না। ভাষা সঠিক হয়ে উঠলেই বিপ্লব সুসম্পন্ন হবে। নিউস্পিকই ইংসক আর ইংসকই নিউস্পিক,’ এক ধরনের রহস্যাবৃত্ত সন্তুষ্টির উচ্চারণে কথাগুলো বলে গেলো সে। ‘তুমি কি কখনো ভেবে দেখেছো, উইনস্টন, ২০৫০ সালের পর একটি মানুষও জীবিত থাকবে না যে আজ তুমি আমি যেই ভাষায় কথা বলছি তা বুঝতেও পারবে।’

‘কেবল মাত্র...’ সন্দেহমাখা কণ্ঠে কথাটা বলতে শুরু করেই থেমে গেলো উইনস্টন। 

তার ঠোঁটের আগায় যে কথাটি এসে জমেছিলো তা হচ্ছে ‘কেবলমাত্র প্রোলরা ছাড়া,’ কিন্তু সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো, এই ভেবে তার এই মন্তব্য নিশ্চিতভাবেই প্রথাসিদ্ধ হবে না। তবে সে ঠিক কি বলতে যাচ্ছিলো তা দিব্য আর ধী-শক্তিতে ঠিক বুঝে নিলো সাইম। 

‘প্রোলরা মনুষ্য জাত নয়’ অবজ্ঞামাখা উচ্চারণ তার। ‘২০৫০ সালের মধ্যে- হতে পারে তার আগেই, এই পুরোনো ভাষার সকল বাস্তব জ্ঞানের সমাপ্তি ঘটবে। পুরোনো সময়ের সকল সাহিত্য ধ্বংস করে দেওয়া হবে। চসার, শেক্সপিয়র, মিল্টন, বায়রন- এরা সবাই নিউস্পিক ভার্সনে টিকে থাকবেন, তবে তা কেবল ভিন্ন কিছুতে পরিবর্তীত হয়ে নয়, বরং বিতর্কিত কিছু বিষয়ের মধ্য দিয়ে, যাতে তারা অভ্যস্তও। এমনকি পার্টির সাহিত্য-কর্মও পাল্টে যাবে, স্লোগান পাল্টে যাবে। “স্বাধীনতা দাসত্ব” এমন একটি স্লোগান তুমি কিভাবে ধরে রাখবে যখন স্বাধীনতার ধারনাটিই আর থাকবে না? চিন্তুার পুরো আবহটিই পাল্টে যাবে। বস্তুত, যতটুকু বুঝতে পারি, চিন্তা বলেই আর কিছু থাকবে না। প্রথা মানেই চিন্তাহীনতা- চিন্তার অপ্রয়োজনীয়তা। প্রথা মানেই অসচেতনতা।’

হঠাৎই গভীর নিশ্চয়তায় উইনস্টনের মনে হলো, এই সময়েরই কোনও এক দিন সাইমকে বাষ্পায়িত করা হবে। সে অত্যন্ত ধী-শক্তি সম্পন্ন। সে সবকিছুই একটু বেশিই আগে দেখে ফেলছে, সোজাসাপ্টা তা বলেও দিচ্ছে। পার্টি এ ধরনের মানুষ খুব একটা পছন্দ করে না। একদিন সে গুম হয়ে যাবে। তার চোখে মুখে সেটাই লেখা রয়েছে।.......... পরের পর্ব পড়ুন এখানে
 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank