শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

করোনাকালীন অফিস এবং হোম অফিসের আদবকেতা

জিয়াউল হক

১৫:১৮, ৪ জুলাই ২০২১

আপডেট: ১৬:২৭, ৪ জুলাই ২০২১

৮৬২

করোনাকালীন অফিস এবং হোম অফিসের আদবকেতা

করোনার এই অতিমারীতে সারাদেশ কার্যত অচল। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, চলছে লকডাউন। সরকারি-বেসরকারি সব অফিস আদালত বন্ধ ঘোষনা করেছে সরকার। করোনার এই মৃত্যুর মিছিল থামাতে এর বিকল্পও নেই। মানুষকে ঘরে থাকতেই হবে। বিশেষ কারণে গণমাধ্যাম সহ সরাসরি উৎপাদনের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো খোল রাখা হয়েছে।

কখন এই মহামারি শেষ হবে, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না। লকডাউন উঠে গেলেও সবধরনের স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে কাজ শুরু করতে হবে। এই ‘নিউ নরমাল’ বা নতুন স্বাভাবিক অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই চলাচল করতে হবে আমাদের। সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে, সতর্ক থেকে সংক্রমণ প্রতিরোধের সব ব্যবস্থা নিয়ে শুরু করতে হবে কাজকর্ম। তার আগে জানা চাই, কেমন হবে সেই নতুন অফিস নীতিমালা?

স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রস্তুতি
কর্মক্ষেত্রে ভিড় এড়াতে চিরাচরিত পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। করতে হবে রোস্টার, যাতে রোজ সবাইকে একসাথে অফিস যেতে না হয়। বিকল্প দিনে অফিস ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে, যেখানে সপ্তাহের একেক দিন একেকজন পালাক্রমে অফিসে যাবেন আর বাকিরা হোম অফিস করবেন। 

যেদিন আপনার অফিস করতে হবে, সেদিন আপনি হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ঘর থেকে বের হবেন। বাইরের খাবার পরিহার করতে পারলে ভাল, সম্ভব হলে বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে যেতে পারেন। একটা ছোট হ্যান্ড স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখুন। পারতপক্ষে গণপরিবহন এড়িয়ে চলুন, হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন, বিকল্প হিসেবে সাইকেলও ব্যবহার করতে পারেন। 

যারা অফিসে যাবেন তারা বসবেন নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে। নিজের চেয়ারে থাকা অবস্থায় মাস্ক না পরলেও অফিসে কাজের প্রয়োজনে অন্যের ডেস্কে যেতে হলে অথবা কেউ আপনার সামনে এলে অবশ্যই মাস্ক পরবেন। অফিস স্টাফদের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার অভ্যাস করা যেতে পারে। ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ইন্টারকমসহ ডেস্কের যাবতীয় জিনিসপত্র নিজেই পরিষ্কার করুন। চা-কফি নিজে বানিয়ে খাওয়া, নিজের থালা বা গ্লাস নিজে পরিষ্কার করার অভ্যাস করা গেলেও সংক্রমনের সম্ভাবনা থেকে নিজেকে কিছুটা নিরাপদ রাখা যেতে পারে।

অফিসের গাড়ি একসঙ্গে অনেকে ব্যবহার করে, তাই দূরত্ব বজায় রেখে বসতে হবে। গণপরিবহনে ওঠা-নামার সময় হাতে স্যানিটাইজার স্প্রে করবেন। এক সিট ফাঁকা রেখে বসার চেষ্টা করবেন। বাসে ওঠার সারিতে দাঁড়ানোর সময় দূরত্ব বজায় রাখুন। কখনোই অন্য কাউকে বা কারও জিনিসপত্র স্পর্শ করবেন না। বাসের হাতল বা সিটের সামনের হাতল স্পর্শ করবেন না। নিজের গাড়িতে বা মোটরবাইকে ওঠার আগে হাতল, স্টিয়ারিং, কাঁচ নামানোর সুইচ ইত্যাদি জীবাণুমুক্ত করে নেবেন।

অফিস সময়ে সচেতনতা
সকালে অফিস সময়ে একটু ভিড় বেশী থাকে। তাই ভিড় এড়াতে লিফট যতটা সম্ভব পরিহার করাই ভালো। আর যদি ব্যবহার করতেই হয়, তবে চেষ্টা করবেন লিফটের বাটন স্পর্শ না করতে, সে ক্ষেত্রে টিস্যু দিয়ে লিফটের বাটন চাপুন। অফিসের দরজার হাতল স্পর্শ না করে ঢুকবেন। করোনার সময় কার্ড পাঞ্চ করা পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেশিন ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে অফিসগুলোকে। সব অফিসের প্রবেশমুখে বা নিচে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। বাইরে থেকে যিনি আসবেন, তিনি অবশ্যই হাত ধুয়ে ঢুকবেন। নিজের ফ্লোরে বা অফিসে প্রবেশ করার পরও প্রথমেই ওয়াশরুমে গিয়ে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।

এই সময়ে অফিসে একজন আরেকজনের ডেস্কে যাওয়া, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে গল্প করা এড়িয়ে চলতে হবে। তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করার চেষ্টা করতে হবে, প্রয়োজনে ডেস্কের ফোন ব্যবহার করবেন। কোনো সভা করতে হলে অনলাইনই এখন সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। মিটিংয়ে সবাই একত্রিত না হয়ে যার যার সিটে বসেই আলোচনা সেরে নেয়া যায়।

কাজের ফাঁকে সারাদিন বেশ কয়েকবার হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন। ওয়াশরুম দূরে হলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করুন। ফাইল বা কাগজপত্র স্পর্শ করার পর সঙ্গে সঙ্গে হাত জীবাণুমুক্ত করে নিন।

পরিবারের সদস্যদের প্রতি দায়িত্ব
মনে রাখবেন সারাদিন আপনি যেভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করেছেন ঠিক তেমনভাবেই পরিবারের অন্য সদস্যদেরও সুরক্ষা দেয়া আপনার দায়িত্ব। তাই বাড়ি ফিরেও আপনাকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বাড়ি ফেরার আগেই ফোনে জানিয়ে রাখুন যাতে দরজাটা খোলা রাখা হয় আর বাথরুমে আপনার পরিধেয় কাপড় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকে। বাসার দরজার কাছে একটা মুখঢাকা বিন রাখুন এবং সাবধানে মাস্ক খুলে সেখানে ফেলুন। জুতাজোড়া অবশ্যই বাইরে রেখে আসবেন। পরে আপনার ব্যবহৃত চাবি, চশমা, সেলফোন জীবাণুমুক্ত করুন। সবশেষে ঘরে ঢোকার পর সরাসরি বাথরুমে গিয়ে গোসল সেরে ফেলুন। বাড়ি ফিরে নিজে ও নিজের জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত না করা পর্যন্ত আপনজনদের কাছে যাবেন না, কোনো চেয়ার বা বিছানায় বসবেন না।

অন্যদিকে যারা হোম অফিস করবেন তাদেরও বেশ কিছু আদবকেতা জেনে রাখা জরুরি

১। অফিসের কাজের জন্য বাড়িতে একটা উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
২। ভাল গতির ইন্টারনেট সংযোগসহ একটি ফোন এবং একটি কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ থাকতে হবে।
৩। অফিসের নির্ধারিত সময়সূচি মেনে চলতে হবে। 
৪। অফিস শুরুর আগেই যাবতীয় ব্যাক্তিগত কাজ সেরে নিতে হবে। 
৫। মার্জিত পোশাক পরতে হবে।
৬। অফিস সিডিউল অনুযায়ী অনলাইনে যুক্ত হতে হবে।
৭। বাসায় শুয়ে শুয়ে কিংবা গা এলিয়ে নয়, বরং অফিসের মতো চেয়ার-টেবিলে কাজ করতে হবে।
৮। অফিস সময়ে পরিবারের সদস্যদের থেকে নিজেকে আলাদা রাখার চেষ্টা কেরতে হবে।
৯। উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। কাজ শুরুর আগে ও পরে তাদের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।
১০। পেশাগত কাজের সময় ব্যক্তিগত কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
১১। দূরে বসে দলগতভাবে কাজ করার সব নিয়ম-কানুন মানতে হবে।
১২। অফিস টাইম ছাড়াও সব সময় অ্যাক্টিভ থাকতে হবে, যাতে অফিসের যে কোন জরুরি নির্দেশনা মেনে চলা যায়।
১৩। বাড়িতে বসে করা সর্বশেষ কাজের ব্যাকআপ রাখতে পারেন।
১৪। জরুরি যোগাযোগের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার ফোন নম্বর সংগ্রহে রাখুন।
১৫। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থাও করে রাখা উচিত।

লকডাউনের এই জরুরি অবস্থা চলে গেলে বা শিথিল হলে আগের মতোই অফিসে গিয়ে কাজ করতে পারবেন। তবে তার আগে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলের অনুমতিক্রমে অফিসে যাওয়ার জন্য মানসিকভাবে তৈরি থাকতে হবে। পৃথিবী সুস্থ হয়ে উঠুক। কাজের পরিবেশ ফিরে আসুক-এ কামনাই সবার।

জিয়াউল হক: মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক, নেক্সাস টেলিভিশন।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank