বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ || ১০ বৈশাখ ১৪৩১ || ১২ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

অর্ধেক দম পূর্ণ হলো ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ দেখে

প্রতীক আকবর

১০:৫৫, ২৬ অক্টোবর ২০২০

আপডেট: ০০:১২, ২৯ অক্টোবর ২০২০

২৩০৮

অর্ধেক দম পূর্ণ হলো ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ দেখে

জীবন এক অদ্ভুত গোলোক ধাঁধাঁয় ফেলে দিয়েছে নীরাকে। এখন সে একা। বেঁচে আছে অর্ধেক দম নিয়ে। তার অপেক্ষা পরিপূর্ণ-বুকভরা দম নেয়ার।
দর্শকরাও মনে হয় এমন একটা দম নেয়ার অপেক্ষায় থাকেন সমসময়। সিনেমা দেখা শেষে একটা পূর্ণ দম নিয়ে ও ছেড়ে হল ছাড়বেন- এই আশায়। দীর্ঘদিন গলায় আটকে থাকার মতো হয়েছিল ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’। কবে দেখব? কবে দেখব? এমন একটা ব্যাপার ছিল অনেকের মধ্যে। ছবিটি দেখে দর্শকরা সেই আকাঙ্ক্ষিত পূর্ণ দমটা নিতে পেড়েছেন।

এর প্রধান কারণ ছবির গল্পের জীবন ঘনিষ্টতা। ছবির প্রত্যেক ফ্রেমে ফ্রেমে তার প্রমাণ রেখেছেন পরিচালক। ছবির অধিকাংশ কম্পোজিশন খেয়াল করলে দেখা যাবে প্রয়োজনীয় সব জায়গায় হাজার প্রাণের ভিড় রয়েছে। লুকিয়ে নয়, অয়ন-নীরা'র প্রেমটাও এগিয়ে গেছে জীবনের ভিড় ঠেলে।

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা সদরঘাট, মিটফোর্ট হাসপাতালের সামনের প্রচন্ড জ্যামের রাস্তার কথা উচ্চারিত হয়েছে চরিত্রগুলোর কণ্ঠে, দেখা গেছে দৃশ্যে।  
এই যান্ত্রিক শহরের ব্যস্ততার মধ্যেই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রদ্বয়ের চেনা-জানা, কথা-বার্তা এবং একটা উত্তাল জীবনের আভাস দিয়ে এগিয়ে চলা। আর এই দৃশ্যগুলোকে আরও জোরালো, প্রাসঙ্গিক এবং প্রানবন্ত করে তুলেছে ছবির সংলাপ।

‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ ছবির সংলাপ উদাহরণ হয়ে থাকার মতো। অসামঞ্জস্য কথা কিংবা অগোছালো কথা যেমন শুনতে ইচ্ছে করে না, তেমন সিনেমার সংলাপ যদি এলোমোলো হয়, তাহলে অনেক ভালো দৃশ্য দিয়েও বিরক্তি আটকানো সম্ভব না। কিন্তু ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ ছবির দর্শকদের বিরক্ত হতে দেখা যায়নি হলের মধ্যে। শুধু তাই নয়, সিনেমাটির সংলাপে, যেখানে মজা করার চেষ্টা করা হয়েছে, তাও ছিল মেদহীন। তাই সাধারণ যে জীবনচরিত, যে প্রেম এবং যে সংকট, তাই হাজির হয়েছে ছবির পর্দায়। 

‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ মোটের ওপরে একটি তুমুল প্রেমেরে সিনেমা। এবং এই প্রেম যে ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে যায়, সেটিই এই সিনেমাকে করে তুলেছে ইউনিক। সিনেমার পুরুষ কেন্দ্রীয় চরিত্রের মাধ্যমে কোনো সামাজিক বার্তা দেওয়া হয়েছে কী? না। সিনেমার পুরুষ কেন্দ্রীয় চরিত্রের মাধ্যমে যে ঘটনাগুলো দেখানো হয়েছে, তা দেখে আপাতদৃষ্টিতে পরোপকারী মনে হলেও, পরিচালক মূলত এই চরিত্রটির মাধ্যমে বড় দাগে সমাজের ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হওয়ার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন। 

পরিচালক খুব স্পস্ট ও পরিস্কারভাবে বলতে চেয়েছেন যে, তার সিনেমার চরিত্রগুলো যেমন আপন মানুষ, কাছের মানুষের সঙ্গে যুক্ত এবং সমাজের আরও অনেক মানুষের প্রতি সংবেদনশীল। তেমনি ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ ছবিটিও সমাজের শূণ্য বা ফাঁকা স্থানের কোনো সিনেমা নয়। আবার অন্যের জন্য জীবন উৎস্বর্গ করা কোনো চরিত্র নেই এই গল্পে বরং পুরুষ কেন্দ্রীয় চরিত্র এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যেখানে মানুষের জন্য কিছু করা একটি সংস্কৃতি, মানুষের জন্য এগিয়ে আসা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

এমন একটি পরিস্থিতিতে বেড়ে ওঠা পুরুষ চরিত্রকে আরও এগিয়ে নিতেই নীরার আপ্রাণ চেষ্টা। আর সেখানেই তার বাকি অর্ধেক নিঃশ্বাসের উৎপাদন। যেন মানুষের সংস্পর্শই তাদের প্রকৃত ও পরিপূর্ণ নিঃশ্বাসের আধার। কাঁচের মতো যখন চারিদিকে ভাঙনের সুর, তখন এই সিনেমা এক দৃঢ় সময়ের প্রতিনিধি।

সাধারণত উপকার করার মতো কাজ তারাই করে যাদের আছে বেশি টাকা। কিন্তু পরিচালক ছবিতে একজন সাধারণ মানুষের মাধ্যমে উপকার করার মতো কাজ করানো দেখিয়ে ছবিটিকেও করে তুলেছেন সাধারণের প্রতিনিধি। যেন প্রতিটি সাধারণ মানুষ তার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবেন এই ছবিতে।
আর এভাবেই সাধারণকে সঙ্গে নিয়ে, সাধারণের শক্তি নিয়ে শিকর থেকে শিখরে উঠতে চেয়েছেন পরিচালক মাসুদ হাসন উজ্জ্বল। তার চরিত্রগুলো খুবই পরিমিতিবোধ সম্পন্ন। চেচিয়ে কথা বলে না, এমনি এমনি হাত-পা ছোড়ে না। ভালোবাসার মানুষকে চুমু খেতে কার্পণ্য করে না, প্রাপ্তবয়স্কের মতো সুন্দর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ছবিতে গানের ব্যবহার, গানের সুর ও কথা নিশ্চিতভাবে নতুন কিছু এবং তা ভালোলাগার। 

সিনেমার একটি দৃশ্যে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতারে প্রয়োজন হয়। ছবিটি দেখার পর অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, বিয়েটা কি জরুরী ছিল? এর একটা কারণ এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে যে, পরিচালক যেহেতু সামাজিক আচার-আচরণের বাইরে কিছু করতে চাননি, তাই এই ঘটনাটি ঘটানোর প্রয়োজন ছিল। তাছাড়া তীব্রভাবে বোঝানো জরুরী ছিল ভালোবাসাটাও।

অনেকে ছবিটিতে বিজ্ঞানের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। এই প্রসঙ্গে যাবার আগে বলে রাখা ভালো যে, বিজ্ঞানের ব্যবহার এবং বিজ্ঞানমনস্ক চরিত্র তৈরি করার জন্যই হয়ত পরিচালক কেন্দ্রীয় দুই শিল্পীকে মেডিকেল সেলস রিপ্রেজেন্টেটেভি ও মাইক্রো-বায়োলজির ছাত্রী হিসেবে গড়ে তুলেছেন। এখন আগের বিষয়ে আসা যাক। বিজ্ঞানের ব্যবহার দেখিয়ে পরিচালক হয়ত এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে, ভালোবাসার জন্যই বিজ্ঞানের কত অদ্ভুত ব্যবহার। নীরার বিজ্ঞানবিষয়ক সব কাজই তো ভালোবাসার জন্যই।  

তাই প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানের পিঠে চড়ে ছিন্ন-ভিন্ন জীবন নয় বরং ভালোবাসার বিশ্বাস নিয়ে পরিপূর্ণ দম নিতে পারার নামই ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank