শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১ || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

সিনেমা হল চালুর ঘোষণা, সরকারি প্রনোদনা ও কিছু ভয়

প্রতীক আকবর

১০:৫৭, ১৫ অক্টোবর ২০২০

আপডেট: ১১:০১, ১৫ অক্টোবর ২০২০

১৬৮২

সিনেমা হল চালুর ঘোষণা, সরকারি প্রনোদনা ও কিছু ভয়

ঢাকার কয়েটি সিনেমা হল।  [কোলাজ]
ঢাকার কয়েটি সিনেমা হল। [কোলাজ]

যাক, সংশয় যা ছিল, কেটে গেল। ১৬ অক্টোবর সিনেমা হল খুলছে। এ যেন শুধু সিনেমা হল খোলা নয়, এ যেন কিছুটা নিঃশ্বাস পাওয়া, এ যেন আবার স্বপ্ন দেখা। সিনেমা হলের ভেতরের বোঝাতে না পারা গন্ধটা হয়ত অনেকে এমনিতেই পেতে শুরু করেছেন। দৃশ্যপটে শুরু হয়ে গেছে আবেগ-অনুভূতির সমীকরণের চাল। হয়ত কিছু মানুষ কাঁদছেন ফুপিয়ে- বন্ধ রোজগারটা হয়ত কিছুটা হলেও চালু হবে এই ঘোষণায়। 

১৮ মার্চ থেকে ১৬ অক্টোবর- ৭ মাস বন্ধ ছিল ঘোর আর মায়ায় ঠাসা ঐ রুপালি পর্দা। তবে বাস্তবতা বুঝতে বের হয়ে আসতে হবে চিত্রনাট্যকারের লেখা গল্প আর সংলাপ থেকে। জেনে নিতে হবে পাইপলাইনে কেমন সিনেমা আছে এবং প্রেক্ষাগৃহের মালিকরা কী চাইছেন। হল খোলার ঘোষণা পেয়েই কী হল মালিকরা হল খোলার জন্য প্রস্তুত? 

এই যেমন ধরুন স্টার সিনেপ্লেক্সের সবগুলো শাখা খুলবে ২৩ অক্টোবর থেকে। অর্থাৎ স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহ সময় নিচ্ছেন। আবার যেমন রাজধানীর অন্যতম বড় এবং নামকরা সিনেমা হল মধুমিতা চালু করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এমনকি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার কিছু সিনেমা হলও চালু করবে না প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু কেন?

১৬ অক্টোবর হিরো আলমের সিনেমা ছাড়া আর কিছু মুক্তি পাচ্ছে না। মধুমিতা সিনেমা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ জানিয়েছেন, এই ছবি দিয়ে তিনি তার সিনেমা হল চালু করবেন না। একই রকম মানসিকতা পোষণ করছেন অনেকেই। ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ আরও জানিয়েছেন, শাকিব খানের কোনো ছবি দিয়ে বন্ধ হলগুলো চালু করা উচিত।

শোনা গিয়েছিল শাকিব খান অভিনীত শাহেনশাহ ছবিটি পুনরায় মুক্তি পাবে ১৬ অক্টোবর। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে যে, ছবিটি পুনরায় মুক্তি পাচ্ছে না। দর্শক হলে আসবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে বলেই হয়ত প্রযোজক সেলিম খান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

কিন্তু, ভালো ছবি যদি হলে মুক্তি না পায়, সুপারস্টারের ছবি যদি হলে না আসে, তাহলে করোনা পরবর্তী সময়ে দর্শকরা হলে আসার আগ্রহটা পাবে কীভাবে? তাই সেই কোনটা আগে? পরিস্তিতিতে পরতে হবে সিনেমা ব্যবসায়ীদের। আগে দর্শক আসবে না, আগে ভালো সিনেমা মুক্তি পাবে- এই দ্বন্দ্বে একটি খারাপ উদাহরণ তৈরি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সবেচেয়ে বেশি। 

যেমন, যদি ধরি শাকিব খানের সিনেমা মুক্তি দিয়েও হলে দর্শক আনা যাচ্ছে না, তাহলে আগামীতে সিনেমা মুক্তি দিতে প্রযোজকরা নিরুৎসাহিত হবেন। আবার ভালো সিনেমা মুক্তি না পেলে দর্শকরাও হলে আসতে নিরুৎসাহিত হবেন। তবে ব্যবসাটা যেহেতু সিনেমার, তাই দর্শকের চেয়ে সিনেমার কথাই ভাবতে হবে সবার। প্রতিনিয়ত ভালো সিনেমা বানাতে হবে এবং মুক্তি দিয়ে যেতে হবে।

যদিও, পৃথিবী বিখ্যাত সব স্টুডিওগুলো তাদের জনপ্রিয় সিনেমাগুলোর মুক্তি পিছিয়েছে। যেমন জেমস বন্ড সিরিজের ছবি, সুপার হিরো-হিরোইনদের সিনেমাগুলো সাহস করতে না এ পরিস্থিতিতে পর্দায় আসতে। 

তবে দেশের সনেমার সংকট আরও আছে। দেশে বেশ কিছু ভালো সিনেমা নির্মিত হয়েছে এবং মুক্তির জন্য অপেক্ষা করছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম মিশন এক্সট্রিম, শান, অপারেশন সুন্দরবন, হাওয়া, ক্যাসিনো, মেকআপ, বিশ্ব সুন্দরী, জ্বীন, পরাণ, ইত্তেফাক, বিক্ষোভ, আকবর-ওয়ান্স আপন অ্যা টাইম ইন ঢাকা, ঢাকা ২০৪০, আনন্দ অশ্রু, মিশন সিক্সটিন, পাপ-পুণ্য, বিউটি সার্কাসসহ আরও কিছু। 

একসঙ্গে এতোগুলো সম্ভাব্য ভালো সিনেমা কমই থেকেছে মুক্তির অপেক্ষায়। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি এই সিনেমাগুলোর ওপরেই মোটামুটি ভর দিয়ে দাঁড়াতে চাইবে ঢাকাই সিনেমা। কিন্তু দর্শক খরায় যদি সিনেমাগুলো তেমন ব্যবসা না করতে পারে, তাহলে উদ্ভ্রান্ত ঢাকাই সিনেমার কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে কী?

আচ্ছা ধরে নিলাম দর্শকরাও হলে যাচ্ছেন ছবিগুলো দেখতে। কিন্তু জানা গেছে করোনা পরবর্তী সময়ে খুলতে পারে পঞ্চাশটি সিনেমা হল। এত কম সংখ্যক সিনেমা হলে প্রদর্শিত হয়ে সেই সিনেমা কী আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারবে? অনেকে ভাবতে পারেন, দর্শক হলে যাওয়া শুরু করলে হলের সংখ্যাও বারবে। হ্যাঁ, তা কিছুটা বারতে পারে। কিন্তু যে হল বন্ধ হয়ে গেছে, একটি সিনেমা ভালো ব্যবসা করছে বলে, পরের অনেকগুলো ছবি ভালো ব্যবসা করবে, এই সমিকরণে হল মালিকরা সিনেমা হল নাও খুলতে পারেন।

পুরনো হল মালিকেরা বা নতুন উদ্যোক্তারা যেন সিনেমা হল বা সিনেপ্লেক্স বানাতে পারেন, সেজন্য তহবিল গঠন করছে সরকার। ধরেই নিলাম দেশে আশানুরূপ সিনেমা হল তৈরি হলো। কিন্তু সেই হলে চালানের মতো যথেষ্ট পরিমাণ সিনেমা দেশে নির্মিত হয় না অনেকদিন হলো। তাহলে অনেক সিনেমা হল দিয়েই বা কী হবে? এখানেও যদি কোনো খরাপ উদাহরণ তৈরি হয়, তাহলে কী আর চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?

হয়ত এই হল খোলার ঘোষণা বা সরকারি প্রনোদনা দিয়েও সিনেমাশিল্পকে একটি লাভজনক ও সৃজনশীল শিল্পে পরিণত করা যাবে না। আবার এর উল্টোও হতে পারে। যেমন ধ্বংসস্তুপ থেকে জন্ম নেয় নতুন কোনোকিছু। 

তবে তার জন্য চাই সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা। যার কিছু বিষয় এর মধ্যে আলোচনা করেছেন সিনেমা সংশ্লিষ্টরা। যেমন সরকারি প্রনোদনায় যে সিনেপ্লেক্সগুলো নির্মিত হবে, সেগুলো কম আসন সংখ্যার হতে পারে। তবে সিনেমা হল নিয়ে খুব বেশি আলোচনা করার চেয়ে সিনেমা নিয়ে আলোচনাই এখন মূখ্য। কারণ, ইফতেখার উদ্দিন নওশাদের ভাষ্য মতে, ভালো সিনেমা তুলনামূলক বাজে সিনেমা হলে বসেও দর্শকরা দেখেন। কিন্তু জরুরি শেষমেশ সেই ভালো সিনেমাটা। 

যে সিনেমাগুলো মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে, সেগুলো তাড়াহুড়ো করে মুক্তি না দিয়ে, নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে, নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করে মুক্তি দেয়াটা খুব জরুরী। আর যে সিনেমাগুলো এই সময়ে নির্মিত হবে, সেই সিনেমাগুলো পরিকল্পনা মাফিক খরচে, বাজার যাচাই করে নির্মাণ করলে হয়ত প্রযোজক ক্ষতির মুখে পরবেন না। এমনটাই মনে করছেন দেশীয় চলচ্চিত্রের বিভিন্ন মহলের গুণীজনেরা।  

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank