শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১ || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

রহনপুরে করোনা নিয়ে ঘোরাঘুরি, দায় কার?

স্থানীয় প্রতিনিধি

১৮:১০, ১০ জুন ২০২১

৫০৮

রহনপুরে করোনা নিয়ে ঘোরাঘুরি, দায় কার?

করোনা ভাইরাস
করোনা ভাইরাস

বাশার ( ছদ্ম নাম) পেশায় ব্যবসায়ী। বয়স ৩৫। গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুরের বাসিন্দা। বেশ কিছুদিন ধরে শরীরে জ্বর আর শ্বাসকষ্ট অনুভব করায় গত ৫ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, রহনপুরে করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করান। সেখান থেকে ৫ মে তাকে ব্যবস্থপত্র দেয়া হয়, অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় তার রেজাল্ট আসে নেগেটিভ।

স্বস্তি পেয়ে বাশার পরের দিন বাজারে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান। বিকাল ৫ টা পর্যন্ত ব্যবসা করেন। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দেন। মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েন। কাঁচা বাজারে গিয়ে বাজার করেন। কেবল এক দিনই নয়, এরপর কয়েকদিন ধরে তার দিন চলেছে অনেকটা একই রোটিনে। গতিবিধিও ছিলো একইরকম। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে গত ৮ জুন থেকে। ওই দিন তার বাড়িতে আসেন রহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রতিনিধি। সেসময়ও বাশার বাইরে ছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায়। বাড়িতে তার স্ত্রীকে জানানো হয়- বাশারের করোনার পজিটিভ। জানানো হয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বাশারের নমুনা রিয়াল টাইম পলিমারেস চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) পরীক্ষা করে করোনা পজিটিভ রেজাল্ট পাওয়া গেছে। বাশারকে বাড়িতে থাকার ও চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওই কর্মী। দ্রুত বাশারের খোঁজ পড়ে। এবং তাকে বাড়িতে ডেকে পাঠানো হয়। এবং সেদিন থেকে বাশার বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জে গোমস্তাপুরে করোনা পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনও শেষ হয়েছে মাত্র কয়েকদিন আগে। এখনো কিছু শর্তে লকডাউন চলছে। এরকম ভয়ংকর পরিস্থিতিতে এমন একটি ঘটনা টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। আর এলাকাবাসী এতে শঙ্কিত। এন্টিজেন্ট টেস্ট করিয়ে নেগেটিভ রেজাল্ট নিয়ে করোনা রোগী ঘোরাফেরা বিষয়ে প্রশাসনের করণীয় কিছু আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। 

করোনা আক্রান্ত ওই যুবক বাংলাকে জানান, তার শরীর খারাপ থাকায় গত ৫ জুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এন্টিজেন্ট টেস্ট করান। এটি নেগেটিভ এসেছিল। তাই তিনি বাইরে ছিলেন। তিনি জানতেননা পরে আবার রেজাল্ট পজিটিভ আসতে পারে। এসব বিষয়ে তার কোন ধারণা নেই। তাকে কেউ ধারণাও দেইনি। ৮ জুন তিনি জানতে পারেন তার আসলে করোনা পজিটিভ। সেদিন রাত থেকেই তিনি বাড়িতে আছেন। সব কিছু মেনে চলছেন। 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. হাসান আলী এ বিষয়ে জানান, র্যাপিড এন্টিজেন্ট টেস্ট করে তার রেজাল্ট নেগেটিভ আসে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শুধুমাত্র এন্টিজেন্ট পরীক্ষা করা হয়। এন্টিজেন্ট টেস্টে নেগেটিভ আসলেও পরে পিসিআর টেস্টে যে পজিটিভ আসবেনা এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। করোনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য টেস্টটির নামই আরটি পিসিআর টেস্ট। বাশারের বেলাতেও এমন হয়েছে। তার এন্টিজেন্ট নেগিটিভ কিন্তু পিসিআর টেস্টে পজিটিভ এসেছে। তাই তাকে বাড়িতে বিধি নিষেধ মেনে থাকতে বলা হয়েছে। 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ( ইউএচও) মাসুদ পারভেজ জানান, করোনার উপস্বর্গ থাকলেই রোগীকে বিধি নিষেধ মেনে চলার কঠোর নির্দেশনা আছে। এন্টেজেন্ট টেস্টে নেগেটিভি আসলেই রোগীকে বাইরে ঘোরাফেরা করা একদম অনুচিত। মূল রেজাল্ট না আসা পর্যন্ত সবাইকে নিয়ম মেনে চলতে হবে।

এলাকাবাসী বুঝতে পারছেন না তারা কাকে দুষবেন বাশারকে নাকি উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনকে? 

বাশার (ছদ্মনাম) ফোনে অপরাজেয়বাংলাকে আরো জানান, তিনি হাসপাতালে করোনা টেস্ট করাতে গিয়ে কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালি ভাব দেখে হতাশ হয়েছেন। টেস্ট করতে যাওয়া সাধারণ মানুষদের ধমকানোই যেনো তাদের প্রধান কাজ, অভিযোগ এই রোগীর। তিনি বলেন, টেস্ট করাতে গিয়ে কে করোনা রোগী আর কে সাধারণ মানুষ তা বোঝা যায়না। সবাই এক জায়গায় ঘোরাঘুরি বা গাদাগাদি করে বসে থাকেন। 

করোনা টেস্ট করে ফেরার পর কি কি করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টেস্ট করিয়ে তিনি তার বাড়িতে চলে যান। লকডাউন থাকার কারণে বের হননি। পরে ৭ জুন লকডাউন শিথিল হলে তিনি রহনপুর বাজারে গিয়ে চায়ের স্টলে বসে চা খান। সেসময় তার আশেপাশে পরিচিত অনেকেই ছিলেন। চা খাওয়া শেষ করে নিজের দোকান খোলেন। কয়েকজন পরিচিত কাস্টমার আসেন তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করেন। এরপরে দুপুরে তিনি রহনপুর বাজার মসজিদে গিয়ে জোহরের নামাজ পরেন। সেসময় তার আশেপাশে পরিচিত অনেকেই ছিলেন।

করোনা রোগী হয়ে বাইরে ঘোরাফেরা করা কি উচিৎ হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অ্যান্টিজেন টেস্টে তাকে যখন নেগেটিভের কাগজ দেয়া হলো, তিনি মনে করেছিলেন এটাই ফাইনাল রিপোর্ট। তাই তিনি বাইরে গিয়েছিলেন। পরিচিত অনেককে তার করোনা নেগেটিভ লেখা কাগজটিও দেখিয়েছিলেন। পিসিআর রিপোর্ট সম্পর্কে তাকে আগে ধারণা দেয়া হলে অবশ্যই তিনি বাইরে ঘোরাফেরা করতেন না।

করোনা রোগী যার যার মেলামেশা করেছেনতাদের চিহ্নিত করে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ওই ব্যক্তি যাদের সঙ্গে দুইদিন মেলামেশা করেছেন তাদের পরিচয় জেনে তাদেরকেও চিকিৎসার আওতায় আনা হবে। কাজ শুরু করেছেন তারা। বলেন, এ বিষয়গুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিশনাররা অনেক আগে থেকেই কাজ করছেন।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
স্পটলাইট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত