বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ || ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

হঠাৎ হানা করোনা 

খ ম হারূন

১৩:০৬, ২৫ জানুয়ারি ২০২২

আপডেট: ১৩:২৪, ২৫ জানুয়ারি ২০২২

৮৭২

হঠাৎ হানা করোনা 

এভাবে হঠাৎ করোনা হানা দেবে কখনো ভাবিনি। করোনার শুরু সেই ২০২০’র মার্চ থেকেই ছিলাম অত্যন্ত সতর্ক। প্রথম ছয় মাসতো বাসা থেকেই বের হয়নি। অফিস, ক্লাস, সভা-সম্মেলন সব অনলাইনেই চলছিলো। এরপর আস্তে আস্তে অফিসে যেতে শুরু করলাম ডাবল মাস্ক পরে সপ্তাহে দু’চার দিন। সুযোগ বুঝে খুলনা থেকে ঘুরে এলাম। বাবা মা থাকেন। না যেয়ে থাকতে পারিনা।  

এরপর ভ্যাকসিন এলো। প্রথমেই দু ডোজ ভ্যাকসিন নিলাম ২০২১ এর ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিলে। তারপরও অফিসে ডাবল মাস্ক পরেই আসা যাওয়া করতাম। সকলের প্রতি কড়া নির্দেশনা। এই প্রায় দু’বছর সময় কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যাইনি। শুধু গত বছর ২৫ ডিসেম্বর গিয়েছিলাম বিটিভির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকির অনুষ্ঠানে। সকালে চ্যানেল আই ও বিকেলে বিটিভিতে। শীতের পিঠার আয়োজন ছিলো কিন্তু মাস্ক খুলিনি। এতো সুন্দর আপ্যায়ন, শুধু চোখে দেখেই স্বাদ মিটিয়েছি। এর মাঝে বুস্টার ডোজ দেবার এসএমএস এলো। ৩ জানুয়ারি ২০২২ এ তাও সম্পন্ন করা হলো। বলে রাখি বুস্টার ডোজ দেবার পর সাহস অনেকটাই বেড়ে গেল। ডাবল মাস্কের বদলে একটা মাস্কেই চলাচল শুরু করলাম। গাড়ী ব্যস্ত থাকলে মাঝে মাঝে উবারে অফিসে যাতায়াত করতাম। ভাবলাম খুলনায় আরেকবার না গেলেই নয়।  

পিতা (আলী আহমেদ খান চৌধুরী) এবছর ১০১ ছুঁয়েছেন। মাথা ভর্তি অধিকাংশই কালো চুল। সব কটি দাঁত এখনো অটুট। স্মৃতিশক্তিতে কোনো আঁচর পরেনি। তবে প্রায় সারাক্ষন বিছানাতেই থাকেন। একা একা হাটাচলা করতে অসুবিধা হয়। অথচ তিন-চার বছর আগেও একা একা দোতলা থেকে নেমে মসজিদে যেতেন। বাসায় কেউ এলে নিজেই দরজা খুলে দিতেন। আর মা (লতিফুন নেতা) ৯২ পার করেছেন। একা একা চলাফেরা করতে তার তেমন কোনো অসুবিধা নেই। তবে স্মৃতিশক্তি তার প্রতি সদয় নয়। একই কথা বারবার জানতে চান। নিজের অনেক নিকটজনের কথা ভুলে গেছেন। কিন্তু নিজের নানা, বাবা-মার কথা ভালোভাবে মনে আছে। ছোটোবেলায় দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এসব জায়গার অনেক কাহিনী এখনো তিনি গল্পের মতো বলে যান। 

ঠিক করলাম খুলনা যাবো। বাবা-মার কাছে। জেবু বললো সেও যাবে। এর আগে ১১ ও ১২ জানুয়ারি আমাদের দুজনকে বাসার কাছে একটি ব্যাংকে যেতে হয়েছিলো। এজিএমের রূমে বসে কাজ শেষ করে চলে এসেছি। শুনেছি সেখানকার একাধিক কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাই ব্যাংকে জনবল কম।  

১৬ জানুয়ারি ২০২২, দুপুরের আগেই খুলনা পৌঁছে গেলাম। প্রায় এক মাস আগে আমার ছোটো বোন লিপি অস্ট্রেলিয়া ফিরে গেছে। সে ও তার স্বামী দুজনে খুলনা এসেছিলো ২০২০’র ফেব্রুয়ারিতে। মার্চে ফেরার কথা ছিলো। কিন্তু করোনার কারনে যাওয়া হয়নি। এক বছর দশ মাস তারা বাবা-মার কাছেই ছিলো আমাদের বাড়ি লতাকুন্জে।  যখনই খুলনা গেছি অতিথির মতো গেছি, সাতদিন আটদিন থেকে চলে এসেছি। তারা চলে যাবার পর মেঝো বোন রোজী এসে থেকেছে। এখন ঢাকা থেকে বড় বোন রূনুবু এসেছে। আমি নিজেদের বাড়ীতে পৌঁছে আগে তিনতলায় নিজরূমে চলে গেলাম। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে নিচে নেমে বাবা-মার সাথে দেখা করলাম। অনেক খাবারের আয়োজন করে রেখেছে বড় বোন। বিকেলের পর অনেকেই দেখা করতে এলো। বাড়ীর উদ্যানটা দেখে মনটা ভরে গেলো। ফুলের গাছ। ফলের গাছ। সব্জি। আম গাছে মুকুল আসি আসি করছে। গাছে পেয়ারা। কলা। লেবু। লালশাক, ফুল কপি, বাঁধা কপি, ওল কপি। বাগানের পরিচর্যা করে দুজন বিশ্বস্ত লোক খলিল ও বশীর। তাদের বাসার সব্জিও তারা এখান থেকে নিয়ে যেতে পারে যখন যা লাগে।  

১৯ জানুয়ারি ছিলো জেবুর বাবা মাহবুবুর রহমান ও ভাই মজিবুর রহমান দিলুর মৃত্যুবার্ষিকী। সে বাড়ীর কাজের লোকদের জন্য কিছু করতে চায়। একমাঝে ১৭ তারিখ থেকেই আমার কাঁশি দেখে জেবু বিচলিত হয়। তিনতলা থেকে নামা বন্ধ হয়ে যায়। খাবার দাবার সব আমার ঘরে চলে আসে। ঘরের দুদিকেই বিশাল ছাদ। সেখানে হাঁটাচলা করে অক্সিজেন আর রোদ দুটোই উপভোগ করি। ১৮ তারিখ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে একজন মেডিকেল সহকারী এসে কভিডের স্যাম্পল নিয়ে যায়। রাতেই জানিয়ে দেয় করোনা পজিটিভ। হঠাৎ জেনো সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। দোতলায় বৃদ্ধ বাবা মা। গলা শুকিয়ে যেতে থাকে। ঘন ঘন পানি খেতে থাকি। জেবু সিদ্ধান্ত দেয় রিস্ক নেয়া যাবে না। ঢাকা ফিরে যেতে হবে। পরদিন সকালেই গাড়ী চলে আসে। বড় বোনকে জানিয়ে বাবা-মাকে না বলে ঢাকার পথে রওনা হই। 

শরীরে তেমন ক্লান্তি নেই। জেবু ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ফোন দিয়ে সব জানায়। তিনি সরাসরি হাসপাতালে চলে আসার পরামর্শ দেন। কেবিন রেডি থাকবে আশ্বস্ত করেন। বিকেলের মধ্যে হাসপাতালের কেবিন ব্লকের সামনে গাড়ী দাড়ায়। সেখানে আগে থেকেই আমাদের ড্রাইভার সাগর অপেক্ষা করছিলো। আমরা খুলনা যাবার সময় তাকে ছুটি দিয়ে গিয়েছিলাম। সে খবর পেয়ে আগেই চলে এসেছে। সরাসরি ছয়তলায় আমাদের নির্ধারিত কেবিনে নিয়ে গেলো হাসপাতালের একজন সেবক। রূমে ঢুকলাম। শুনলাম কাছের কেবিনগুলোতে আছেন বাংলাদেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ আরো কয়েকজন।  

নানা ধরনের টেস্ট চললো। ২০ জানুয়ারি পিসিআর টেস্ট। ডাক্তার আরো নিশ্চিত হতে চান। আমার কাঁশিটা কখনো বেশী, কখনো কম। ২২ জানুয়ারি রাতে ম্যাসেজ আসলো আমরা দুজনেই করোনা নেগেটিভ।  

খ ম হারূন: টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank