বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০ || ১৬ রমজান ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

বন্যায় সুরক্ষিত ও সুস্থ থাকতে করণীয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক

১৪:৩৪, ২০ জুন ২০২২

আপডেট: ১৪:৩৯, ২০ জুন ২০২২

১৮২৭

বন্যায় সুরক্ষিত ও সুস্থ থাকতে করণীয়

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে বন্যা অন্যতম। বর্তমানে সিলেটসহ দেশের আরও কিছু অঞ্চল বন্যা প্লাবিত। যে কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। আর্থিক অবস্থা যেমনই থাক, এই দুর্গতি কম-বেশি সবার। বন্যা মোকাবিলায় নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা করতে হবে সবার আগে। সুস্থভাবে বেঁচে থাকলে পরবর্তীতে সবকিছু সামলে রাখা যাবে। এ জন্য নিতে হবে সতর্কতামূলক নানা পদক্ষেপ। 

এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় হৃদরোগ ইন্সেটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আনোয়ার হোসেন খান।

বিশুদ্ধ পানি

বন্যার সময় পানির উৎস হওয়ায় তা ভালোমতো ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে পান করাসহ গৃহস্থালির অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করতে হবে। বন্যার পানিতে টিউবওয়েল তলিয়ে গেলে এক কলস পানিতে তিন-চার চা চামচ ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে টিউবওয়েলের ভেতর এই পানি ঢেলে দিন। এবার আধা ঘণ্টা রেখে এরপর একটানা আধা ঘণ্টা চেপে পানি বের করে ফেলে দিলে সেই পানি খাওয়ার উপযোগী হয়।

আর ব্লিচিং পাউডার না থাকলে এক ঘণ্টা টিউবওয়েলের পানি চেপে বের করে ফেলতে হবে। তবে নিরাপত্তার জন্য টিউবওয়েলের পানিও ভালোমতো ফুটিয়ে নেওয়া উচিত। এবং পানি একটানা ৩০ মিনিট ফুটিয়ে তারপর ঠাণ্ডা করতে হবে।

কিন্তু পানি ফোটানোর ব্যবস্থা না থাকলে প্রতি দেড় লিটার খাওয়ার পানিতে ৭.৫ মিলিগ্রাম হ্যালোজেন ট্যাবলেট (হ্যালো ট্যাব), তিন লিটার পানিতে ১৫ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট এবং ১০ লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা রেখে দিলে পানি বিশুদ্ধ হয়। আবার বাসার পানির ট্যাংকের প্রতি এক হাজার লিটার পানিতে ২৫০ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার এক ঘণ্টা রাখলে পানি বিশুদ্ধ হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ভাইরাস জীবাণু ধ্বংস হয় না।

ডায়রিয়া প্রতিরোধে

বন্যায় প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা হলো ডায়রিয়া। এ জন্য খাওয়ার আগে এবং পায়খানা করার পর হাত ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে। ডায়রিয়া শুরু হলে পরিমাণমতো খাওয়ার স্যালাইন খেতে হবে। দুই বছরের কম শিশুকে প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ১০-১২ চা চামচ এবং ২ থেকে ১০ বছরের শিশুকে ২০ থেকে ৪০ চা চামচ খাওয়ার স্যালাইন দিতে হবে। খাওয়ার স্যালাইন না থাকলে বিকল্প হিসেবে লবণ-গুড়ের শরবত খাওয়াতে হবে।

পাশাপাশি ভাতের মাড়, চিঁড়ার পানি, ডাবের পানি, কিছু পাওয়া না গেলে শুধু নিরাপদ পানি খাওয়ানো যেতে পারে। এ সময় শিশুর পুষ্টিহীনতা রোধে খিচুড়ি খাওয়ানো যেতে পারে। ভিটামিন `এ` ক্যাপসুলও খাওয়ানো যেতে পারে। যদি পাতলা পায়খানা ও বমির মাত্রা বেড়ে যায়, তাহলে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।

খাবার গ্রহণে সতর্কতা

বন্যায় সময় পচা-বাসি খাবার খেতে বাধ্য হয় অসংখ্য মানুষ। ফলে ছড়িয়ে পড়ে ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগ। খিচুড়ি খাওয়া এ সময় স্বাস্থ্যোপযোগী। খাবার প্লেট সাবান ও নিরাপদ পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। পানি বেশি খরচ হয় বলে অনেকে প্রথমে একবার স্বাভাবিক পানিতে থালাবাসন ধুয়ে তারপর ফুটানো পানিতে ধুয়ে নেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। এতে থালাবাসনে অনেক ধরনের জীবাণু ছড়িয়ে।

মলত্যাগে সতর্কতা

বন্যার সময় যেখানে-সেখানে মলত্যাগ করা উচিত নয়। এতে পেটের পীড়া ও কৃমির সংক্রমণ বেড়ে যায়। সম্ভব হলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে মলত্যাগ করতে হবে এবং মলত্যাগের পরে সাবান বা ছাই দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। মলত্যাগের সময় কখনো খালি পায়ে থাকলে বক্রকৃমির জীবাণু শরীরে সংক্রমিত হয়। এ সময় বাসার সবাইকে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো উচিত। তবে দুই বছর বয়সের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

দুর্ঘটনা থেকে সাবধান

বন্যার সময় আকস্মিক নানা দুর্ঘটনা ঘটে। সাধারণত বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা, পানিতে ডুবে যাওয়া, সাপ ও পোকামাকড়ের কামড়ের ঘটনাগুলো বেশি ঘটে। বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেলে বা পানিতে পড়ে থাকতে দেখলে তা স্পর্শ না করে বিদ্যুৎকর্মীদের জরুরিভাবে খবর দিতে হবে। সাপ ও ইঁদুর তাদের আবাস হারিয়ে শুকনো স্থানে মানুষ ও গবাদি পশুপাখির সঙ্গে অবস্থান নেয়। এ জন্য সাপ ও ইঁদুরে কাটার পরিমাণ বেড়ে যায়। বিষহীন সাপে কাটলে ভয়ের কিছু নেই। তবে বিষধর সাপে কাটলে সাপে কাটা স্থানের সামনে মোটা কাপড় বা গামছা বা রশি দিয়ে দিয়ে গিঁট দিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে অ্যান্টিভেনম এবং টিটেনাস প্রতিষেধক দিতে হবে। ইঁদুরে কাটলেও অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

পরবর্তী সতকর্তা

বন্যা-পরবর্তী সময়ে মানুষ (দুই বছরের নিচের শিশু ব্যতীত) ও গবাদিপশুকে কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে। শামুক মানুষ ও পশুপাখির বিভিন্ন পরজীবীর বা কৃমির মধ্যবর্তী পোষক হিসেবে কাজ করে। এসব শামুক হাঁসের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা এগুলোকে নিধন করতে হবে। এ ছাড়া কৃমিনাশক ওষুধ নিয়মিতভাবে চার থেকে ছয় মাস অন্তর খাওয়াতে হবে।

 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank