শনিবার   ১৮ মে ২০২৪ || ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

খুবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বরখাস্ত ও বহিষ্কার প্রতিবাদে চার দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

১৮:৫৮, ২৫ জানুয়ারি ২০২১

আপডেট: ১৯:০৪, ২৫ জানুয়ারি ২০২১

৭৫২

খুবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বরখাস্ত ও বহিষ্কার প্রতিবাদে চার দাবি

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিহিংসামূলকভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বরখাস্ত ও বহিষ্কারের প্রতিবাদে অনলাইন সংবাদ সম্মেলন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। সোমবার (২৫ জানুয়ারি) এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে আগামী ২৮ জানুয়ারি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে দুপুর ১২টা থেকে শিক্ষার্থী-শিক্ষক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

এসময় তারা চারটি দাবি জানিয়েছে। দাবিগুলো হলো- 
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শাস্তি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ সব অভিযোগের তদন্ত করতে হবে।
অযোগ্য-দুর্নীতিবাজ ভিসি নিয়োগ বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা বিধিতে গণতন্ত্রায়ণ ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের পক্ষে দাঁড়ানোর ‘শাস্তি’ হিসেবে শিক্ষকদের ভয় দেখানো বন্ধ করতে হবে।

এক বিবৃতিতে শিক্ষক নেটওয়ার্ক জানায়-
‘মাত্র তিন দিন আগে আমরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতিহিংসামূলক আচরণের প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। আমরা একইসঙ্গে অপেক্ষা করছিলাম যে, ২৩ জানুয়ারি সিন্ডিকেটের সভায় প্রশাসনের শুভবুদ্ধির উদয় হবে কিংবা সভাসদের কেউ কেউ এই গুরুতর অন্যায় ও হিংস্রতার প্রতিবাদ করে শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিরত রাখতে সমর্থ হবেন। আবার আমরা গত মাসগুলোতে এই কর্তৃপক্ষের তৎপরতা থেকে আশঙ্কা বোধও করছিলাম যে, শায়েস্তা করবার ও ভয় দেখানোর যে সংস্কৃতি তারা জারি রেখেছেন, তাতে হয়তো প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার সিদ্ধান্তই জানানো হবে। পরিশেষে আমাদের আশঙ্কা সত্যি হলো।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করার কারণ দেখিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল ফজলকে চাকরি থেকে বরখাস্ত, ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী এবং বাংলা বিভাগের প্রভাষক শাকিলা আলমকে চাকরি থেকে অপসারণ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার ‘খুবির এক শিক্ষক বরখাস্ত, দুজনকে অপসারণ’ শীর্ষক সংবাদ থেকে জানা যায়, ‘শনিবার বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ২১২তম সভায় এ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’ তবে এ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর এক কর্মদিবস পার হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত ভুক্তভোগী শিক্ষকদের হাতে চূড়ান্ত চিঠি পৌঁছায়নি।
ভুক্তভোগী শিক্ষক আবুল ফজল এ বিষয়ে জানার জন্য রেজিস্ট্রারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, রেজ্যুলেশন তৈরি না হওয়ায় চিঠি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক মনে করে, রেজ্যুলেশনের দোহাই দিয়ে সময়ক্ষেপণ করে তাদেরকে আবারও হয়রানি করা হচ্ছে, যেমনটা করা হয়েছে গত তিনমাস ধরে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি তার সহচরদের নিয়ে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে শিক্ষকদেরকে এরূপ হেনস্তা করছেন। নিয়মতান্ত্রিকতা এবং আইনের দোহাই দিয়ে প্রশাসন অনবরত মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। কারণ নির্যাতিত শিক্ষকদেরকে একের পর এক কারণ দর্শানোর নোটিশ এবং ব্যাখ্যা প্রদান চেয়ে চিঠি দিলেও প্রশাসন কোনো অভিযোগ বিবরণী তাদেরকে সরবরাহ করেনি। অভিযোগকারীরা নিজেরাই তাদের দোষ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জ্ঞাত হতে পারেননি। অথচ অভিযোগ সম্পর্কে তথ্যপ্রাপ্তি অভিযুক্তের আইনানুগ অধিকার। চূড়ান্ত কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দেওয়ার জন্য তিন জন শিক্ষককে সময় দেওয়া হয়েছে মাত্র দেড় কর্মদিবস। আইনত অভিযুক্তদেরকে ন্যূনতম সাত কর্মদিবস সময় দিতে হয় জবাব দেওয়ার জন্য। তাদেরকে যে অযৌক্তিক অভিযোগ দিয়ে নাটকীয় শাস্তি প্রদান করা হলো, সে শাস্তির উদ্দেশ্যে গঠিত হওয়া তদন্ত কমিটি ধোঁয়াটে এবং সিন্ডিকেটের ভূমিকাও পূর্বপরিকল্পিত বলে প্রতীয়মান হয়ে এসেছে। উপরন্তু, তদন্ত কমিটির একজন শিক্ষক নিজেই সিন্ডিকেট সদস্য। আবার অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে থাকা একজন সাক্ষীও সিন্ডিকেট সদস্য। কেবল সাংগঠনিক-প্রশাসনিক বিধিবিধানের দিক থেকে দেখলেও এই অবস্থাকে প্রহসন ছাড়া আর কিছু বলার উপায় নেই।

আবার তদন্ত করার নাম নিয়ে তদন্ত কমিটি লাগাতার মিথ্যাচারেরও আশ্রয় নিয়েছে। কথিত তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত শিক্ষকদের ১০ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে বলা হয়েছিল তারা কোন মাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করবেন এবং ১২ জানুয়ারি তাদের উত্তর প্রদান করবেন। উল্লেখ্য, শিক্ষকেরা ১০ জানুয়ারি প্রথমে ইলেকট্রনিক মেইলে এবং পরবর্তীতে সরাসরি তদন্ত কমিটির কাছে চিঠি দিয়ে আসেন এবং ১২ জানুয়ারিতেই তাদের উত্তর প্রদান করেন। কিন্তু তদন্ত কমিটিকে যথাসময়ে না জানানোর অজুহাতে তাদের বক্তব্য গৃহীত হয়নি। বরং তদন্ত কমিটি অভিযুক্তদের ডাকার আগেই অজ্ঞাতে-অসাক্ষাতে অন্যান্যদের সাক্ষ্য নিয়েছে। অথচ অভিযুক্তের অসাক্ষাতে সাক্ষ্য নেওয়া যায় না। সাক্ষ্যের অনুলিপি চাওয়া হলেও তদন্ত কমিটি তা দেয়নি। তাদের মিথ্যাচার এবং অমানবিকতার দৃষ্টান্ত আরও আছে। অভিযুক্ত শিক্ষক আবুল ফজল ২১ ডিসেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় প্রশাসন তাকে চারটি চিঠি দিয়েছে। সেখানে সময় দেওয়া হয়েছে এক কার্যদিবস বা অর্ধকার্যদিবস। তার অসুস্থতাকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য সিভিল সার্জনের ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট ব্যবহার করে তাকে হয়রানি করা হয়েছে। ভুয়া সার্টিফিকেটের বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করেছেন জনাব ফজল, যার ফলে পরে সেই চিকিৎসক দুঃখপ্রকাশ করেন তার কাছে। এই সব ঘটনা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অশনি সঙ্কেত দিচ্ছিল যে, কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত হিংস্র একটা রাস্তা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসের কয়েকজন সাহসী, অন্যায়ের প্রতিবাদকারী, গণতন্ত্রমনা এবং শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষককে শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে ক্যাম্পাসকে দুর্নীতির অভয়ারণ্য বানানোর চেষ্টা এগুলো।


বিবৃতিতে বলা হয়, এসব কিছুর সূচনা ঘটেছিল শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে কিছু শিক্ষকের সংহতি জানানোর মাধ্যমে। শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবির মধ্যে আবাসিক সঙ্কট সমাধানের মতো দাবি ছিল। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের আবাসিক সমস্যার সমাধান চান না। কারণ তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আবাসনের দায়মুক্ত করার যে সর্বাত্মক চক্রান্ত চলছে, সেই চক্রান্তের একটা পক্ষ। আমরা এটাও মনে রেখেছি যে, আবুল ফজল, হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী এবং শাকিলা আলম আরও কিছু শিক্ষকসমেত এই আন্দোলনে সংহতি জানানোর মাধ্যমে শিক্ষকের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য পালন করেছিলেন। কর্তৃপক্ষ তখন থেকেই সংহতি জানানো শিক্ষকদের মধ্য থেকে টার্গেট বাছাই করে ফেলে। কারণ তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জনদায়িত্বমূলক ভূমিকা বজায় রাখতে দিতে চান না। পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণে সুচতুর ও সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর দুর্নীতির খবর আমরা জেনেছিলাম। এইসব শিক্ষক ছিলেন শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থের পক্ষে এবং পুকুরচুরির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ঠিকাদার-প্রশাসনের ঐক্যের বিরুদ্ধে। ফলে এই শাস্তির কার্যকারণ সম্পূর্ণ স্বার্থান্বেষী ও প্রতিহিংসামূলক। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও দুজনকে প্রশাসন টার্গেট করেন ও বহিষ্কার করেন। সেই শিক্ষার্থী দুজন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক নিশ্চিত হয়েছে যে, শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করার জন্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করে বর্তমান প্রশাসন তার সব স্বেচ্ছাচারিতার ইতিহাস চাপা দিতে চেয়েছে। প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিস্তর দুর্নীতি এবং কতিপয় শিক্ষকের নামে যৌন হয়রানির অভিযোগ গণমাধ্যমে উঠে আসার পর সবার মনোযোগ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য প্রশাসন গর্হিত এ কাজটি করেছে। আমরা এও মনে করি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গণতান্ত্রিক চেতনা ও স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করার এক সুবিশাল চক্রান্তের অংশ এগুলো। আমরা অনতিবিলম্বে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন জন শিক্ষক ও দুজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক শাস্তি উঠিয়ে নেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। এই শাস্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল সার্বভৌম শিক্ষকদেরকে একটা ভয় প্রদানের সঙ্কেত দিচ্ছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশের শিক্ষায়তনগুলোকে আরও ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য এইসব অর্থলোভী, অগণতন্ত্রী, প্রতিহিংসাপরায়ণ ব্যক্তিদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক দায়িত্ব না দিতে দাবি জানাচ্ছি। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের ভবিষ্যৎ আপনাদের হাতে। আমরা সবাইকে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আহ্বান জানাই।
 

 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত