শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

‘তিনি তখনও আইন জানতেন না, এখনও জানেন না’

১৩:৪৭, ৯ অক্টোবর ২০২০

আপডেট: ১৩:৫২, ৯ অক্টোবর ২০২০

১৯৯৮

‘তিনি তখনও আইন জানতেন না, এখনও জানেন না’

বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের এক দুর্দান্ত দুঃসাহসী স্পাই। গোপন মিশন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় দেশ-দেশান্তরে। বিচিত্র তার জীবন। অদ্ভুত রহস্যময় তাঁর গতিবিধি। কোমল কঠোরে মেশানো নিষ্ঠুর নিঃসঙ্গ এক অন্তর। একা, টানে সবাইকে, কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না। কল্পনার দুর্দান্ত, রোমহর্ষক আর রোমাঞ্চকর এই মাসুদ রানার জনক কাজী আনোয়ার হোসেন। 
অন্তত সেটাই জানতেন দেশের কোটি পাঠক। কিন্তু গোল বাধালেন সেবা প্রকাশনীর আরেক লেখক শেখ আব্দুল হাকিম। তার আবেদনে গেলো ১৪ জুন মাসুদ রানার ২৬০ টি ও কুয়াশা সিরিজের ৫০ টি বইয়ের লেখক শেখ আবদুল হাকিম- এই মর্মে রায় দেয় কপিরাইট অফিস।
 এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন কাজী আনোয়ার হোসেন। কপিরাইট অফিসের সেই রায় স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এমন রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন কাজী আনোয়ার হোসেন।
 

সামগ্রিক বিষয় নিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের মুখোমুখি হয়েছিলেন পার্থ সনজয়

 

প্রশ্ন: শেখ আবদুল হাকিম আপনার সেবা প্রকাশনীতে চাকুরী করতেন, এমন কোন প্রমাণ কপিরাইট কর্তৃপক্ষের কাছে আপনি দিতে পারেননি। তাই কী?

সত্য নয়। শেখ আবদুল হাকিম যে চাকুরী করতেন তার আইডেনটিটি কার্ড কপিরাইট অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে। কপিরাইট কর্মকর্তা দেখেছেনও। কিন্তু আমলে নেননি। তার ছবিসহ স্বাক্ষর করা আইডেনটিটি কার্ড আমাদের কাছে এখনও আছে। চাইলে দেখাতে পারি।  
প্রশ্ন: শেখ আবদুল হাকিম এবং আপনার মধ্যকার ৪৫ বছরের শ্রদ্ধার সম্পর্ক এমনভাবে ভেঙ্গে পড়লো কেন?
-আমি তার নামে মামলা করিনি। আমি তার নামে নালিশও করিনি। আমি কোনো কিছু করিনি। কেন ভেঙ্গে পড়লো তা শেখ আবদুল হাকিম ভালো বলতে পারবেন। ওনার কিছু চাহিদা ছিল, যা আমি দেইনি। উনি আমার কাছে চেয়েছেন। চাইলেই তো সবাইকে সব দেওয়া যায় না। তার ২ কোটি টাকা দাবী ছিল। উনি ২০০৮ সালে সেবা ত্যাগ করেন। তার যাবতীয় পাওনা বুঝে নিয়ে স্বাক্ষর করেন ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে। এরপরই ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ২ কোটি টাকা দাবী করে বসেন তিনি। এবং দাবী না মেনে নেওয়াতেই তিনি কপিরাইট অফিসে মামলা করেছেন। ফেইসবুকে হ্যারাস করেছেন। তার ইনটেনশন ছিল, সম্মানহানীর ভয়ে আমরা তার দাবী মেনে নেবো। 
আমাদের আপত্তি রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে। রেজিস্ট্রার একটা অবৈধ আদেশ দিয়েছেন। শেখ আবদুল হাকিমের সঙ্গে তো আমার কোনো লেনদেন নেই। সে নালিশ করেছে, কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার আমাদের ওপর কিছু অত্যাচার করেছেন। স্বেচ্ছাচার করেছেন। শেখ আবদুল হাকিম সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না আমি।


    
প্রশ্ন: শেখ আবদুল হাকিম আপনার বিরুদ্ধে জেল-জরিমানা চেয়েছেন?

৭১ ধারা ও ৮৯ ধারায় শেখ আবদুল হাকিম আমার বিরুদ্ধে জেল-জরিমানা চেয়েছেন কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রারের কাছে। রেজিস্ট্রার তা আমলে নিয়েছেন। অথচ এই ধারায় বিচার করার অধিকার তার নেই। বিচার হবে জেলা ও দায়রা আদালতে। যদি শেখ আবদুল হাকিম সেখানে নালিশ করতেন, তাতে যদি রায় শেখ আবদুল হাকিমের পক্ষে যায়, তখন তিনি যেতে পারেন কপিরাইট অফিসে। কপিরাইট অফিস তখন রায়ের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। তার আগে তিনি আমার বিচারের ক্ষমতা রাখেন না।
প্রশ্ন: মাসুদ রানাকে নিয়ে এমন বিতর্ক, এর স্রষ্টা হিসেবে আপনাকে পীড়া দেয় কী?
-মাসুদ রানাকে তো সে বিতর্কিত করেনি। সে তুলে ধরেছে আমার নীচতা। আমি যে কতখানি খারাপ লোক, তাকে পয়সা দেইনি। তার লেখা আমি আমার নামে চালিয়ে দিয়েছি- এগুলো তার বক্তব্য। কিন্তু যদি আপনার সঙ্গে আমার চুক্তি থাকে, মৌখিক চুক্তি, যে আপনি কি এটা লিখতে চান? 

মাসুদ রানা, একটা সিরিজ, এর একটা কাহিনী আমি আপনাকে বলে দিয়ে বললাম, আপনি এটা লিখতে আগ্রহী কী না? আপনি বললেন, আপনি আগ্রহী। আপনি লিখবেন। তখন আমি বললাম, বিনিময়ে এত টাকা দেব। এই একবারই টাকা পাবেন। তারপর আপনি লেখার পর আপনার পান্ডুলিপি যদি পছন্দ হয়, আমি নেব। কিন্তু মাসুদ রানাকে নিয়ে, রাহাত খানকে নিয়ে বা সোহানাকে নিয়ে বা এর কোন চরিত্র নিয়ে উনি তো নিজের ইচ্ছে মতো বই লিখে যে কোনোভাবে প্রকাশ করতে পারেন না।

১৪ টি বই প্রথমে আমি লিখেছি। চরিত্রগুলো আমার সৃষ্টি করা, আবহ তৈরি করা এবং কী ধরণের অ্যাডভেঞ্চার, কী ধরণের থ্রিলার-এগুলো আমি সেট করেছি। এর মধ্য থেকেই কাজ করতে হবে। সেটা শাহাদত চৌধুরী করেছেন, হীরক চৌধুরী করেছেন, আমার ছোটভাই কাজী মাহবুব হোসেন করেছেন, আমার দুই ছেলে কাজী শাহনূর হোসেন, কাজী মায়মুর হোসেন এরা নিয়মিত করছে। ইসমাইল আরমান লিখছে। এরকম ১০ থেকে ১৫ জন লিখেছে-লিখছে। সবার সঙ্গে একই চুক্তি আমার। সিরিজটা আমার। নামটা আমার নামে যাবে। কাহিনী আমার। সত্ত¡ আমার। আপনি লিখবেন। আমি টাকা দেব। ব্যস, শেষ। এটা হচ্ছে মৌখিক চুক্তি। এটা মেনে নিয়েছেন বলেই শেখ আবদুল হাকিম ৪৩ বছর কাজ করেছেন। তা না হলে তো প্রথম বা দ্বিতীয় বইয়ের পরই তিনি সরে যেতে পারতেন।

প্রশ্ন: শেখ আবদুল হাকিম বলছেন, তখন আইন জানতাম না। এখন জানি।

তিনি তখনও আইন জানতেন না, এখনও আইন জানেন না। কারণ চুক্তিটা মৌখিক চুক্তি। এটা ভ্যালিড একটা চুক্তি। উনি যদি প্রমাণ করতে পারেন, তার লিখিত কিছু আছে, তাহলে তিনি পাবেন। কিন্তু তিনি তো লিখিত কিছু দেখাতে পারছেন না।

প্রশ্ন: এর শেষ কোথায়?

আইন তো শেষ পর্যন্ত একটা জায়গায় পৌঁছাবে। কপিরাইট কর্মকর্তা তো আইনের ধার ধারেননি। এইসব ধারায় কোনো বিচার হয় না। আর এটা বিচার করার ক্ষমতা তার নেই। তিনি করেছেন বাড়াবাড়ি। হাইকোর্ট তো তা নয়, সেখানে বিচার হবে। বিচারে আমি যদি দোষী হই, আমাকে শাস্তি দেওয়া হবে। আমাকে বলা হবে, এই ৩১০টি বইয়ের সব তার সত্ত¡। সেটা বলা হবে বলে আমি মনে করি না।
 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank