শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০ || ১৭ রমজান ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

বিশ্বজুড়ে সংবাদপত্রে ‘ট্রাম্পেরিকা’র নৈরাজ্যচিত্র

রাজীব নন্দী, শিক্ষক ও গবেষক

১১:৪৬, ৮ জানুয়ারি ২০২১

আপডেট: ১২:২৭, ৮ জানুয়ারি ২০২১

৩৪৮০

বিশ্বজুড়ে সংবাদপত্রে ‘ট্রাম্পেরিকা’র নৈরাজ্যচিত্র

লুডো খেলায় জিততে না পারলে বোর্ড উল্টে দেয়ার ঘটনা ঘটে। হাল আমলের ‘টুম্পা’ গানের কলিতে আছে- ‘আমি হেরে যাওয়ার আগেই উল্টে দেবো তাস’। যুদ্ধে নেমে পরাজয় অবশ্যম্ভাবী দেখে ময়দানের পেছন থেকে জয়দ্রথের মত কুচক্রীর খেলা চলছে সেই মহাভারতের যুগ থেকে, বাদ যায়নি আজকের ‘গণতন্ত্রের স্তাবক’ আমেরিকাও।

হ্যাঁ, বিপদে বুদ্ধি নাশের সর্বশেষ নজির দেখা গেলো মার্কিন মুলুকে। বাঙালিতো বটেই বিশ্বজুড়ে কোটি জনতা স্তদ্ধ হয়ে গেলো ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ সময় মধ্যরাত থেকে। রাতজাগা দৃষ্টি ছিলো অনলাইনের পোর্টাল আর টিভির ব্রেকিং নিউজে। কারণ, নির্বাচনে জিততে পারেননি ট্রাম্প কিন্তু গো ধরেছেন, নৈরাজ্য করছেন তার সমর্থক বাহিনী। ফলে সমালোচনার তুঙ্গে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন কফিনে শেষ পেরেক টুকে দিচ্ছেন নিজেই। কায়দা করে আমরা এই অভিনব ঘটনাকে নতুন একটি বিশেষণ দিতে পারি- ট্রাম্প+আমেরিকা= ট্রাম্পেরিকা! বলা বাহুল্য, ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার পর নিন্দার ঝড় বিশ্বজুড়ে।

আমরা জানি, ক্যাপিটল হিল যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও ঐতিহাসিক এলাকা। যেখানে মার্কিন কংগ্রেস ভবন লুথার কিংয়ের গণতন্ত্রের সৌধ উঁচু গম্বুজ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ৬ জানুয়ারি দুপুরে (বাংলাদেশস সময় ৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে) আক্রান্ত হয়েছে সেই সৌধ। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ, জো বাইডেনের ক্ষমতায়নের বৈধতা দেওয়ার পথে এটি ট্রাম্পপন্থী জনতার ‘অভ্যুত্থান’ চেষ্টা। পরদিন বিশ্বজুড়ে সংবাদপত্রের পূর্ণপৃষ্টা বা সিংহভাগ জায়গা দখল করেছে এই অভিনব ঘটনা। আমেরিকার পাশাপাশি ইউরোপ ও এশিয়ার পত্রিকাগুলোতেও বয়ে গেছে ‘ট্রাম্পেরিকার নৈরাজ্য’। বিশ্ব গত দুইদিন ধরে প্রত্যক্ষ করছে ‘ক্যাপিটাল হিল ফলেন’র ঘটনা। সেই সম্ভিত মুহূর্তটি ইতিহাসের বুকে ঠাঁই পেলো সংবাদপত্রের পৃথম পৃষ্ঠায়। আমেরিকা তো বটেই বিশ্বের একাধিক সংবাদপত্রের প্রথম পাতাজুড়ে রয়েছে এই নৈরাজ্যের প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের তথ্য কমিশনের সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান এক বাক্যে বলেছেন- Coverage of Historical Incident of Capitol Seige by Trump mob! তারই কিছু নির্বাচিত বিশ্লেষণ হাজির করা হলো পাঠকদের দরবারে।

‘‘দি ওয়াশিংটন পোস্ট’’র প্রথম পাতার ছয় কলাম জুড়ে তিনটি ছবিসহ লেখা হয়েছে Trum Mob storms Capitol (আইনসভায় ট্রাম্পের দাঙ্গা বাহিনীর ঝড়)। যেখানে প্রথম  ছবিতে দেখা যায় ক্যাপিটল এর একটি কক্ষের দরজার কাঁচ ভাঙা যার এক পাশে আক্রমনকারীরা অপর পাশে বন্দুক উঁচিয়ে রাখা তিনজন নিরাপত্তা কর্মী। অন্য একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে ক্যাপিটল এর সামনে বিক্ষোভ কারীদের উপর কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হচ্ছে এবং তিন নম্বর ছবিতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক নারী, নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্য এবং আত্মসমর্পণরত সহিংস বিক্ষোভকারী। ‘‘দি বোস্টন গ্লোব’’ এর প্রথম পাতার শিরোনাম TRUMP-INCITED MOB ATTACKS THE CAPITOL; (ট্রাম্প-প্ররোচিত দাঙাকারীদের ক্যাপিটল আক্রমণ)। এই প্রথম পাতায় দেখা যায় ক্যাপিটল এর সামনে বিক্ষোভরত জনতা তার মধ্যে কয়েকজন দেয়াল টপকে অনুপ্রবেশ এর চেষ্টা করছে।

“নিউ ইয়র্ক টাইমস”এর প্রথম পাতায় শিরোনামের মধ্যে আছে ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পের সমর্থকদের আক্রমনের সংবাদ। ব্যানার শিরোনামে আছে “ট্রাম্প জনগনকে উত্তেজিত করে: জনগনদের তাণ্ডব অবস্থায় স্থান পরিত্যক্ত করার জন্য বাধ্য করে; এটি তার ‘কিংবদন্তি’র অংশ। পরের শিরোনামগুলো হলো– “আইনজীবীরা এরিজনায় বাইডেনের জয়কে সমর্থন করছে, “প্রেসিডেন্ট এ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ী: বাইডেন, “মার্কিনিরা দ্বারে: ট্রাম্পের যুগের অনিবার্য সমাপ্তি’’, “আমাদের ভয় ছিল যুদ্ধ করে বের হতে হবে যখন তারা হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করে’, “জর্জজিয়ার জয়ে ডেমোক্রেটরা সিনেটের অধিকারে’।

‘‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল- এর প্রথম পাতায় জুড়ে আছে ক্যাপিটল হিলে উত্তেজিত জনতার আক্রমনে পরিণতির সংবাদ। ব্যানার শিরোনামে আছে– “উত্যক্ত জনতা ক্যাপিটলে ঝড় তুলল: আইনজীবীরা দুইটি স্টেটের ভোট বাতিল করা প্রত্যাখান করে যখন ট্রাম্পের সমর্থকরা কনগ্রেসকে বিঘ্নিত করে’’। পরের শিরোনামগুলো ক্রমান্বয়ে হলো- “পুলিশের হাতে একজন নারী হত্যা: সদস্যদের পরিত্যক্ত করা হয়, “রাজনৈতিক সহিংসতা দেশকে কেপে উঠায়, “বাইডেনের শংসাপত্র বিলম্বিত, “ডেমোক্রেটস সিনেটের নিয়ন্ত্রণ জয় লাভ করে’’ এবং “বিক্ষোভকারীরা ভবনের ভিতরে আছে’’।

“লস এনজেলেস টাইমস”এর প্রথম পাতায় শিরোনামের মধ্যে আছে তিনটি সংবাদ। প্রথমটি হলো ক্যাপিটল হিলে আক্রমন নিয়ে, দ্বিতীয়টি হলো সিনেটে ডেমোক্রেটের জয় এবং তৃতীয়টি হলো আক্রমনের অনুপ্রেরণা। প্রথম শিরোনামটি ব্যানারে আছে– “ট্রাম্পের দ্বারায় উত্তেজিত জনতা ক্যাপিটলে ঝড় তুলে: ৪ জন নিহত; কয়েক সংখ্যক পুলিশ এবং একজন বিক্ষোভকারী আহত’’। পরের শিরোনামগুলো ক্রমান্বয়ে হলো– “জর্জজিয়ায় ডেমোক্রেটদের জয়ে বাইডেনের জন্য নতুন দ্বার উম্মোচন’’, “অলংকারিক ভাষা অনুপ্রেরণা দেয় সহিংতাকে, নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াকে’’। The Denver Post প্রধান  শিরোনাম করেছে 'Trump-incited mob storms U.S. Capitol' (ট্রাম্প-প্ররোচিত জনতা ক্যাপিটলে ঝড় তুলল) সাথে  ১টি ছবিও আছে যেখানে হাউসের গ্যালারিতে লোকেরা আশ্রয় নিচ্ছে যখন বিক্ষোভকারীরা হাউসের চ্যাম্বারে ঢুকে পড়ে। The Guardian প্রধান শিরোনাম করেছে 'Chaos as pro-trump mob storms US Capitol' (ক্যাপিটলে ট্রাম্প-সমর্থকদের হামলায় চরম বিশৃঙ্খলা) সাথে ১টি ছবিও আছে যেখানেক্যাপিটলে একজন ট্রাম্প সমর্থককারী হাতে দুটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের পতাকা উল্লাসিতভাবে উড়াচ্ছে। El Pais প্রধান শিরোনাম করেছে  ‘Trump instiga una revuelta contra la confirmacion de biden’ সাথে ১টি ছবিও আছে যেখানে হাউসের সিনেট চ্যাম্বার অবরুদ্ধ আর সে চ্যাম্বারের ভিতর থেকে ক্যাপিটলের কয়েক সংখ্যক পুলিশ বাইরে একজন বিক্ষোভকারীর দিকে বন্দুক লক্ষ্য করে। Bloomsberg Businessweek প্রধান শিরোনাম করেছে ‘New low: The trashing of American democracy' (নতুন পতন: মার্কিন গণতন্ত্রের উপর হানা) সাথে ১টি ছবিও আছে যেখানে দেখায় বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারীদের ক্যাপিটলে হামলা করার দৃশ্য। The New York Post প্রধান শিরোনাম করেছে ‘Capitol invasion: Guns drawn to protect House from mob of Trump supporters' (ক্যাপিটল আক্রমন: বন্দুক টানা হয় হাউসকে ট্রাম্প সমর্থকদের হাত থেকে রক্ষা করতে) সাথে ১টি ছবিও আছে যেখানে হাউসের সিনেট চ্যাম্বার অবরুদ্ধ আর সে চ্যাম্বারের ভিতর  থেকে ক্যাপিটলের কয়েক সংখ্যক পুলিশ বাইরে একজন বিক্ষোভকারীর দিকে বন্দুক লক্ষ্য করে। Corriere Della Sera প্রধান শিরোনাম করেছে 'Furia di Trump, assalto al Congresso' সাথে ১টি ছবিও আছে যেখানে ক্যাপিটলে একজন ট্রাম্প সমর্থককারী হাতে দুটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের পতাকা উল্লাসিতভাবে উড়াচ্ছে। la Repubblica প্রধান শিরোনাম করেছে 'Usa, un giorno da golpe' সাথে ১টি ছবিও আছে যেখানে হাউসের সিনেট চ্যাম্বার অবরুদ্ধ আর সে চ্যাম্বারের ভিতর থেকে ক্যাপিটলের কয়েক সংখ্যক পুলিশ বাইরে একজন বিক্ষোভকারীর দিকে বন্দুক লক্ষ্য করে। La Stampa প্রধান শিরোনাম করেছে 'C'era una volta I'America' সাথে ১টি ছবিও আছে যেখানে ক্যাপিটলে একজন ট্রাম্প সমর্থককারী হাতে একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা উল্লাসিতভাবে উড়াচ্ছে। The San Diego Union-Tribune প্রধান শিরোনাম করেছে  'Capitol attack shakes nation' (ক্যাপিটল হামলায় পুরো দেশ স্তব্ধ) সাথে ১টি ছবিও আছে  যেখানে ক্যাপিটলে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের মুখোমুখি সংঘর্ষের দৃশ্য দেখা যায়। Courier Journal প্রধান শিরোনাম করেছে 'Trump rioters storm US Capitol' (ট্রাম্প দাঙ্গা দলে মার্কিন ক্যাপিটলে ঝড় তুলে) সাথে ১টি ছবিও আছে যেখানে হাউসের সিনেট চ্যাম্বার অবরুদ্ধ আর সে চ্যাম্বারের ভিতর থেকে ক্যাপিটলের কয়েক সংখ্যক পুলিশ বাইরে একজন বিক্ষোভকারীর দিকে বন্দুক লক্ষ্য করে।

স্টারট্রিবিউন,সান- ফ্রান্সিস্কো ক্রনিকলস ও সেন্ট লুইস পোস্ট ডিসপ্যাচ এর হেডলাইন হয়েছে INSURRECTION (বিদ্রোহ)  প্রতিটির কিকারে লেখা ট্রাম্প- প্ররোচিত/ সসমর্থিত  দাঙ্গাবাজদের ক্যাপিটল ভাংচুর। ডেইলি টেলিগ্রাফ ও পলিটিকো তাদের শিরোনাম এ লিখেছে  'গনতন্ত্রে অবরোধ'। দি ইকোনমিস্টের কভারে দেখা যায় স্পিকারের চেয়ারে বসে আছে এক বিদ্রোহকারী উপর শিরোনাম Trump's legacy ( ট্রাম্পের উত্তরাধিকার) কিকারে  লেখা  লজ্জা ও সুযোগ। i newspaper প্রধান শিরোনাম করেছে 'Anarchy in the USA' (যুক্তরাষ্ট্রে নৈরাজ্য) সাথে ১টি ছবিও আছে যেখানে হাউসের সিনেট চ্যাম্বার অবরুদ্ধ আর সে চ্যাম্বারের ভিতর থেকে ক্যাপিটলের কয়েক সংখ্যক পুলিশ বাইরে একজন বিক্ষোভকারীর দিকে বন্দুক লক্ষ্য করে। Metro প্রধান শিরোনাম করেছে 'Anarchy in the US' (যুক্তরাষ্ট্রে নৈরাজ্য) সাথে ২টি ছবিও আছে যার মধ্যে সবচেয়ে বড় করে দেখানো হয় হাউসের সিনেট চ্যাম্বার অবরুদ্ধ আর সে চ্যাম্বারের ভিতর থেকে ক্যাপিটলের কয়েক সংখ্যক পুলিশ বাইরে একজন বিক্ষোভকারীর দিকে বন্দুক লক্ষ্য করার দশ্যটি। এ ছবিটির উপর, এক কোণায়, এক মহিলার মৃত লাশ নিয়ে যেতে দেখা যায় যে ক্যাপিটলের গুলিবর্ষণে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়।

বাংলাদেশ-ভারতের দৈনিক পত্রিকাগুলো ভৌগলিক সময়-বিন্যাসজনিত কারণে ৭ জানুয়ারি তারিখে খবরটি প্রকাশ করতে পারেনি। ৮ জানুয়ারি যথারীতি প্রথম পাতাজুড়ে রয়েছে ট্রাম্প বাহিনীর আক্রমণের খবর। ‘‘কালের কন্ঠ’’ প্রথম পাতায় গুরুত্ব দিয়ে দ্বিতীয় প্রধান শিরোনাম করেছে ‘গণতন্ত্র ধুলায় মেশালেন ট্রাম্প। ‘‘সমকাল’’ তাদের সংবাদ শিরোনামের ৫ কলামজুড়ে লিড নিউজ করেছে ‘পার্লামেন্ট ভবনে হামলা’। ‘‘ইত্তেফাক’’ লালকালিতে বক্স আইটেম করেছে এই ইস্যুটি, লাল রঙের ব্যাকগ্রাউন্ডে সাদা হরফে প্রধান শিরোনাম ‘হতাশ ট্রাম্প ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি’। ইংরেজি দৈনিক ‘‘দি ডেইলি স্টার’’ প্রধান শিরোনাম করেছে ‘US RIOT STAN WORLD’, তারা সংবাদপত্রের উপরিভাগ (আপার ফোল্ড) পুরোটাই এই ইস্যুতে একাধিক ছবি ও সংবাদ ছাপিয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশে সবগুলো দৈনিকেই ক্যাপিটাল হিলের অভ্যন্তরে আক্রমণ, ভাংচুর ও নৈরাজ্যের একাধিক ছবি প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে ভারতের দৈনিক পত্রিকাগুলোর মধ্যে পশ্চিমবাংলা ‘‘আনন্দবাজার পত্রিকা’’ প্রধান শিরোনাম করেছে ‘উড়ে গেল ব্যারিকেড’। অল ইন্ডিয়া দৈনিক পত্রিকা  ‘The Economics Times’’ কায়দা করে প্রধান শিরোনাম করেছে ‘CAPITOL PUNISMENT’। পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক ‘‘এই সময়’’ পত্রিকা প্রথম পাতার প্রধান শিরোনাম করেছে ‘গণতন্ত্র পদপিষ্ট’। আমরা জানি ভারতের দিল্লীতেও কৃষক বিক্ষোভ চলছে, গতকাল যদিও মার্কিন বিক্ষোভ ছিলো ভারতজুড়ে আলোচিত। দুই ইস্যুতে সমান গুরুত্ব দিয়ে অভিনব সৃজনশীল শিরোনাম করে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘেরাও-সংকট-হামলাকে একটি বাক্যে প্রধান শিরোনাম করেছে ইংরেজি দৈনিক ‘‘TELEGRAP’’, তারা লিখেছে ‘ CAPITOLL CAPITALL’। শুধু শিরোনামের বাহার নয়, শিরোনামে রঙের ব্যবহারও ঘটেছে চমৎকার সৃজনশীল কায়দায়। ভারতের অপরাপর প্রধান সংবাদপত্রগুলো এই ইস্যুতে নানামুখি সংবাদ শিরোনাম করেছে।  

এই ছিলো ‘ট্রাম্পমেরিকা’র সচিত্র সংবাদ বিবরণী ও পৃষ্ঠাসজ্জার বিশ্লেষণ। ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ সময় মধ্যরাত ২টায় জনহপকিন্স ইউনিভার্সিটির বাঙালি মহামারী গবেষক ড. পর্ণালী ধর চৌধুরীল ফেসবুক পোস্ট (ওয়াশিংটনে বিকেল তিনটা) দেখে চোখে নেমে আসা ঘুম উবে গেলো। মাত্র দুটি ছবি পোস্ট করে তিনি সমবায় করেছেন, বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে আমেরিকায় আছি। বন্ধুকধারীর আক্রমণ, লুট ও ক্যাপিটাল ভবনের সামনে ট্রাম্পপন্থিদের ভিড়ের দুটি ছবি দেখে ভাবছি- মার্কিন দেশ এতদিন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেশে গণতন্ত্র ও নির্বাচন পরবর্তী শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে সবক দিয়ে এসেছে। আজ সেই মার্কিন মুলুকে এ কেমন চিত্র? আমার কল্পনাপ্রবণ মন চলে গেলো হলিউডের ডাকসাইটে অভিনেতা মর্গান ফ্রিম্যান ও জেরার্ড বাটলারের ‘অলিম্পাস হ্যাজ ফলেন’(২০১৩)র সিনেমাটিতে। অ্যান্টোইন ফুকুয়ার সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে ‘হোয়াইট হাউজ’ আক্রমন নিয়ে। সিনেমায় দেখা যায়, হোয়াইট হাউজের দখল নিচ্ছে উত্তর কোরিয়ার কথিত ‘উগ্রবাদি সন্ত্রাসী গ্রুপ’, যাদের কাজ  প্রেসিডেন্টকে  জিম্মি করে সার্ভার কোডের মাধ্যমে পুরো আমেরিকা উরিয়ে দেয়া। কিন্তু মাইক নামে চৌকষ এক হোয়াইট হাউস কর্মকর্তার কাধে এসে পরে অনেক বড় দায়িত্ব। প্রেসিডেন্টকে এবং তার ছেলেকে বাচানো; সাথে গোটা আমেরিকা। অতিনাটকীয় সব দৃশ্যায়নে সিনেমার শেষে মাইক সফল হয়, উদ্ধার হয় মার্কিনরাজ্য। কিন্তু সেতো ফ্যান্টিসির দুনিয়া, কে জানতো প্রায় কাছাকাছি দৃশ্যরচনা হবে বাস্তবের দুনিয়ায়? ফ্যান্টাসি যখন বাস্তব জগতে ধরা দিলো, তখন বিশ্ববাসী সত্যিই স্তম্ভিত হলো।

গতকাল সকাল থেকেস ভাবছি, পার্লামেন্ট ভবনে বিদ্রোহী জনতার হামলার ঘটনা যদি ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে ঘটত কিংবা ঘটত ইরানে বা তুরস্কে, তাহলে মার্কিন প্রশাসন তাদের অভিনন্দন জানাত। পৃথিবীর দেশে দেশে দক্ষিণপন্থি রক্ষণশীলদের উত্থান দেখা যাচ্ছে। ভারত থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উগ্র জাতীয়তাবাদ আর উগ্র ধর্মীয় শক্তির দক্ষিণপন্থিরা তাঁদের সমর্থকদের উন্মাদ করে তুলছেন। আজ ট্রাম্প তার ভক্তদের খেপিয়ে দিয়েছেন। সুপ্ত ঘৃণার লালনকারীরা এখন বেপরোয়া। ট্রাম্প হয়তো বিদায় নিবে, কিন্তু সমাজের কার্পেটের তলায় এই ময়লা থেকে যাবে। শুধু একটি প্রশ্নই বারবার ঘুরবার খাচ্ছে মনে। ইরাক, আফগানিস্তান, ভিয়েতনাম, সোমালিয়াসহ পৃথিবীর নানা দেশে এতদিন ধরে ‘মার্কিন যুদ্ধ সেনা’কে কথিত ‘গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার জন্য অস্ত্র হাতে দেখতাম আমরা। আজ ‘ক্যাপিটাল হিল ফলেন’র ঘটনায় বিশ্বজুড়ে সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় ‘ট্রাম্পেরিকার নৈরাজ্য’র খবরের পাশাপাশি বিশ্ববাসী আরো একটি দৃশ্য দেখলো। এই প্রথম ‘মার্কিন যুদ্ধ সৈন্য’ খোদ আমেরিকার মাটিতে অস্ত্র তাক করে আছে! স্যালুকাস!

লেখক: রাজীব নন্দী, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশ ভারতের গণমাধ্যম গবেষকদের প্ল্যাটফর্ম ‘ইন্দো-বাংলা মিডিয়া এডুকেটর্স নেটওয়ার্ক’র সমন্বয়ক এবং সংবাদপত্রের প্রথম পাতার দৃশ্যগত উপস্থাপনার বিবর্তন নিয়ে গবেষণা করছেন। ইমেইল: [email protected] 

কৃতজ্ঞতা: এই নিবন্ধের তথ্য বিশ্লেষণ ও সংবাদপত্রের প্রথম পাতা গ্রাফিক্স ডিজাইনে সহযোগিতা করেছেন চবি যোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ ইহসান জাকারিয়া ফৈজিয়া আহমেদ পল্লী মজুমদার। এছাড়াও  পত্রিকাগুলো সংগ্রহের সুযোগ দেয়ায় পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া স্কলার প্রফেসর ড. উমা শঙ্কর পাণ্ডে এবং লেখার সূত্র ধরিয়ে দেয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের মহামারি গবেষক ড. পর্ণালী ধর চৌধুরীকে  আন্তরিতা জানাচ্ছেন।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank