শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

মেট্রোরেলের প্রথম সেট পৌঁছেছে ঢাকায়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

২০:৪৫, ২১ এপ্রিল ২০২১

আপডেট: ২০:৫৪, ২১ এপ্রিল ২০২১

৭১৫

মেট্রোরেলের প্রথম সেট পৌঁছেছে ঢাকায়

মেট্রোরেলের প্রথম সেট পৌঁছুলো ঢাকায়, বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত
মেট্রোরেলের প্রথম সেট পৌঁছুলো ঢাকায়, বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত

ঢাকায় পৌঁছেছে মেট্রোরেলের প্রথম সেট। ২৩ এপ্রিল পৌঁছানোর কথা থাকলেও দুদিন আগে বুধবার (২১ এপ্রিল) বিকেল মোট ছয়টি কোচ ঢাকায় এসে পৌঁছায়। মোংলা থেকে নৌপথে বরিশাল, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, সদরঘাট হয়ে উত্তরার তুরাগ পাড়ের জেটিতে ভিড়েছে মেট্রোরেল বহনকারী বার্জ।

**মেট্রোরেলের আদ্যোপান্ত, ডেডলাইন জয়ে ছুটছে কর্তৃপক্ষ

সড়ক ও সেতু বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা শেখ ওয়ালিদ ফয়েজ বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরবেন।

মেট্রোরেলের কোচ আনার জন্য উত্তরার দিয়াবাড়িতে বিশেষ জেটি তৈরি করেছে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল)।

মেট্রোরেল প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিকি জানান, ট্রেনের ছয়টি কোচের মধ্যে দুটি বুধবার বিকেল ৫টার দিকে ও বাকি চারটি ৬টার দিকে ডিএমটিসিএলের নতুন জেটিতে পৌঁছেছে।

গত ৪ মার্চ বাংলাদেশ সময় বিকেল তিনটায় জাপানের কোবে বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে কোচগুলো। ৩১ মার্চ বিকেলে মোংলা বন্দরে পৌঁছে। ওই দিন ও তার পরের দিন কোচগুলো সেখানে খালাস করা হয়।

সেখানে যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে ট্রেনের কোচ বহনকারী দুটি বার্জ ১৬ এপ্রিল ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। এমএএন সিদ্দিকি জানান, এখন কোচগুলো ডিপোতে থাকবে। তারপরে ট্রায়াল রান শুরুর আগে এগুলোর একটি সমন্বিত পরীক্ষা করা হবে।

কোচগুলো জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়াম কোম্পানি লিমিটেড তৈরি করছে। বাংলাদেশে এই কোচ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। 

গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পাঁচ সেট ট্রেন তৈরি হয়। দ্বিতীয় সেট ট্রেন আগামী ১৬ জুন ও তৃতীয়টি ১৩ আগস্ট ডিপোতে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

দেখতে কেমন হবে মেট্রোরেলের ট্রেন সেট

মেট্রোরেল ট্রেন সেট জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রঙে রঙ করা থাকবে। ট্রেন সেটের বডি এবং ভিতরের কাঠামোর সবকিছুই স্টেনলেস স্টিলে তৈরি করা হচ্ছে। কোচে ব্যবহৃত গ্লাসগুলো থাকবে বুলেটপ্রুফ। এই ট্রেনের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় এক শ কিলোমিটার।

ঢাকার যানজট নিরসনসহ নগরবাসীর যাতায়াত আরামদায়ক, দ্রুততর ও নির্বিঘ্ন করতে এই মেট্রোরেল প্রকল্পের মাধ্যমে সব কটি পয়েন্টে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রত্যেকটি ট্রেনে থাকবে ৬টি করে কার বা কামরা। একেকটি কোচে ১ হাজার ৭৩৮ জন যাত্রী যেতে পারবেন। চলাচল শুরু হলে উভয় দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহনে সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের।

যাত্রী যাতে দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে পারেন সে ব্যবস্থও থাকবে। প্রতিটি কোচের দুদিকে চারটি দরজা থাকবে। ট্রেনে সিটগুলো লম্বালম্বি পাতা থাকবে, প্রতিটি কোচে প্রতিবন্ধী কিংবা বয়ঃবৃদ্ধদের যারা বসতে পারবেন না তাদের জন্য থাকবে দুটি করে হুইলচেয়ার।

প্রতিটি ট্রেনে ৬টি কোচের মধ্যে একটি কোচ শুধুমাত্র নারী যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হবে। বাকিগুলোতে নারী পুরুষ উভয়ই একসঙ্গে যেতে পারবেন।

প্রকল্প-
প্রকল্পের নাম ঢাকা মেট্রো ম্যাস রেপিড ট্রানজিট-এমআরটি-৬। বাস্তবায়ন করছে- ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ২৯ কিলোমিটার। আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল ১০ কিলোমিটার। দুই অংশে ভাগ করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

প্রাথমিকভাবে কাজ শেষ করার ডেডলাইন ভিন্ন নেওয়া হয়েছিলো। মিরপুর অংশের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা ছিলো ২০২১ সালের মধ্যেই। আর মতিঝিল অংশের ডেডলাইন ছিলো ২০২৩। তবে সরকার এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০২১ সালের মধ্যে পুরো প্রায় সাড়ে ২১ কিলোমিটার মেট্রোরেল শেষ করা হবে। আর নতুন ডেডলাইন মিট করতে দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।

করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়লেও এখন কাজ চলছে দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা। তাতে মেট্টোরেল প্রকল্প গতি যেমন পেয়েছে, তেমনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হওয়ার আস্থা দৃঢ়তর হচ্ছে।

সার্বিক কাজের অগ্রগতি
ডিএমটিসিএল-এর সর্বশেষ তথ্যমতে, রাজধানীর প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পের (এমআরটি লাইন-৬) নির্মাণকাজের অগ্রগতি এসেছে প্রায় ৬৩ শতাংশ। এর মধ্যে প্রথম ভাগ উত্তরা-আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের অগ্রগতি ৫৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

ডিএমটিসিএল-এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন মতে, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের প্লাটফর্ম নির্মাণকাজ শেষ। উত্তরা উত্তর স্টেশনের প্লাটফর্ম নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। উত্তরা উত্তর ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনে স্টিল স্ট্রাকচার ইরেকশন কাজ চলমান।

উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনে বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন, সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন এবং স্টেশন কন্ট্রোলার কক্ষ নির্মাণকাজও চলমান। এ ছাড়া উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের ছাদ নির্মাণের কাজ চলছে।

মেট্রোরেল নির্মাণে স্বাভাবিক পানির প্রবাহ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেই বিবেচনায় পাঁচটি লং স্প্যান ব্যালান্স ক্যান্টিলিভারের মধ্যে তিনটির কাজও ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।

ভাড়া হবে কত
মেট্রোরেলে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত দূরত্ব ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া হতে পারে ২ টাকা ৪০ পয়সা। ডিএমটিসিএল প্রাথমিকভাবে এই হারে ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি বিবেচনা করছে। এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত দূরত্বে যেতে ভাড়া আসবে ৪০ টাকা ২৫ পয়সা।

কখন কিভাবে চলবে, কে চালাবেন?
ঢাকায় মেট্রোরেল চলবে চালক ছাড়াই। তবে প্রথম দিকে কিছুদিন একজন চালক রাখা হবে। ট্রেনগুলো সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে নিজস্ব গতিতে চলতে থাকবে। কোথাও কোনো অপেক্ষার সুযোগ থাকবে না। প্রতি চারমিনিট পর পর উত্তরা থেকে কমলাপুর রুটে এবং কমলাপুর থেকে উত্তরা রুটে ট্রেন চলতে থাকবে।

দিনের ট্রেন চলতে শুরু করবে ফজরের আজানের পর থেকে। আজানের সময়ের ভিত্তিতে সময় আগুপিছু হতে পারে। প্রতিদিন মধ্যরাত ১২টা পযন্ত ট্রেন চলবে। তবে বিশেষ দিনগুলি যেমন কোন খেলা বা বড় অনুষ্ঠান আয়োজন থাকলে সেদিন ট্রেন আরও বাড়তি সময় পযন্ত চালানো হবে বলে আগে থেকেই প্রস্তুতি রয়েছে কর্তৃপক্ষের।

 টিকিট পদ্ধতি-
মেট্রোরেলে থাকবে স্মার্টকার্ড টিকেটিং পদ্ধতি। এক্ষেত্রে দুই ধরণের টিকেট চালু করা হবে। যখনকার ভ্রমণ তখনের জন্য এবং একটি স্থায়ী টিকেট। ট্রেন স্টেশনে টিকিট বিক্রির মেশিন থাকবে। মেশিনে টাকা ইনসার্ট করে টিকেট কেনা যাবে। মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েব এপ্লিকেশনের মাধ্যমে মেট্রোরেলের টিকেট কেনা যাবে।

কোথায় কোন স্টেশন-
উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ২১ কিলোমিটার পথের মধ্যে মোট ১৭টি স্টেশন থাকবে যেখান থেকে যাত্রী ওঠানামা করতে পারবে। এর মধ্যে উত্তরা সেন্টার, বিজয়স্বরণী ও মতিঝিল স্টেশনকে সুদৃশ্য করে তৈরি করা হবে।

বাকি স্টেশনগুলো সাধারণ স্টেশন হবে। স্টেশনগুলো হবে- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শ্যাওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয়, মতিঝিল ও কমলাপুর।


 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত