শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

কামার পাড়ায় বেড়েছে ব্যস্ততা, আছে হতাশার গল্পও

সুজন মোহন্ত, কুড়িগ্রাম

১৩:৪২, ২০ জুলাই ২০২১

আপডেট: ১৩:৪২, ২০ জুলাই ২০২১

৮১০

কামার পাড়ায় বেড়েছে ব্যস্ততা, আছে হতাশার গল্পও

হাপরের টানে কয়লার চুলায় দাউ দাউ করে জ্বলে উঠছে আগুন। জ্বলে ওঠা আগুনের ফুলকিতে লোহাও হয়ে ওঠে সূর্যবর্ণ। দগদগে গরম লোহায় দিন-রাত হাতুড়ি পেটানোর ঠুকঠাক শব্দে মুখর করে চারপাশ। রাত পোহালে কোরবানীর ঈদ । তাই আগের তুলনায় কয়েকদিনের ব্যস্ততা বেড়েছে কুড়িগ্রামের কামারপাড়া গুলোতে। 

পশু কোরবানী করতে প্রয়োজন পশুর মাংস কাটার বিভিন্ন অস্ত্র বা হাতিয়ার। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ব্যস্ততা বাড়ছে দা, ছুরি, বঁটি, চাকু, চাপাতি, কাস্তে, কুড়ালসহ লোহার তৈরির কারিগরদের। যেনো দম ফেলার সময় নেই তাদের। ফলে এ সময়টাতে কামারদের ব্যস্ততা বেড়েছে দ্বিগুণ। 

কয়লার চুলোয় দ্বগদ্বগে আগুনের ফুলকি আর গরম লোহায় ওস্তাদ-সাগরেদের ছন্দময় পিটুনিতে ঠক ঠক শব্দে মুখর হয়ে উঠছে আশপাশ। দিনে তো বটেই রাতেও বিরাম নেই এসব কারিগরদের। অধিকাংশ কামার তাদের নিজেদের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করছেন পাইকার ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। 

আবার কোরবানীর পশুর চামড়া ছেঁড়ার কাজটি সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে কাজ সম্পন্ন করতে অনেকে পুরাতনগুলোকে সংস্কারের জন্য নিয়ে আসছেন কামারদের কাছে। তবে করোনাকালীন লকডাউনের কারণে এবার তাদের এই ব্যবসা আগের তুলনায় কমে গেছে বলে হতাশ কামাররা।

কুড়িগ্রাম পৌরসভার পুরাতন থানা পাড়ার কামার জাহিদুল হক জানায়, তার দাদার সময় থেকেই এ কাজ করছেন তিনি। তার দাদাও ছিলেন এ পেশায়। দাদা গত হলেও এ পেশাকে রোজগারের মাধ্যম হিসেবে ধরে রেখেছেন তিনি। এখন বাবা শমসের আলীসহ সবাই এ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। 

তিনি আরও জানায়, তবে লকডাউনের কারণে মানুষ বাড়ি থেকে কম বের হওয়ায় আগের থেকে আয় কমেছে তাদের। অন্যান্যবারের তুলনায় এবার কাজও কম হচ্ছে। অন্যান্য কোরবানীর ঈদের সময় প্রতিদিন আয় হতো ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এবার করোনাকালীন লকডাউনের কারণে ৪ থেকে ৬শ টাকা পর্যন্ত আয় হচ্ছে। 

অন্যদিকে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর হ্যালিপ্যাড-আমতলা মোড়ের কামার শমসের আলী জানান, ৬০ পেরিয়েছে তার বয়স। তবুও পূর্ব পুরুষের পেশাকে টিকিয়ে রাখতে ভালোবাসা ও ভালোলাগা দিয়েই এ কাজ করছেন তিনি। বরং এ পেশাই ভালো লাগে তার। তিনি আরও জানান কিছু খুচরা ব্যবসায়ী তাদের তৈরিকৃত যন্ত্রপাতি পাইকারী কিনে নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করছেন। তবে এ মৌসুমে কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ী রয়েছে যারা শুধু ঈদের সময় এ ব্যবসা করে থাকেন। ঈদের বিপুল চাহিদার জোগান দিতে এক মাস আগে থেকেই ধাতব যন্ত্রপাতি তৈরির কাজ শুরু হলেও, শেষ মুহূর্তে এসে কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ায় দিন-রাত সমান তালে কাজ করতে হচ্ছে তাদের।

নাগেশ্বরী পুরাতন বাজারের কামার শাহজাহান আলী, গাগলা বাজারের শফিকুল ইসলামসহ আরও অনেকে কারিগর জানায়, পরিশ্রমের চেয়ে পারিশ্রমিক কম এ পেশায়। তাই সময়ের বিবর্তনে জীবিকার তাগিদে পূর্ব-পুরুষের পেশা ছেড়ে অন্য কাজে ঝুঁকে পড়ছেন অনেকে। সারাদিন আগুনের পাশে বসে কাজ করতে হয়, তবুও পূর্ব-পুরুষের রেখে যাওয়া এই পেশায় উৎসাহের কমতি নেই কামারদের।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত