বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ || ১১ বৈশাখ ১৪৩১ || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

‘খেজুরে আলাপ’

মোহাম্মদ শাহ আলম

২১:৫০, ১০ এপ্রিল ২০২১

আপডেট: ১৪:৫০, ১১ এপ্রিল ২০২১

২০০৪

‘খেজুরে আলাপ’

দেশে একটা জিনিস ভালো চলছে। খেজুরে আলাপ। এই আলাপের সাথে যে সত্যিকারের খেজুরের সম্পর্ক আছে, তা আমার জানা ছিল না। ইংরেজিতে খেজুরকে বলে ডেট আর খেজুরে আলাপকে বলে ডেটিং। এখন প্রশ্ন হলে দেশজুড়ে রাস্তায়,পার্কে, হোটেলে, রিসোর্টে, ঝুপড়িতে, খুপড়িতে যে ডেটিং চলে সেই ডেটিংয়ে কি খেজুর নিয়ে আলাপ হয়, না কি খেজুর খেতে খেতে অন্যকিছু নিয়ে আলাপ হয়? তা ভালোভাবে বুঝতে গেলে যেতে হবে ডেটারদের কাছে, মানে যারা নিয়মিত ডেটিং করে তাদের কাছে।

সে না হয় কোন এক সময় যাওয়া যাবে। তবে আজকে কিন্তু সত্যি সত্য খেজুর নিয়ে খেজুরে আলাপ হবে। একটি নির্ভেজাল খেজুরে আলাপ। আলাপে যোগ দিতে চাইলে কাছাকাছি চলে আসুন। কোথাও কাউকে খেজুরে আলাপ করার সময় যদি ঘেঁষাঘেঁষি করে বসতে দেখে থাকেন, তা এখানে করা যাবে না। এখানে কাছাকাছি বসতে হবে, তবে ভার্চুয়ালি।

আমার এই খেজুরে আলাপের বিষয়টাও শুরু হয়েছে ভার্চুয়ালি। বেশ ক’দিন আগে ফেসবুক জগতে একটা বিজ্ঞাপন চোখের সামনে আসে, মানে আগামী রমজানের জন্য খেজুর কিনব কি না, কিনতে চাইলে অর্ডার করুন টাইপের বিজ্ঞাপন। যেই ক্লিক করেছি, সেই এক অনন্ত খেজুরে জগতে প্রবেশ করেছি। আমার ফেসবুক জুড়ে আসতে থাকে খেজুর আর খেজুরের বিজ্ঞাপন। যে মানুষের ছোটবেলার রমজান কেটেছে এক ধরণের চ্যাটকা খেজুর খেয়ে তার সামনে উন্মোচিত হতে থাকে খেজুরের এক নতুন জগত। ইন্টারনেট লিটারেসি, ফাইনান্সিয়াল লিটারেসির মতো ডেট লিটারেসি বা খেজুর লিটারেসি হতে থাকে আমার। কতকিছু শেখার আছে এই জগতে! 

আমাদের দেশে যে চ্যাটকা খেজুর পাওয়া যায় তা নাকি মানুষের খাবার নয়। উটের খাবার। তাই এসব খাওয়া চলবে না, খেতে হবে মানুষের উপযোগী খেজুর। শাহী খেজুর। এই সব খেজুরের নামও বেশ শানদার- মরিয়ম, আজোয়া, মেডজুল, আবরার, আনবার, মাবরুম, মাশরুক, সুকারী, সাফওয়ী, সুগাই, দাবাস, কালমী আরো কত কী! শুধু কী তাই, এদের আবার আছে নানান গ্রেড- প্রিমিয়াম গ্রেড, এ গ্রেড, বি গ্রেড, সি গ্রেড। নানান জাত নানান গ্রেড নানান স্বাদ। 

খেজুরে বিজ্ঞাপনেও রয়েছে শেখার মত অনেক কিছু। বিজ্ঞাপনগুলো বলছে এসব খেজুরে রয়েছে যারপরনাই উপকারিতা। খেজুরের মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণে তেল, ক্যালসিয়াম, সালফার, আয়রন, পটাসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, কপার এবং ম্যাগনেসিয়াম বিদ্যমান যা সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। এছাড়াও শর্করা, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খেজুর নিয়মিত খেলে ত্বক ভালো থাকে, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে, খাদ্যশক্তি থাকায় দুর্বলতা দূর হয়, খেজুর স্নায়ুবিক শক্তি বৃদ্ধি করে, খেজুরে গ্লুকোজের ঘাটতি পূরণ হয়, হৃদরোগীদের জন্যও খেজুর বেশ উপকারী, রক্ত উৎপাদনকারী, হজমশক্তি বর্ধক, যকৃৎ ও পাকস্থলীর শক্তিবর্ধক রুচি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, খেজুরের আঁশ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, পক্ষাঘাত এবং সব ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য উপকারী, ফুসফুসের সুরক্ষা করে। বিজ্ঞাপন আরো বলছে, যে কোনো ফলের চেয়ে খেজুরের পুষ্টিগুণ বেশি। খেজুর নবী রাসুলদের খাবার, সাহাবীদের খাবার। তাই পবিত্র রমজানে, করোনার এই সময়সহ পুরো বছর পরিবারের সবার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই ফলটিকে রাখতে পারেন। 

বাহ বাহ বাহ ! এই ধনন্তরী ফল কি না খেলে চলে? নিশ্চয়ই দেশের লোকজন ভাত-মাছ ছেড়েছুড়ে এদ্দিনে খেজুর খাওয়া শুরু করেছে! আরবীয় খাবার বলে কথা। তাই ভাবলাম, রমজান যেহেতু সামনে দেখি শাহী খেজুর কিছু কেনা যায় কি না! ওরে বাবা! এত দেখি বাদশাহী কারবার। ৬০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত কেজি!

আমি কিনতে পারছি না বলে কি অন্য কেউ কিনছে না? নিশ্চয়ই কিনছে, আলবত কিনছে। নইলে এত খেজুর যায় কোথায়? বাজারে টনকে টন খেজুর বিকোয়। যায় মানুষের ঘরে। ছোট্ট একটা অর্ডার করতে গিয়ে তা বুঝতে পারি। ভার্চুয়াল জগতের অদৃশ্য বিক্রেতা বলছে “সম্মানিত ক্রেতা, আপনার আগ্রহ আমাদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। আমাদের হাতে এখন প্রচুর অর্ডার। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ডেলিভারি দেয়া সম্ভব নয়। অনুগ্রহ করে আমাদের সাথেই থাকুন। আপনার অর্ডারকৃত পণ্য আগামী দশদিনের মধ্যে পৌঁছে যাবে।” 

আমার চোখ চরকগাছ। এ কী! আমার দেশ মনে হয় আর শ্যামল ভূমি নাই। মরুর দেশ হয়ে গেছে। কিছু কিছু মানুষের কাজ কারবার দেখলেও তাই ঠাহর হয়। তাতে কোন সমস্যা নাই। খেজুর ভালো জিনিস। খেজুর খাওয়া ভালো। একদিন আমরা সবাই খেজুর খাওয়া শিখে যাব। মানুষ দুপুর বেলা সাদা ভাত আর টেংরা মাছের ঝোল বাদ দিয়ে গোটা কয় খেজুর খাবে। খেজুরের চাহিদা আরো বেড়ে যাবে। আরো বেড়ে যাবে। আরো আরো বেড়ে যাবে। সারাদেশ খুজরের চাষ হবে। দেশ খেজুরে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। উৎপাদন দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি হবে। খেজুরখানেওয়ালা দেশের মানুষ আমাদের দেশের খেজুর খাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকবে।

আমরা একটি খেজুরে জাতি হব। তখন আরো বেশি বেশি খেজুরে আলাপ করব। সত্যিকারের ডেট খেতে খেতে ডেটিং।

মোহাম্মদ শাহ আলম: লেখক ও শিশুসাহিত্যিক।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank