শুক্রবার   ০৮ নভেম্বর ২০২৪ || ২৩ কার্তিক ১৪৩১ || ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ধারাবাহিক অনুবাদ উপন্যাস

১৯৮৪ ।। মূল: জর্জ অরওয়েল ।। অনুবাদ: মাহমুদ মেনন [পর্ব-৪]

মাহমুদ মেনন, সাংবাদিক ও শিক্ষক

০০:৪৭, ১০ নভেম্বর ২০২০

আপডেট: ২৩:২৬, ২৩ নভেম্বর ২০২০

২৬৯০

ধারাবাহিক অনুবাদ উপন্যাস

১৯৮৪ ।। মূল: জর্জ অরওয়েল ।। অনুবাদ: মাহমুদ মেনন [পর্ব-৪]

[পর্ব-এক] [পর্ব-দুই] [পর্ব-তিন]

পর্ব- চার

অধ্যায় দুই

দরজার নবে হাত দিয়েই উইনস্টনের চোখে পড়লো টেবিলের ওপর ডায়রিটা খোলা। পাতাজুড়ে লেখা আছে, ‘বিগ ব্রাদার নিপাত যাক’। সে লেখা এত বড় বড় অক্ষরে যে রুমের যে কোনো জায়গা থেকে পড়া যাবে। স্রেফ বোকামি বৈ কিছু নয়। তবে এত আতঙ্কের মাঝেও উইনস্টনের মাথায় এলো- এত সাধের নোটবুকটির ক্রিমের মতো মসৃণ পাতায় সদ্য লেখা ভেজা কালি ছেতড়ে যেতে পারে। সেটা উচিত হবে না। অতএব খোলাই থাক। 

বড় একটা দম নিয়ে দরজা খুললো। আর সঙ্গে সঙ্গে স্বস্তির উষ্ণতা বয়ে গেলো শরীর জুড়ে। ফ্যাকাশে মুখে বিধ্বস্ত এক নারী উশকো-খুশকো চুলে তার দরজায় দাঁড়িয়ে।

‘ও কমরেড,’ বলার ভঙ্গিতে বিগলিত ভাব ছড়িয়ে দিলেন, রিনরিনে কণ্ঠ, ‘তুমি এসেছো টের পেলাম, একটু কি আসবে নাকি। আমার রান্নাঘরের সিঙ্কটা না বন্ধ হয়ে গেছে-’

ইনি মিসেস পারসন্স। একই তলার প্রতিবেশীর স্ত্রী। (পার্টিতে মিসেস বলার চল নেই। বরং বারণ আছে। আপনাকে বলতে হবে ‘কমরেড’। কিন্তু কতিপয় নারীকে দেখলে ওই শব্দটি ঠিক আসে না।) এই নারীর বয়স বছর ত্রিশেক, কিন্তু দেখতে আরও বয়সী মনে হয়। তাকালে মনে হবে তার মুখমণ্ডলের ভাঁজে ভাঁজে ধুলোর আস্তর জমে আছে। উইনস্টন কথা না বাড়িয়ে ওর পিছু নিলো।

এই ফালতু সারাইয়ের কাজটি এখন মোটামুটি তার নিত্য বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভিক্টরি ম্যানশন্সের ফ্ল্যাটগুলো বেশ পুরোনো। ১৯৩০ কিংবা ওই সময়েরই তৈরি। আর এখন এর ছাদ-দেয়ালের পলেস্তারাগুলো ঝরে ঝরে পড়ছে। একটু বেশি বরফ পড়লে পাইপ ফাটবেই। অর্থনীতির নীতির চাপে হিটিং সিস্টেম এখন বন্ধ। তবে যখন বন্ধ ছিলো না তখনও খুব যে ভালো কাজ করতো এমন নয়। সারাইয়ের কাজ নিজে নিজে করে নিতে পারলে ভালো তা না হলে কিছুই করার নেই। জানালার শার্সি ভাঙলেও তা সারাইয়ের দায়িত্ব যাদের তারা আসবে না। বছর দুই হয়ে গেলো এসবে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। 

‘টম বাড়িতে নেই তাই ডাকছি,’ অষ্ফুট স্বর মিসেস পারসন্সের।

পারসন্সদের ফ্ল্যাটটি উইনস্টনের ফ্লাটের চেয়ে বড় আর একটু বেশিই নোংরা। সবকিছু যেনো ছিঁড়ে-খুঁড়ে ছড়িয়ে রয়েছে; যেনো কোনও অতিকায় হিংস্র জন্তু এইমাত্র গোটা ঘরটি দাবড়ে তছনছ করে গেছে। খেলার মালমাত্তা চারিদিকে- হকি-স্টিকস, বক্সিং গ্লাভস, ফেঁটে চুপসে যাওয়া ফুটবল, ঘামে জবজবে একটি শর্টস মেঝেতে উল্টো হয়ে পড়ে আছে। টেবিলে পড়ে আছে এঁটো থালা-বাসন আর একটা শরীরচর্চার বই। দেয়ালে ইয়ুথ লিগ ও স্পাইসের জ্বলজ্বলে ব্যানার আর বিগ ব্রাদারের প্রমাণ সাইজের একটি পোস্টার ঝুলছে। পুরো ভবন থেকেই সিদ্ধ বাঁধাকপির একটা গন্ধ সারাক্ষণই আসে। তার ওপর এই কক্ষে ছড়িয়ে আছে তীব্র ঘামের গন্ধ। প্রথম নিশ্বাসেই এই গন্ধ আপনার নাসিকা রন্দ্রে ধাক্কা দেবে। বোঝা দায়- একটি লোক যখন উপস্থিত নেই তখনও তার ঘামের তীব্র গন্ধটি কি করে গোটা কক্ষজুড়ে ছড়িয়ে থাকে। অপরকক্ষে কেউ একজন একটি চিরুনি আর একটুকরা টয়লেট পেপার হাতে টেলিস্ক্রিনের সামরিক বাজনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে।
‘বাচ্চাদের কাজ,’ দরজায় মুখটি গলিয়ে দিয়ে আধা-উদ্বেগের অভিব্যক্তি ছড়িয়ে বললেন মিসেস পারসন্স। ‘আজ ওরা বাইরে যায়নি। আর বুঝতেই পারছেন...’ 

মাঝপথে কথা থামিয়ে দেওয়া মিসেস পারসন্সের অভ্যাস। রান্নাঘরের সিঙ্ক কানায় কানায় ভরে আছে সবুজ রঙের ঘিনঘিনে পানিতে, তাতে সিদ্ধ বাঁধাকপির চেয়েও নিকৃষ্ট গন্ধ। উইনস্টন নিচু হয়ে পাইপের সংযোগ পয়েন্টটি দেখে নিলো। হাত দিতে গা গুলিয়ে আসছিলো। নিচু হয়ে দেখতেই ঘৃণাবোধ হচ্ছিলো তার। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণত কাশির ধমক উঠে যায়। মিসেস পারসন্স অবশ্য তখনও অসহায় মুখ করে তাকিয়ে। 

‘টম বাড়িতে থাকলে চিন্তাই ছিলো না, ঠিক হাত দিয়ে পরিস্কার করে ফেলতো। এসবে হাত লাগাতে ওর একটুও খারাপ লাগে না।’
 
সত্য মন্ত্রণালয়ে উইনস্টনের সহকর্মী পারসন্স। মোটাসোটা, কিন্তু খাটুড়ে। হাঁদারাম গোছের, সবকিছুতেই বাড়তি আগ্রহ। কোন প্রশ্ন ছাড়াই যে দায়িত্বই দেয়া হোক কাজে লেগে পড়ে। থটপুলিশ নয়, আসলে এমন কিছু নিয়োজিত কর্মীর কারণেই পার্টি টিকে আছে।

পয়ত্রিশ বছর বয়সে ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তাকে ইয়ুথ লিগ থেকে বের হয়ে আসতে হয়। ইয়ুথ লিগের আগে বয়সের বাধা সত্ত্বেও ব্যবস্থা করে বছরখানেক স্পাইসেও কাটিয়েছেন। সত্য মন্ত্রণালয়ে তার কাজ নিচের দিকের একটি পদে। এমনই কাজ যাতে বুদ্ধির প্রয়োগ নেই বললেই চলে। তবে স্পোর্টস কমিটিতে তিনি কিন্তু হোমড়া-চোমড়াদের একজন। এছাড়াও কমিউনিটি চাঙ্গা করার কর্মসূচি, তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ কর্মসূচি, সঞ্চয় ক্যাম্পেইনের মতো স্বেচ্ছাসেবী কর্মসূচি হলেও তাকে কমিটিতে রাখা হয়। তখন বেশ বুক ফুলিয়ে বিষয়টি সবাইকে জানান দিতে থাকেন পারসন্স। পাইপে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ভাব-ভঙ্গিমা দেখিয়ে ওসব বলবেন। গত চার বছরে কোনও সন্ধ্যায় কমিউনিটি সেন্টারে তাকে একটি বারের জন্য হলেও দেখা যায়নি, এমনটা ঘটেনি। আর জীবন সম্পর্কে তার উদাসীনতার প্রমাণ স্বরূপ ঘামের বিকট গন্ধ ছড়িয়ে পড়তে থাকে তিনি যেখানে যান সেখানেই। 

‘সংযোগ পয়েন্টের নাটটি মুছতে মুছতে উইনস্টন বললো, ‘আপনাদের ঘরে স্প্যানার আছে?’
 
‘স্প্যানার,’ বললেন মিসেস পারসন্স। পরে কণ্ঠ ক্ষীণ হয়ে এলো, বললেন, ‘আমি ঠিক জানি না, নিশ্চিত নই। সম্ভবত বাচ্চারা...।’ 

বুটের ঠক ঠক শব্দ আর চিরুনি ছুঁড়ে মারার শব্দ ভেসে এলো লিভিং রুম থেকে। মিসেস পারসন্স একটি স্প্যানার এগিয়ে দিলেন। উইনস্টন ঘৃণায় মুখ বাঁকিয়ে পাইপের সঙ্গে আটকে যাওয়া একদলা চুল ছাড়িয়ে আনলো। এরপর ট্যাপের ঠাণ্ডা পানিতেই ভালো করে আঙ্গুলগুলো সাফ করে পাশের রুমে গিয়ে দাঁড়ালো।
‘হাত তোলো’ ঝাঁঝালো একটি কণ্ঠ চিৎকার করে উঠলো।

হ্যান্ডসাম, কঠিন চেহারার নয় বছরের একটি ছেলে টেবিলের পেছন থেকে মাথা তুললো। একটি স্বয়ংক্রিয় খেলনা পিস্তল হাতে হুঙ্কার ছুড়তে ছুড়তে। অন্যদিকে তার ছোট বোনটি, বছর দুয়েকের ছোট হবে, একটি কাঠের টুকরো হাতে একই ভঙ্গিমায় চিৎকার করে যাচ্ছে। দুজনই নীল শর্টস আর ধূসর রঙের শার্ট পরা, গলায় লাল গলবন্ধ। এটা ছিলো স্পাইসের ইউনিফর্ম। উইনস্টন মাথার উপরে হাত দুটি তুলে দিলো, তবে অনেকটা অস্বস্তির সঙ্গে। ওদের কণ্ঠ ও অঙ্গভঙ্গি তার কাছে মোটেই শিশুসুলভ মনে হচ্ছিলো না। সবমিলিয়ে এটি খেলা বলে ভাবতেও মন সায় দিচ্ছিলো না তার।  

‘তুমি ষড়যন্ত্রকারী!’ চিৎকার করে বললো ছেলেটি। ‘তুমি একজন থট ক্রিমিনাল (চিন্তা-অপরাধী)! তুমি ইউরেশীয় চর! আমি তোমাকে গুলি করবো। আমি তোমাকে বাষ্প করে দেবো। আমি তোমাকে লবন দ্বীপে পাঠিয়ে দেবো।’ 

এরপর হঠাৎই দুজনই ওর চারিদিকে ঘুরে ঘুরে লাফাতে শুরু করলো আর ‘চক্রান্তকারী!’, ‘চিন্তা-অপরাধী!’ বলে চিৎকার করতে লাগলো। ভাই যেটা বলছে, যা করছে, বোনও একই বুলি আর একই কাজ করে চলছে। বিষয়টি কিছুটা ভীতিরও ছিলো, ঠিক বাঘের ছানার তিড়িংবিড়িংয়ের মতো। শিগগিরই এগুলো বড় হবে আর মানুষখেকো হয়ে উঠবে। বালকটির চোখে এক ধরনের হিংস্রতা মাখা, যাতে মনেই হচ্ছিলো ও মনেপ্রাণে উইনস্টনকে আঘাত করতে কিংবা লাথি মারতে চাইছে। আর তা করার মতো বড়ও সে হয়ে উঠেছে। মন্দের ভালো এই যে, হাতে যে পিস্তলটি সেটি আসল নয়, খেলনা, ভাবলো উইনস্টন।

মিসেস পারসন্সের ভয়ার্ত দৃষ্টি উইনস্টনের দিক থেকে একবার বাচ্চাদের দিকে পড়লো আবার ফিরে এলো। আর লিভিং রুমের অপেক্ষাকৃত বেশি আলোয় এবার উইনস্টন সত্যিই দেখতে পেলো মিসেস পারসন্সের মুখমণ্ডলের ভাজে ভাজে ধুলোর আস্তর।

‘বাচ্চারা সাধারণত এত শোরগোল করে না!’ বললেন তিনি। ‘ফাঁসির কার্যক্রম দেখতে যেতে না পেরে ওরা মন খারাপ করে আছে। আর সে জন্যই এমন আরচণ করছে। এত ব্যস্ততা যে ওদের নিয়েই যেতে পারলাম না। আর টমতো কাজ থেকে সময় মতো ফিরবেই না।’

মোটা কর্কশ কণ্ঠে ছেলেটি চিৎকার করে উঠলো, ‘কেনো আমরা ফাঁসি দেখতে যেতে পারবো না?’ 

‘ফাঁসি দেখতে চাই! ফাঁসি দেখতে চাই!’ চিৎকার জুড়ে দিলো ছোট মেয়েটিও। তখনও সে ঘুরছে উইনস্টনের চারিদিক।

ইউরেশীয় কয়েকজন কারাবন্দী যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। ওই সন্ধ্যায় পার্কে ওদেরই ফাঁসি হওয়ার কথা, মনে পড়লো উইনস্টনের। প্রতি মাসেই একবার এমন ফাঁসির আয়োজন থাকে। আর এখন এই ফাঁসি খুব জনপ্রিয় একটি দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। শিশুরা এই ফাঁসি দেখার জন্য খুব চেচামেচি করে। মিসেস পারসন্সের কাছে বিদায় নিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ালো উইনস্টন। কিন্তু প্যাসেজ ধরে ছয় পা যেতেই কিছু একটা তার ঘাড়ের পেছনের দিকে আঘাত করলো। ভীষণ ব্যাথা অনুভব করলো সে। মনে হলো যেনো একটি লাল হয়ে যাওয়া উপ্তপ্ত শলাকা শরীরের ভেতরে ঢুকে পড়েছে। ঘুরে দেখলো মিসেস পারসন্স ছেলেকে টেনে হিঁচড়ে দরজার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। আর তখনই ছেলেটি তার পকেটে একটি গুলতি ঢুকিয়ে ফেললো।

দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দের আগেই তার কানে আসলো বালকটির কণ্ঠ ‘গোল্ডস্টেইন’। তবে উইনস্টনকে যা সবচেয়ে আলোড়িত করলো তা হচ্ছে নারীটির ফ্যাকাশে চোখে মুখে ছড়িয়ে পড়া ভীতির অভিব্যক্তি।

ফ্ল্যাটে ফিরে একটু ত্রস্ত পায়েই টেলিস্ক্রিনের সামনেটা পার হয়ে আবারও টেবিলের ওপর বসলো সে। ঘাড়ের ব্যাথার ওপরে এক হাত দিয়ে ডলতে লাগলো। টেলিস্ক্রিনের বাজনা বন্ধ হয়েছে। পরিবর্তে একটি ফ্যাসফেসে সামরিক কণ্ঠ নৃশংসতামাখা উচ্চারণে পাঠ করে যাচ্ছিলো নতুন ভাসমান ঘাঁটির অস্ত্র-শস্ত্রের বর্ণনা। আইসল্যান্ড ও ফারো আয়ল্যান্ডের মাঝামাঝি কোনও একটি স্থানে নোঙ্গর করেছে এই ভাসমান ঘাঁটি।
 
বাচ্চাগুলোকে নিয়ে এই নারীর সদাসন্ত্রস্ত জীবন, ভাবলো সে। আর মোটে এক কিংবা দুটি বছর। এরা এই নারীর কোনো শাসনই আর মানবে না। আজকাল প্রায় সব শিশুরই একই ভয়ঙ্কর দশা। সবচেয়ে ভয়াবহ দিকটি হচ্ছে, স্পাইসের মতো সংগঠনগুলোর মাধ্যমে এরা প্রক্রিয়াগতভাবেই ছোট ছোট বেপরোয়া নৃংশস চরিত্র হিসেবে গড়ে উঠছে। আবার এমন একটা মনোভাবও তৈরি হচ্ছে যা তাদের দলের বিরুদ্ধে কোনভাবেই বিদ্রোহী করে তুলবে না। দল ও দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত যেকোনো বিষয়ের প্রতি তাদের অগাধ বিশ্বস্ততা। দলীয় সঙ্গীত, মিছিল, ব্যানার, প্রচার, ডামি রাইফেল নিয়ে মহড়া, স্লোগান আর বিগ ব্রাদারের স্তুতিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে তারা। তাদের যত নৃংশতা সব রাষ্ট্রের শত্রুর বিরুদ্ধে, বিদেশিদের বিরুদ্ধে, যড়যন্ত্রকারী, নাশকতাকারী আর চিন্তা-অপরাধীদের বিরুদ্ধে। আর ত্রিশ বছর পার করে যেকোনো বাবা-মা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে নিজেদের সন্তানদের নিয়েই। কারণটা সঙ্গত। এমন একটি সপ্তাহও যাবে না যখন ‘দ্য টাইমস’ এই আড়িপাতা পাজিগুলোকে, ‘বীর শিশু’ তকমা দিয়ে তাদের কৃতিত্ব গাঁথা প্রকাশ করছে না। এই শিশুরা তাদের বাবা-মায়ের কথা-বার্তা শুনে ফেলে আর থট পুলিশের কাছে তাদের খাটো করে।
 
গুলতি দিয়ে ছোড়া বুলেটের ব্যাথা কিছুটা কমেছে। ডায়রিতে লেখার জন্য আর কিই বা আছে- এমন একটি ধন্দের মধ্যে থেকে অনেকটা নিরুৎসাহী ভঙ্গিতে কলমটি তুলে নিলো উইনস্টন। আর হঠাৎ করেই ও’ব্রায়েনকে নিয়ে ভাবতে শুরু করলো সে।
 
বছর কয়েক আগে... কত বছর হবে? নিদেন পক্ষে বছর সাতেকতো বটেই...একবার সে স্বপ্ন দেখলো একটি নিকষ-কালো অন্ধকার কক্ষের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। একদিকে কেউ একজন বসে। যখন সে অতিক্রম করে যাচ্ছে ঠিক তখনই লোকটি বলে উঠলো: ‘আমাদের এমন একটি স্থানে দেখা হবে যেখানে কোনো অন্ধকার থাকবে না।’ খুব ধীর আর ভাবলেশহীন ভাবেই কথাটি বললো সে। এ যেনো স্রেফ একটি কথার কথা, কোনো নির্দেশনা নয়। স্বপ্নে লোকটি হেঁটেই চললো, থামলো না। কৌতুহলের বিষয় হচ্ছে সে সময় স্বপ্নের মাঝে কথাগুলো তার মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া ছড়ায়নি। কিন্তু পরে তার কাছে কথাগুলো ক্রমশই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে থাকে। এখন আর মনে নেই ওই স্বপ্নটি সে ও’ব্রায়েনের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে দেখেছিলো, নাকি পরে। তার এও মনে নেই, ঠিক কখন সে ধরতে পেরেছিলো ওই কণ্ঠটি ছিলো ও’ব্রায়েনের। এই ধরতে পারায় কোনো খুঁত নেই। সেই অন্ধকার কক্ষে তাকে কথাটি যিনি বলেছিলেন তিনি ও’ব্রায়েন বৈ আর কেউ নন।

..... পরের পর্ব পড়ুন এখানে

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank