তরুণ-তরুণীদের সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করল মিয়ানমার
তরুণ-তরুণীদের সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করল মিয়ানমার
![]() |
মিয়ানমারে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের জন্য সামরিক বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করেছে দেশটির জান্তা সরকার। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে এমন এক সময় এই ঘোষণা দেওয়া হলো যখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে দেশটির সামরিক বাহিনীর সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করেছিল সেনাবাহিনী। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং অভ্যুত্থানবিরোধী যোদ্ধাদের সাথে একের পর এক যুদ্ধে তাদেরকে পরাজিত হতে দেখা যাচ্ছে।
আর এমন অবস্থায় শনিবার দেশের প্রাপ্তবয়স্ক তরুণ-তরুণীদের সামরিক বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক ঘোষণা করল জান্তা সরকার। নতুন এই ঘোষণা অনুযায়ী, এখন থেকে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী সকল পুরুষকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে অন্তত দুই বছর কাজ করতে হবে।
আর নারীদের মধ্যে যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৭ বছরেরে মধ্যে, তাদেরকেও একই মেয়াদে সামরিক বাহিনীতে চাকরি করতে হবে। এ বিষয়ে আর কোনও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি জান্তা সরকার।
তবে এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ‘প্রয়োজনীয় উপবিধি, প্রক্রিয়া, আদেশ, বিজ্ঞপ্তি এবং নির্দেশাবলী প্রকাশ করা হবে’।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কাছে একের পর এক অপমানজনক পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। ২০২৩ সালের শেষের দিকে মিয়ানমারের তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিলে হামলা চালিয়ে শান প্রদেশের সীমান্ত ক্রসিং এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো দখল করে নেয়।
অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রদেশটি মিয়ানমারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি দিয়েই সড়কপথে চীনের সাথে বেশিরভাগ বাণিজ্য সংঘঠিত হয়ে থাকে।
গত মাসে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) জানায়, তারা মিয়ানমারের চিন প্রদেশের পালেতোয়া এবং মিওয়াতে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত শেষ সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এর আগে, মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রেসিডেন্ট মিন্ট সোয়ে সতর্ক করেছিলেন, বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে দেশটি ভেঙে যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, দেশের সামরিক বাহিনীতে নাগরিকদের বাধ্যতামূলক যোগদানের বিধান রেখে ২০১০ সালে মিয়ানমারে একটি আইন চালু করা হয়েছিল। কিন্তু এতদিন সেটি কার্যকর করা হয়নি। আইনটিতে দুই বছরের জন্য নাগরিকদের সামরিক বাহিনীতে চাকরি করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তবে আইনে এটাও বলা হয়েছে, জরুরি অবস্থায় সামরিক বাহিনীতে চাকরির এই মেয়াদ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। এমনকি নাগরিকদের কেউ এই আইন না মানতে চাইলে একই মেয়াদে জেল খাটতে হতে পারে বলেও আইনে বলা হয়েছে।
২০২১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল জান্তা সরকার। সম্প্রতি সেই জরুরি অবস্থা আরও ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে। ২০১১ সালের গণতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হওয়ার আগে মিয়ানমার প্রায় ৫০ বছর নিপীড়নমূলক সামরিক শাসনের অধীনে ছিল। এরপর একটি গণতান্ত্রিক সরকার দেশটির ক্ষমতা গ্রহণ করে।
কিন্তু ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির সামরিক বাহিনী পুনরায় ক্ষমতা দখল করে নেয়। এরপর থেকেই মিয়ানমারে যুদ্ধ ও সহিংসতা চলে আসছে। এতে দেশটির হাজার হাজার নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন এবং দশ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
মূলত স্বাধীনতার পর থেকে সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে সামরিক বাহিনীর সংঘাত চলমান থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে সেই সংকট সামাল দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে দেশটির জান্তা বা সামরিক শাসকরা।

আরও পড়ুন
- আসন্ন মধ্যপ্রাচ্য সফরে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারেন ট্রাম্প: রিপোর্ট
- ৪৩টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা ট্রাম্পের
- প্রার্থীতা থেকে সরে দাঁড়ালেন বাইডেন, সমর্থন কমলা হ্যারিসকে
- এবার ইরানের ধর্মীয় শহর মাশহাদে ভয়াবহ বিস্ফোরণ
- ইসরায়েলে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
- লস অ্যাঞ্জেলেসে উদ্ধার টিমসহ মানবিক সহায়তা পাঠাতে চায় ইরান
- বিদেশে প্রায় ৩০টি দূতাবাস-কনস্যুলেট বন্ধ করে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র: রিপোর্ট
- মিয়ানমারে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২০০০ ছাড়িয়েছে: রিপোর্ট
- ৫ হাজার ৪০০ কর্মীকে ছাঁটাই করছে পেন্টাগন
- আমরা বাঁধের মুখ খুলিনি, একা একা খুলে গেছে: ভারত