শনিবার   ১৮ মে ২০২৪ || ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

আইসিডিডিআর,বি ও এনআইএনএস সমীক্ষা

দেশের ষাটোর্ধ্ব প্রতি ১২ জনে ১ জন ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন

নিউজ ডেস্ক

০০:১২, ১ জুলাই ২০২১

আপডেট: ০০:১৮, ১ জুলাই ২০২১

৭৩৬

আইসিডিডিআর,বি ও এনআইএনএস সমীক্ষা

দেশের ষাটোর্ধ্ব প্রতি ১২ জনে ১ জন ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন

ডিমনেশিয়ায় ভুগছেন নারী
ডিমনেশিয়ায় ভুগছেন নারী

আইসিডিডিআর,বি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস)-এর অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (নন-কমিউনিকাবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স অ্যান্ড হসপিটাল-এর যৌথ সহযোগিতায় বাংলাদেশের প্রবীণ ব্যক্তিদের মধ্যে ডিমেনশিয়ার ব্যাপকতা: জাতীয় সমীক্ষার ফলাফল বুধবার (৩০ জুন) ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে তুলে ধরা হয়। এতে জানানো হয়, বাংলাদেশে ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব ব্যক্তিদের প্রতি ১২ জনের মধ্যে একজন ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডাঃ আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইসিডিডিআর,বির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. তাহমিদ আহমেদ, জাতীয় ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ। ওয়েবিনারের সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসি প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর প্রফেসর ডাঃ রোবেদ আমিন।

ডিমেনশিয়া এমন একটি সিনড্রোম যেক্ষেত্রে স্মৃতিশক্তি, চিন্তাভাবনা, আচরণ এবং প্রতিদিনের কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষের ডিমেনশিয়া রয়েছে এবং এর ৬০ শতাংশ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বসবাস করে।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের মধ্যে ডিমেনশিয়া সম্পর্কে খুব কম তথ্য রয়েছে যা প্রবীণ নাগরিকদের সেবা দিতে নীতি নির্ধারকদের একটি বাস্তবমুখী কৌশল তৈরির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। অন্যদিকে, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশিরভাগ প্রোগ্রাম প্রজননক্ষম বয়সের মানুষকে কেন্দ্র করে বাস্তবায়িত হয়।

বাংলাদেশে সাতটি বিভাগে ২০১৯ সালে আইসিডিডিআর,বি এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স, শহুরে এবং গ্রামীণ অঞ্চলের ২,৭৯৬ জন ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব  বয়সীদের মধ্যে এই জরিপ চালিয়েছে। এই জরিপের মাধ্যমে বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ডিমেনশিয়া এবং প্রধান অসংক্রামক রোগ বিস্তারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই গবেষণায় বয়স্ক ব্যক্তিদের ডিমেনশিয়ার  প্রকোপ, অঞ্চল ভিত্তিক এর ভিন্নতা এবং স্বাস্থ্য সেবার ধরন পর্যালোচনা করা হয়েছে। 

এই গবেষণার উল্লেখযোগ্য ফলাফল হচ্ছে-
- প্রতি ১২ জন ষাটোর্ধ্ব বয়স্ক ব্যক্তির মধ্যে একজনের ডিমেনশিয়া দেখা গেছে (প্রকোপ ৮%) এবং মহিলাদের মধ্যে সমবয়সী পুরুষদের তুলনায় ডিমেনশিয়ার প্রকোপ ২.৫ গুণ বেশি। অন্যান্য বিভাগের তুলনায় রাজশাহী এবং রংপুরে (১৫% এবং ১২%) ডিমেনশিয়ার প্রকোপ বেশি এবং শহুরে এবং গ্রামীণ অঞ্চলে (৮%)-এর মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়নি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে  ডিমেনশিয়ার প্রকোপ বাড়ে। ষাটোর্ধ্ব বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে যারা কখনও স্কুলে যায়নি এবং যাদের স্ত্রী বা স্বামী নেই সামগ্রিকভাবে ডিমেনশিয়ার প্রকোপ তাদের মধ্যে অন্যদের চেয়ে বেশি দেখা গেছে।   
 
- ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের অর্ধেকেরও বেশি হাইপারটেনশন (৫২%), হতাশা (৫৪%), এবং ডায়াবেটিস (৮%) সহ এক বা একাধিক দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা (মাল্টিমর্বিডিটি) ছিল।

- ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি পুষ্টির অভাব (৩৫% কম ওজন), স্বল্প শারীরিক ক্রিয়াকলাপ (৪৯%), উচ্চমাত্রায় লবণ গ্রহণ (৫৬%) এবং উচ্চমাত্রায় তামাক সেবন (৭৬.৬%) করতে দেখা গেছে যা সাধারণত নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ বা এনসিডি (ঘঈউ) ঝুঁকির কারণ। 

- ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত  রোগীদের প্রায় সকলেরই (৯০%) গত ৬ মাসে স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন হয়েছে বলে জানা গেছে এবং তারা চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে (১২%) ও সরকারী হাসপাতালের (৫.৪%) যোগ্য ডাক্তারদের চেয়ে প্রায়শই কোনও ঔষধ বিক্রেতার  কাছে (১৬.৬%) গিয়েছিলেন। এই স্বাস্থ্যসেবা নেয়ার ধরনটি রোগীদের লিঙ্গভিত্তিক, বসবাসের স্থান (নগর বা  গ্রামীণ অঞ্চল) ভিত্তিক কোন পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়নি।    

গবেষণার গুরুত্ব সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হসপিটাল এর পরিচালক এবং গবেষণার কো-পিআই অধ্যাপক ড. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, “সমাজের মধ্যে ডিমেনশিয়া স¤পর্কে জ্ঞানের অভাব রয়েছে, তাই খুব বিলম্বে রোগ নির্ণীত হয়। আন্তর্জাতিক খ্যাতিস¤পন্ন গবেষণা সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগী হয়ে আমাদের ডিমেনশিয়া নিয়ে আরও গবেষণা চালানো দরকার, যাতে আমরা ডিমেনশিয়া বৃদ্ধির কারণ সনাক্ত এবং এটির উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারি।”  

প্রফেসর ড. রোবেদ আমিন বলেন, “বিশেষত বহু রোগে আক্রান্ত বয়স্ক ব্যক্তিরা কোভিড-১৯ মহামারীতে সবচেয়ে বেশি ভুগছেন। তবুও, আমাদের কাছে প্রবীণদের জন্য উপযুক্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে সামগ্রিক পরিষেবা মডেল নেই। তাই, সরকারী, বেসরকারী এবং গবেষণা সংস্থার প্রচেষ্টায় এই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য একটি সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।”
 
আইসিডিডিআর,বি-র ইনিশিয়েটিভ ফর নন-কমিউনিকাবল ডিজিজ ইউনিটের প্রধান, এবং গবেষণার প্রিন্সিপাল  ইনভেস্টিগেটর ড. আলিয়া নাহিদ গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন “আমরাই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক প্রবীণ নাগরিকের কাছ থেকে তথ্য নিয়েছি এবং ডিমেনশিয়ার প্রকোপ অনুমান করেছি। বার্ধক্য অনস্বীকার্যর্, এজন্য বয়স্ক ব্যক্তির যত্নকে কেন্দ্র করে সহানুভূতিশীল সহায়তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। 

এই গবেষণার তথ্য-উপাত্তগুলো প্রচলিত বায়োমেডিক্যাল পদ্ধতির বাইরে এক বিস্তৃত স্বাস্থ্যসেবা মডেল তৈরি করতে সহায়তা করবে বলেও মত এই গবেষকের।

“এটি একটি জীবনচক্রীয় পদ্ধতির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক ব্যবস্থাগুলো সংহত করতে এবং অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি হ্রাস এবং বার্ধক্য বয়সে ডিমেনশিয়ার মতো দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা মোকাবেলায়ও সহায়তা করবে।"  
     - ড. আলিয়া নাহিদ 

সমীক্ষায় অনুমান করা হয়েছে যে ২০২০ সালে বাংলাদেশে মোট ডিমেনশিয়া রোগের সংখ্যা ছিল ১.১ মিলিয়ন, এদের মধ্যে ০.২৮ মিলিয়ন পুরুষ এবং ০.৮৮ মিলিয়ন নারী। এই গবেষণাটি আরও দেখিয়েছে যে, ২০২৫ সালে এই সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়াবে ১.৩৭ মিলিয়নে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে এটি দ্বিগুণেরও বেশি হবে (২.৪ মিলিয়ন)। যদি উপযুক্ত পদক্ষেপ না নেয়া হয়, তবে এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। 

এই গবেষণায় সুপারিশ করা হয়েছে যে, বয়স্ক ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বাংলাদেশের পরিবার, সমাজ, বেসরকারি এবং সরকারি পর্যায়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যাবশ্যক। পাশাপাশি এদেশে একটি উদ্ভাবনী স্থানীয় প্রমাণভিত্তিক উদ্যোগের মাধ্যমে ডিমেনশিয়ার প্রকোপ কমানো যাবে। 

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ডিজিএইচএস, আইসিডিডিআর,বি, যুব-ভিত্তিক সংস্থা এবং মিডিয়া প্রতিনিধিরা ওয়েবিনারটিতে উপস্থিত ছিলেন। 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)

আরও পড়ুন

Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত