বুধবার   ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ || ২০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ৩০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

বঙ্গবন্ধুর চিরন্তন বাণী

শেখ আনোয়ার

১২:২৭, ১৭ মার্চ ২০২৩

১৮৯৫

বঙ্গবন্ধুর চিরন্তন বাণী

বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ বঙ্গবন্ধুকে পছন্দ করেন। সকলের প্রিয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি তাঁর নীতি-আদর্শের মাধ্যমে সামান্য এক রাজনৈতিক কর্মী থেকে নিজের মেধা, শ্রম ও গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ ও জনগণের প্রতি অসাধারণ মমত্ববোধের কারণেই পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু। পরিণত হয়েছিলেন একটি রাষ্ট্রের স্থপতিরূপে। এক স্বপ্নদ্রষ্টা। গোটা জাতিকে দেখিয়েছিলেন স্বাধীনতার স্বপ্ন!  

শেখ মুজিবুর রহমান গ্রামীণ সমাজের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আবেগ-অনুভূতি শিশুকাল থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। গ্রামের মাটি আর মানুষ তাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করতো। শৈশব থেকে তৎকালীন সমাজ জীবনে তিনি জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজাপীড়ন দেখে চরমভাবে ব্যথিত হতেন। গ্রামের হিন্দু-মুসলমানদের সম্মিলিত সম্প্রীতির সামাজিক আবহে তিনি দীক্ষা পান অসাম্প্রদায়িক চেতনার। কিশোর বয়সেই রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৭ মার্চ ১৯২০ সালে আজকের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বাঙালির এই মহানায়ক। আজ তাই তুলে ধরা হচ্ছে এই মহানায়কের কিছু চিরন্তন বাণী।

১। বাংলার উর্বর মাটিতে যেমন সোনা ফলে, ঠিক তেমনি পরগাছাও জন্মায়! একইভাবে, বাংলাদেশে কতকগুলো রাজনৈতিক পরগাছা রয়েছে, যারা বাংলার মানুষের বর্তমান দুঃখ-দূর্দশার জন্য দায়ী। 

২। ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না। বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে এনে দেশকে গড়া যাবে না। দেশের মধ্যেই পয়সা করতে হবে।
 
৩। সরকারী কর্মচারীদের জনগণের সাথে মিশে যেতে হবে। তারা জনগণের খাদেম, সেবক, ভাই। তারা জনগণের বাপ, জনগণের ছেলে, জনগণের সন্তান। তাদের এই মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।

৪। সমস্ত সরকারী কর্মচারীকেই আমি অনুরোধ করি, যাদের অর্থে আমাদের সংসার চলে তাদের সেবা করুন।

৫। জীবন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। এই কথা মনে রাখতে হবে। আমি বা আপনারা সবাই মৃত্যুর পর সামান্য কয়েক গজ কাপড় ছাড়া সাথে আর কিছুই নিয়ে যাব না। তবে কেন আপনারা মানুষকে শোষণ করবেন, মানুষের উপর অত্যাচার করবেন? 

৬। গরীবের উপর অত্যাচার করলে আল্লাহর কাছে তার জবাব দিতে হবে।

৭। আমি যদি বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে না পারি, আমি যদি দেখি বাংলার মানুষ দুঃখী, আর যদি দেখি বাংলার মানুষ পেট ভরে খায় নাই, তাহলে আমি শান্তিতে মরতে পারব না। 

৮। বিশ্ব দুই শিবিরে বিভক্ত - শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে। 

৯। এই স্বাধীন দেশে মানুষ যখন পেট ভরে খেতে পাবে, পাবে মর্যাদাপূর্ণ জীবন; তখনই শুধু এই লাখো শহীদের আত্মা তৃপ্তি পাবে। 

১০। দেশ থেকে সর্বপ্রকার অন্যায়, অবিচার ও শোষণ উচ্ছেদ করার জন্য দরকার হলে আমি আমার জীবন উৎসর্গ করব।

১১। আমাদের চাষীরা হল সবচেয়ে দুঃখী ও নির্যাতিত শ্রেণী এবং তাদের অবস্থার উন্নতির জন্যে আমাদের উদ্যোগের বিরাট অংশ অবশ্যই তাদের পেছনে নিয়োজিত করতে হবে।

১২। যিনি যেখানে রয়েছেন, তিনি সেখানে আপন কর্তব্য পালন করলে দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে না।

১৩। আমার সবচেয়ে বড় শক্তি আমার দেশের মানুষকে ভালবাসি, সবচেয়ে বড় দূর্বলতা আমি তাদেরকে খুব বেশী ভালবাসি। 

১৪। অযোগ্য নেতৃত্ব, নীতিহীন নেতা ও কাপুরুষ রাজনীতিবিদদের সাথে কোন দিন একসাথে হয়ে দেশের কাজে নামতে নেই। তাতে দেশসেবার চেয়ে দেশের ও জনগণের সর্বনাশই বেশি হয়। 

১৫। ভুলে যেয়ো না। স্বাধীনতা পেয়েছো এক রকম শত্রæর সাথে লড়াই করে। তখন আমরা জানতাম আমাদের এক নম্বর শত্রæ পাকিস্থানের সামরিক বাহিনী ও শোষকগোষ্ঠী। কিন্তু, এখন শত্রæকে চেনাই কষ্টকর।

মহামানব বঙ্গবন্ধু সারাজীবন এদেশের মাটি ও মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করেছেন। বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য জীবনের ১৪ বছর পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থেকেছেন। দু’বার ফাঁসির মঞ্চে হয়েছেন মৃত্যুর মুখোমুখি। কিন্তু আত্মমর্যাদা ও বাঙালি জাতির অধিকারের প্রশ্নে কখনো মাথা নত করেননি। তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ পথ। সে-পথ বেশির ভাগই ছিলো বন্ধুর। পায়ে বিঁধেছে কাঁটা, ক্ষরণ হয়েছে রক্তের। তবু যাত্রা থামেনি তাঁর। গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত হয়নি কোনো আপোস। জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে কারাগারে। দু-দুবার তাঁর প্রাণসংশয় হয়েছিলো। সেই অন্ধকার ভেদ করে জ্যোতির্ময়রূপে দেখা দিয়েছিলেন তিনি। তাইতো আজও স্বাধীনতার বাণীতে, জয়ধ্বনিতে, ইতিহাসে তিনি রয়েছেন চিরন্তন, চিরভাস্কর। থাকবেন চিরদিন। বাংলা ও বাঙালি যতো দিন থাকবে, পৃথিবীর ইতিহাস যতোদিন থাকবে তিনিও থাকবেন প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে। 

বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এক অবিচ্ছেদ্য নাম। বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতির অবিভাজ্য সম্পর্কের কোন পরিসমাপ্তি নেই। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বসভায় বাঙালি জাতির সগর্ব উপস্থিতি স্মরণ করিয়ে দেয় বঙ্গবন্ধুকে। শুভ জন্মদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু।

শেখ আনোয়ার: লেখক ও গবেষক। এম.ফিল স্কলার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank