শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

জাতীয় শপথ হোক বিজয়ের ৫০ বছরে আমাদের নতুন অঙ্গীকার

হীরেন পণ্ডিত

১৭:৫২, ১৫ ডিসেম্বর ২০২১

আপডেট: ১৭:০০, ১৬ ডিসেম্বর ২০২১

১৬৫৯

জাতীয় শপথ হোক বিজয়ের ৫০ বছরে আমাদের নতুন অঙ্গীকার

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। বাঙালি জাতির গর্বের মাস, শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের মাস। ইতিহাস গড়ার মাস। নতুন শক্তি, নতুন উদ্দীপনা, নতুন প্রেরণা নিয়ে দেশ গড়ার মাস, নতুন করে শপথ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মাস। ২০২১ সালে বিজয়ের ৫০ বছরে সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। বিজয়ের গৌরবে গৌরবান্বিত আজ বাঙালি জাতি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে গড়ে উঠুক অসাম্প্রদায়িক, স্বনির্ভর ও দারিদ্র্যমুক্ত এক বাংলাদেশ।

এ বছর পালিত হচ্ছে আমাদের জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী ও আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এরই মধ্যে বাঙালির জীবনে নতুন তাৎপর্য নিয়ে এলো বিজয়ের মাস-আমাদের বিজয়েরও সুবর্ণজয়ন্তী এবার। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শপথ গ্রহণ করাবেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

খবরটি অভিনব, চমকপ্রদ এবং আশাব্যঞ্জক। এই অনুষ্ঠান নিঃসন্দেহে জাতীয় শপথ আয়োজন বলে বিবেচিত হবে। এই আয়োজনের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা ও আদর্শ সঞ্চারিত হবে বলেই আমাদের আশা। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং বিজয়কে সমুন্নত রাখায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উদ্দীপিত করার প্রেরণা শপথ অনুষ্ঠানকে মহিমান্বিত করবে। নতুন প্রজন্মসহ সবার মাঝেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আবার শাণিত হবে। নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে কী মহান আদর্শের ভিত্তিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা।

বাংলাদেশের জন্ম নিয়ে সঠিক ইতহাস না জানা কিছু তরুণ প্রজন্মের হতাশাবোধ দেখে বিস্মিত হয়ে যাই। তাদের মধ্যে হতাশার কথা শুনি, তাদের প্রকাশ আমাদের অবাক ও বিষন্ন করে। তরুণদের মনোজগতে বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও দর্শনের কার্যকারিতা সম্পর্কে আমাদের আরো কাজ করতে হবে। নতুন প্রজন্ম আদর্শিকভাবে হারিয়ে না যায়, জাতিগতভাবেও আমাদের অনেক কিছু করতে হবে তরুণদের জন্য। সব দেশে সব সময় তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই রাষ্ট্র বিকশিত ও প্রগতিশীলতার দিকে এগিয়ে যায়। স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টিতেও তরুণ প্রজন্মের অবদানই শতভাগ। কিন্তু স্বদেশের এই ভূমিজাত তরুণ প্রজন্মের অনেকের দিকে তাকালে সেই ঐতিহাসিক সত্যটিও যেন মিথ্যা মরীচিকায় পরিণত হয়! আদর্শবিচ্যুত কিছু তরুণ প্রজন্ম নিয়ে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা কল্পনাও কষ্টকর, সেজন্য আমাদের এখনি কাজ করতে হবে।

আমাদের জাতির পিতা, বাংলাদেশের মহান স্থপতি, স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নেতা, বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান, মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের মর্যাদার আসনে চিরকাল অধিষ্ঠিত আছেন। বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের কারণে একাত্তরের মার্চ মাসের শুরুতেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আমাদের অনিবার্য। তাই তিনি একাত্তরের ৭ মার্চ বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এ ভাষণে বাঙালির প্রতি পাকিস্তানিদের হত্যা-নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র মূর্ত হয়ে উঠে। শত্রুর মোকাবিলায় তিনি বাঙালি জাতিকে নির্দেশ দেন, 'তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো।' জাতির পিতার এই সম্মোহনী ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে বাঙালি জাতি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।

৭ মার্চের মাত্র ১৯ মিনিটের এই পৃথিবী কাঁপানো বজ্রকণ্ঠের ঐতিহাসিক জ্বালাময়ী ভাষণ ছিল বাঙালির হাজার বছরের আবেগ, হাজার বছরের স্বপ্নের বাণী, হাজার বছরের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন, যা ছিল বাঙালিকে মুক্ত করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। দীপ্ত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করলেন, 'রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।' এ ঐতিহাসিক ভাষণই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে-নির্দেশে মুক্তিপাগল বাঙালি জাতিকে হানাদার পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিল এবং এই ভাষণের মধ্য দিয়েই বাঙালির ভবিষ্যৎ ভাগ্য স্পষ্ট নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল।

মহান স্বাধীনতার স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে জনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দেশের মানুষ। ৯ মাসের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ মানুষের জীবন উৎসর্গ করা ও দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আসে আমাদের জাতীয় জীবনে মুক্তি নিয়ে আসে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল ১৬ ডিসেম্বর। আবার এই ডিসেম্বর মাসেই পাকিস্তানিরা তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার আলবদর আলশামস বাহিনীর সহযোগিতায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যার নৃশংস হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল। এই কারণে বাঙালি বিজয়ের মাসটি উদযাপন করে একই সঙ্গে আনন্দ ও বেদনায়।

ডিসেম্বর আমাদের বিজয়, গৌরব আর অহংকারের মাস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণতা পেয়েছিল স্বাধীনতার জন্য বাঙালির দীর্ঘ সংগ্রাম। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত হয় হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ এর যাত্রা। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর উৎসব-আনন্দের বিশেষ আবহের মধ্য দিয়ে জাতি এবারের বিজয় দিবস পালন করতে যাচ্ছে।

প্রতিবছর বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় নানা অনুষ্ঠান-আয়োজনের মাধ্যমে মাসজুড়ে বিজয়ের আনন্দ উদযাপন করে বাংলাদেশ। অগুনতি লাল-সবুজ পতাকা ওড়ে সারা দেশে। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সর্বাধিক অবদান ও আত্মত্যাগ যে মহামানবের, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নিজের জীবনের সর্বস্ব বিলীন করে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও যিনি অবিচল চিত্তে শিল্পে উন্নত করে বাংলাদেশকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন সেই বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন-সার্বভৌম কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু গ্রহণ করেন বিরাট মহাযজ্ঞ, পালন করেন আরেক ঐতিহাসিক মহান দায়িত্ব।

১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভের পর বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি। এরপর রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত তাঁর সেই ভাষণটি প্রণিধানযোগ্য, কেননা, ১৯৭১-এর সাত মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি যেমন ছিল স্বাধীনতার সুস্পষ্ট রূপরেখা, ঠিক তেমনি ৯ মাস পর স্বাধীন দেশে প্রত্যাবর্তনের পর রেসকোর্সে প্রদত্ত তাঁর ভাষণটি ছিল ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের একটি রূপকল্প। ওই ভাষণে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ পুনর্গঠনের কাজের প্রতিই তিনি সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সম্মিলিত উদ্যোগে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন বারবার। দৃপ্তকণ্ঠে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, বাংলাদেশের পুনর্গঠন কাজ পরিচালিত হবে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পাকিস্তানে ১৯৭০ সালে নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু যেসব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত ভাষণেও সেসব নীতিগত দিকনির্দেশনার গভীর অন্ত্যমিল খুঁজে পাওয়া যায়। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বদেশভূমি, জাতি ও দেশের জনগণকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা সদাজাগ্রত থাকত তাঁর মনের মণিকোঠায়। তাই তাঁর প্রত্যেক কথায় ও কাজে বারবার উঠে আসত স্বদেশ গঠন ও জনগণের কল্যাণের কথা। তাঁর অন্তরের এই ধ্যান-ধারণা ফুটে উঠেছিলো ১০ জানুয়ারি প্রদত্ত ভাষণেও।

অসাম্প্রদায়িক ও জাতীয়তাবাদী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সরকার পদ্ধতি নির্ধারণে মনোনিবেশ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের প্রথম মুজিবনগরে গঠিত হয় অস্থায়ী সরকার। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার এক স্থানে উল্লেখ করা হয়, সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট থাকবেন এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রজাতন্ত্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকবেন। আওয়ামী লীগের ৬ দফা, ছাত্রদের ১১ দফার মধ্যেও সংসদীয় পদ্ধতির সরকার গঠনের কথা ছিল। বঙ্গবন্ধু তাঁর অন্তরে চির লালিত আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন এবং দেশের শাসনব্যবস্থাসহ সব উন্নয়ন ও পুনর্গঠনের বিশাল কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেওয়ার কাজে ব্রতী হয়েছিলেন।

বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত এবং ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার পর সংবিধানের বিধিমতে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্বাধীন বাংলাদেশে সরকার গঠন করে। বঙ্গবন্ধু তাঁর নিজস্ব এবং দলের সমষ্টিগত ধ্যান-ধারণার আলোকে স্বাধীন বাংলাদেশকে সোনার বাংলারূপে গড়তে অসংখ্য উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে মূল ভিত্তি হিসেবে নিয়ে বাংলাদেশের সব সরকারি কর্মপরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে।

প্রশাসনিক কাঠামো সমন্বয়ের পরের কাজটি ছিল জাতীয় সংবিধান প্রণয়ন। মাত্র এক বছরের মধ্যে একটি সুলিখিত ও বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত সংবিধান তৈরি করে বঙ্গবন্ধু বিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। এরপরের কাজটি ছিল অত্যন্ত জরুরি এবং চ্যালেঞ্জিং। বঙ্গবন্ধু সেই কাজটি করেন দৃঢ়চিত্তে ও সুচারুরূপে। দেশ মুক্ত হওয়ার মাত্র তিন মাসের মধ্যে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সৈন্যদের সে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন বঙ্গবন্ধু। এমন নজির পৃথিবীর সমসাময়িক ইতিহাসে বিরল। এ ক্ষেত্রে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অবদানও অবিস্মরণীয়।

আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সবচেয়ে বড় স্মারক আমাদের জাতীয় পতাকা। সারাবিশ্বে আজ সেই জাতীয় পতাকাই আমাদের পরিচয়ের প্রধান বাহক। এরপর আসে জাতীয় সংগীত। দেশ পুনর্গঠনের এ মহাকর্মযজ্ঞে যখন হাত দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ঠিক তখনই দেশের ভেতরে ও বাইরে দানা বাঁধতে থাকে ষড়যন্ত্র। সেগুলো মোকাবিলা করে উন্নয়ন ও পুনর্গঠনের পথে বঙ্গবন্ধু এগিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিকই। কিন্তু সব প্রয়াস ব্যর্থ করে দিয়ে ১৯৭৫-এর পনেরই আগস্টে ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে এবং একটি সদ্য স্বাধীন দেশের উন্নয়নস্পৃহাকে। কিন্তু সফল তারা হয়নি। জাতির জনকের হাতের স্পর্শে গড়ে ওঠা এ দেশের একেকটি প্রতিষ্ঠান আজও সাক্ষ্য দিচ্ছে- স্থপতি কখনও মরে না। জাতি পিতারও মৃত্যু নেই। তাঁর সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় গড়ে ওঠা এ রাষ্ট্র তাঁরই আদর্শে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরই সুযোগ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু একে অপরের পরিপূরক, একটিকে বাদ দিয়ে অপরটিকে কল্পনা করা যায় না। ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে 'মুজিব বাংলার আর বাংলা মুজিবের' অথবা অন্যভাবে বলা যায় 'বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশ, বাংলাদেশই বঙ্গবন্ধু।' বাংলাদেশের আজ নানা ক্ষেত্রে আমাদের অনেক অর্জন! বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক হিসাবে বিশ্বব্যাপী আমাদের যে অবাধ বিচরণ। পারিপার্শ্বিক নানা প্রতিকূলতা দূর করে উন্নয়নের মহাসড়কে আমাদের আজ যে দৃপ্ত পদচারণা তার সবই বঙ্গবন্ধুর অবদান। আমরা যদি একটি স্বাধীন দেশ না পেতাম তাহলে আজো পকিস্তানের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে হতো, নিষ্পেষিত হতে হতো। স্বাধীন দেশ পেয়েছি বলেই আমরা স্বাধীনভাবে সব কিছু চিন্তা করতে পারি। সমাজ ও অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে আমাদের সাফল্য বিশ্ববাসীর বিস্ময়মুগ্ধ মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে তা বঙ্গবন্ধুর কল্যাণেই সম্ভব হয়েছে। বলা বাহুল্য, যে এ সবই সম্ভব  হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার কল্যাণে। স্বাধীনতার মহান স্থপতি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু যে সম্ভাবনার অসীম সেই দিগন্ত উন্মোচন করেছেন তাই নয়, একই সাথে হতাশাক্লিষ্ট জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছেন ভয়কে জয় করার জন্য, মৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্রেও দিক্ষিত করেছেন পুরো জাতিকে।

মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা নিজেদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। যে রাষ্ট্রের ভিত্তি গণতন্ত্র, সামাজিক সাম্য এবং মৌলিক অধিকার চর্চা। স্বাধীন জাতি হিসেবে উচ্চ মর্যাদায় অভিষিক্ত আমরা। যে রাজনৈতিক সংগ্রাম আর ত্যাগের মধ্য দিয়ে এই রাষ্ট্রের জন্ম সেই ইতিহাসকে যথাযথ উপলব্ধি করাই হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এই চেতনার মধ্যে গণতান্ত্রিক দাবি আদায়ের আদর্শ রয়েছে, মুক্তির স্বপ্ন আছে আর আছে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ না করার মূল্যবোধ। অন্যদিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা, সাম্য ও মানবাধিকার আমাদের অগ্রগতির অন্যতম অনুপ্রেরণা যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল উপাদান।

আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে কারও কাছে আমরা মাথা নত করবো না। আমাদের যতটুকু সম্পদ যেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বারবার বলেছেন, সেই সম্পদটুকু কাজে লাগিয়েই আমরা বিশ্বসভায় আমাদের নিজেদের আপন মহিমায় আমরা গৌরবান্বিত হবো, নিজেদের গড়ে তুলব এবং সারাবিশ্বের কাছে আমরা মাথা উঁচু করে চলব। এটাই হবে এ দেশের মানুষের জন্য সবদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এভাবেই এগিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ তাঁর সুযোগ্য কন্যার হাত ধরে আজ উন্নয়নের রোল মডেল।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও রিসার্চ ফেলো, বিএনএনআরসি।
 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank