শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১ || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ মুক্তিযুদ্ধের ব্যতিক্রমী চিত্রায়ন

কামরুল ইসলাম

১৬:৩০, ১২ ডিসেম্বর ২০২১

আপডেট: ১৬:৩২, ১২ ডিসেম্বর ২০২১

১৩০০

‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ মুক্তিযুদ্ধের ব্যতিক্রমী চিত্রায়ন

স্বাধীনতার ৫০ বছরের পূর্তিতে “লাল মোরগের ঝুঁটি” নূরুল আলম আতিকের অনন্য সৃষ্টি। মহান মুক্তিযুদ্ধকে তার রচনায়, পরিচালনায়, সৃষ্টিতে করে তুলেছেন অনন্য। যতক্ষণ ছবি চলেছে ততক্ষণ মনে হচ্ছিল যুদ্ধক্ষেত্রে সব শোষিত বাঙ্গালীর এক একটি চরিত্রের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলাম। কত জীবন্ত, কত বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে মহান স্বাধীনতার সময়কালের একটি খন্ডিত সময়ের একটি স্থানীয় মানুষের জীবনকালে। যা দিয়ে তুলে আনা হয়েছে বাংল জুড়ে পাকবাহিনী আর তাদের দোসর খান সেনাদের অমানবিক ঘটনার প্রবাহচিত্র।   

মুক্তিযুদ্ধের উপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে অনেক ছবি, নাটক, খন্ড নাটক, মঞ্চ নাটকসহ অনেক চিত্রনাট্য মঞ্চায়িত হয়েছে। কিন্তু কোথাও যেন ঠিক পূর্ণতা পাচ্ছিলাম না। কিছুটা অতৃপ্তি, কিছুটা অসমাপ্ত গল্পের পরিসমাপ্তি দেখতে পেয়েছিলাম। কিন্তু নূরুল আলম আতিকের সৃষ্টি “লাল মোরগের ঝুঁটি” মুক্তিযুদ্ধের সব সৃষ্টিকে পাশ কাটিয়ে পূব আকাশের নতুন সূর্য উদয়ের পূর্বক্ষণে গ্রাম বাংলার মোরগের গলা ছেড়ে ডাক যেন বাঙ্গালীর গর্জে উঠার প্রতিধ্বনিই শোনা যাচ্ছিল। প্রতিক্ষণে, প্রতিমূহূর্তে প্রতিবাদের গর্জনের আওয়াজ বের হচ্ছিল। 

জয়বাংলা ধ্বনি বাঙ্গালীর হৃদয়ে ধারন করা এক মহান কাব্যিক স্লোগানে পরিণত হয়েছিলো, যা শত নিপিড়নে কেড়ে নিতে পারেনি। রেডিওতে ভেসে আসা বঙ্গবন্ধুর ইস্পাত কঠিন কন্ঠে ধ্বনিত হতে দেখেছি বাঙ্গালীর লাখো কন্ঠের সম্মিলন। দেশকে ভালোবাসতে যেয়ে মৃত্যুকে বরণ করেছে অকাতরে কিন্তু পাকিস্থানী হায়েনাদের কাছ থেকে জীবন ভিক্ষা চাইতে দেখেনি, তা সূচারু রূপে তুলে আনার চেষ্টা করেছেন নির্মাতা।

প্রতিটি শব্দচয়ন আর অভিব্যক্তি হৃদয়স্পর্শী। ছবিটি দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল নিজেই পাক হানাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলি। ধন্যবাদ নূরুল আলম আতিক, বর্তমান প্রজন্মের কাছে এমন একটি ছবি বিজয়ের ৫০ বছরে উপহার দেয়ার জন্য।

দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পর আজ আমরা আলো ঝলমলে বাংলাদেশের নাগরিক। ৫০ বছর আগে জেগে ওঠা বাংলাদেশের নতুন সূর্য সাদা-কালো বাংলাদেশের অবয়বে নির্মিত ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’। সেই সময়কালে নিজের অস্তিত্বকে খুঁজে পাবার, নিজেকে খুঁজে নেবার কি সুন্দর উপস্থাপন। 

এদেশ হিন্দু মুসলমানসহ সকলের। বাঙ্গালীর মননে আজীবনের লালিত স্বপ্ন স্বাধীন বাংলাদেশ। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সকল ধর্মের মানুষের সহাবস্থান। পাকিস্থানীদের দোসর খানসেনারা নিজেদের অন্যায় চরিতার্থ করার জন্য জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারার সময় মনে হচ্ছিল আমার শরীরের হাড়গুলো আগুনের লেলিহানে খই ফোঁটার মতো ফুটছে। ভিতর থেকে অদ্ভুত এক কান্না ঢুকরে ঢুকরে বের হয়ে আসছিলো। নিজেকে কঠিন প্রতিজ্ঞায় সংবরন করে নতুন শপথ নিয়েছিলাম দেশ মাতৃকার জন্য। এ দেশ আমার, এ দেশ মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বগাঁথা লাখো মুক্তিযোদ্ধার। 

নূরুল আলম আতিক তাঁর দায়িত্ববোধ থেকে ব্যতিক্রমধর্মী একটি মুক্তিযুদ্ধের ছবি ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ নির্মাণ করেছেন। এখন আমাদের দায়িত্ব ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখা। এতে করে নির্মাতা আরো বেশী দেশত্ববোধ থেকে আরো সুন্দর সুন্দর বাস্তবধর্মী ছবি উপহার দিতে উৎসাহী হবেন। 

নারীদের প্রতিবাদের এক মহান বীরত্বগাঁথা ফুটে উঠেছে লাল মোরগের ঝুঁটিতে। শত্রুসেনাদের শায়েস্তা করতে প্রয়োজনে অস্ত্র হাতে তুলে ধরতেও কার্পণ্য করেনি বাঙলার মেয়েরা। 

“লাল মোরগের ঝুঁটি” ছবিটি অনেক ভিন্নতায় ভরা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিকে করেছে মহীয়ান। শ্রষ্টার সৃষ্টি থেকে যাবে। বাংলাদেশের শত বছরের পূর্তিতেও যেন নূরুল আলম আতিকের সৃষ্টি “লাল মোরগের ঝুটি”কে স্মরণ করতে পারি- সেই প্রত্যাশায় থাকলাম। 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank