রোববার গণপদযাত্রা করবেন কোটা আন্দোলনকারীরা
রোববার গণপদযাত্রা করবেন কোটা আন্দোলনকারীরা
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নতুন ঘোষিত এক দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নতুন কর্মসূচি হিসেবে গণপদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেবেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজের নেতারা।
শনিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, রোববার বেলা ১১টায় বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।
এ ছাড়া দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি পাঠানো হবে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, যৌক্তিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলবে।
এর আগে, শনিবার দুপুরে ফেসবুকে আন্দোলন পরিচালনায় ১০টি নির্দেশনা দেন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
নির্দেশনাগুলো হলো-
১. বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, জেলা ও মহানগরে যারা আন্দোলন সমন্বয় করছেন সবাই সংগঠিত হওয়ার জন্য আলাদা করে সমন্বয়ক কমিটি তৈরি করুন। দল-মত নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখুন৷ সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করুন এবং সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। তবে আন্দোলনের স্বার্থে বিতর্কিত বা রাজনৈতিকভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে এরকম কাউকে নেতৃত্ব পর্যায়ে রাখবেন না।
২. আন্দোলনকে কোনো একক বা মূল নেতৃত্বের উপর নির্ভরশীল করবেন না। সবসময় বিকল্প নেতৃত্ব প্রস্তুত রাখুন। প্রথম দিকের নেতৃত্বে ওপর ঝামেলা হলেও তাহলে আন্দোলন স্তিমিত হবে না। নেতৃত্বে নতুন চেহারা আনার চেষ্টা করুন।
৩. ইন্টার্নালি সংগঠিত থাকুন কিন্তু আন্দোলনকে কোনো সাংগঠনিক রুপ দিবেন না। কমিটিটা শুধু শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য। আন্দোলনের স্বতঃস্ফূর্ত চরিত্র যাতে বজায় থাকে৷ তবে কোনো পক্ষ অনুপ্রবেশ করে যাতে স্যাবোটেজ করতে না পারে এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন৷ আন্দোলন সব সময় শান্তিপূর্ণ ও অহিংস হবে।
৪. যে স্থানে কর্মসূচি করবেন সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যোগাযোগ করতে চাইলে তাদের সঙ্গে কোঅপারেট করুন। কিন্তু সকল সিদ্ধান্ত আপনারাই নেবেন। কোনো ধরনের আপস করা যাবে না।
৫. সম্মিলিতভাবে আন্দোলন করার চেষ্টা করুন। জেলা বা মহানগরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করুন এবং একসঙ্গে বড় জমায়েত করার চেষ্টা করুন।
৬. কারও ওপর কোনো আঘাত বা হুমকি আসলে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করুন। ভয় পাবেন না। পিছিয়ে যাবেন না। সামনে এসে কথা বলুন। এখানে গোপনীয়তার কিছু নাই। আমাদের দাবি ও বক্তব্য সুস্পষ্ট ও যৌক্তিক।
৭. বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনকে যুক্ত করুন। কর্মসূচিতে সাংস্কৃতিক আয়োজন রাখুন। জেলা ও মহানগরের নাগরিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কর্মসূচির আগে মাইকিং ও লিফলেটের মাধ্যমে ব্যাপক গণসংযোগ করুন। হলের রুমে রুমে, লাইব্রেরিতে প্রচার করুন।
৮. মিডিয়া ও সংবাদকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখুন। মিডিয়ার সামনে বুঝেশুনে কথা বলুন যাতে মূল বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ থাকে। প্রোগ্রামে ও মিডিয়ায় আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এ রকম বক্তব্য বা স্লোগান দিবেন না।
৯. ঢাকার সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি রাখার চেষ্টা করুন। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানার যারা ব্যবহার করবেন, তারা অবশ্যই ঢাকার সঙ্গে আলোচনা করে নেবেন।
১০. অর্থ সংগ্রহের জন্য সরাসরি ক্রাউড ফান্ডিং করুন। কোনো অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করবেন না। অর্থের নিয়মিত হিসাব রাখুন এবং সমন্বয়ক টিমের কাছে হিসাব ক্লিয়ার রাখুন। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ নেবেন না। কারও কাছ থেকে বেশি অঙ্কের টাকা নেবেন না। রাজনৈতিক স্বার্থ আছে এ রকম কারও কাছ থেকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা নেবেন না।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।
ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ কোটা থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে সে বছরের ৪ অক্টোবর কোটাপদ্ধতি বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটাব্যবস্থা ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়। পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর চাকরিপ্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাঠে নামেন।
টাকা কয়েকদিন আন্দোলনের পর গত ৯ জুলাই কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। পরেরদিন হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ। এ আদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল থাকছে। তবে শিক্ষার্থীরা আপিল বিভাগের এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- ঋণখেলাপীর মিথ্যা মামলায় ডিএমডিকে হয়রানি, এবি ব্যাংকের প্রতিবাদ
- পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ কাইয়ুম ক্লিনিক্যালি ডেড, লাইফসাপোর্ট খোলার সিদ্ধান্ত
- সরকার ই-কমার্স ফ্রেন্ডলি, এখনই ২০০০ কোটি টাকার মার্কেট এক্সপ্লোর করা সম্ভব
- জাতিসংঘ ৭৭-তম অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন শেখ হাসিনা, কি থাকছে?
- আরজে কিবরিয়ার অনুষ্ঠানে এসে ২৫ বছর পর বাবা-মাকে খুঁজে পেলেন মেয়ে
- বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মদিন আজ
- ঢাকায় বসবে ২৫৮কি.মি. পাতাল রেল, কোথা থেকে কোথায়?
- করোনা পরীক্ষায় প্রতারণাকে নির্মম বাণিজ্য বললেন ওবায়দুল কাদের
- বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস
`বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায়` - মেট্রোরেলের আদ্যোপান্ত, ডেডলাইন জয়ে ছুটছে কর্তৃপক্ষ