সোমবার   ১০ নভেম্বর ২০২৫ || ২৬ কার্তিক ১৪৩২ || ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

‘সীমান্তে আর হত্যা নয়’, বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলনে ঐকমত্য

অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক

২২:৩৭, ৯ মার্চ ২০২৪

‘সীমান্তে আর হত্যা নয়’, বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলনে ঐকমত্য

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গুলিতে যেন আর কারো প্রাণ না যায়, সে ব্যাপারে ঐকমত্য প্রকাশ করেছে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ। ঢাকার পিলখানায় ‘বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৪তম সীমান্ত সম্মেলন’ শেষে এ কথা জানিয়েছে উভয়পক্ষ।

পাঁচ দিনের সম্মেলনের শেষ দিন শনিবার সকাল ১০টায় পিলখানার শহীদ আশরাফ মিলনায়তনে প্রতিনিধি দল নিয়ে হাজির হন দুই বাহিনীর মহাপরিচালক।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, এবারের সম্মেলনে আমরা দুইপক্ষ (বিজিবি-বিএসএফ) একমত হয়েছি, এখন থেকে সীমান্তে আর হত্যা নয়। তা সীমান্তরক্ষী কোনো পোশাকধারী, নিরীহ বা সাধারণ মানুষ; বাংলাদেশ ও ভারতের যেই হোক, কোনো জীবন আর হারাতে চাই না। এজন্য আমরা আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দেখাব।

অপরদিকে সীমান্তে হত্যা ‘শূন্যে’ নামিয়ে আনতে নিজেদের অস্ত্রনীতি বদলের কথা বলেন ভারতের বিএসএফের মহাপরিচালক শ্রী নিতিন আগারওয়াল। তিনি বলেন, প্রাণসংহারী অস্ত্র ব্যবহার থেকে বিরত থাকার নীতিতে এসেছি। এ নীতির কার্যকর সুফল পেতে দুই পক্ষই সীমান্তে যৌথ টহল বাড়ানো, তাৎক্ষণিক তথ্য বিনিময় করার মত সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

বিজিবির সদরদপ্তর পিলখানায় সীমান্ত সম্মেলন শেষে সকালে সংবাদ সম্মেলনে আসে বিজিবি ও বিএসএফ। সাড়ে ২২ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের পাঁচটি প্রশ্নের সবগুলোই ছিল সীমান্তে হত্যা সংক্রান্ত।

গত জানুয়ারিতে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন বিজিবি সদস্য রইশুদ্দিন। এ বিষয়ে বিএসএফের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানতে চাইলে মহাপরিচালক শ্রী নিতিন আগারওয়াল বলেন, সেদিন আসলে কী হয়েছিল এবং আমরা কীভাবে তা হ্যান্ডেল (সামালানো) করেছি, তা আমাদের এর পক্ষ থেকে বিজিবিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। আপনারা বিজিবির কাছ থেকে জেনে নিতে পারবেন। আমি তার পুনরাবৃত্তি করছি না।

বিজিবি মহাপরিচালক আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, বিষয়টিতে দাপ্তরিকভাবে চিঠি বিনিময় হয়েছে। এটা কোনো টার্গেট কিলিং (উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যা) ছিল না। ওটা হয়েছিল অন্ধকার, কুয়াশা, কনফিউশনের মধ্যে। দুই পক্ষের মধ্যেই ভুল বোঝাবুঝি ছিল।

সীমান্তে বিএসএফ সদস্যরাও ‘হামলার শিকার হচ্ছে’ মন্তব্য করে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, বিজিবিও হামলার কবলে পড়ছে। দুপক্ষই হামলার শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন ঘটনায় এ পর্যন্ত বিএসএফের ৬০ জন সদস্য হামলায় আহত হয়েছে।

বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, চোরাচালানকারী ও অপরাধীদের হাতে স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি দা ও ধারাল চাকুর মতো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছেন বিএসএফ সদস্যরা। তখনই আত্মরক্ষায় তারা গুলি করেছেন। এ কারণেই নিহতদের শরীরের বুক, পেট, মাথার মত সম্মুখভাগের স্পর্শকাতর অংশে গুলি লেগেছে। এটা প্রমাণ করে, তারা (বিএসএফ) আক্রান্ত হওয়ার পর গুলি করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে। সীমান্তে মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণে আনা এবং সীমান্ত হাট (বর্ডার হাট)’ সংখ্যা বাড়াতেও সম্মত হওয়ার কথা জানিয়ছে দুই পক্ষ।

আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, সামীন্ত এলাকার মানুষের জীবন মান উন্নয়নে এই বর্ডার হাট ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

এবারের সম্মেলনে সীমান্ত হত্যার আলোচনা ছাড়াও ত্রিপুরার আগরতলা থেকে কালন্দি খাল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা শিল্পের বর্জ্য আটকাতে ভারতে ইটিপি (বর্জ্য শোধনাগার) স্থাপনের দাবি জানানো হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। সিলেটের জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর উজানে বন্ধ থাকা পানির প্রবাহ খুলে দেওয়া ও তিনবিঘা করিডোর দিয়ে বাংলাদেশের অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ স্থাপনেও ভারতের সম্মতি চাওয়া হয়।

‘১০ বিষয়ে ঐক্যমত’

বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলনে ‘১০টি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে’ উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্ত হত্যার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় আনতে ব্যবস্থা গ্রহণে বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি আহ্বান জানান।

‘কানেক্টেড বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় ‘তিন বিঘা করিডোর’ দহগ্রামে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপনে ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হয় বিজিবি মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে। আর বিএসএফ মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে সেই আশ্বাসও মিলেছে বলে জানানো হয়। এছাড়া ভারতের আগরতলা থেকে বাংলাদেশের আখাউড়ায় ভেসে আসছে শিল্পবর্জ্য মিশ্রিত পানি। তাতে বাংলাদেশ অংশের নদী ও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এই ক্ষতির প্রভাব তুলে ধরা হয় বিএসএফকে।

দুই দেশের ‘যৌথ নদী কমিশনের’ কারিগরি কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইটিপি স্থাপনের বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক গুরুত্বারোপ করেন। পরিবেশ সুরক্ষায় উভয়পক্ষ যৌথ জরিপ পরিচালনা করতে সম্মত হয়েছে বলে জানানো হয়।

জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী ফসলি জমির সেচ সুবিধা দিতে কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে রহিমপুর খালের মুখ পুনরায় খুলে দিতে বিজিবির পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়।

জবাবে বিএসএফ মহাপরিচালকে বলেন, উভয়পক্ষের স্বার্থ বিবেচনায় দ্রুত রহিমপুর খালের মুখ পুনরায় উন্মুক্ত করা হবে।

সীমান্ত হত্যা বন্ধের পাশাপাশি মাদক চোরাচালান, মানবপাচার, অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বিএসএফের সহযোগিতা চান বিজিবি মহাপরিচালক আশরাফুজ্জামান। এজন্য মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য, জালমুদ্রা, স্বর্ণ চোরাচালানসহ বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদানে সম্মতি প্রকাশ করেছে দু্ইপক্ষ।

সম্প্রতি ভারতের সিকিমে আকস্মিক বন্যায় ভেসে আসা ভারতীয় সৈনিকদের লাশ ফিরিয়ে দেওয়ায় বিজিবির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে বিএসএফ।

‘সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি)’ কার্যকর করতে সীমান্ত এলাকার নাগরিকদের আন্তর্জাতিক সীমানা আইনের সম্পর্কে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণেও উভয়পক্ষ সম্মত হয়। বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করবে বিজিবি-বিএসএফ।

নিজ নিজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বন্ধ থাকা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চালু করা হবে। সীমান্তের অনুমোদিত স্থানে ১৫০ গজের মধ্যে একসারি বিশিষ্ট (অনুমোদিত ডিজাইনের) কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। অভিন্ন নদীগুলোর বন্ধ থাকা তীর সংরক্ষণ কাজ পুনরায় শুরু করা, দুই দেশের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে সম্মতিও জানানো হয়।

সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি তুলে ধরে নিজ নিজ সীমান্তে নিয়মিত অভিযান পরিচালনায়ও সম্মত হয় বিজিবি ও বিএসএফ।

এবারের সম্মেলনে নোডাল অফিসার পর্যায়ে ত্রৈমাসিক বৈঠক, সমন্বিত টহল, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে একমত হয় দুই পক্ষ।

সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালকের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও যৌথ নদী কমিশনের প্রতিনিধি মিলিয়ে ১৬ জন এবং অপরদিকে ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ নয় সদস্যর প্রতিনিধিদল অংশ নেন।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)

আরও পড়ুন

Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank