শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

প্রাথমিকের চেয়ে মাধ্যমিকে উপস্থিতি কমেছে, ছাত্রীরা ফিরেছে বেশি

নিউজ ডেস্ক

২১:১৫, ১৩ এপ্রিল ২০২২

৩৯১

প্রাথমিকের চেয়ে মাধ্যমিকে উপস্থিতি কমেছে, ছাত্রীরা ফিরেছে বেশি

করোনা মহামারীতে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন বন্ধের পর স্কুলে ফেরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রী উপস্থিতি বেড়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় পর্যায়ে। তবে সামগ্রিকভাবে প্রাথমিক স্তরের চেয়ে মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমেছে। আর নবম শ্রেনীতে শিক্ষার্থী  উপস্থিতি কমেছে সমান হারে। ‘নিরাপদ ইশকুলে ফিরি’ ক্যাম্পেইনের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) ঢাকার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এক সভায় গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে বাংলাদেশে কর্মরত ক্যাম্পেইন পরিচালনাকারী ২১টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দিপু মনি, এমপি।  

সংস্থাগুলো দেশের ৭ বিভাগের ১৭টি জেলায় ৩২৮টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে প্রায় তিন সপ্তাহব্যাপী সমীক্ষা চালিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমীক্ষা চলাকালীন তিন সপ্তাহে স্কুলগুলোতে প্রাথমিক পর্যায়ে ১৬%-৩৭% ছেলে শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল এবং মেয়ে শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল ১৪%-৩৫%। একই সাথে মাধ্যমিক স্তরে অনুপস্থিত ছিল ৩৪%-৪৫% ছেলে শিক্ষার্থী এবং ২৮%-৪১% মেয়ে শিক্ষার্থী।

দীর্ঘ বিরতির পর স্কুলে শিশুদের উপস্থিতি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা রক্ষণাবেক্ষণ এবং মানসিক সুস্থতা পর্যবেক্ষণ করতে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। সংখ্যাগত এবং গুণগত উভয় উপাত্তই সংগ্রহ করা হয়েছে গবেষণাটিতে। উল্লিখিত ৩২৮টি স্কুল থেকে ১৬০৬ জন শিশুর সাথে ফোকাস গ্রুপ আলোচনা করে এবং শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎকারধর্মী আলোচনার মাধ্যমে গুণগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ।

গুণগত গবেষণা থেকে শিক্ষার্থীদের স্কুলে অনুপস্থিত থাকার প্রাথমিক কারণগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণগুলো হচ্ছে- (ক) অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়া (খ) বাল্যবিবাহ (গ) পরিবারের অন্য এলাকায় স্থানান্তর (ঘ) অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলে যাওয়া (ঙ) প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণে অনাগ্রহ ইত্যাদি।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করতে দীর্ঘ সময় কাজ করতে হবে। সরকারের অনেক গবেষণা ফলাফলের সাথেই এই গবেষণা মিলে গেছে। যারা বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে তাদের শ্রেণীকক্ষে ফিরিয়ে আনতে একদম তৃণমূলে গিয়ে কাজ করতে হবে আমাদের। মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে কাজ করবো বলে ২ লক্ষ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ শুরু করেছি, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত দু’জন কাউন্সিলিংয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক থাকবেন। আর প্রতিটি জেলায় একজন করে পেশাদার কাউন্সিলর থাকবে। সবাই মিলে কাজ করলে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে তা অবশ্যই পূরণ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে আমরা মনে করি।”

গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে স্কুলে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ও। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৭৪ শতাংশ শিক্ষার্থী স্কুলে মাস্ক পরে এবং সামগ্রিকভাবে ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী শ্রেণীকক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে। 

গুণগত সমীক্ষা অনুসারে, শিক্ষার্থীরা লকডাউনের সময় খিটখিটে মেজাজ, একাকীত্ব, বিচ্ছিন্নতা এবং মানসিক চাপ অনুভব করতো যার কারণ হিসেবে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন আর্থিক সংকট, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, বাল্যবিবাহের ঝুঁকি, শিক্ষা বন্ধের সুযোগ, পরিবারে সমস্যা বৃদ্ধি, অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত না হতে পারা এবং পাঠ বোঝার অসুবিধার কথা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলার পরে যদিও এই সমস্যাগুলো হ্রাস পেয়েছে, তবে দেখা দিয়েছে কিছু নতুন সমস্যা। যেমন শেখায় অনাগ্রহ, পাঠ বুঝতে অসুবিধা এবং অন্যদের সাথে সহজে মিশতে পারার চ্যালেঞ্জ।

শিশুদের নিরাপদে শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনতে ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে ‘নিরাপদ ইশকুলে ফিরি’ ক্যাম্পেইন কাজ শুরু করে। এর পর থেকেই এই ক্যাম্পেইনটি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অ্যাডভোকেসির পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে। ক্যাম্পেইনটি পরিচালনাকারী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো হল – ব্র্যাক, ব্রিটিশ কাউন্সিল, গণসাক্ষরতা অভিযান, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, এডুকো বাংলাদেশ, এফআইভিডিবি, ফ্রেন্ডশিপ, হ্যাবিট্যাট ফর হিউম্যানিটি বাংলাদেশ, হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল- হিউম্যানিটি অ্যান্ড ইনক্লুশন, জাগরনী চক্র ফাউন্ডেশন, লিওনার্ড চ্যাশায়ার, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, রুম টু রিড বাংলাদেশ, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ, সাইটসেভারস, সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ, স্ট্রমী ফাউন্ডেশন, টিচ ফর বাংলাদেশ, ভিএসও, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এবং ইপসা। সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম শিশুদের জন্য নিরাপদ করতে নিবিড়ভাবে সরকারের সাথে কাজ করাই এই ক্যাম্পেইনের মুল লক্ষ্য।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত