শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০ || ১৭ রমজান ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ধারাবাহিক উপন্যাস

বলতে এলাম ভালোবাসি

পলাশ মাহবুব

১৭:০০, ১ নভেম্বর ২০২০

আপডেট: ১৭:৫৮, ১ নভেম্বর ২০২০

১৯৬০

ধারাবাহিক উপন্যাস

বলতে এলাম ভালোবাসি

বলতে এলাম ভালোবাসি

ধারাবাহিক উপন্যাস

পলাশ মাহবুব

পর্ব-২

৩.
আতিকুল হককে দেখলে পুরনো দিনের বাংলা ছবির কথা মনে পড়ে। তার মধ্যে বাংলা ছবির দরিদ্র কলেজ শিক্ষকের একটা ছাপ আছে। গায়ের পাঞ্জাবি আর চোখের গোল ফ্রেমের চশমা সে ভাবকে আরও জোরালো করে।
তার বোন অবশ্য মাঝে-মধ্যে বলে, ভাইয়া, চশমার ফ্রেমটা বদলাও। তোমাকে বোকা বোকা লাগে। এই টাইপ ফ্রেম এখন চলে না। কত সুন্দর সুন্দর ডিজাইন পাওয়া যায় এখন।
আতিকুল হক বোনের কথা শুনে হাসে।
আচ্ছা, ঠিকা আছে। আজ আসার পথে চশমার দোকান হয়ে আসবোনে।
কিন্তু তা আর হয়ে ওঠে না। আসার পথে চশমার দোকানের কথা আতিকুল হক ভুলে যায়। কিংবা আসার পথে কোনও চশমার দোকান তার চোখে পাড়ে না। তাই আতিকুল হকের গোল ফ্রেমের চশমারও কোনও নড়চড় হয় না।
ঢাকায় বদলি হয়ে এসে আতিকুল হক তার ছোট বোনের বাসায় উঠেছে। পাঁচ বছরের এক সন্তানসহ ছোট বোন আর তার স্বামী থাকে রায়েরবাজার। বোন আর বোনের স্বামী দুজনেই চাকরি করে। তাদের পাঁচ বছরের মেয়ে যার নাম সুপ্তি, সে স্কুল থেকে এসে বাসার কাজের লোকের সাথে দিন কাটায়। মাঝে মাঝে আতিকুল হকের যখন ক্লাস থাকে না বা আগে ভাগে শেষ হয়ে যায় তখন সে বাসায় ফিরে ভাগ্নির দায়িত্ব নেয়। ক্লাসের সময় আর যাতায়াতের সময়ের বাইরে সময় দেয়ার মতো কোনও জায়গা তার নেই। সুতরাং ক্লাস শেষেই বোনের বাসায় ফিরে আসে সে।
রাজশাহীতে তাদের বাড়ি থেকে কলেজের যে দূরত্ব ছিল এখানে তার অর্ধেক। কিন্তু যেতে আসতে সময় লাগে দ্বিগুনেরও বেশি। আতিকুল হকের তাই গরম ভাত খেয়ে কলেজে যাওয়া হয় না।
এ নিয়ে অবশ্য তার কোনও আক্ষেপও নেই। কারণ ঢাকার সবকিছুই গরম। রাস্তার যে ভিক্ষুক সেও মেজাজ গরম করে ভিক্ষা চায়। ভিক্ষা না দিলে সেই মেজাজ হয় দেখার মতো।
ব্যতিক্রম বোধহয় আতিকুল হক।
নিরীহ ব্যাপারটা সহকারি অধ্যাপক আতিকুল হকের চেহারার মধ্যে সাইনবোর্ডের মতো সেট হয়ে গেছে। যাতে লেখা আছে- আমি একজন নিরীহ গোত্রের ভদ্রলোক। 

সত্যিকারের নিরীহ মানুষ বলতে যা বোঝায় আতিকুল হক তাই।
তিনি চুলের মাঝামাঝি সিঁথি করেন। দেখে মনে হবে স্কেল দিয়ে মেপে সিঁথিটা করা হয়েছে। কোনদিকে চুল পরিমাণ কম বা বেশি নেই। সিঁথির এ মাথা থেকে ও মাথা সরলরেখার মতো পরিষ্কার দেখা যায়।
সিঁথি করার আগে আতিকুল হক প্রতিদিন একটা কাজ করেন। এক কোষ পরিমাণ পানির সাথে অর্ধ কোষ নারিকেল তেল মেলান। তারপর তেল-জলের সেই মিশ্রণ কয়েক মিনিট ধরে চুলে মাখেন। সবশেষে তেল জবজবে চুলে নিখুঁতভাবে সিঁথি করেন। তেলের কারণে চুল সবসময় তার মাথায় লেপ্টে থাকে। ঝড়-তুফান হয়ে গেলেও তার মাথার চুলের নড়চড় হয়না।

আতিকুল হকের চুল থেকে প্রায়শই মেয়েদের চুলের মতো সুবাস বের হয়। যে কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তার গোপন নাম, নিদ্রাকুসুম।
সহকারি অধ্যাপক আতিকুল হকের এই নিদ্রাকুসুম নামের পেছনে দুটি কারণ আছে। 
দুটোই বেশ জোরালো। ফেলে দেওয়ার মতো না।
প্রথম কারণ হচ্ছে ক্রিয়া। স্যার চুলে নিদ্রাকুসুম তেল ব্যবহার করেন। 
এটা অনুমাননির্ভর তথ্য না। কলেজের দু-একজন ছাত্র স্যারকে দোকান থেকে নিদ্রাকুসুম তেল কিনতে দেখেছে। তেলের প্যাকেটে কেশবতী কন্যার দীঘল চুল। 
একজন আবার মোবাইল ফোনে ছবিও তুলে এনেছে। দূর থেকে তোলার কারণে ছবি ক্লিয়ার না। তবে প্যাকেটের গায়ে যে দীঘল কালো চুলের রমনীর ছবি আছে সেটা বোঝা যায়। যে ছবি বাজারের নিদ্রাকুসুম তেলের প্যাকেটের নারীর ছবির সাথে মিলে যায়। ছবি অস্পষ্ট কিন্তু প্রমাণের জন্য যথেষ্ট।
দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে কার্য। চুলে নিদ্রাকুসুম তেল ব্যবহার করেন স্যার। কিন্তু তিনি ক্লাসে পড়ানো শুরু করলে ছাত্র-ছাত্রীরা ঘুমিয়ে পড়ে। এতে অবশ্য তেলের ভূমিকা নেই। তিনি যেভাবে মিহি কন্ঠে পড়ান তাতে অনেকের না ঘুমিয়ে আর উপায় থাকে না। ছাত্রদের কেউ কেউ আছে যারা রাজনীতি আর অন্যান্য কর্মকান্ড নিয়ে বেশ ব্যস্ত থাকে। তারা ক্লাসে আসেই ঘুমানোর জন্য। আতিক স্যারের ক্লাস সে বিবেচনায় সর্বোত্তম।
আতিক স্যার অবশ্য ভিন্ন কথা বলেন।
মাঝে মাঝে ঘুমন্ত দু-একজন যে তার চোখে পড়ে যায় না বিষয়টা সেরকম না। নিরীহ হলেও তিনি চোখ-কান খোলা রাখেন।
তখন তিনি তাদের ডেকে তোলেন।
এই যাও, বাথরুমে গিয়ে চোখে পানি দিয়ে এসো। রাত জেগে ফেসবুকে থাকলে আর আড্ডা দিলে দিনে তো ঘুম আসবেই। এই ফেসবুক পড়াশোনার জন্য যতধিক ক্ষতিকর, স্বাস্থ্যের জন্যও ততধিক। এক্ষুনি চোখে পানি দিয়ে এসো। এরপর ঘুমালে কিন্তু আমি একদম সহ্য করবো না। ক্লাস শিক্ষা গ্রহণের জায়গা, ঘুমের নয়।
যারা চোখে পানি দিতে বের হয় তারা আর ক্লাসে ফিরে আসে না।
আতিক স্যারও বিষয়টি খেয়াল করেন না। কিংবা খেয়াল করলেও তা নিয়ে তিনি মাথা ঘামান না। মাথায় নিদ্রাকুসুম তেল মাখার এই এক গুণ। সহজে ঘামে না।

সহকারি অধ্যাপক আতিকুল হক রাত্রিদের পড়ান ‘রাজনীতি ও সংঘর্ষ’। 
রাজনীতি আর সংঘর্ষে ময়দান ধূসরিত হলেও স্যারের মাথার একটি চুলও জায়গা থেকে নড়তে দেখা যায় না। বিষয়টি স্যার এমনভাবে পড়ান, মনে হয় সংঘর্ষ নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় ছিল। একটু উদ্যোগী হলেই সংঘর্ষের ঘটনাটি এড়ানো যেত। এড়াতে পারলেই এতবড় বিপর্যয় ঘটতো না। তাকেও আর বিষয়টি পড়াতে হতো না। অহেতুক এই সংঘর্ষের ইতিহাস পড়ানোর কারণে আতিক স্যারকে ভীষণ বিব্রত আর লজ্জিত মনে হয়। বিব্রত হওয়াটাও সাইনবোর্ডের মত তার চেহারায় ফুটে ওঠে।
এমন স্বভাবের কারণে ক্লাসের ছেলে-মেয়েরা স্যারকে নিয়ে মজা করে। কিন্তু সেই মজাটা একপেশে হয়ে যায় স্যারেরই কারণে। 
কারণ মজা নামক বিষয়টি ‘রাজনীতি ও সংঘর্ষে’র মধ্যে পড়ে না। আর পাঠের বাইরের কোনও কিছুতে স্যারের আগ্রহ আছে বলে মনে হয়না। অন্তত ছাত্র-ছাত্রীদের চোখে পড়ে না। 
ছেলে-মেয়েদের মজা করাকে পাশ কাটিয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে তিনি ‘রাজনীতি আর সংঘর্ষে’র পাঠদান অব্যাহত রাখেন। 
সিরিয়ায় মার্কিন আগ্রাসনের সম্ভাব্যতা স্যারকে ভীষন বিচলিত করে। যুক্তরাষ্ট্র যদি সিরিয়ায় হামলা করে বসে তাতে বৈশ্বিক কি কি সংকট তৈরি হতে পারে ছাত্র-ছাত্রীদের সেটা বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি। উদহারন টানেন ইরাক আর লিবিয়ার যুদ্ধ থেকে।
ইরাক আগ্রাসন ধবংস আর প্রাণহানি ছাড়া বিশ্বকে কি দিয়েছে?
কিছুই দেয়নি। শুধু শুধু একটি সভ্যতা শেষ করে দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদের উত্তরের অপেক্ষা না করে নিজেই উত্তর দেন। 
বিশ্ব মোড়ল কালো মানিক ওবামার সাম্প্রতিক কার্যকলাপ নিয়ে স্যারকে বেশ হতাশ মনে হয়।
ওবামা লোকটাকে ভালোই ভেবেছিলাম প্রথমে। তার চেহারা ম্যান্ডেলার মতো। কিন্তু স্বভাব-চরিত্রে ধারে কাছেও না। এখন তো দেখছি ব্যাটা একটা বিরাট মাপের যুদ্ধবাজ। সে তো দেখি যুদ্ধংদেহি বুশের ছোট ভাই। তার মাথায় কি এই জিনিসটি নেই যে যুদ্ধ দিয়ে কখনো শান্তি অর্জন করা যায় না? যুদ্ধংদেহি মনোভাব কোনও সফলতা বয়ে আনে না। পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম নূন্যতম কোনও নজির নেই।
কি কোনও নজির আছে? আপনারা কি মনে করেন?
প্রথম প্রশ্নের উত্তর নিজে দিলেও এবার ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে তাকান আতিকুল হক।
স্যারের প্রশ্নে ক্লাসের পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের দু-একজন নড়ে-চড়ে বসে।
যারা স্বভাবে অনেকটা স্যারেরই মতো। অর্থাৎ পড়ালেখাই যাদের জীবনের একমাত্র ব্রত তারা দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে জানান দেয়ার চেষ্টা করে, এ ধরণের কোনও নজির শুধু দুনিয়াতে কেনো দুনিয়ার বাইরে খোঁজ-খবর করলেও পাওয়া যাবে না। 
তাদের কেউ কেউ চেহারার মধ্যেও এক ধরণের হতাশা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে। যা আতিক স্যারের চেহারায় ইতিমধ্যে ফুটে আছে। হতাশাগ্রস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের দেখে আতিকুল হক আনন্দবোধ করেন।
তিনি এবার অন্যদের দিকে তাকান।
আপনাদের কি মনে হয়? 
আপনি, ওই যে থার্ড বেঞ্চের মাঝের জন। আপনি বলেন তো। এ বিষয়ে আপনার ভাবনা কি? যুদ্ধ কি মানুষের কোনও কল্যাণে লাগে?
যাকে প্রশ্নটা করা হয় সে মোটেও পড়ুয়া টাইপ ছেলে না। ইতিমধ্যে সে রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছে। মিটিং-মিছিল এবং রাজনৈতিক আনুষাঙ্গিক কাজ-কর্মের পর সময় থাকলে ক্লাসে আসে। না হলে নাই। বড় ভাইরা বলে দিয়েছে ওসব নিয়ে ভাবলে চলবে না। দিন বদলের সময় এখন। রাজনীতি গণ-মানুষের জন্য। আর সে রাজনীতি শিখতে হয় রাজপথে। রাজনীতির সূতিকাগার হচ্ছে রাজপথ। ক্লাসরুম না।
রাজনীতি যেহেতু গুরুমুখী বিদ্যা। তাই বড় ভাইদের কথা অমান্য করার সুযোগ নেই। 
বেশ কিছুটা সময় নিয়ে ছেলেটা উঠে দাঁড়ায়। তার ওঠার ভাব দেখলে মনে হবে দু’পাশ থেকে দুজন তাকে ঠেলে উঠিয়ে দিচ্ছে। 
ছেলেটি চারপাশে একবার তাকায়। তারপর মুখ খোলে।
কি যে বলেন ছ্যার। কই আগরতলা আর কই চক্কির তলা। কোথায় ম্যান্ডেলা আর কোথাকার কোন স্যান্ডেলা। কার সাথে যে ছ্যার আপনি কি মিলান! আমাদের পার্টি তো ছ্যার অলরেডি এ বিষয়ে স্টেটমেন্ট দিয়েছে। পেপারেও আসছে। আপনি দ্যাখেন নাই? সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, মানি না মানবো না। মেহনতি মানুষ ভাই ভাই, যুদ্ধবাজের ঠাঁই নাই। দুনিয়ার মানুষ, এক হও . . . জ্বালো . . . জ্বালো. . .
ছেলেটির উত্তর যে মিছিলের শ্লোগানে পরিণত হবে আতিক স্যার সেটা বুঝতে পারেননি। তিনি প্রথমে এটাও বুঝতে পারেননি স্যান্ডেলা ব্যক্তিটি আসলে কে। যখন পেরেছেন ততক্ষনে ছেলেটির শ্লোগানের সাথে আরও কয়েকজন কণ্ঠ মেলানো শুরু করেছে। যারা একই দলের কর্মী। 
তাদের শ্লোগানে ক্লাস আর ক্লাসরুম থাকে না। তাকে রাজনীতির আতুরঘর রাজপথ মনে হয়।

আমরা আগেই বলেছি সহকারি অধ্যাপক আতিকুল হক একজন নিরীহ মানুষ। আর নিরীহ মানুষরা ঝামেলা এড়িয়ে চলেন। তারা মিছিল-মিটিং ভয় পান। শ্লোগানের ঝাঁঝালো কণ্ঠ তাদের আতংকিত করে।
নির্ধারিত সময়ের বেশ আগেই তাই ক্লাস শেষ করে বের হয়ে যান তিনি। 
ক্লাসরুমে ছেলেদের শ্লোগান চলতে থাকে।
সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন . . .ভেঙে দাও . . .গুড়িয়ে দাও।

 

৪.
পত্রিকার তিনটা বিজ্ঞাপনে আন্ডারলাইন করলেন সোলায়মান সাহেব।
তারপর পেপারটা ডান পাশের সাইড টেবিলের ওপর রাখলেন।
গেলো এক সপ্তাহে আজকেই সবচেয়ে বেশি।
গতকাল সংখ্যাটা ছিলো শূন্য। এর আগের দুই দিন এক।
বিজ্ঞাপন থেকে নাম্বারগুলো আলাদা কাগজে টুকে নেন তিনি। পেপারটা রাখার আগে ভালোভাবে নাম্বারগুলো আরেকবার মিলিয়ে দেখেন।
এরপর পিয়ন ইদ্রিসকে ডেকে লেবু চা দিতে বলেন।
ইদ্রিসকে অবশ্য চা দেয়ার কথা এখন আর বলতে হয় না। সে চা বানিয়ে রেডি করে রাখে। 
সোলায়মান সাহেব পেপারটা ভাঁজ করে পাশে রাখার পর ইদ্রিস চা নিয়ে ঢোকে। বেশ কিছুদিন ধরে এটাই রুটিন। রুটিন কাজ যে প্রতিদিন করতে হয় এটা ইদ্রিসকে বলে দিতে হয় না।
ইদ্রিস বুদ্ধিমান ছেলে। শুধু পড়ালেখা আর নিজের নামটা তার সাথে বেঈমানি করেছে।
তিনবার মেট্রিক দিয়েও পাশ করতে পারেনি। যে ফেঁড়ে এখন তাকে পিয়নগিরি করতে হচ্ছে। আর নিজের বাপ-মায় তার এমন এক নাম রাখছে যে নাম শুনলে মানুষ তারে পঞ্চাশ বছরের বুড়া মনে করে। অথচ তার বয়স মাত্র বাইশ।
ইদ্রিস চা দিয়ে যাওয়ার পর কাপে চুমুক দেন সোয়লায়মান সাহেব।
চা খেতে খেতে ফোন করতে বসবেন।
এটাও তার রুটিনের অংশ। প্রতিদিন অফিসে এসে এই কাজটা করেন সোলায়মান সাহেব।
খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে সোজা চলে চান ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনের পাতায়। সেখানে বাড়ি বিক্রি, জমি বিক্রি, পড়াইতে চাইয়ের মতো আরেকটি বিজ্ঞাপন থাকে সবসময়, পাত্র-পাত্রী চাই। পাত্র-পাত্রী চাই কলামটি নিয়ে তিনি বসে পড়েন। বাড়িতে বসে এই কাজ করা যায় না। 
কাগজ-কলম নিয়ে সোলায়মান সাহেব খুব মনযোগ দিয়ে পাত্রী চাই-এর বিজ্ঞাপনগুলো দেখেন। তারপর কোনও বিজ্ঞাপন পছন্দ হলে তাতে আন্ডারলাইন করেন।
অধিকাংশ দিন পাত্র তার পছন্দ হয় না। 
বেশির ভাগ পাত্র বিদেশে থাকে। হয় তারা ডিভি পেয়েছে নইলে গ্রীনকার্ড হোল্ডার। বিয়ের পর বউ নিয়ে তের নদীর ওপার চলে যাবে। বিজ্ঞাপনে এই কথাটা বেশ জোর দিয়ে লেখা হয়। বিয়ের পর বিদেশ নিয়ে যাওয়াটা তাদের বিজ্ঞাপনের শ্লোগান। বিয়ে করমু, বিদেশ যামু। যতসব রাবিশ। সোলায়মান সাহেব মনে মনে বলেন।

আজকের বিজ্ঞাপনে এরকম পাত্রের সংখ্যা ১২। 
এ ধরনের পাত্রের বিজ্ঞাপনের ভাষাও হয় খুব জটিল।

ঢাকায় স্টাবলিস্ট ব্যবসায়ী আমেরিকান গ্রীনকার্ডধারী বর্তমানে ইউএসএ (আমেরিকা) অবস্থানকারী সুদর্শন পাত্রের (৫-২” ) জন্য মার্জিত স্বভাবের সুন্দরী পাত্রী চাই। পাত্রীর বয়স হতে হবে ২৫-২৭ এর মধ্যে। পাত্রীকে অবশ্যই সুশিক্ষিতা ও আধুনিকা হতে হবে। আগ্রহিরা সরাসরি যোগাযোগ - . . . 

বিজ্ঞাপন পড়ার সময় সোলায়মান সাহেব একটি কাজ করেন। দুই শ্রেণীর পাত্রকে প্রথমেই বাদ দেন। প্রথম হচ্ছে যাদের বিজ্ঞাপনের ভাষা জটিল। 
যাদের ভাষা জটিল মানুষ হিসেবেও তাদের জটিল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সোজা মানুষ সোজাভাবে কথা বলে। যাদের এক সেনটেন্স দুইবার পড়তে হয় তাদের মধ্যে ঝামেলা আছে।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে যেসব পাত্র প্রবাসে থাকে। লাল কালি দিয়ে প্রথমেই এই দুই শ্রেনীকে লালকার্ড। 
মেয়ে বিয়ে দেবেন ঠিক আছে কিন্তু প্রবাসী ছেলে তার একদম পছন্দ না। এরা বিদেশে বসে কি করে না করে ঠিকঠিকানা নেই। কিছু টাকা জমিয়ে দেশে এসে ডাট-ফাট দেখায়। কড়া সেন্ট মেখে ঘোরাঘুরি করে। আমাদের দেশের ডিসি ভীন দেশের নাকি ডিস ক্লিনার। 
সোলায়মান সাহেব একটা বিষয়ে নিশ্চিত বিদেশে যারা সবচেয়ে অড জব করে দেশে এসে তারাই সবচেয়ে কড়া টাইপ পারফিউম মাখে। কড়া পারফিউম দিয়ে কষ্টের গন্ধ দূর করতে চায়।
তাছাড়া না দেখা জিনিসে একদম বিশ্বাস করতে পারেন না সোলায়মান সাহেব। মেয়েকে বিয়ে দিতে চান ঠিক আছে। কিন্তু তাই বলে তাকে একেবারে দেশের বাইরে পাঠাবেন না।
আজকের বাছাইকৃত তিনজনের একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। একজন সরকারি চাকরি করে আর একজন ব্যবসায়ী। 
ব্যবসায়ীর বয়স একটু বেশি। ৩৫।
লিখছে ৩৫। আসল বয়স মনে হয় আরও বেশি। এই বুড়াও বাদ। 
তিনজনের লিস্ট থেকে শেষের জনের কপালেও লালকার্ড জোটে। লাল কালি দিয়ে শেষ নাম্বারটি কেটে দেন সোলায়মান সাহেব। আজকের মতো লিস্ট ফাইনাল।
চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে নাম্বার লেখা কাগজটা হাতে নেন তিনি। এবার নাম্বার ধরে তাদের সাথে কথা বলবেন। 
এই ফোন করা নিয়েও এক জ্বালা। বেশির ভাগ সময় ফোন ধরে মুরুব্বি টাইপের কেউ। হয় তারা পাত্রের মামা, চাচা নয়তো ভগ্নিপতি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে পিতাকেও পাওয়া যায়। তবে পাত্রকে পাওয়া যায় না। সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় ভগ্নিপতিদের। শালাদের বিয়ে দেয়ার জন্য দুলাভাইরা মনে হয় খুব অস্থির। দুলাভাইগুলো কথাও বলে চ্যাটাং চ্যাটাং। শালাদের মনে করে শাহরুখ খান।

ফোনটা হাতে নেন সোলায়মান সাহেব।
এ সময় তার কাছে মোতালেব সাহেব আসেন।
রুমের ভেতরে ঢুকে পড়ে বলেন, আসতে পারি?
মোতালেব সাহেবকে দেখে হাসেন সোলায়মান সাহেব। 
মোতালেব সাহেব দিলখোলা মানুষ। কথা বলেন জোরে। হাসেন তারচেয়েও বেশি শক্তি দিয়ে। কিন্তু তার হাসিতে কোনও শব্দ বের হয় না। শুধু দাঁতের প্রসারিত পাটি দুটো দেখা যায়। আর শরীরটা কাঁপে।
সোলেমান ভাই, আজকে কয়টা পাইলেন?
মোতালেব ভাই আপনাকে কতবার বলেছি, কয়টা না, বলেন কয়জন। টি, টা, খানা, খানি এসব জড়বস্তু আর প্রাণীর বেলায় ব্যবহৃত হয়। মানুষের জন্য এগুলো প্রযোজ্য না। আমি তো ভাই মাছ ধরতে বসিনি।
মোতালেব সাহেব হো হো করে হাসেন। ওই একই কথা। মানুষও তো প্রাণী। নাকি না? মানুষ হইলো গিয়া সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষের বেলায় সব সই। তা আজকে জালে কয়টারে আটকাইলেন? দেখি দেখি।
সোলায়মান সাহেবের কাছ থেকে পেপারটা টেনে নেন তিনি। আন্ডারলাইন করা একটা বিজ্ঞাপন পড়া শুরু করেন।
ইঞ্জিনিয়ার। তা বুয়েট না পলিটেকনিক তাতো লেখে নাই। এখন তো ইঞ্জিনিয়ার আর মিস্ত্রি সব একাকার হয়ে গেছে। কে ওপরে কে নিচে বোঝা যায় না। আপনাকে কতবার বলেছি এইসব পেপারের বিজ্ঞাপন দেখে ভালো পাত্র পাবেন না। শোনেন, বাজারে যে পাত্রের চাহিদা আছে তাদের বিজ্ঞাপন দিয়ে বিয়ে করতে হয় না। তাদের পেছনে এমনিতেই লম্বা লাইন থাকে। বিজ্ঞাপন দেয় অচল আর ওই দ্বিতীয় বিবাহের পাত্ররা। যাদের আর কোনও গতি নাই। পত্রিকার ছাপানো মিথ্যা কথাই তাদের ভরসা।
মোতালেব সাহেবের কথা শুনে সোলায়মান সাহেব মাথা নাড়েন। কি বলেন এসব নেতিবাচক কথা। বিজ্ঞাপন দেয়া সবাই যে একই রকম তা হবে কেন? ভালো পাত্ররাও নিশ্চয়ই বিজ্ঞাপন দেয়। পত্রিকায় যত বিজ্ঞাপন দেয় সব তো আর খারাপ না। ভালো পাত্র নিশ্চয়ই আছে।
আরে ভাই, বিয়ের বাজারে এমনিতে কত খরচা। অচল পাত্র ছাড়া কেউ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বাড়তি খরচা করে বলেন?
আপনার কথাটা মানতে পারলাম না। সবাই অচল না। 
আচ্ছা সোলেমান ভাই, আপনি আমাকে একটা জিনিস বলেন তো, আপনারা কয় ভাই বোন?
কেনো?
আরে বলেনই না।
পাঁচজন। দুই ভাই। তিন বোন।
তারা সবাই নিশ্চয়ই বিয়ে করেছে?
হুমম। তাতো বটেই। আমি সবার ছোট।
আচ্ছা, তাদের কারো বিয়ে কি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে হয়েছে? আই মিন, আপনারা কি বিয়ের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন?
না। তা দেইনি।
এবার বলেন, আপনার শালা-শালী, ভাগিনা-ভাতিজা, লতায়-পাতায়, গাছায়-আগাছায় পরিচিত যারা আছে এদের মধ্যে কাউকে কি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিয়ে করতে হয়েছে?
সোলায়মান সাহেব ধন্দে পড়ে যান। তিনি কিছুক্ষন চুপ করে থাকেন।
মোতালেব সাহেব টেবিলে চাপড় দিয়ে ওঠেন। তার মানে হলো, না। তাদের কাউকে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিয়ে করতে হয়নি। 
একটু দম নেন মোতালেব সাহেব। 
আচ্ছা। খালি মুখে আর কত কথা বলবো। গলাতো শুকিয়ে গেছে। চা দিতে বলেন। তবে আপনার ওই লেবু চিপড়ানো তিতা চা না। 
লেবু চা তিতা হবে কেনো!
আমি নিশ্চিত ইদ্রিস এক লেবু বারবার কচলায়। সেজন্যই তিতা হয়। ওই ব্যাটা ইদ্রিস জন্মের পরই বুড়া মানুষের নাম পাইছে। বয়সের আগে তাই পাইকা গেছে। ওর পক্ষে কিছুই অসম্ভব না। ঠ্যা ঠ্যা ঠ্যা।
শব্দ ছাড়া হাসির কাঁপন তোলেন মোতালেব সাহেব।
শোনেন সোলায়মান ভাই, বিয়ে-শাদীর আলোচনা। তিতা মুখে এসব হয় না। ফজলের দোকনের গরুর দুধের চা আনান। চা খেয়ে যেন মনে হয় একটা কিছু খাইছি।
সোলায়মান সাহেব পিয়ন ইদ্রিসকে ডাকেন।
গরুর দুধের চায়ের সাথে সিঙ্গারাও অর্ডার দেন।

ইদ্রিস চলে গেলে আবার শুরু করেন মোতালেব সাহেব।
যে কথা বলছিলাম। আপনার আত্মীয়-স্বজনের মধ্যেও কেউ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিয়ে করেনি। এমনকি তাদের মধ্যে সবচেয়ে কম যোগ্য যে তাকেও না। 
তা হয়নি। কিন্তু এ দিয়ে আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন? সোলায়মান সাহেব বোঝার চেষ্টা করেন।
কি বোঝাতে চাচ্ছি সেটা আমাকে বলে দিতে হবে না। আপনি নিজে থেকেই বুঝে যাবেন। 
এবার আমার কথা বলি। আমার তিন পুরুষের মধ্যে কেউ এই কাজ করেনি। ভাই-বোন, শালা-সমন্ধি, ভাগিনা-ভাতিজা কেউ না। আরে আমার ওয়াইফের এক খালাতো ভাই তো পরপর তিনটা বিয়ে করে ফেললো। একটার জন্যও তাকে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হয়নি। ঠ্যা ঠ্যা ঠ্যা। আমি যা বলি শোনেন। এইসব পেপার-পত্রিকা রাখেন। ভালো পাত্র পত্রিকার পাতায় ধরা দেয় না। তাদের খুঁজে বের করতে হয়। এতে কাজ হবে না।
তাহলে কিসে কাজ হবে?
আরে ভাই বিয়ে-শাদী হচ্ছে এক আর একে দুই হওয়ার বিষয়। জোরাজুরি করে তো আর দুই হয় না। অংক করে হয়। এটা একটা সাইন্স। তাছাড়া ওপরওয়ালার ইচ্ছারও একটা ব্যাপার আছে। আর আপনার এই পত্রিকা ওপরে যায় না। শোনেন ভাই, তিনি যখন চাইবেন হয়ে যাবে। কেউ আটকাতে পারবে না। বিয়ে হচ্ছে একমাত্র বিষয় যেখানে সাইন্স আর ভাগ্য একসাথে কাজ করে। দুটো মেলাতে পারলেই হয়ে যাবে।
পত্রিকাটা দুই ভাঁজ করে টেবিলের ওপর রেখে দেন মোতালেব সাহেব। সোলায়মান সাহেব মোতালেব সাহেবের মুখের দিকে তাকান।
তাই বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকলেও তো চলবে না। আপনাকে বললাম একটা ভালো পাত্রের সন্ধান করেন। কই দিলেন নাতো এখনো। কতদিন ধরে এই একই কথা বলে যাচ্ছেন, এই পেয়ে যাচ্ছি। এই দিচ্ছি।
দেইনি এটা বললে কিন্তু ভুল হবে সোলায়মান ভাই। দুটো পাত্রের কথা আপনাকে বলেছি। কিন্তু আপনার পছন্দ হয়নি। তা না-ই হতে পারে। তাই বলে আমিও বসে নেই। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিয়ে-শাদীর ব্যাপারে আমি ভাই ভীষণ খুঁতখুঁতে। বাজারের লাউ কেনার মতো টিপেটিপে দেখি, কঁচি কিনা। ঠ্যা ঠ্যা ঠ্যা।
ভুঁরি নাচিয়ে শব্দহীন হাসেন মোতালেব সাহেব।
তারপর পিরিচে রাখা গরম সিঙ্গারার মাঝে জোরে একটা চাপ দেন। সিঙ্গারার মধ্য থেকে গরম ধোঁয়া বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। তারপর আবার শুরু করেন মোতালেব সাহেব।
শোনেন সোলেয়মান ভাই, আমার নাম মোতালেব। অফিসের অনেকে আড়ালে আমাকে কি বলে জানেন? ‘ভেজা লেপ’ বলে। আচ্ছা আপনিই বলেন, আমি কি রাইতে বিছানায় মুইতা লেপ ভিজাই! সেই কাম ছোটবেলায় করতে পারি। এখন না। তারপরও বলে। কেনো বলে সেটাও জানি। ওই যে, একটু টিপে দেখি। যাচাই-বাছাই করি। মুখের ওপর সত্য কথা বলে দেই। সেজন্য বলে। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার লেপ আমি মুইতা ভিজাই না পানিতে ভিজাই তাতে ওই শালাদের কি। পিছ কথারে আমি কেয়ার করি না।
তাতো বটে তাতো বটে। নেন চা নেন। প্রসঙ্গ পাল্টাতে চায়ের কাপ এগিয়ে দেন সোলায়মান সাহেব।
সিঙ্গারায় কামড় দেয়ার পর মুখটা বিকৃত হয়ে যায় মোতালেব সাহেবের।
ইশশ। সিঙ্গারার মইধ্যে বাদাম। এই সিঙ্গারার মইধ্যে বাদাম আর চায়ের মইধ্যে বিস্কিটের গুড়া আমার দুই চোক্ষের বিষ। আরে ভাই সিঙ্গারা হইলো গিয়া আলুর খেলা। খেলা দেখাইতে চাইলে আলু দিয়া দেখা। বাদাম হান্দাইয়া দিলে আর তোর কেরামতি কি!
আলুর মাঝ থেকে বাদাম আলাদা করে সিঙ্গারা মুখে দেন মোতালেব সাহেব।
তা যে কথা বলতেছিলাম। আমার হইলো টিপ্পা দেখার বদভ্যাস। হিসাব-নিকাশ করে দেখলাম আপনার এই পত্রিকার লাইন ছাড়তে হবে। শুধু শুধু মোবাইল বিল বাড়াচ্ছেন। কোনও লাভ হবে না। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া বেশির ভাগেরই কান্দি ভাঙ্গা। ফল্ট আছে। আরে আমি তো এক লোকরে এক বছর ধরে পাত্রী চাই-এর বিজ্ঞাপন দিতে দেখছি। কয়দিন পরপরই পত্রিকায় ওই লোকের বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপন পড়তে পড়তে তার নামই মুখস্থ হয়ে গেছে। এমনই যোগ্য লোক এক বছর ধইরা বিজ্ঞাপন দিয়াও বিয়া করতে পারে নাই। ঠ্যা ঠ্যা ঠ্যা।
মোতালেব সাহেবের ভুঁরি নাচে।
মোতালেব সাহেবের কথার কোনও উত্তর দেন না সোলোয়মান সাহেব। তিনি প্রতিক্রিয়াহীনভাবে তার কথা শুনে যান।
আপনি টেনশন নিয়েন না সোলেমান ভাই। এই মোতালেব আছে আপনার সাথে। বাইশটা বিয়া যখন সাকসেসফুললি­ ডান করতে পারছি তেইশ নম্বরটাও পারবো ইনশাআল্লাহ। একটু সময় লাগতেছে এই যা। আমি কিন্তু টেপাটিপির মইধ্যে আছি। বিয়া-শাদীর বিষয়। সাইন্স আর ভাগ্য একত্র করা তো সহজ কাজ না, বোঝেনই তো।
মোতালেব সাহেবের কথা শুনে শুকনা হাসি দেন সোলায়মান সাহেব।
তা অবশ্য ঠিক।
যাবার আগে আবারও বলে যাই, পেপার দেইখা সময় নষ্ট করাটা বাদ দেন।
মোতালেব সাহেব ভাঁজ করা পেপারটাকে আরেকবার ভাঁজ করে সোলায়মান সাহেবের টেবিলের কোণায় রেখে দেন। তারপর সোলায়মান সাহেবের সাথে হাত মিলিয়ে চলে যান।
যাওয়ার পথে পিয়ন ইদ্রিস তার সামনে পরে। অযথা ইদ্রিসকে একটা কড়া ধমক লাগান তিনি।
এই অল্প বয়সি বুড়া উজবুক, চা আনার সময় মন কই থাকে? ঠান্ডা চা আনলে কি পয়সা কম দেওন লাগে? আর সিঙ্গারার মধ্যে যে বাদাম সেইটা চেক কইরা আনবি না?
ইদ্রিস কোনও জবাব দেয় না। জানে জবাব দিয়ে লাভ নেই। তাহলে আরও দুটো কথা বেশি শুনতে হবে।

মোতালেব সাহেব চলে যাওয়ার পর ফাইনাল করা দুজনের তালিকাটা হাতে নেন সোলায়মান সাহেব।
তারপর পকেট থেকে মোবাইলটা বের করেন।
প্রথমেই সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।
তিনি নাম্বার টেপেন।
 

চলবে...

আরও পড়ুন

বলতে এলাম ভালোবাসি: পর্ব-১

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank