এমপি আনারের ফোন ও ম্যাসেজ নিয়ে যত রহস্য
এমপি আনারের ফোন ও ম্যাসেজ নিয়ে যত রহস্য
![]() |
চিকিৎসা করানোর কথা বলে ভারতে গিয়ে ‘খুন’ হয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। কলকাতায় নিউটাউনের ভাড়া করা একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তার মরদেহ। যদিও এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোন ঘোষণা দেয়নি কলকাতার পুলিশ।
কলকাতাভিক্তিক বিভিন্ন সংবাদ ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে থেকে জানা গেছে, চিকিৎসা করাতে গত ১২ মে কলকাতা গিয়েছিলেন এমপি আনার। এরপর পরিবারের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেননি তিনি। তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায় ২৪ ১৪ মে থেকে। নিখোঁজের পর থেকেই শুরু হয় ব্যাপক চাঞ্চল্য।
কলকাতার সংবাদ প্রতিদিনের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শেষবার তাঁর মোবাইল টাওয়ারের লোকেশন উত্তরপ্রদেশে পাওয়া গিয়েছিল। নিখোঁজের খবর পেয়েই এমপি আনারের খোঁজে তদন্ত শুরু করে বাংলাদেশ দূতাবাস ও বিধাননগর পুলিশ। তদন্তে নেমে একাধিক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, কলকাতায় এসে তিনি উঠেছিলেন দীর্ঘদিনের পরিচিত বরানগরে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। দু’দিন সেখানে থাকার পর ১৪ তারিখ তিনি গোপালকে জানান, বিশেষ প্রয়োজনে তিনি বের হচ্ছেন, আজই ফিরে আসবেন। তবে তার পরদিনও আনার না ফেরায় গোপাল নিখোঁজ ডায়েরি করেন।
পুলিশ এমপি আনারের ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন সুইচ অফ পাওয়া যায়। পাশাপাশি আরও একটি তথ্য বলছে, কলকাতায় এসে নিউ টাউনের একটি বিলাসবহুল আবাসনে ফ্ল্যাট ভাড়া নেন তিনি। সেখানে এক নারী সঙ্গীসহ তাঁর সঙ্গে ছিলেন বেশ কয়েকজন।
এই পরিস্থিতিতে তিনি যদি খুন হয়ে থাকেন, তাহলে কে বা কারা খুন করল, কেনই বা খুন করলো, এখনও পর্যন্ত তা স্পষ্ট নয়। ইতিমধ্যে নিউটাউন থানার পুলিশ এবং বিধাননগর গোয়েন্দা শাখার পুলিশ ও এইচডিএফ কর্মকর্তারা পূর্ণাঙ্গ তদন্তে নেমেছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে আবাসনে সিসিটিভি ফুটেজ।
প্রায় একই ধরনের তথ্য জানিয়ে কলকাতার আরেক দৈনিক আজকাল লিখেছে, বরানগরে সংসদ সদস্য আনারের পরিচিত গোপাল বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তিনি এমপি আনারের নিখোঁজ ডায়রিও করেছিলেন। এই ঘটনায় তিন জনকে ইতিমধ্যে আটক করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।
ডিবি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, ঝিনাইদহ–৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ১২ মে দর্শনা–গেদে সীমান্ত দিয়ে কলকাতা যান। কলকাতায় তাঁর পরিচিত গোপাল নামে একজনের বাড়িতে ওঠেন।
পরদিন ১৩ মে সকালে নাস্তা করে ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তারপর আর গোপালের বাড়িতে ফেরেননি। তাঁর মেয়ে বাবার মোবাইলে ফোন করলেও যোগাযোগ হয়নি। তবে, হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ আসে, তিনি দিল্লিতে আছেন, ওমুক–তমুকের সঙ্গে দেখা হবে। কিন্তু পরিবারের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না এই বার্তা।
ডিবি প্রধান আরও বলেন, আনোয়ারুল আজিমের একটি বাংলাদেশি ও আরেকটি ভারতীয় মোবাইল নম্বর ছিল। ১৬ মে সকাল আনারের নম্বর থেকে দুটি ফোন আসে। একটি আসে তাঁর এপিএসের নম্বরে, আরেকটি ফোন আসে ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের নেতা মিন্টুর নম্বরে। কিন্তু দু’জনের কেউই ফোন ধরতে পারেননি।
জানা গেছে, বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের ব্যবহৃত নম্বরটি মাঝে মধ্যে কেউ খুলছেন, আবার বন্ধ করছেন। কারা কাজটি করছেন, তিনি কোনও ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছেন কি না– সব কিছুই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
কলকাতার আরেকটি দৈনিক বর্তমান জানিয়েছে, এমপি আনারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে, গত ১৮ এপ্রিল বরানগর থানায় একটিন ‘নিখোঁজ’ ডায়েরি করেন সেখানে মণ্ডলপাড়া লেনের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তি। কলকাতা যাওয়ার পর প্রথমে এই ব্যক্তির বাড়িতেই উঠেছিলেন এমপি আনার।
গোপাল পুলিশকে জানিয়েছেন, গত ১২ মে সন্ধ্যায় তাঁর বাড়িতে আসেন আনোয়ারুল আজিম। আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সর্ম্পক ও পারিবারিক বন্ধু বলেই জানিয়েছে গোপালবাবু। গত ১৩ মে দুপুরে চিকিৎসক দেখানোর উদ্দেশে বেরিয়ে যান। কিন্তু সন্ধ্যায় ফেরার কথা থাকলেও তিনি ফিরে আসেননি।
গত ১৫ তারিখ তাঁর ফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ম্যাসেজ আসে। তাতে লেখা ছিলো, তাঁকে আর ফোন করতে হবে না, দরকার হলে তিনি ফোন করবেন। তিনি দিল্লিতি ভিআইপিদের সঙ্গে রয়েছেন। ১৬ মে তাঁর ব্যক্তিগত সচিবকে ফোন করলে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
গোপাল আরও জানান, এমনকী আনোয়ারুলের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি। এরপর ১৭ মে সংসদ সদস্য আনোয়ারুলের বাড়ি থেকে তার কাছে ফোন আসে। তাঁরাও আনোয়ারুলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না বলে জানায়। তাই গত ১৮ মে বরানগর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন গোপাল বিশ্বস।
পত্রিকাটি আরও জানায়, বরানগর থেকে বেড়িয়ে নিউটাউনের একটি আবাসনে গিয়েছিলেন আনোয়ারুল। তারপর থেকেই তাঁর আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এই বিষয়ে বিধাননগর কমিশনারেটের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সাংসদ রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গিয়েছেন।
নিউটাউনের একটি আবাসনে উনি ছিলেন। সেখান থেকে তাঁর গাড়ি উদ্ধার হয়েছে। তবে ওই ফ্ল্যাট থেকে কাউকে পাওয়া যায়নি। এখনও পর্যন্ত তিনি নিখোঁজ। তাঁর সঙ্গে যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা সবাই বাংলাদেশে ফিরে গিয়েছেন। সেই তথ্য বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পেয়েছে পুলিশ।
যে ঘরে এমপি আনার ছিলেন, সেখান থেকে রহস্যজনক কিছুই উদ্ধার হয়নি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগ। পুলিশ সূত্রে খবর, আনোয়ারুলের মেয়ে নিউটাউনে আসছেন। উনি অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। তার উপর ভিত্তি করেই তদন্ত হবে।
কলকাতাভিক্তিক অনলাইন সংবাদ মাধ্যম এই সময় এক প্রতিবেদনে বলছে, আনোয়ারুল আজিম আনারের শেষ মেসেজ নিয়েও আছে নানা রহস্য। গত ১২ তারিখে তিনি চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন কলকাতায়। তাঁর মোবাইল বন্ধ থাকলেও দীর্ঘদিনের পরিচিত গোপাল বিশ্বাসকে হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন।
তাঁকে ফোন করার দরকার নেই বলেও সেই মেসেজে লিখেছিলেন আনার। আর এই মেসেজ ঘিরেও বেড়েছে রহস্য। ফোনে কথা না বলে কেন তিনি সেই মেসেজ পাঠিয়েছিলেন তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছে।
গত ১২ তারিখ সন্ধ্যায় আনার আসেন গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে। পরের দিন তিনি চিকিৎসক দেখানোর জন্য বার হন। কিন্তু সেদিন থেকেই আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না তাঁর। তাঁকে না পেয়ে উদ্বিগ্ন হন পরিবারের লোকজন। ১৮ মে বরাহনগর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়রি করেন গোপাল। তাতে তিনি লেখেন, ১৩ তারিখ দুপুর ১টা ৪০মিনিট নাগাদ ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাইরে যান আনার।
দুপুরে যাওয়ার সময়ে আনার তাঁকে বলে যান যে তিনি সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে না এসে তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠান আনার। তাতে আওয়ামী লীগের ওই সাংসদ লেখেন যে ‘বিশেষ কাজে দিল্লি চলে যাচ্ছি এবং পৌঁছে ফোন করব। তোমাদের ফোন করার দরকার নেই’।
এর পরে, ১৫ তারিখে আনার আরেকটি মেসেজ পাঠান। তিনি যে দিল্লি পৌঁছেছেন, সেটি জানানো হয় ওই মেসেজে। তাতে লেখা হয় ‘আমার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন, ফোন করার দরকার নেই’। এই মেসেজ গোপাল বিশ্বাস পাঠিয়ে দেন এমপি আনারের বাড়ির লোকজন এবং ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফকেও।
‘নিখোঁজ’ হওয়ার পর থেকে প্রায় সময়েই বন্ধ ছিল আনারের মোবাইল ফোন। তিনি ভারতে এসে দুটি ফোন ব্যবহার করছিলেন । দুটিই বন্ধ থাকলেও মাঝে মধ্যে চালু করা হয়। পুলিশ তাঁর মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে। বিভিন্ন জায়গায় সেই মোবাইল ট্র্যাক করা হয়।
বরাহনগরের বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার মোবাইলের লোকেশন একবার পাওয়া যায় কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায়। এরপর ১৭ মে তাঁর ফোন কিছুক্ষণের জন্য সচল ছিল বিহারের কোনও জায়গায়। অসম এবং উত্তর প্রদেশেও দেখা যায়। মোবাইল ট্র্যাক করা হয় বাংলাদেশ এবং ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাতেও। তবে, ওই মেসেজ আজিম নিজেই লিখেছিলেন কী না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

আরও পড়ুন
- গুমের ক্ষেত্রে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা হত্যাকারী বাহিনী হিসেবে কাজ করেছে: প্রেস সচিব
- মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া
- আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
- ১০০ ব্যবসায়ী নিয়ে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ঢাকায়
- স্বর্ণের দাম আবার কমলো
- অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধান
ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত - কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানি রোববার
- টানা ২য়বারের মত ‘৫ম এমারজিং এশিয়া ইনসিওরেন্স এ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করলো সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স
- মেট্রোরেলের ৪ স্টেশন বন্ধ
- ছারছীনা দরবার শরীফের পীরের মৃত্যু