আব্দুল মোমেন-জয়শঙ্করের যৌথ সংবাদ সম্মেলন
আমরা একসঙ্গে সীমান্ত হত্যা বন্ধে সফল হবো, বললেন জয়শঙ্কর
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০৩:৩৫ পিএম, ৪ মার্চ ২০২১ বৃহস্পতিবার আপডেট: ০৩:৪২ পিএম, ৪ মার্চ ২০২১ বৃহস্পতিবার
আমরা একসঙ্গে সীমান্ত হত্যা বন্ধে সফল হবো, বললেন জয়শঙ্কর
‘আমাদের সম্পর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আমরা শুধু আলোচনার মাধ্যমেই যেকোনো সংকটের সমাধান করতে পারি। বাংলাদেশ আমাদের কাছে এখন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার। এসব কথা ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের। এছাড়া সব মৃত্যুই বেদনাদায়ক ও কষ্টের মন্তব্য করে তিনি আরও জানান, সীমান্তে যাতে কোনো অপরাধ এবং হত্যাকাণ্ড যেন না ঘটে সে বিষয়টি নিশ্চিতে দুই দেশ কাজ করছে।
বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) রাজধানীতে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জয়শঙ্কর এসব কথা বলেন।
**আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে জয়শঙ্কর
এ সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে নিরাপত্তা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, বাণিজ্য, পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়নসহ দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশকে ভারতের অভিনন্দন-
এস জয়শঙ্কর উন্নয়নশীল দেশের স্ট্যাটাস পাওয়ায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান। বলেন, বাংলাদেশ সম্পূর্ণ নিজের কাজ ও যোগ্যতায় এটি অর্জন করেছে। এ সময় তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশকে ভারত নিশ্চয়তা দিচ্ছে, যেকোনো পরিস্থিতিতে ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকবে। আর এ দুদেশের মধ্যে উন্নয়নকে কেন্দ্র করে অনেক সম্ভাবনা আছে। সেটা খুঁজে বের করতেই এ সফরে আসা।
সীমান্ত হত্যা ইস্যু-
জয়শঙ্কর বলেন, ‘প্রতিটি মৃত্যুই অনাকাঙ্ক্ষিত, কষ্টকর, অগ্রহণযোগ্য। এবং অবশ্যই বেদনাদায়ক। তারপরেও এটা ঘটছে। প্রকৃতপক্ষে হত্যাকাণ্ড ভারতের মধ্যে য়ে থাকে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা নিজেদের প্রশ্ন করেছি, সমস্যার মূল কারণ কি এবং এটি হচ্ছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। আমাদের দুপক্ষের লক্ষ্য হওয়া উচিত অপরাধবিহীন সীমান্ত, যাতে হত্যাকাণ্ড না হয়। আমরা একসঙ্গে সীমান্ত হত্যা বন্ধে সফল হবো- এ বিষয়ে আমাদের আলোচনা চলছে।’
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক-
‘বাংলাদেশ কেবল ভারতের প্রতিবেশী, বন্ধু বা এশিয়ান পার্টনারই নয়, ইন্দো প্যাসেফিক অঞ্চলেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এ অবস্থায় আসতে সময় লেগেছে ৫০ বছর। যদি বলেন, ২০ বছর কি করা যেতে পারে। আমি বলবো কনেক্টিভিটি। কোভিড মোকাবিলায় তাই বাংলাদেশ ভারতে উৎপাদিত টিকার প্রধান গ্রাহক।
জয়শঙ্কর আরও বলেন, ‘যদি আমরা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কানেক্টিভিটি ঠিক রাখতে পারি, তবে এই অঞ্চলের সামগ্রিক ভূ-অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে। এক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগর খুব কার্যকর। আমরা দুই পক্ষই বিশ্বাস করি এটি করা সম্ভব।’
আব্দুল মোমেনের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তৃতীয় পক্ষকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি। সম্ভাব্য দেশ হিসেবে জাপানের নাম এসেছে। কারণ, ওই দেশের সঙ্গে আমাদের দুই দেশেরই সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে জাপানের সংযুক্তি প্রকল্প রয়েছে। সম্পর্কোন্নয়নে আমি কানেক্টিভিটিকে বড় লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করি।’
তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি-
পানি সমস্যা সমাধানে দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠক শিগগিরই হচ্ছে। সেখানে অভিন্ন নদীর পানি নিয়ে সেখানে আলোচনা হবে। তিস্তা নিয়ে ভারত আগের মতোই ইতিবাচক অবস্থানে আছে বলেও জানান তিনি।
যোগাযোগ-
জয়শঙ্কর মনে করেন মানুষে-মানুষে যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দিন শেষে দুই দেশের সম্পর্ক মানেই আমাদের জনগণের সম্পর্ক। আমাদের উচিত মানুষ-কেন্দ্রিক সম্পর্ক। আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজনীতিকে প্রাধান্য দেই এবং এটি সম্পর্ককে নতুন মাত্রা ও গতি দেয়, যোগ করেন তিনি।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে ঢাকায় আসেন জয়শঙ্কর। ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে দিল্লি থেকে ঢাকায় পৌঁছান। ঢাকায় বিএএফ বঙ্গবন্ধু ঘাঁটিতে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করারও কথা রয়েছে তার।
মূলত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে ঢাকায় আসলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দুদিনের সফরে ২৬ মার্চ বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে নরেন্দ্র মোদির।
ভারতীয় হাইকমিশনে নাগরিক সমাজের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এস জয়শঙ্কর মতবিনিময় করবেন। আজ রাতে এস জয়শঙ্করের দিল্লি ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।