অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

মেনোপজের সময় নারীকে অবশ্যই পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:০৯ এএম, ৩ মার্চ ২০২২ বৃহস্পতিবার  

সাতচল্লিশ বছর বয়সী আয়েশার হঠাৎ করেই গত কয়েকদিন ধরে কোমরে ব্যাথা করছে। উঠতে-বসতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। প্রথম ভেবেছিল হয়ত ঘুমের সমস্যার কারনে এমন হচ্ছে। কিন্তু ব্যাথা যেন কমছেই না। শেষ পর্যন্ত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হল তাকে।

ডাক্তার সব কিছু শুণেই বুঝতে পারলেন এটা মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তির কারনে হচ্ছে। মূলত এ সময় পুষ্টিকর খাবারের অভাব হলে হাড় ক্ষয় হয়। তিনি আয়েশাকে এসময় ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন যুক্ত খাবারের পরিমান বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

পঞ্চাশ বছর বয়সী আমেনাও বেশ কয়েকদিন ধরে একই সমস্যায় ভুগছিলেন। মূলত তার মাসিক বন্ধ হয় সাতচল্লিশ বছর বয়সে। এরপর শুরুতে তেমন কোন সমস্যা না হলেও গত চার-পাঁচ মাস ধরে তার হাড় ক্ষয়ের বিষয়টি ধরা পড়ে।

বিশিষ্ট গাইনোলজিষ্ট ডা. মনোয়রা হক বলেন, মেনোপজ নারীর জীবনের একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। সাধারনত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের মধ্যে প্রত্যেক নারীদের মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে অনিয়মিত মাসিক হয়। পরে আস্তে আস্তে তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে কোনো কারণে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কোনো নারীর যদি দুটো ওভারি অথবা জরায়ুু ফেলে দেওয়া হয় কিংবা রোগের কারণে প্রিম্যাচিউর ওভারি ফেইলিউর হয়ে যায়, তাহলে সময়ের আগেই অর্থাৎ অল্প বয়সেই মেনোপজ হতে পারে।

তিনি বলেন, নারীদের শরীরে এ পরিবর্তন আসার পেছনে মূল কারণ ইস্ট্রোজেন নামের একটি হরমোন। এ হরমোন নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যচক্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের ওভারি বা ডিম্বাশয়ে প্রতি মাসে যে ডিম্ব তৈরি হয় এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য নারীর শরীর যেভাবে প্রস্তত হয়, তার পেছনেও রয়েছে এ হরমোনের ভূমিকা। কিন্তু বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে নারীর শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদন কমে যেতে থাকে। এ হরমোনই প্রজননের পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। তাই বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে নারীদের ডিম্বাশয়ে ডিম্বের পরিমাণও কমতে থাকে। ফলে কমতে থাকে মাসিকের পরিমাণও। এরই ধারাবাহিকতায় মেনোপজ হয়। অর্থাৎ সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়া  বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে মেনোপজ হয়। এ হরমোনই এত দিন নারীর হৃদরোগ প্রতিরোধ করে আসছিল। কাজেই মেনোপজের পর সেই সুরক্ষা আর থাকে না। নারীরা মুটিয়ে যেতে থাকেন, রক্তে চর্বি বাড়ে, বাড়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। একই সঙ্গে শুরু হয় অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ক্ষয়। হঠাৎ গরম লাগা, ঘাম হওয়া, বুক ধড়ফড় করা ও অনিদ্রা। কাজেই এ সময়টাতে জীবনাচরণ পদ্ধতি নিয়ে সচেতন হতে হবে।
পুষ্টিবিদ ইসরাত জাহান বলেন, মনোপজের আগে থেকেই হাড়ক্ষয় শুরু হয়ে যায়। এ সময় দৈনিক প্রায় ১,২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৮০০ ইউনিট ভিটামিন ডির চাহিদা থাকে। তাই প্রতিদিন দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, পনির, সয়াবিন, কাঁচা বাদাম, আখরোট, কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এ ছাড়া ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার বিষন্নতা, অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করে।

সেলেনিয়াম হট ফ্লাশ কমায়। কলিজা, টুনা মাছ, টমেটো, পেঁয়াজ, ব্রকলি, রসুন ইত্যাদিতে সেলেনিয়াম আছে। সয়াসমৃদ্ধ খাবার ও বিনস হট ফ্লাশ কমাতে সাহায্য করে। অপরদিকে গরম ও মসলাদার খাবার, চা-কফি হট ফ্লাশ বাড়ায়। এ বয়সে অতিরিক্ত চুল পড়া ও ত্বকের লাবণ্যহীনতা কমাতে ভিটামিন ই-যুক্ত খাবার, যেমন সয়াবিন, বাদাম, অঙ্কুরিত সবজি, ডিম ইত্যাদি খাওয়া উচিত।

সৌজন্যে: বাসস ইউনিসেফ ফিচার