বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ || ৩ বৈশাখ ১৪৩১ || ০৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ধারাবাহিক আত্মকথা । শংকিত পদযাত্রা । খ ম হারূন । পর্ব ৩

১৭:৪৮, ২২ অক্টোবর ২০২০

আপডেট: ১০:২৪, ২৩ অক্টোবর ২০২০

২৬৮২

ধারাবাহিক আত্মকথা । শংকিত পদযাত্রা । খ ম হারূন । পর্ব ৩

শঙ্কিত পদযাত্রা 

ধারাবাহিক আত্মকথা

। খ. ম. হারূন ।

 

খ্যাতিমান টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব খ ম হারূন। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সম্পৃক্ত রয়েছেন দেশের টেলিভিশন এবং মঞ্চের সাথে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্বর্ণময় সময়ে যে কয়েকজন নির্মাতা-প্রযোজকের নাম ছোট পর্দার কল্যাণে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে খ ম হারূন তাদের একজন। দীর্ঘ বর্ণিল ক্যারিয়ারে অসংখ্য উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন তিনি। এখনো রয়েছেন সমান সক্রিয়। দেশের গণমাধ্যম জগতের বরেণ্য এই ব্যক্তিত্বের আত্মকথা ‘শংকিত পদযাত্রা’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে অপরাজেয় বাংলা’য়।

 

[পর্ব-৩]

১৭ জুলাই ১৯৮০। বাংলাদেশ টেলিভিশনে শুরু হলো আমার কর্মমূখর জীবন। প্রথম দিন। প্রশাসন বিভাগে যোগদানপত্র জমা দিয়ে প্রথমেই দেখা করতে গেলাম মহাপরিচালক এম এ সাঈদ-এর সাথে। এই ভদ্রলোককে ইন্টারভিউ বোর্ডে দেখেই আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। তার জ্ঞান ও প্রশ্ন করার ধরণ সবই ছিলো আকর্ষণীয়। ইন্টারভিউ থেকে কাজে যোগদান মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধান। দ্রুতগতিতে কাজ করার ক্ষেত্রে মহাপরিচালক এম এ সাঈদ-এর দক্ষতা ছিলো অপরিসীম। আমাকে দেখেই স্বাগত জানান। কফি দিয়ে আপ্যায়ন করেন। মহাপরিচালকের রুমে ঢোকার আগে আমার মধ্যে যে জড়তা ছিলো তা দুর হয়ে যায়। তিনি নিজ থেকেই বলেন, ‘হারূন আপনি তো নাটক নিয়ে পড়াশুনা করেছেন, নাটক প্রযোজনার প্রস্তুতি নিন, আর যেহেতু আপনার লেখালেখির অভ্যাস আছে তাই আমি আপনাকে অন্য একটা দায়িত্ব দিতে চাই।’

কফির সাথে আলাপচারিতা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি বিজ্ঞাপন বিভাগের প্রধান ইসরারুল হক সাহেবকে ফোন করেন। তাকে বলেন, ‘আমি খ ম হারূনকে ‘টিভি কিউ’-এর সম্পাদকের দায়িত্ব দিচ্ছি। তার কাছে এ সম্পর্কিত সব কাগজপত্র বুঝিয়ে দিন। আর প্রকাশনা সংস্থার সাথে তাকে আলাপ করিয়ে দিন।’ দেখা করতে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম এটা নিছক একটা সৌজন্যতা। কিন্তু তিনি তার মাঝে কিছু দায়িত্ব আমাকে ধরিয়ে দিলেন। কথায় কথায় সাঈদ সাহেব আমার সম্পর্কে কিছু কিছু তথ্য জেনে নিলেন। বুঝলাম, এ প্রতিষ্ঠানের সবার সম্পর্কে তার ধারণা খুব স্পষ্ট। সাধারণ আমলাদের মতো অন্ধকারে বিচরণ করেন না।

কথা বলে যখন উঠবো উঠবো করছি, তখন মহাপরিচালকের রুমে এসে উপস্থিত হলেন আবদুল্লাহ আল-মামুন। অত্যন্ত শ্রদ্বেয় ব্যক্তি। তিনি এসে অত্যন্ত স্নেহসুলভ ভঙ্গিতে আমার পিঠে হাত দিয়ে কথা বললেন। মামুন ভাই ডিজি সাহেবকে বললেন, ‘হারূনকে পেয়ে খুব ভালো হলো, ওকে তো বসার একটা ব্যবস্থা করে দিতে হয়।’ সে সময়ে রামপুরার টিভি ভবনের মূল ভবনে কর্মকর্তাদের বসার জায়গার অভাব ছিলো। মামুন ভাই ডিজি সাহেবকে তাই বললেন, ‘হারূন কিন্তু আমার রুমে বসতে পারে আজ থেকে।’ সাঈদ সাহেব সাথে সাথে সে ব্যবস্থাই করলেন।


বিটিভি’র দর্শক মতামত জরিপ সংক্রান্ত একটি সেল গঠন করা হয়েছে, যার প্রধান আবদুল্লাহ আল-মামুন। মামুন ভাই ‘টিভি কিউ’-এর সম্পাদনার পাশাপাশি আমাকে ঐ সেলের দায়িত্ব প্রদান করতেও ডিজি সাহেবকে অনুরোধ করেন। তাই হলো। প্রথম দিনেই তিন তিনটি দায়িত্ব। অনুষ্ঠান বিভাগের প্রযোজক, টিভি কিউ-এর সম্পাদক এবং আবদুল্লাহ আল-মামুনের তত্ত্বাবধায়নে দর্শক মতামত জরিপ সেলের কর্মকর্তা। চাকুরী জীবনের শুরুতেই এতোগুলো দায়িত্ব! মামুন ভাই আমার অস্বস্তি টের পেয়ে বললেন, ‘আরে আমরা আছি না তোমার সাথে। কাজে লেগে যাও।’
এম এ সাঈদ সাহেবের রুম থেকে বেরিয়ে মামুন ভাইয়ের সাথে তার কক্ষে গেলাম। তিন তলায় বার্তা বিভাগ সংলগ্ন একটি রুম। এর মধ্যেই আমার জন্য টেবিল চেয়ার ও অন্যান্য আসবাবপত্র চলে এসেছে সেখানে। বিটিভিতে কাজের দ্রুতগতিতে আমি মুগ্ধ হই। 

সেসময় বিটিভিতে ছিলো কর্মমূখর এক পরিবেশ। বিভিন্ন বিভাগে সৃজনশীল ব্যক্তিদের সমাবেশ ছিলো চোখে পড়ার মতো। আবদুল্লাহ আল-মামুন সে সময় ছিলেন বিটিভি’র অনুষ্ঠান অধ্যক্ষ। তার জুনিয়র হওয়া সত্ত্বেও মোস্তফা কামাল সৈয়দ ছিলেন জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্বে। বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার বা জি এম হলো স্টেশনের সর্বোচ্চ পদ। তখন বিভিন্ন পদের আবার বাংলা প্রতিশব্দ চালু ছিলো। যেমন প্রোগ্রাম ম্যানেজারকে বলা হতো অনুষ্ঠান অধ্যক্ষ। জেনারেল ম্যানেজারকে বলা হতো মহা-অধ্যক্ষ। প্রতিটি রুমের সামনে নেমপ্লেট থাকতো বাংলায়। সব থেকে মজার বিষয় সেই পাকিস্তান আমল থেকেই বিটিভির বিভিন্নপদের বাংলাকরণ ছাড়াও শিল্পীদের চুক্তিপত্র, সম্মানী চেক  ইত্যাদি ছিলো বাংলায়। 
সেই ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত পাকিস্তানের কঠিন সময়ে ঢাকা টেলিভিশনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলার প্রচলন ছিল চোখে পড়ার মতো। টিভি’র বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দর্শকদের মাঝে বাঙালী জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ জন্য অনেকেই এখনো ঢাকা টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জামিল চৌধুরীকে স্মরণ করেন। 

যাই হোক, আবদুল্লাহ আল-মামুনকে বাদ দিয়ে সেই জিয়াউর রহমানের শাসন আমলে মোস্তফা কামাল সৈয়দকে মহা-অধ্যক্ষ’র দায়িত্ব দেয়ার ফলে একটু অসন্তুষ্ট ছিলেন মামুন ভাই। কিন্তু সেজন্য এই দু’জন ব্যক্তির মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক কখনো নষ্ট হয়নি। একজন আরেকজনের রুমে গিয়ে গল্প করতেন, সমস্যা নিয়ে আলাপ আলোচনা করতেন। মোস্তফা কামাল সৈয়দ ছিলেন অত্যন্ত অমায়িক, কাজ পাগল এবং সৃজনশীল ভদ্রলোক। আব্দুল্লাহ আল মামুন যেমন ছিলেন পর্দার সামনের একজন নক্ষত্র, মোস্তফা কামাল সৈয়দ ছিলেন পর্দার পিছনের। তার গলা ছিলো অসাধারণ। নেপথ্য বর্নণার প্রয়োজন হলেই তার ডাক পড়তো। এতো সুন্দর গলা, এতো সুন্দর উচ্চারণ ও উপস্থাপনা- যা অনেকের কাছে ছিলো অনুকরণীয়।  

মামুন ভাইয়ের রুম থেকে বেরিয়ে মহা-অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল সৈয়দ-এর রুমে গেলাম। তিনিও খুব খুশি হলেন আমি যোগদান করাতে। টিভি কিউ-এর সম্পাদকের দায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়েছে এ সম্পর্কিত অফিস আদেশ তার কাছেও পৌঁছে গেছে ততক্ষনে। তিনি আমাকে উৎসাহিত করলেন, বললেন ‘একটি টিভি চ্যানেলের জন্য ‘টিভি কিউ’ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ডিজি সাহেব এসব নিয়ে ভাবছেন এবং তিনি বুঝে শুনেই আপনাকে দায়িত্ব প্রদান করেছেন।’ আরো বললেন, ‘এই কঠিন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আপনাকে কিন্তু অনুষ্ঠান প্রযোজনা শুরু করতে হবে। সে প্রস্তুতিও নিয়ে নিন।’ 

বিশিষ্ট নাট্য প্রযোজক ও নাট্যকার আতিকুল হক চৌধুরী তখন অনুষ্ঠান অধ্যক্ষ যিনি সরাসরি প্রযোজকদের দায়িত্ব বণ্টন করেন। আরেকজন গুণী নাট্য প্রযোজক মুস্তাফিজুর রহমান, তিনিও তখন অনুষ্ঠান অধ্যক্ষের দায়িত্বে। এতো গুণি মানুষের সাথে কাজ করবো, ভাবতেও ভালো লাগছে। জি এম সাহেবের রুম থেকে বের হয়ে এ দু’জনের সাথে দেখা করলাম। সবার আন্তরিকতা ছিল মনে রাখার মতো। 

ভেবেছিলাম কখনো সরকারী চাকরি করবো না। আমার বন্ধুরা যখন বিসিএস দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে সেসময় আমি ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামাতে (এনএসডি) উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যাই। তার আগে এমএ’র ছাত্র থাকাকালীন আমি এলএলবি প্রথম পাঠের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। এনএসডিতে না গেলে দ্বিতীয় পর্ব শেষ করে আইন পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতাম হয়তো। ১৯৭৬ সালেই আমার আইনে স্নাতক হবার কথা ছিলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বেশ ক’জন বন্ধু সহপাঠী যেমন জহির আহমেদ, মঈনুল ইসলাম চৌধুরী, বারী, ফিরোজ সহ অনেকেই আমার মতো এলএলবি পরীক্ষা দিয়েছিলো। এদের মধ্যে জহির ও মঈনুল উচ্চ আদালতের বিচারকের পদ অলংকৃত করেছে। অন্যরা আইন ব্যবসায় সম্পৃক্ত থেকেছে। এনএসডিতে যাওয়ার সময় অনেকে মন্তব্য করেছিলো অনিশ্চিত যাত্রা। ‘নাটকের উপর পড়াশুনা করে কি ছেলে অভিনয় করবে?’ অনেক মুরব্বীজন আমার বাবা-মায়ের কাছে এরকম বিরূপ মন্তব্য করতো। 

যাই হোক বিটিভি’র চাকরি আমাকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে এজন্য যে আমার পড়াশুনা ও ভালোবাসার খুটিনাটিগুলো এখানে প্রয়োগ করার সুযোগ পাবো। এবং সত্যি কথা বলতে কি সে সুযোগটা আমি ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছিলাম। যারা সে সুযোগটা করে দিয়েছিলেন তাদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।

প্রথম অনুষ্ঠান

১৯৮০। জুলাই মাসের কোন একদিন। অনুষ্ঠান বিভাগ থেকে বিভিন্ন প্রযোজককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমার প্রযোজনার দায়িত্বে আছে নজরুল সঙ্গীতের অনুষ্ঠান, গণ-স্বাক্ষরতার উপর অনুষ্ঠান, নাটক এবং ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘প্রচ্ছদ’। এছাড়া ‘টিভি কিউ’ সম্পাদনার দায়িত্ব ও দর্শক মতামত জরিপ সেলের দায়িত্ব। দিন-রাত কাজ করতে হচ্ছে। বিটিভি‘র নিজস্ব পত্রিকা ‘টিভি কিউ’ এর প্রথম সম্পাদক আমি, এর ফরমেট ও ডিজাইন সব নতুনভাবে করতে হচ্ছে। ভালোই হলো লেখালেখি ও ডিজাইনের প্রতি আমার ঝোক আগে থেকেই ছিলো। এনএসডিতে আমার স্পেসালাইজেশন ছিলো থিয়েটার ডিজাইন। যার ফলে স্থাপত্য বিদ্যা থেকে ভাস্কর্য, ভাস্কর্য থেকে পেইন্টিং; কম্পোজিশন, কালার, স্পেস, ডাইমেনশন ইত্যাদির ব্যবহার শিখতে হয়েছিলো। এই ডিজাইনের প্রতি আমার আকর্ষণ ‘টিভি কিউ’ এর প্রকাশনায় বেশ ভালো ভাবেই কাজে লাগাতে পেরেছি। এ ছাড়া অনুষ্ঠান নির্মানে ডিজাইন যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা তখন ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছি। আমার নির্মিত অনুষ্ঠানে তাই গ্রাফিক্স, সেট, লাইট, মেকআপ, প্রপস্, ইত্যাদি বিটিভিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে পেরেছিল - অনেক গুণীজন একথা এখনো মনে রেখেছেন। 

আমার প্রথম অনুষ্ঠানটি ছিলো নজরুল সঙ্গীতের। বিটিভি‘র দুই নম্বর ষ্টুডিও। শিল্পী খালিদ হোসেন এবং সিফাত ই মনজুর। এতো বছর আগের একটা সাধারণ অনুষ্ঠান, কিন্তু এখনো মনে আছে। প্রথম অনুষ্ঠান, তাও লাইভ। যদি কোন সমস্যা হয়ে যায়। কিন্তু ষ্টুডিওতে ক্যামেরাম্যান দু’জন আমাকে অভয় দিলেন। ক্যামেরাম্যান ইদ্রিস ভাই এসে আমাকে প্যানেলে বসিয়ে দিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলে। ক্যামেরা, সাউন্ড সব ষ্টান্ডবাই। কন্ট্রোল রুম থেকে নির্দেশনা পেলেই অনুষ্ঠান শুরু করতে হবে। নির্দেশনা আসে। আর ৩০ সেকেন্ড। সব রেডি। ১০ সেকেন্ড বাকি থাকতেই কিউ দিয়ে দেই - নয়, আট, সাত, ছয়...। ঠিক সময়ে অনুষ্ঠান অনএয়ারে চলে যায়। আমার প্রথম অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হচ্ছে। সারা দেশের মানুষ দেখছে। সে এক দারুণ অনুভূতি। আধা ঘন্টার অনুষ্ঠান। সব কটি গান সুন্দরভাবে শেষ হয়ে যায়। ক্লোজিং টেলপ্ মিউজিক তারপর ফেড আউট। সবাই কনগ্রাচুলেশন জানান। শিল্পী, ক্যামেরাম্যান, কলাকুশলী সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে, আমিও যখন প্যানেল থেকে উঠে দাঁড়াই, ঠিক সেই সময় দেখতে পাই প্যানেলের পিছনে রক্তচক্ষু করে দাঁড়িয়ে আছেন উপস্থাপনা সম্পাদক সরকার ফিরোজ এবং তার সহকারী মাহবুব। সরকার ফিরোজ আমার দিকে না তাকিয়ে আমার উদ্দেশ্যেই বলে চলেছেন ‘কত বড়ো প্রডিউসার হয়েছে ও! শুনেছি এনএসডি থেকে পাস দিয়ে এসেছে- একবার এসে কথাও বলে গেলো না, আমি ইচ্ছা করলে তো এই প্রোগ্রাম বন্ধ করে দিতে পারতাম, সেটা আমি করিনি...’ তারপর নানা কথা। আসলেই তো প্রেজেন্টেশন শাখা হচ্ছে, চ্যানেলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা , যে শাখা সকল অনুষ্ঠান সম্প্রচারের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। অথচ আমি এতোজনের সাথে দেখা করেছি, কথা বলেছি, অথচ একবারের জন্যও প্রেজেন্টেশন শাখায় যাইনি। সরকার ফিরোজের মতো গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ (সে সময় তিনি একজন তারকাও বটে) তার সাথে একবার আলাপের কথা মনে হয়নি- আমি দুঃখ প্রকাশ করলাম, তাকে থামানোর চেষ্ঠা করলাম। এক সময় তিনি গজগজ করতে করতে তার রুমে চলে গেলেন, তিনি চলে যাওয়ার পর মাহবুবের লম্ফ-ঝম্প শুরু হলো। এবার তাকে ঠান্ডা করতে হবে। দু’একজনের সাহায্য নিয়ে তাকে নিয়ে যাই টিভি ভবনের ক্যান্টিনে। চা-সিঙ্গারা খাইয়ে তাকে শান্ত করা হয়। 
পরবর্তীতে এই দু‘জনের সাথে আমার সম্পর্ক হয়েছিল চমৎকার। মাহবুব খুব ভালো গান লিখতেন। শাকিলা জাফরের কণ্ঠে তার লেখা কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। একজন অনুষ্ঠান উপস্থাপিকার প্রেমে পড়ে একসময় মাহবুব পাগল হয়ে যায় আর তারপর নিরুদ্দেশ। 
মাহবুবেব লেখা গান এখনো সম্প্রচারিত হয়। কিন্তু মাহবুবের খবর কেউ জানে না। আর সরকার ফিরোজ তো আমাকে তার ছোট ভাই বানিয়ে ফেলেন। ধানমন্ডি ৭ নং সড়কের কোনার্ক ভবনের ২ নং এপার্টমেন্টে থাকতাম আমি, ৩ নং এ সরকার ফিরোজ। অত্যন্ত আন্তরিক সম্পর্ক ছিলো ফিরোজ পরিবারের সাথে। মাহমুদা ফিরোজ (ফিরোজ ভাইয়ের স্ত্রী) বিটিভি এবং বেতারের সংবাদ পাঠিকা ছিলেন। কোনার্ক-এ আমরা ছিলাম দশ বছর। সুখ দুঃখের কত স্মৃতি এখনো নাড়া দিয়ে যায়। 
অবশেষে টিভি ভবন থেকে বের হয়ে ভবনের পাশেই ভিনাদের বাসাতে যাই। সেখানে বসে আমার স্ত্রী জেবু, ভিনা, মুহিত-এরা আমার প্রযোজিত প্রথম অনুষ্ঠান দেখেছিল। ওরা আমাকে দেখেই অভিনন্দিত করে। ভিনা ও মুহিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেবুর ক্লাসমেট। ওরা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ পরীক্ষার্থী। পরবর্তীতে ভিনা’র সাথে মুহিতের বিয়ে হয়। আমার প্রযোজিত প্রথম অনুষ্ঠান যখন সম্প্রচার হয়, আমার বাসায় তখনও কোন টিভি সেট নেই। তাই জেবুকে আসতে হয়েছিল ভিনাদের বাসায়। 

চলবে...

 

আরও পড়ুন:

পর্ব-২
পর্ব-১

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank