শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১ || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

যেমন কাটলো ২০২০

২০’র বড় ১০

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

১৮:০৯, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০

আপডেট: ১৬:৫১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০

১১০৩

যেমন কাটলো ২০২০

২০’র বড় ১০

২০২০ সালের পুরোটা সময় বিশ্বজুড়ে ছিল করোনার প্রভাব। দেশ, আন্তির্জাতিক, ক্রীড়া কিংবা বিনোদন সবকিছু ছাপিয়ে এই মহামারিই থাকবে আলোচিত বিষয়ের শীর্ষে। ফলে বছরের আন্তর্জাতিক আলোচিত শীর্ষ ১০ ঘটনায় রাখা হয়নি কোভিড-১৯ কে। এছাড়া এখানে জায়গা পেয়েছে বাইডেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া, গালওয়ানে চীন-ভারত সংঘর্ষ, বৈরুতে বিস্ফোরণ, ভারতের কৃষক আন্দেলন ও রহস্যময় ধাতব স্তম্ভসহ আরও কিছু ঘটনা, যেগুলো বছরব্যাপী আলোচিত ছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। 

 

জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু ও ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার
২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে জর্জ ফ্লয়েড (৪৬) নামের আফ্রিকান-আমেরিকান এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে গিয়ে নির্যাতন করে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক চাওভিন। এতে সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড় জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, গ্রেফতার করে গাড়িতে ওঠানোর সময় নিচে পড়ে যায় জর্জ ফ্লয়েড। এসময় তার ঘাড়ের উপর ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড হাঁটু গেড়ে বসে থাকে ডেরেক চাওভিন। এসময় চাওভিনকে সাহায্য করে পুলিশ অফিসার টু থাও, জে আলেকজান্ডার কুয়েং, এবং থমাস কে লেন।

ঘটনার পর করোনাকালেও উত্তাল হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। সাদা-কালো নির্বিশেষে সবাই ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার প্লেকার্ড-ব্যানার নিয়ে রাস্তায় নামে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আমেরিকার অন্তত ৪০টির বেশি শহরে কারফিউ জারি করা হয়। বিক্ষোভ দমাতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়। 

২৯ মে রাতে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে। হোয়াইট হাউসের উত্তর গেট থেকে বোতল ও ইটপাটকেল ছোড়ার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ছিলেন। রাতে সিক্রেট সার্ভিসের কর্মীরা তাকে হোয়াইট হাউসের নিচে থাকা বাঙ্কারে নিয়ে যান। সেদিন পুরো রাত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই বাঙ্কারেই কাটিয়েছেন।

পুরো বিশ্বব্যাপী ঘটনার কঠোর সমালোচনা করা হয়। ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট সিরিজে ক্রিকেটাররা আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে হাঁটু গেড়ে নিরবতা পালন করে এবং ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার লেখা জার্সি পরে মাঠে নামে। পরবর্তীতে ডেরেক চাওভিনের বিপক্ষে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়, যা দেশটির পুলিশ ইতিহাসে বিরল।

রহস্যময় ধাতব স্তম্ভ
এটাকে ঠিক আলোচিত না বলে বছরের অন্যতম রহস্যময় ঘটনা বলা ভালো। ১৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ইউটা অঙ্গরাজ্যের রেড রক কাউন্টি ডেজার্টে প্রথম চোখে পড়ে এটি। হেলিকপ্টার চড়ে যাওয়ার সময় স্তম্ভটি দেখতে পান এক জীববিজ্ঞানী। কীভাবে এখানে আসলো তার উত্তর দিতে পারনি কেউ। এক সপ্তাহ না যেতেই সেখান থেকে উধাও হয়ে যায় স্তম্ভটি। এবারও উত্তর অজানা। 

তারপর এই ধাতব স্তম্ভ দেখা গেছে ক্যালিফোর্নিয়ায়। কিছুদিন পর ইউরোপের দেশ রোমানিয়ায় 'পিয়াত্রা নিমট' শহরের কাছে 'নিমট কাউন্টি' এলাকার পাহাড়ি অঞ্চলেও একই ধাতব স্তম্ভের সন্ধান মেলে। কীভাবে বিশ্ব ভ্রমণ করছে এই স্তম্ভ তার উত্তর তদন্ত কমিটি গঠন করেও বের করতে পারেনি কোন দেশ। 

রহস্যময় স্তম্ভ নিয়ে আছে নানা মন্তব্য, কেউ এটাকে বলছে মহাজাগতিক কোনো বস্তু। কেউ বা আবার ভাবছেন ভিনগ্রহবাসীর বার্তা। অনেকেই আবার এটির সঙ্গে ১৯৬৮ সালে মুক্তি পাওয়া সায়েন্স ফিকশন সিনেমা 'টু থাউজেন্ড অ্যান্ড ওয়ান: এ স্পেস ওডিসি'র যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন।

ভারতে কৃষক আন্দোলন

চলতি বছরের জুনে কৃষি ও শ্রম আইনে তিনটি সংষ্কার চেয়ে অধ্যাদেশ জারি করে ভারতীয় সংসদ। সংসদে পাশও হয় আইনগুলো। কিন্তু সেটা হয়েছে কোন আলোচনা ছাড়া। এমনকি বিতর্কিত বিলগুলো আরও বিবেচনার জন্য একটি বিশেষ কমিটিতে পাঠানোর সুপারিশও শুনেনি সরকার। 

নতুন আইনে কৃষিবাজারের ওপর রাজ্যের একচেটিয়া অধিকার আর থাকবে না, চুক্তিভিত্তিক চাষও করা যাবে। কোন দামে কৃষক তার পণ্য বেচবেন, তা বাজারই ঠিক করে দেবে। 

কৃষকদের বড় ক্ষোভের কারণ অবশ্য মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস (এমএসপি)। কৃষকদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে এবং ন্যায্যমূল্য দিতে সরকার প্রতিবছর বিভিন্ন ফসলের এমএসপি ঠিক করে দেয়। সেই দামের নিচে সরকার ফসল কিনতে পারে না, যা কৃষকের কাছে একটা বড় নিরাপত্তাও। অথচ নতুন আইনে তার কোনো স্বীকৃতি রাখা হয়নি।

আইনগুলো পাশ হওয়ার পরই ক্ষোভ শুরু হয় দেশটির কৃষকদের মাঝে। ২৫ নভেম্বর থেকে খাবারসহ দিল্লি অবস্থানের প্রস্তুতি নিয়ে রাজধানীতে আসতে থাকে পাঞ্জাব, হারিয়ানা, মহারাষ্ট্র ও উত্তর প্রদেশের কৃষকরা। পরবর্তীতে পুরো দেশের কৃষকরাই সমর্থন জানায় এই আন্দোলনে। 

প্রথমদিকে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করে মোদি সরকার। জলকামান ও লাঠিচার্জ করা হয়। ৯টি স্টেডিয়ামকে সাময়িক জেলখানা বানানোর আবেদনও করে দিল্লি পুলিশ। তাতে সাড়া দেয়নি অরবিন্দ কেজরিওয়াল। পরবর্তীতে কৃষকদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের অনুমতি দেয়া হয়। দিন দিন কৃষক সংখ্যা বাড়লে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে দিল্লি। এঘটনায় কৃষকদের সমর্থন জানায় জাতিসংঘ।

সমাধানে পৌঁছাতে সরকারের সাথে কয়েকবার বৈঠকও করেন কৃষক নেতারা। তবে রবিবার (২৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত কোন সমাধান আসেনি। বিজ্ঞান ভবনে বৈঠকে সরকারের দেয়া খাবারও প্রত্যাখ্যান করেন কৃষক নেতারা। 

শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) নিজের ভাষণে আইন বাতিল না করার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তারপর কৃষকরা ঘোষণা দেন, আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। 

কিম জং উনের মৃত্যুর গুজব
এপ্রিল মাসে হার্ট অপারেশন হয় উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের। তারপরই বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হয় কিম জং উনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক সংবাদপত্র ডেইলি এনকে এবং সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনেও দাবি করা হয়, কিম গুরুতর অসুস্থ। তবে বিষয়টিকে গুজব হিসেবে উড়িয়ে দেয় উত্তর কোরিয়া।

২০ এপ্রিল হংকংয়ের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল 'এইচকেএসটিভি হংকং' তো দাবি করে, কিম মারা গেছেন। টেলিভিশনের এক উপ-পরিচালক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েইবোতে তার এক কোটি ৫০ লাখ অনুসারীকে জানান, কিমের মৃত্যুর বিষয়টি 'নিরেট উৎস' থেকে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন। এমন তথ্য প্রচারের পর চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় সারা বিশ্বে। সংবাদের সত্যতা নিশ্চিতে উঠে পড়ে লাগে বিশ্ব মিডিয়া। কিন্তু উত্তর কোরিয়ায় বিভিন্ন বিধি-নিষেধের কারণে নিশ্চিত কিছু বলতে পারেনি শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলো।

কানাঘুষার এক পর্যায়ে নিজেই জনসম্মুখে আসেন কিম জং উন। পহেলা মে তাকে সরাসরি দেখতে পারার পরই থামে মৃত্যুর গুজব। 

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন 
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী নেতা তা নিয়ে বছরজুড়েই ছিল আলোচনা, উত্তেজনা। যেকোনো নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের পূর্বাভাস বা ভবিষ্যদ্বাণী করা বিপজ্জনক, বিশেষ করে তা যদি হয় ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। চার বছর আগের নির্বাচনে বিশ্লেষকদের নিশ্চিত রায় ভুল প্রমাণিত হওয়ার পর এবারের নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে কেউই নিশ্চিত কিছু বলতে পারেননি। সংশয় ছিল ফল ঘোষণার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন কিনা তা নিয়েও।

তবে শেষ পর্যন্ত সত্য হয়েছে বিভিন্ন জরিপের ফল। পপুলার এবং ইলেক্টোরাল দুটিতেই ট্রাম্পকে ধরাশায়ী করে রেকর্ড পরিমাণ ভোট জিতে আগামী চার বছরের জন্য মার্কিন মুলুকের দায়িত্ব পাচ্ছেন বর্ষীয়ান নেতা ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। ক্ষমতায় আসতে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোটের প্রয়োজনে বাইডেন পেয়েছেন ৩০৬টি ও ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২টি। সাথে দুইশো বছরের ইতিহাস ভেঙে প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন কমলা হ্যারিস। 

ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর মেলানিয়া বাক্সপেটরা গোছানো শুরু করলেও মানতে নারাজ ছিলেন ট্রাম্প। বহুদিন পর্যন্ত ভোটের ফল পাল্টে দেয়ার মতো আকাশকুসুম কল্পনায় ভেসেছেন।

তবে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে রাজ্যে রাজ্যে খারিজ হয়ে যায় ট্রাম্প শিবিরের মামলা। হেরে যান সুপ্রিম কোর্টেও। শেষ পর্যন্ত নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, ২০ জানুয়ারির আগের যেকোনো একটা সময়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াবেন। নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেন শপথ নেওয়ার আগেই ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। 

ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যা
২৭ নভেম্বর ইরানের রাজধানী তেহরানে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন দেশটি শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেহ। ৫৯ বছর বয়সি এই পরমানু বিজ্ঞানী বিবেচিত হতেন ইরানের পরমাণু অস্ত্রের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে। ২০ বছর ধরে ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে তিনি প্রধানতম ভূমিকা রেখে আসছিলেন। 

ঘটনার পরপরই হত্যাকাণ্ডের সাথে ইসরাইল জড়িত ছিল বলে অভিযোগ তোলে ইরান। প্রথমে ধারনা করা হয় তাকে সামনা সামনা গুলি করা হয়েছে। পরবর্তীতে জানা যায় স্যাটেলাইটের সাহায্যে রিমোর্ট কন্ট্রোল্ড বন্দুকের মাধ্যমে তাকে হত্যা করা হয়। 

বৈরুতে বিস্ফোরণ
২০২০ সালের ৪ আগস্ট লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিস্ফোরণের ঘটনাটি বছরের সবচেয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বিস্ফোরণে ১৩৭ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়। আহত হয়েছেন ৫ হাজারের উপর মানুষ এবং অনেকের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এছাড়া গৃহহীন হয়েছেন তিন লাখের অধিক মানুষ। 

বিধ্বংসী বিস্ফোরণের ঠিক আগে শহরে ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলে বৈরুত বন্দরে একটি বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যায় বন্দরে যে বিশাল শস্যের গুদাম আছে তার পাশে ১২ নম্বর গুদামঘর থেকে সাদা ধোঁয়ার কুণ্ডলি উঠছে।

স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টার অল্প পরেই গুদামঘরের ছাদে আগুন ধরে যায় এবং প্রথমদিকে একটা বড় বিস্ফোরণ ঘটে। এর পরপরই ছোট ছোট কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটে। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন শুনে মনে হচ্ছিল আতসবাজি ফুটছে।

প্রায় ৩০ সেকেন্ড পরেই, একটা বিশাল ও ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে এবং আকাশে বিশাল একটা ধোঁয়ার কুণ্ডলি উঠতে দেখা যায়। সেইসঙ্গে শহরের সর্বত্র বিস্ফোরণের ভয়ানক কান ফাটানো তীব্র শব্দ শোনা যায়। বিস্ফোরণে বৈরুত ছাড়াও আশপাশের অনেক শহর কেঁপে ওঠে। কম্পন অনুভূত হয় ২৪০ কিলোমিটার দূরের দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাসেও, সেখানকার বাসিন্দারা এ ঘটনাকে ভূমিকম্প বলে মনে করেছিলেন।

ঘটনার তদন্তে জানা যায়, ২০১৩ সালে একটি জাহাজ থেকে ওই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জব্দ করার পর সেগুলো বন্দরের একটি ওয়্যারহাউজে রাখা হয়। এরপর থেকে বিপদজনক ওই রাসায়নিক সেখানেই পড়ে ছিল। সেখান থেকেই এই বিস্ফোরণ ঘটে। 

গালওয়ান ভ্যালিতে চীন-ভারত সংঘর্ষ
চলতি বছরে রাজনীতি অঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে চীন-ভারত সীমান্ত দ্বন্দ্ব। সীমান্ত নিয়ে দু’দেশের মধ্যে এর আগেও বিভিন্ন সময় সমস্যা হয়েছে। তবে এতটা খারাপ অবস্থা সাম্প্রতিক সময়ে হয়নি। 

চুক্তি ভেঙে সীমান্তে ভারত সড়ক তৈরি করছে বলে চীন অভিযোগ তুললে মে মাসে গালওয়ানে উত্তেজনা দেখা দেয়। ৫ মে থেকে, চীনা ও ভারতীয় সেনারা সীমান্তের একাধিক স্থানে অ-প্রাণঘাতী আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ, মুখোমুখি লড়াই ও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সীমান্তে সংঘর্ষ রুখতে ৬ জুন দু’দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের মাঝে বৈঠকও হয়। 

গালওয়ান উপত্যকা এলাকায় ১৫ জুন প্রায় ১৪ হাজর ফুট (৪,৩০০ মিটার) উচ্চতায় দু’দেশের সেনাবাহিনীর সংঘর্ষে ২০জন ভারতীয় সৈন্যের নিহত হবার খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আরও অন্তত ৭৬জন ভারতীয় সেনার আহত হবার খবরও দেয়া হয়। এছাড়া ১০ জন ভারতীয় সেনা আটক হয় চীনা সেনাদের হাতে। পরবর্তীতে ১৮ জুন মুক্তি তাদের দেয়া হয়। চীনের পক্ষে হতাহত সম্পর্কে কোন তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

দুই দেশের সেনারা এই সংঘর্ষে কোন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেনি, কারণ ১৯৯৬ সালের এক চুক্তিতে ওই এলাকায় বন্দুক বা কোন আগ্নেয়াস্ত্র বা বিস্ফোরক ব্যবহার না করার ব্যাপারে দুই দেশ একমত হয়েছিল।

সংঘর্ষের পর তিনবার জরুরী বৈঠকে বসে দু’পক্ষ। সর্বশেষ ১২ ঘন্টার বৈঠক হয় পহেলা জুলাই। আর ৬ জুলাই থেকে দু’দেশই সীমান্ত থেকে সেনাবাহিনী সরিয়ে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। 

ফ্রান্সে শিক্ষক হত্যা, পণ্য বয়কট ও নতুন আইন
‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কার্টুন দেখান ফ্রান্সের স্কুল শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি। এটাকে নবী (স.) এর ‘অপমান’ বলে ১৬ অক্টোবর সে শিক্ষককে গলাকেটে হত্যা করা হয়। এঘটনায় ১৮ বছরের এক চেচেন বংশোদ্ভূত তরুণকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। 

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তার বক্তব্যে ঘটনাকে ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদ’ এর কাজ ও ইসলামকে ‘সংকটাপন্ন ধর্ম’ বলে মন্তব্য করেন। তারপরেই ফ্রান্সের উপর ক্ষোভ শুরু হয় মুসলিম বিশ্বে। বাকবিতণ্ডা শুরু হয় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান ও ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মাঝে। এক পর্যায়ে ফরাসি পণ্য বয়কটের ডাক দেয় পুরো আরব বিশ্ব। 

ঘটনার এখানেই শেষ নয়, চরমপন্থীদের সাম্প্রতিক হামলার পর ইসলামি উগ্রাবাদীদের দমাতে ৯ ডিসেম্বর নতুন আইন পাশ করে ফ্রান্স।

আর ১২ ডিসেম্বর দেশটির নিম্নকক্ষে পাশ হয় নিরাপত্তা বিল। যেখানে পুলিশের ছবি তোলা বা ভিডিও ধারণ বিষয়ে বিভিন্ন বিধি-নিষেধ রাখা হয়। 

আইন পাশ হওয়ার পর থেকেই রাস্তায় জড়ো হতে থাকে মানুষ। তাদের হাতে থাকা প্লেকার্ডে লেখা ছিল ‘আমরা ক্যামেরা বন্ধ করবোনা’। বিক্ষোভ দমাতে জলকামান ব্যবহার ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এসময় বিভিন্ন শহর থেকে দেড় শতাধিক আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করা হয়। 

২১ নভেম্বর প্যারিসের একটি স্টুডিওতে এক কৃষ্ণাঙ্গ সংগীত প্রযোজককে মারধর করে পুলিশ। সেই ভিডিও এক সপ্তাহ পর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ প্রকাশ শুরু হয়। তবে লকডাউন থাকায় রাস্তায় নামেনি মানুষজন। তারপরই আরেকটি ভিডিও সামেন আসে যেখানে দেখা যায় প্যারিসের পুলিশ একটি অভিবাসী শিবির নষ্ট করছে। 

দুই ঘটনার পর পুলিশের ভিডিও বা চিত্র ধারণের ধারা-২৪ এ সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেয় ইমানুল ম্যাক্রোঁর ক্ষমতাসীন দল এআরএম।

নাইজেরিয়ায় কৃষক হত্যা ও শিক্ষার্থী অপহরণ
কৃষক হত্যা: ২৮ নভেম্বর নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর মাইদুগুড়ির কেশোব গ্রামে কৃষকদের গলা কেটে হত্যা করে চরমপন্থী সংগঠন বোকো হারাম। প্রাথমিক তথ্যে জানা যায়, ৪৩ জন কৃষককে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে ৭০ জন ও সর্বশেষ ১১০ কৃষককে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়। 

এর আগে অক্টোবরেও পৃথক ঘটনায় মাইদুগুড়ির কাছে সেচ জমিতে কর্মরত ২২ কৃষককে একইভাবে হত্যা করা হয়। বোকো হারামের তথ্য স্থানীয় সেনা দপ্তর ও মিলিশিয়ানদের কাছে পৌঁছে দেয়ার অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরেই কৃষক, শ্রমিক ও জেলেদের লক্ষ্যবস্তু করছে দলটি।

শিক্ষার্থী অপহরণ: ১১ ডিসেম্বর দেশটির কাটসিনা রাজ্যের একটি মাধ্যমিক স্কুলে মোটরসাইকেলে করে এসে হামলা চালায় সশস্ত্র অস্ত্রধারীরা। প্রথমদিকে বাধা দেয় স্কুলের নিরাপত্তারক্ষীরা। পরবর্তীতে পুলিশ আসলে দু’পক্ষের মাঝে গোলোগুলি হয়। পালিয়ে যাওয়ার সময় অনেক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা।

ঘটনায় যৌথবাহিনী গঠন করে তল্লাশিতে নামে নাইজেরিয়ান প্রশাসন। এসময় শিক্ষার্থী অপহরণের পিছনে নিজেদের হাত আছে বলে দাবি করে বোকো হারাম। ১৭ ডিসেম্বর যৌথবাহিনীর অভিযানে ৩৪৪ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দেয়া হয়। এখনও কিছু শিক্ষার্থী অপহরণকারীদের কাছে আছে বলে জানায় কাটসিনা রাজ্যের গভর্নর আমিনু বেল্লো মাসারি।  

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)

আরও পড়ুন

Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
বিশেষ সংবাদ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত