বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ || ১১ বৈশাখ ১৪৩১ || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

বিষাক্ত মাছ, স্পর্শেই মৃত্যু

শেখ আনোয়ার

১২:২২, ২৭ এপ্রিল ২০২১

আপডেট: ১২:২৪, ২৭ এপ্রিল ২০২১

৭৭২

বিষাক্ত মাছ, স্পর্শেই মৃত্যু

দৃশ্যপট এক
লিওনার্দো মেতেই। ইতালির কিশোর। সাগর উপকূলে হাঁটু পানিতে নেমেছিলো সেদিন। হঠাৎ হাঁটুর নিচে জ্বালাপোড়া অনুভব করলো। মরিচের মতো জ্বলুনি। হাঁটুর নিচে কেটে গেছে। ফিনকি দিয়ে ছুটছে রক্তধারা। কেন এই অঘটন? ডাক্তার প্যাথলজিস্ট কেউ বুঝলেন না। সত্যি সেদিন লিওনার্দোর পায়ে সেলাই পড়েছিলো মোট ছয়টি।
 
দৃশ্যপট দুই
ভূমধ্যসাগরের পানির ওপর তেলের আস্তরণ। চুপচুপে তেল ভাসছে। এই গরমে মরে ভেসে উঠেছে অসংখ্য মাছ। মৃত্যু ভয়ে ছুটোছুটি করছে আরও অসংখ্য মাছ। কিন্তু কেন? ইতালি সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্রের নাম আইকরাম। মহাপরিচালক আটলিও রিনাল্ডির মতে, অসংখ্য মাছ এই উপসাগর থেকে পালাচ্ছে। জিব্রাল্টার প্রণালী দিয়ে উত্তর ভূমধ্যসাগরে যাচ্ছে। এসব মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বক্সফিশ, শ্রিম্প, অ্যাকাড, গোল্ড বেন্ড, গটফিশসহ আরও অনেক। সুয়েজখাল দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে একরপিওন, ট্রিপল ট্রেইল আর থ্রেডফিশ। মরে ভেসে উঠছে স্মেক ইল, ফিয়ার্স কনজার আর লিজার্ড ফিশ। এখন মাত্র শ’খানেক দেশী লিজার্ড ফিশ ছাড়া বাকি সবই মরে সাফ হয়ে গেছে। 

প্রবেশ বাহির
গবেষকরা বলেন, এসব বিরল প্রজাতির মাছ আসে প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগর থেকে। ভূমধ্যসাগরের এক চতুর্থাংশ এলাকা জুড়ে এদের বসবাস। বর্তমানে ইতালির উপকূল মৎস্য প্রজনন অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গবেষকদের মতে, ভূমধ্যসাগরের উপকূলীয় তাপ গত ত্রিশ বছরে বেড়েছে দুই ডিগ্রি। যে কারনে এসব মাছ ভয়ে পালাচ্ছে। শীতল পানির সন্ধানে ছুটোছুটি করছে। 

পা কেটেছে পচা শামুকে
তবে কি লিওনার্দোর সেদিন পচা শামুকে পা কেটেছিলো? রহস্যজনক ব্যাপারটা খোলাসা করেন জন ক্যাডি। রোমে অবস্থিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা’ (এফ.এ.ও) এর প্রধান জানান, সিসিলি দ্বীপের কাছে বেশি মাছ পাওয়া যায়। শিকারীর জালে প্রায়ই এক ধরনের শক্ত খোলসের অপরিচিত জাতের মাছ ওঠে। গায়ের রঙ ডোরাকাটা বাঘের মতো উজ্জ্বল হলুদ। এগুলোই ভয়ংকর পাফার মাছ। বিষাক্ত মাছ। এই মাছের সঙ্গে মানুষের চামড়ার স্পর্শ লাগলেই ধারালো ব্লেডের মতো সুক্ষ্মভাবে কেটে ছিঁড়ে যায় চামড়া। জ্বালাময় ঘা হয়। আর অন্য মাছ কাছে এসে স্পর্শ করলেই মারা যায়। এসব মাছ পানি থেকে অতিমাত্রায় অক্সিজেন চুষে নেয়। এদের প্রধান টার্গেট থাকে ক্যাটফিশ, পীকক র‌্যাসি, একরপিওন আর লিজার্ড ফিশ। 

কতটা বিষাক্ত মাছ?
বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত এই মাছ দেখতে অনেক সুন্দর হলেও এই মাছের চামড়াসহ পুরো শরীর বিষে ভরা। এই মাছে রয়েছে টেট্রোডটক্সিন বিষ। সংক্ষেপে যাকে টিটিএক্স বলা হয়। একটি মাত্র মাছে এতো বেশি পরিমাণ বিষ থাকে যে, শত শত প্রাণীকে এই একটি মাছের বিষ দিয়ে অবশ করে মেরে ফেলতে পারে। এই মাছের বিষ রংবিহীন বিষ। চামড়া স্পর্শের সঙ্গে সঙ্গে বিষ ঢুকে যায় শরীরে। বিষের জ্বালায় মাংসপেশীর ডায়াফ্রাম ও স্নায়ুতন্ত্র অবশ হয়ে যায়। সবশেষে শ্বাসরূদ্ধ হয়ে অনেক কষ্টে মারা যায় মানুষ। তাই এই মাছ সাগরের ডুবুরীদের কাছে যমের মতো ভয়। নতুন গবেষণায় প্রকাশ, এই মাছের পুরো শরীরে বিষ ধারণ করার অন্য কারণ রয়েছে। মাছ যেসব খাবার খায় তার সেই খাবারের ব্যাকটেরিয়া পরিশোধন কাজে এই টেট্রোডটক্সিন বিষ কাজে লাগে বলে শরীরে ব্যাপক পরিমাণে বিষ জমা করে রাখে। 

বিষাক্ত মাছ কিভাবে এলো?
কিভাবে ভূমধ্যসাগরের উপকূলে এলো এই বিষাক্ত মাছ? মেরিন গবেষক মি. ক্যাডি ব্যাখ্যা করেন- ‘সাগরের সব বাণিজ্য জাহাজের নীচেই থাকে ব্যালাষ্ট ট্যাংক। গভীর সাগরে জাহাজকে স্থিতিশীল রাখতে এই ট্যাংক ভারসাম্য হিসেবে কাজ করে। হয়তো গভীর সাগর থেকে এই বিষাক্ত মাছ উঠে এসে ট্যাংকে আশ্রয় নেয়। এরপর বাণিজ্য জাহাজের সঙ্গেই ইতালি, গ্রীস এবং ইসরাইল উপকূলে চলে আসে।’ মি. ক্যাডি মন্তব্য করেছেন, ‘অসংখ্য জাহাজের অবাধ বিচরণই এসব অঘটন আর পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী।’ তাই যে কোন সমুদ্র উপকুল, সাগর সৈকত কিংবা নদীর পানিকে নিরাপদ মনে করে যেখানে-সেখানে নামা উচিত নয়। পানিতে বর্ণচোরা এসব বিষাক্ত জীব চোখে দেখা যায় না। এ ধরনের জলীয় জীব মানুষের জীবনের জন্য মারাত্মক হয়ে থাকে।

লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank