শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১ || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

রক্তখেকো বাদুড় থেকেই কি করোনা?

শেখ আনোয়ার

১৩:৫৮, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আপডেট: ১৫:৫৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

১৮৪৮

রক্তখেকো বাদুড় থেকেই কি করোনা?

এবার বিজ্ঞানীরা চীনের গুহাগুলোতে থাকা ভ্যামপায়ার ব্যাট বা রক্তখেকো বাদুর থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করছেন। আর সেজন্যে চীনের সেই গুহাগুলো অনুসন্ধানে নামছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ দল। করোনাভাইরাস ছড়ানোর সঙ্গে সম্পর্কিত জেনেটিক প্রমাণ খুঁজবে ওই বিশেষজ্ঞ দলটি। 

হু-এর অনুসন্ধানী দলের সদস্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ পিটার দাসজ্যাক জানান, করোনাভাইরাস সম্পর্কে নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ভ্যামপায়ার ব্যাট বা রক্তচোষা বাদুর থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই উহানের সবগুলো বাদুরের গুহা খোঁজা উচিৎ। যেখান থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। তবে তিনি দৃঢ়ভাবে জানান, করোনাভাইরাস কোনও পরীক্ষাগারে তৈরি হয়নি। উল্লেখ্য, করোনার উৎপত্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে নানান অভিযোগ ও পাল্টা-অভিযোগ রয়েছে। বিশেষত, যুক্তরাষ্ট্র বহুবার চীনকে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, চীন সঠিক সময়ে ভাইরাসের তথ্য দেয়নি। অন্যদিকে চীনের দাবি, করোনাভাইরাস চীন নয় বরং অন্য কোনো দেশ থেকে ছড়িয়েছে।

প্রাণীদের ভেতর ভ্যামপায়ার ব্যাটকে পিশাচ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। রক্তচোষা এই বাদুড়ের প্রতি সবারই রয়েছে রাজ্যের বিদ্বেষ। আর থাকবে নাইবা কেনো? স্তন্যপায়ীদের ভেতরে শুধু এই বাদুড়ই গোটা জীবন রক্ত খেয়ে কাটায়। বিশেষ করে গৃহপালিত জীবজন্তুর ওপর লোভটা এদের একটু বেশিই। কারণ গৃহপালিত জীবজন্তুরা বেশির ভাগই নিরীহ হয়। অবশ্য বাগে পেলে মানুষকেও ছাড়ে না রক্তচোষা বাদুড়। বহু শতাব্দী ধরেই রক্তচোষা বাদুরকে অভিহিত করা হয়েছে অতিপ্রাকৃত বা ভৌতিক এক প্রাণীরূপে। শিল্পীরা শয়তানকে আঁকার সময় এর শরীরের সঙ্গে বাদুড়ের দু’টো পাখা জুড়ে দেন। আইরিশ লেখক, ব্রাম স্টোকারের বিখ্যাত ড্রাকুলা সিনেমাটি মুলত গড়ে উঠেছে রক্ত খাদক বাদুড়গুলোর জীবন ধারার গবেষণার মাধ্যমে। ওই সিনেমায় বাদুড়কে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা আমাদের রক্ত শীতল করে দেয়।

স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে একমাত্র উড়তে সক্ষম বাদুড়। এদের বৈজ্ঞানিক নাম জিকেলিক। যার অর্থ হাত বা ডানা। বাদুড়ের ডানা দু’টো আসলে তাদের দু’টো হাতের রূপান্তর। মেটাকারপালস ও আঙ্গুলের হাড়গুলো মিলে এক সঙ্গে ছাতার মতো গঠন তৈরি করেছে। রক্তচোষা বাদুড়গুলো এই ডানা ছড়িয়ে দিলে তা প্রায় পাঁচ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এদের সামনের দু’টো হাত পুরোটা দু’স্তর বিশিষ্ট একটি চামড়া দিয়ে ঢাকা। কাঁধের ঠিক ওপর থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি আঙ্গুলের ভেতর দিয়ে পেছনের হাঁটু পর্যন্ত সংযুক্ত এই ডানা। উড়ার সময় এই ডানার ভেতরে দিয়ে প্রবাহিত কিছু রক্তনালী গাড়ির রেডিয়েটর যন্ত্রের মতো করে ডানাগুলোকে শীতল রাখে।

প্রাণী বিজ্ঞানীরা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দু’টো প্রজাতিতে ভাগ করেছেন রক্তচোষা বাদুড়কে। মাইক্রো খিরোপটেরা এবং মেগা খিরোপটেরা। মেগা মূলত ফলমূলের রস, ফুলের মধু খেয়ে বাঁচে। মজার ব্যাপার, ফুলকে আঘাত না করেই অতি সুক্ষ্মভাবে ফুলরেণু খায় এরা। অন্যদিকে মাইক্রো প্রজাতির বাদুড় মাংসাশী হয়। পোকা-মাকড়, পিঁপড়া, মাছ, গিরগিটি, ব্যাঙ, শুঁয়োপোকা, জলজ সাপ, পাখি, ছোট ইঁদুর, এমনকি খাদ্য ঘাটতি হলে অন্য ছোট জাতের বাদুড় ধরে খেতেও মুখে অরুচি নেই এদের। এই জাতের বাদুড় হচ্ছে ভ্যামপায়ার বা রক্তচোষা বাদুড়।

এরা সাত্যি সত্যিই রক্তের স্বাদ গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। ভ্যামপায়ার ধারালো থাবা দিয়ে শিকার ধরে। এদের দেহ দশ থেকে তেরো সেন্টিমিটার এবং পা লম্বায় সাত সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকার গহীন জঙ্গলে এদের দেখা মেলে। এরা জংলি পশুপাখি এবং বড়ো বড়ো স্তন্যপায়ী প্রাণীকে আক্রমন করে। অন্য সব জাতের বাদুড়ের মতোই রক্তচোষা বাদুড় উল্টো হয়ে ঝুলে থাকে এবং এই অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে। অবাক কান্ড হলো, মরার পরও এই বাদুড় কখনো গাছ থেকে পড়ে যায় না। আর হ্যাঁ। রক্তচোষা বাদুর কিন্তু ঢক ঢক করে রক্ত গিলে খায় না। বরং চেটেপুটে ভালো করে রক্তের স্বাদ নেয়। এতো সাবধানে এরা রক্ত চুষে খায় যে, অনেক সময় আক্রমণের শিকার প্রাণীটি তা টেরই পায়না। বাদুড় আলট্রাসনিক শব্দের প্রতিধ্বনি শোনার মাধ্যমে চলাফেরা করে এবং শিকার ধরে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে এরা মানুষের চুলের মতো অতি সুক্ষ্ম বাধাও সহজেই অতিক্রম করতে পারে।

এতো রক্ত হিম করা কান্ড ঘটালেও ভ্যামপায়ার ব্যাট বা রক্তচোষা বাদুড় একদিক দিয়ে কিন্তু বেশ উপকারী। বিশেষ করে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য। গবেষকরা লক্ষ্য করেন, রক্তচোষা বাদুড়ের লালায় রয়েছে এক ধরনের ওষুধী উপাদান। যা রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে প্রবলভাবে বাঁধা দিয়ে থাকে। রক্তনালীতে রক্তের এই জমাট বাঁধার জন্যে আধুনিক যুগের মানুষের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো ভয়াবহ শারীরিক বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। এবার বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, রক্তচোষা বাদুড়ের লালাকে অচিরেই ব্যবহার উপযোগী করে মানুষের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ব্যাপকভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হতে পারে।

শেখ আনোয়ার: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক। 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank