বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১ || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

স্বপ্ন প্রতিবন্ধী আশ্রম, স্বপ্নবাজ প্রতিবন্ধী কিশোর চাকমার স্বপ্ন

কমল দাশ, চট্টগ্রাম

২৩:৪৯, ১ আগস্ট ২০২১

আপডেট: ২৩:৫৩, ১ আগস্ট ২০২১

৯২৭

স্বপ্ন প্রতিবন্ধী আশ্রম, স্বপ্নবাজ প্রতিবন্ধী কিশোর চাকমার স্বপ্ন

কিশোর চাকমা
কিশোর চাকমা

নাম কিশোর চাকমা। আমরা যাদের প্রান্তিক মানুষ বলি, যাদের বাস সীমারেখার সবচেয়ে প্রান্তে, তায় যারা আবার সংখ্যালঘুদেরও তলানিতে থাকা সংখ্যালঘু তেমনই একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক যুবক এই কিশোর চাকমা। এখানেই শেষ নয় তিনি একজন প্রতিবন্ধীও।  তাই বলে ভাববেন না যেনো আমরা এক অক্ষম, অধমের গল্প শোনাতে বসেছি। বরং আমরা আপনাদের শোনাবো প্রান্তিক এই মানুষটির স্বপ্নের কথা। কিশোর চাকমা একজন স্বপ্নবাজ প্রতিবন্ধী। 

শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জড ছিলেন না কিশোর। ২০০৬ সালে এসএসসি, ২০০৮ সালে এইচএসসি পাশের পর ২০০৯ সালে ঢাকায় পাড়ি জমান উচ্চ শিক্ষার জন্য। ঢাকাতেই একটি দুর্ঘটনায় পড়ে দুই পা হারান তিনি। হয়ে পড়েন শারিরিক প্রতিবন্ধী। কিন্তু পাহাড় বেয়ে ওঠা মানুষগুলোর দম সহজে শেষ হয়ে যায় না। এক অদম্য কিশোর চাকমার জীবনের গল্পটি বরং সেখান থেকেই শুরু হয়।  এখন লড়াইয়ের অন্য নাম কিশোর চাকমা।

কেবল নিজের লড়াইটি লড়ে যাচ্ছেন তা নয়। অন্য প্রতিবন্ধীদের জন্যও তিনি হয়ে উঠেছেন লড়াইয়ের শক্তি।

নিজ উদ্যোগে খাগড়াছড়ি  জেলার  বেতছড়ি মুখ এলাকায় রাস্তার পাশেই নিজের জায়গায় গড়ে তুলছেন তার স্বপ্নের 'স্বপ্ন প্রতিবন্ধী আশ্রম'। 

কিশোর চাকমার ভাষায়, পুঙ্গুত্ববরণ করে তিনি বুঝেছেন, এইভাবে বেঁচে থাকা কঠিন। তাই তিনি অনুভব করলেন দৃষ্টিহীন, মানসিক, বাক প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু করার তাগিদ।

আশ্রমের ভেতরেই কথা হয় কিশোর চাকমার সাথে। বললেন, "আমি শুধুমাত্র উদ্যোগ নিয়েছি কিন্তু এই উদ্যোগটি মানুষের মানবিক সহযোগিতায় চলছে আশ্রমটি।

আশ্রমে এখন ১৩/১৪ জন প্রতিবন্ধী রয়েছেন। দাতাদের অনুদানে তাদের খরচ চলে। বর্তমানে এই আশ্রমে মাসিক দাতা রয়েছেন ৬৫ জন। মাসিক সাহায্য আসে ২৭ হাজার টাকা। তাতে অবশ্য ১৪ জন প্রতিবন্ধীর ভরণ-পোষণ দুষ্কর হয়ে পড়ে। নিজের বা আশ্রমের আয় না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি চালাতে হিমশিম  খেতে হয়। 

"দীর্ঘ ৪ বছরে আমার ক্ষুদ্র এই প্রতিবন্ধী বিষয়ক কার্যক্রমকে এ পর্যন্ত আনতে পেরেছি তার কারণ হলো- নানাভাবে বহু হিতকারী পাশে দাঁড়িয়েছেন। সেসব সকল মানবতাবাদীদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা," বলেন কিশোর চাকমা। 

সরকারের সুদৃষ্টি চান তিনি। বলেন, তার সাথে মানবতাবাদী মানুষের সহযোগিতা থাকলে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীদের সচেতন, শিক্ষিতকরণ, কর্মমুখী শিক্ষা প্রশিক্ষণে দক্ষ করে তোলা ও কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি করে দেওয়ার লক্ষ্যসহ নানা উদ্দেশ্য নিয়ে স্বপ্ন  প্রতিবন্ধী আশ্রম বেঁচে থাকা ও সামনে এগুনোর পথ সুগম হবে।

"আমার বিশ্বাস একদিন আমাদের স্বপ্ন প্রতিবন্ধী সংগঠনের মাধ্যমে বহু প্রতিবন্ধীর স্থায়ী ঠিকানা হবে।"

খাগড়াছড়ির জেলার অভিবাবক বাবু কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি আশ্রম তৈরিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। এছাড়া শতরুপা চাকমা, খাগড়াছড়ির সংগঠক ও উদ্যোক্তা শাপলা ত্রিপুরা, খগেন্দ্র ত্রিপুরা, শর্মীলা লারমা,  জেলার ডিসি মহোদয়সহ সমাজের অসংখ্য মানবিক গুণ সম্পন্ন ব্যাক্তিবর্গ সহযোগিতা করেছেন, জানান কিশোর চাকমা।

আশ্রমের সাথে নানাভাবে সব সময় সহযোগিতার সম্পর্কে থাকা বাংলাদেশ বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য ও খাগড়াছড়ি  জেলা মহিলা যুগ্ম সম্পাদক রুপনা চাকমা বলেন, পাহাড়ের  প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে সচেতন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে, তাদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে, কারিগরি  প্রশিক্ষণের দক্ষতায় দক্ষ করে কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টির লক্ষ্যে কিশোর চাকমা এক মহতি উদ্যোগ নিয়েছেন, যার নাম স্বপ্ন  প্রতিবন্ধী আশ্রম। 

তিনি  আরো বলেন, কিশোর চাকমা এমন একজন স্বপ্নবাজ যে প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখে পাহাড়ের প্রতিটি  প্রতিবন্ধী একদিন শিক্ষা দীক্ষায় এগুবে, কর্মসংস্থান পাবে, সর্বোপরি পরিবারের  বোঝা না হয়ে সমাজের দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। 

স্থানীয়রা বলেন, এতোদিন ধরে তিনি এই আশ্রমটি পরিচালনা করে আসছেন অনেক কষ্ট করে। পাহাড়ের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কল্যাণে একটি  প্রতিবন্ধী বান্ধব প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণে তার এই ক্ষুদ্র  প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ। মানুষের সহযোগিতা আর ভালোবাসা-আশীর্বাদে এই  প্রতিষ্ঠানটি এখনও ঠিকে রয়েছে এবং আলোর পথে এগুচ্ছে । 

সামাজিক মাধ্যমে পোস্টের মাধ্যেমে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে কিশোর চাকমাকে। তবুও দমে যাননি, তার নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকেছেন। 

কিশোর চাকমা ব্যাক্তিগত জীবনে বিবাহিত। তার একটি ছেলে সন্তান আছে। তার স্ত্রীও তার পাশে থেকে প্রতিনিয়ত সাহস এবং সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

কিশোর বলেন, "কেউ আমাদের প্রতিবন্ধীদের পাশে থাকতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন বেতছড়ি মুখ, কমলছড়ি ইউনিয়ন, খাগড়াছড়ি সদর, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা, সহযোগিতার জন্য মোবাইল নং- ০১৮৪৮২১৬৭৭২।"

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank