শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১ || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ভুতুড়ে কাঁকড়া

শেখ আনোয়ার

১২:৩৬, ২৯ জুন ২০২১

আপডেট: ১২:৩৭, ২৯ জুন ২০২১

৬৪১

ভুতুড়ে কাঁকড়া

নাম তার ঘোস্ট ক্রাব। ভুতুড়ে কাঁকড়া। ভূতের মত সব কাজ-কর্ম তাদের। আর তাই লোকে বলে ভুতুড়ে কাঁকড়া। এরা গোঙ্গায় না। গর্জে ওঠে না। তবে এমন এক শব্দ করে, যা শুনলে শত্রুর পিলে চমকে যাবে। রক্ত হিম হয়ে আসবে। এক ধরনের গা শিউরানো কর্কশ বিচ্ছিরি শব্দ করে এরা। বিশেষ করে অনাহুত কাউকে দেখলে। আর এ শব্দই হচ্ছে শত্রুর জন্য বিপদ সঙ্গেত। তফাৎ যাও!

তবে শব্দ তুলে গায়ের রোম খাড়া করে দিলেও বাস্তবে কিন্তু মোটে বীর পালোয়ান নয় ভুতুড়ে কাঁকড়া। হবে কি করে? গায়ে-গতরে তো মাত্র এত্তটুকুন। দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে মাত্র দুই কি তিন ইঞ্চি। তবে শত্রুর চোখে ধুলো দেয়ার বেলায় খুব ওস্তাদ। বেগতিক দেখলে খুব তাড়াতাড়ি গর্তে লুকোতে জানে এরা। আর এদের রোমশ গায়ের রংটাও সৈকতের বালির রঙের মতো। এই ভুতুরেগুলো বুঁদ হয়ে কোথাও পড়ে থাকলেও সহজে দেখা যায় না। দেখা গেলেই বা কি? শত্রুকে মোটেও পরোয়া করে না এরা। বেগতিক দেখলে এত দ্রুত গা ঢাকা দেবে, খুঁজে পাওয়াই যাবে না। ধরতেই পারবে না শত্রুর চোখ। যেন এই আছে, এই নেই। যাদের খুব ভূতের ভয়। তারা যদি নির্জন সাগর সৈকতে যায়। তাহলেই  হয়েছে তার। ঠিক ঠিকই টের পাবে সে, কেমন কর্কশ আর বিচ্ছিরি ঘর ঘর শব্দ বেরোয় ওদের মুখ থেকে। 

এমন শব্দ কেন করে ভুতুড়ে কাঁকড়া? অতি সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা ভুতুড়ে কাঁকড়ার শব্দ করা দাঁত কিভাবে কাজ করে তার রহস্য উদ্ধার করে ভিডিও প্রকাশ করেছেন। প্রকাশিত ভিডিওতে ভুতুড়ে কাঁকড়ার এই দাঁতের কাজ লক্ষ্য করে বিজ্ঞানীরা অবাক হন। এই দাঁত খাবার হজমে সহায়তা করে। কাঁকড়ার পেটের ভিতরে থাকে এই দাঁত। এদের মুখে কোন দাঁত নেই। ঠিক যেমন চিংড়িরও মুখে কোন দাঁত থাকে না। দাঁত থাকে পেটের মধ্যে। সানদিয়াগোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী জেনিফার টেলর নিউজউইককে বলেন, ‘ভুতুড়ে কাঁকড়ার পেটের ভেতর গ্যাস জমা হয়। এই দাঁত দিয়ে ঘষে ঘষে কাঁকড়া তার পেটের ভেতর শক্ত খাবার নরম করে, হজম করে। কুকুর যেমন শত্রুর মোকাবেলায় ঘেউ ঘেউ শব্দ করে ঠিক তেমনি এই কাঁকড়ার দাঁত আবার শত্রুকে ভয় দেখানোর মতো শব্দ তরঙ্গ তুলে যোগাযোগ কাজে ব্যবহার করে।’ আটলান্টিক মহাসাগর উপকূল পাড়ের এই ভুতুরড়ে কাঁকড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ওসিপোড কোয়াড্রাটা। এই কাঁকড়ার পুরুষ ও নারী উভয়ে একইভাবে এই শব্দ ব্যবহার করে থাকে। বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘এই দাঁত বহুমুখী কাজ করে থাকে। এই দাঁত একদিকে পেটের হজম কাজে ব্যবহার করে অন্যদিকে যোগাযোগের কাজেও ব্যবহার করে। 

বিজ্ঞানীরা জানান, ‘স্রষ্টা খুব যত্ন করে এই ভূতুড়ে কাঁকড়া সৃষ্টি করেছেন। মানুষ যেমন আজকাল বিভিন্ন ধরনের কাজ করে এমন অনেক প্রযুক্তি যন্ত্র গ্যাজেট বের করেছে। সুইস আর্মির চাকুর কথাই ধরা যাক। এই চাকু নানা রকম বিপদাপদ থেকে মুক্তি দিতে বহু ধরনের কাজে সহায়তা দেয়। মানুষের নাক যেমন নিঃশ্বাস নেওয়া ও গন্ধ শোকার কাজ করে থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে, ‘স্রষ্টা নিজেই বহুমুখী কাজ করে থাকেন। স্রষ্টার সেরা সৃষ্টি মানুষের মধ্যে বহুমুখী কাজের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের উপমার কোন শেষ নেই। তেমনি এই ভূতুড়ে কাঁকড়া স্রষ্টার সৃষ্টিশীল হাতের একটি নিদর্শন মাত্র।’  

ভুতুড়ে কাঁকড়ার অবশ্য গুণও রয়েছে। এরা ভূতের মতো নিশাচর ঠিকই। সারারাত ধরে আটলান্টিকের উপকূলবর্তী সৈকতগুলো চষে বেড়ায় তাও ঠিক। কিন্তু শিকার করে খায় ছোট ছোট প্রজাতির কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক আর জীবজন্তুর উচ্ছিষ্ট বা দেহাবশেষ। আর এতে দিনের বেলা সাগর সৈকতে যে আবর্জনা জমা হয়, রাতে তা পুরোটাই খেয়ে সাবাড় করে ফেলে ওরা। আদতে এরা ঝাড়ুদারের গুরুদায়িত্ব পালন করে চলেছে নিয়মিত। সাগর উপকূলের পরিবেশ কলুষমুক্ত রাখতে ভূতুড়ে কাঁকড়ার অবদান সত্যি ফেলনা নয়।
  
লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank