অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

পরীক্ষামূলক পথে নামলো মেট্রোরেল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ০১:৪১ পিএম, ১১ মে ২০২১ মঙ্গলবার   আপডেট: ০৪:৪৯ পিএম, ১১ মে ২০২১ মঙ্গলবার

ট্রেনটি চালিয়ে বাইরে আধঘণ্টা রেখে আবার ওয়ার্কশপে নিয়ে যাওয়া হয়

ট্রেনটি চালিয়ে বাইরে আধঘণ্টা রেখে আবার ওয়ার্কশপে নিয়ে যাওয়া হয়

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রাজধানীর উত্তরার ডিপোর ভেতরে চালিয়ে দেখা হলো মেট্রোরেল। মঙ্গলবার (১১ মে) দুপুর ১১টা ৫৩ মিনিটে ওয়ার্কশপ থেকে চালিয়ে কোচ আনলোডিং জোনে নিয়ে আসা হয়। 

ট্রেনটি চালিয়ে বাইরে আধঘণ্টা রেখে আবার ওয়ার্কশপে নিয়ে যাওয়া হয়। ট্রেনটি ওয়ার্কশপ থেকে বের হলে সবাই হাততালি দিয়ে স্বাগত জানান।

এ উপলক্ষে ডিপোতে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন,  'মেট্রোরেল এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। আরেক সেট ট্রেন মোংলা বন্দরে এসে পৌঁছেছে।মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের সার্বিক গড় অগ্রগতি ৬৩ দশমিক ২৬ শতাংশ।'

সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ চালিত ট্রেনটি ৬টি বগির সেট নিয়ে ট্রেনটি ওয়ার্কশপ থেকে প্রায় ৫০০ মিটার পাড়ি দেয়। জাপানের কাওয়াসাকি কোম্পানির এক চালক ট্রেনটি চালিয়ে দেখান।

ডিপোর একটি স্থানে ট্রেনটি থামানো হলে সড়ক পরিবহন বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি,জাইকার প্রধান প্রতিনিধি ইউহো হায়াকাওয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ট্রেনটির ভেতরে ঘুরে দেখেন।

**মেট্রোরেলের আরও ছয় বগি মোংলায়

**মেট্রোরেলের কোচগুলো যাচ্ছে দিয়াবাড়ির ডিপোতে

****মেট্রোরেলের প্রথম সেট পৌঁছেছে ঢাকায়

****মেট্রোরেলের আদ্যোপান্ত, ডেডলাইন জয়ে ছুটছে কর্তৃপক্ষ

অনুষ্ঠানে সেতুমন্ত্রী জানান, প্রথম ট্রেনটি আগস্ট মাসে ডিপোর বাইরে উড়ালপথে তোলা হবে। সেখানে প্রথমে পারফরম্যান্স টেস্ট, তারপর সমন্বিত পরীক্ষামূলক চলাচল, তারপর পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষামূলক চলাচল হবে।

ট্রেনটি বিদ্যুৎ দিয়ে কীভাবে চলেছে- এ প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, যে রেললাইনে ট্রেন চলেছে তার ওপর বিদ্যুতের তার আছে। সেটির সঙ্গে সংযোগ করা হয় ট্রেনটির।

ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক বলেছেন, ‘টেস্ট রানের সময় ট্রেনটি ডিপোর ভেতরের সব রেললাইনের ওপর দিয়ে চালানো হবে এবং তারপর ভায়াডাক্টেরের (রেল সেতু) ওপর দিয়েও চালানো হবে। এবং পরীক্ষামূলক যাত্রার সময় মানুষ উঁচু দালানের ছাদ থেকে এই কার্যক্রমটি দেখতে পাবেন’।

গত ২১ এপ্রিল মেট্রোট্রেনের প্রথম সেটটি জাপান থেকে ঢাকায় এসে পৌছায়, যা ফার্স্ট ট্র্যাক করা সরকারি প্রকল্পটির জন্য একটি বড় ধরনের মাইলফলক। দ্বিতীয় সেটটি রবিবার মোংলা বন্দরে এসে পৌঁছেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে ২৪ মের মধ্যে এ পরীক্ষামূলক যাত্রার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, চলতি মাসের শেষের দিকে দেশের প্রথম মেট্রোরেল সেবার টেস্ট রান হতে পারে।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) অধীনে ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প (লাইন-৬) বাস্তবায়িত হচ্ছে। কোচগুলো জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়াম কোম্পানি লিমিটেড তৈরি করছে। বাংলাদেশে এই কোচ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। 

কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-০৮-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবিএম আরিফুর রহমান জানান, মেট্রোরেলের লাইন-৬ কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-০৮-এর আওতায় ২৪টি যাত্রীবাহী রেল কোচ আমদানি করা হবে। প্রতিটি কোচে ছয়টি বগি থাকবে। এমন একটি প্যাকেজে শুল্কসহ প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। ২০২২ সালের মধ্যে ২৪টি জাহাজে মোট ১৪৪টি বগি মোংলা বন্দর থেকে খালাস হবে।

দেখতে কেমন হবে মেট্রোরেলের ট্রেন সেট

মেট্রোরেল ট্রেন সেট জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রঙে রঙ করা থাকবে। ট্রেন সেটের বডি এবং ভিতরের কাঠামোর সবকিছুই স্টেনলেস স্টিলে তৈরি করা হচ্ছে। কোচে ব্যবহৃত গ্লাসগুলো থাকবে বুলেটপ্রুফ। এই ট্রেনের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় এক শ কিলোমিটার।

ঢাকার যানজট নিরসনসহ নগরবাসীর যাতায়াত আরামদায়ক, দ্রুততর ও নির্বিঘ্ন করতে এই মেট্রোরেল প্রকল্পের মাধ্যমে সব কটি পয়েন্টে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রত্যেকটি ট্রেনে থাকবে ৬টি করে কার বা কামরা। একেকটি কোচে ১ হাজার ৭৩৮ জন যাত্রী যেতে পারবেন। চলাচল শুরু হলে উভয় দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহনে সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের।

যাত্রী যাতে দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে পারেন সে ব্যবস্থও থাকবে। প্রতিটি কোচের দুদিকে চারটি দরজা থাকবে। ট্রেনে সিটগুলো লম্বালম্বি পাতা থাকবে, প্রতিটি কোচে প্রতিবন্ধী কিংবা বয়ঃবৃদ্ধদের যারা বসতে পারবেন না তাদের জন্য থাকবে দুটি করে হুইলচেয়ার।

প্রতিটি ট্রেনে ৬টি কোচের মধ্যে একটি কোচ শুধুমাত্র নারী যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হবে। বাকিগুলোতে নারী পুরুষ উভয়ই একসঙ্গে যেতে পারবেন।