অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

গাছ কাটার বিপরীতে বক্তব্য

বর্ষা এলেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১ হাজার গাছ লাগানো হবে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ০৬:১৫ পিএম, ৮ মে ২০২১ শনিবার   আপডেট: ১২:৫০ এএম, ৯ মে ২০২১ রোববার

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কেটে ফেলার সমালোচনার মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, আসছে বর্ষা মৌসুমে এখানে প্রায় ১ হাজার গাছ লাগানো হবে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে মহাপরিকল্পনার মধ্যেই এই গাছগুলো লাগানোর বিষয়টি রয়েছে। ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের পরিচালক ও সরকারের যুগ্মসচিব মো. হাবিবুল ইসলামের বরাত দিয়ে সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস এই খবর দিচ্ছে। 
 
হাবিবুল ইসলাম বলেছেন, সারা বছর যাতে উদ্যানের কোন না কোন গাছে ফুল থাকে, মানুষ এখানে প্রবেশ করে যাতে একটা আমেজ পায় যে, সে একটা বেড়ানোর জয়গায় এসেছে। এভাবে পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপন কার্যক্রম বিন্যাস করা হয়েছে। 

আধুনিক নগর উপযোগী সবুজের আবহে আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তোলা ও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে ‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ’ (৩য় পর্যায়)’ শীর্ষক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে বলে তিনি জানান।

উদ্যানের কিছু গাছ কাটা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খণ্ডিত তথ্য প্রচারিত হওয়ায় অনেকের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে বলেও মত দেন হাবিবুল ইসলাম।

প্রকল্পের বিস্তারিত ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনে বিভিন্ন সময়ের আন্দোলন ও ঘটনাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও বিশ্ববাসীর নিকট তুলে ধরার উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইতোমধ্যে শিখাচিরন্তন, স্বাধীনতা স্তম্ভ ও ভুগর্ভস্থ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রভৃতি নির্মাণ করা হয়েছে।' 
 
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার পরিবেশ নেই। উদ্যানের একদিক দিয়ে ঢুকে অন্য দিক দিয়ে নিরাপদে বের হয়ে যাওয়ার পরিবেশও নেই। এখানে ভবঘুরে ও নানা রকমের মতলববাজ লোকের আনাগোনা। আমরা চাচ্ছি একটা মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে পুরো উদ্যানটাকে একটা আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে।'

যার মধ্যে রয়েছে:

- পাকিস্তানি শাসনবিরোধী ২৩ বছরের মুক্তিসংগ্রাম ও ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত ভাস্কর্য স্থাপন 
- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন 
- পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে ভাস্কর্য স্থাপন 
- ইন্দিরা মঞ্চ নির্মাণ 
- ওয়াটার বডি ও ফাউন্টেইন নির্মাণ 
- ভূগর্ভস্থ ৫০০ গাড়ীর কার পার্কিং ও 
- শিশু পার্ক নির্মাণসহ বিভিন্ন নির্মাণ কাজ। 

এই মহাকর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে উদ্যানের কিছু গাছ কাটা হচ্ছে বলে দাবি এই সরকারি কর্মকর্তার। 
   
তিনি আরও বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস সংরক্ষণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে আন্তর্জাতিক মানের স্মৃতিকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে যাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম আমাদের গৌরবোজ্জল মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসের জানতে পারে। রেসকোর্স ময়দানে প্রথম গাছ লাগিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটিকে উদ্যান হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, উল্লেখ করেন তিনি।

সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে একটি মহল নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলেও দাবি তার। 

আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কেটে ফেলার বিরুদ্ধে সোচ্চার পরিবেশবাদীদের উদ্দেশ্যে হাবিবুল ইসলামের প্রশ্ন, "ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের স্থান ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সারেন্ডার করবার স্মৃতি মুছে ফেলার উদ্দেশ্যে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি হয়ে এই উদ্যানের ১৫ একর জায়গা জুড়ে ১৯৭৯ সালে শিশু পার্ক নির্মাণ করেন। পরিবেশবাদীরা তখন প্রশ্ন তোলেনি কেন?"

সমালোচকদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, "একটা কথা বারবার বলা হচ্ছে যে এখানে খাবারের দোকান করা হচ্ছে। এখানে কোন রুটি বা ভাতের দোকান হচ্ছে না। উদ্যানে ঘুরতে এসে এখানকার নানান স্থাপনা দেখতে দেখতে একজন মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন, তার একটু পানির পিপাসা পেতে পারে বা তার টয়লেট ফ্যাসিলিটির প্রয়োজন হতে পারে। তখন যাতে তিনি একটা জায়গায় বসে বিশ্রাম নিতে পারেন। এজন্য পুরো উদ্যানে ৭টি ‘ফুড কিওস্ক’ তৈরি করা হবে। যেখানে পানি ও হালকা স্ন্যাক্সের ব্যবস্থা থাকবে। এর পেছন দিকে মহিলা এবং পুরুষদের জন্য পৃথক টয়লেট ফ্যাসিলিটি থাকবে।"