অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

চিরদিনের, চিরপথের রবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১২:৩৪ পিএম, ৮ মে ২০২১ শনিবার   আপডেট: ১২:৫৪ পিএম, ৮ মে ২০২১ শনিবার

আজ পঁচিশে বৈশাখ, রবীন্দ্রজয়ন্তী

আজ পঁচিশে বৈশাখ, রবীন্দ্রজয়ন্তী

আজি হতে শতবর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি
      কৌতূহলভরে–
   আজি হতে শতবর্ষ পরে।
আজি নববসন্তের প্রভাতের আনন্দের
      লেশমাত্র ভাগ–
আজিকার কোনো ফুল, বিহঙ্গের কোনো গান,
   আজিকার কোনো রক্তরাগ
অনুরাগে সিক্ত করি পারিব না পাঠাইতে
      তোমাদের করে
   আজি হতে শতবর্ষ পরে।

আজ পঁচিশে বৈশাখ, রবীন্দ্রজয়ন্তী। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের দিনে কোলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মেছিলেন বাংলার কবি, বাঙালির কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি ও কর্মকাণ্ডকে ঘিরেই গড়ে ওঠে  ভিন্ন এক মানসজগত। যে রবীন্দ্রমানসের রূপ সর্বজনীন, ব্যাপকতা বিশ্বজনীন এবং তা সবসময় সমসাময়িক। তাই রবীন্দ্র-জন্মের এতো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তার সৃষ্টি সদা উপলব্ধির। 

রবীন্দ্রনাথ বেঁচেছেন ৮০ বছর, কিন্তু এর মধ্যে কাজই করেছেন ৬৪ বছর। আর এই সময়কালে বিপুল সৃষ্টিসম্ভারে তিনি বাঙালির মানসজগতের দিগবলয় বদলে দিয়েছেন। কী গল্পে, কী উপন্যাসে, কী কবিতায়, কী সঙ্গীতে, কী নাটকে, কী চিত্রকলায় - তিনি পথ করে করে হেঁটেছেন।   

সাহিত্য কি তা না বোঝা মানুষও কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গানটি ঠিকই প্রাণে তুলে নেন। গানই তাকে আপন করেছে। তার গানে মিশে গেছে বাংলার রুপ, রস, গন্ধে। 

শৈশবে গৃহশিক্ষকের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়। এরপর তিনি কলকাতা নর্মাল স্কুলে ভর্তি হন। তিনি পড়াশোনার জন্য ১৭ বছর বয়সে বিলাত যান। সেখানে ব্রাইটন পাবলিক স্কুল ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

মাত্র ১৪ বছর বয়সে তার প্রথম কবিতার বই বনফুল প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ সাহিত্য জীবনে তিনি অসংখ্য কবিতা, গান, উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনা করেন। তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ হলো মানসী, সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী। তার বিখ্যাত নাটক হলো ডাকঘর, বিসর্জন, রক্তকরবী, অচলায়তন। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস হলো গোরা, নৌকাডুবি, শেষের কবিতা, চোখের বালি। তাঁর রচিত গানের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যিক হিসেবে তিনি এ পুরস্কারটি লাভ করেন ।

সমাজসেবা ও দেশপ্রেম: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বোলপুরে ‘শান্তিনিকেতন’ নামক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। তার প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি ‘নাইট’ উপাধি বর্জন করে নিবিড় দেশপ্রেমের পরিচয় দেন।

একসময় উচ্চারণভঙ্গী ও স্বর প্রক্ষেপণের ধরণ পাল্টে রবীন্দ্রসঙ্গীত নতুন প্রাণ পেয়েছিলো। সেভাবেই, বিশ্বায়নের যুগে রবীন্দ্রনাথকে বাঁচিয়ে রাখতে তাকে নতুন নতুন রূপে আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যেতে চান রবীভক্তরা।

বিত্ত, বৈভব আর প্রাচুর্যের স্বাচ্ছন্দ্য রবীন্দ্রনাথকে কখনোই মানুষের কাছ থেকে দূরে রাখতে পারেনি। সৃষ্টিবোধই বরাবর দ্ব্যার্থহীন থেকেছে তার কাছে। মিলেছে সমস্ত আশ্রয়! তাই তিনি চিরদিনের, চিরপথের রবি !

যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে,

      সব সংগীত গেছে ইঙ্গিতে থামিয়া,

যদিও সঙ্গী নাহি অনন্ত অম্বরে,

      যদিও ক্লান্তি আসিছে অঙ্গ নামিয়া,

মহা আশঙ্কা জপিছে মৌন মন্তরে,

      দিক্‌-দিগন্ত অবগুণ্ঠনে ঢাকা—

           তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,

                এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।