অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

বাংলাদেশে কেন এতো বেশি বজ্রপাত হয়?

অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:২৭ পিএম, ৬ মে ২০২৫ মঙ্গলবার  

বাংলাদেশে বজ্রপাত বাড়ছে। একইসঙ্গে বজ্রপাতে মৃত্যুর হারও বাংলাদেশে অনেক বেশি। গতবছর বাংলাদেশে বজ্রপাতে ২৯৭ জন নিহত হয়েছেন। এ বছরও মৌসুমের শুরুতেই বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা আতঙ্ক ছড়িয়েছে। গত এপ্রিল মাসে বজ্রপাতে দেশে মারা গেছেন ৩০ জন।

মঙ্গলবার (৬ মে) কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্য একসঙ্গে মারা গেছেন নবম শ্রেণির তিন ছাত্রী। এছাড়া মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে ভেনিজুয়েলা এবং ব্রাজিলে। কিন্তু সেখানকার তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর ঘটনা অনেক বেশি। 

দক্ষিণ এশিয়ার যে দেশগুলোয় বজ্রপাতের প্রবণতা বেশি, তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা, ভারতের কয়েকটি অংশে এবং নেপালেও বজ্রপাত হয়। তবে এসব দেশের তুলনায়ও বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রবণতা অনেক বেশি। দেশের আয়তনের তুলনায়ও বাংলাদেশে বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যাও অনেক বেশি।

বজ্রপাতে বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ।

এছাড়া, খোলা স্থানে মানুষের কাজ করাও বজ্রপাতে মৃত্যুর একটি বড় কারণ। বিশেষ করে হাওড়াঞ্চলে খোলা জায়গায় মানুষজন কাজ করার কারণে সেখানে হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটছে।

এছাড়া, গত কয়েক দশকে বড় বড় গাছ কেটে ফেলার কারণেও হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটছে মত বিশেষজ্ঞদের।

বাংলাদেশে বজ্রপাত বেশি হওয়ার কারণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বজ্রপাতের মূল কারণ দেশটির ভৌগলিক অবস্থান। বাংলাদেশের একদিকে বঙ্গোপসাগর, এরপরই ভারত মহাসাগর। সেখান থেকে গরম আর আর্দ্র বাতাস আসছে। আবার উত্তরে রয়েছে পাহাড়ি এলাকা, কিছু দূরেই হিমালয় রয়েছে, যেখান থেকে ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকছে। এই দুইটা বাতাসের সংমিশ্রণ বজ্রপাতের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে।

আবহাওয়াবিদদের পর্যবেক্ষণ আরও বলছে, বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর পশ্চিমাঞ্চল বজ্রপাত-প্রবণ এলাকাগুলোর অন্যতম। গ্রীষ্মকালে এ অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি থাকায় এ পরিস্থিতির তৈরি হয়।

আবহাওয়াবিদদের মতে, যেসব এলাকায় গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে সেসব এলাকায় যে মেঘের সৃষ্টি হয়, সেখান থেকেই বজ্রপাতের সম্ভাবনা থাকে।

কোনো কোনো গবেষকদের মতে, তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বাড়লে বজ্রপাতের সম্ভাবনা ১০% বেড়ে যায়।

আকাশ থেকে মাটিতে ছাড়াই আকাশ থেকে আকাশে বা মেঘ থেকে মেঘে অথবা মেঘের মধ্যেও বজ্রপাত হয়ে থাকে।
আবহাওয়াবিদরা জানান, শীতের পর বঙ্গোপসাগর থেকে উষ্ণ বাতাস আসতে শুরু করে, অন্যদিকে হিমালয় থেকে আসে ঠাণ্ডা বাতাস। দক্ষিণের গরম আর উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাসে অস্থিতিশীল বাতাস তৈরি হয় আর এর থেকে তৈরি হয় বজ্র মেঘের। এরকম একটি মেঘের সঙ্গে আরেকটি মেঘের ঘর্ষণে বজ্রের তৈরি হয়। এরকম উচ্চ ভোল্টের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ যখন মাটিতে নেমে আসে, তখন সবচেয়ে কাছে যা পায়, তাতেই আঘাত করে।