অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

শব্দদুষণে গাছের ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদে

সাতরং ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৩৫ পিএম, ১ মে ২০২১ শনিবার   আপডেট: ১২:৩৬ পিএম, ১ মে ২০২১ শনিবার

শব্দদুষণ নিয়ে উদ্বেগের কথা শোনা যায়, কিন্তু সে উদ্বেগ শুধু মানুষকে ঘিরেই। তবে নতুন গবেষণা বলছে, শব্দদুষণ কেবল মানুষের নয়, গাছেরও ক্ষতি করে। আর এতে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গাছের বড় হওয়া, বনায়ন ও গাছের বৈচিত্র্যময়তা।

নির্মাণ কাজ, শিল্প-কারখান, সড়ক ও পাইপলাইন বসানোর মতো অবকাঠামো তৈরির কারণে মনুষ্যসৃষ্ট শব্দদুষণ গেলো শতাব্দীর মধ্যম ভাগ থেকে শুরু হয়ে ক্রমেই বেড়ে চলেছে, আর জীববিজ্ঞানীরা বলছেন এতে পশু-পাখি ও গাছেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েই চলেছে।

এর আগের গবেষণায় এই শব্দদুষণে গাছের ক্ষতি বলতে গবেষকরা জানতেন, অতিরিক্ত শব্দের কারণে গাছ থেকে পোকা-মাকড়, পাখ-পাখালি সরে যায়, ফলে গাছের বেড়ে ওঠার প্রাকৃতিক কিছু প্রক্রিয়া ব্যহত হয়। কিন্তু এবার গবেষকরা এর দীর্ঘমেয়াদে কুফলগুলো চিহ্নিত করেছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা নিউ মেক্সিকোতে ১৫ বছর ধরে এই গবেষণাটি চালিয়েছেন। তারা গাছের কাছে কৃত্রিমভাবে উচ্চমাত্রার শব্দ তৈরি করে দেখেছেন, যে স্থানে শব্দ হচ্ছে সেখানকার পাইন গাছগুলো অপেক্ষাকৃত নিরব অংশের গাছগুলোর চেয়ে ৭৫ শতাংশ কম চারা দিচ্ছে।   

এরপর তারা কোনো কোনো অংশে কৃত্রিম শব্দদুষণ কমিয়ে দিলেন এবং দেখলেন, গাছের চারার সংখ্যা তেমন বাড়ছে না। 

গবেষকদের পূর্বানুমান ছিলো পিনিয়ন কিংবা জুনিপার গাছগুলোর চারা বেড়ে যাবে কারণ শব্দ কমিয়ে দিলে সেখানে পাখিরা ফিরবে তাই। কিন্তু তার পরিবর্তে গবেষকদের নজরে পড়লো পাখিরা ফিরলো কি ফিরলো না, তা নয় শব্দদুষণের কারণে গাছগুলোর চারা উৎপাদনের ক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদেই কমে যাচ্ছে। 

ক্যালিফোর্নিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক ও এই গবেষণাপত্রের যৌথ লেখক ক্লিনটন ফ্রান্সিস বলেন, আমরা বলতে চাই, শব্দদুষণ কমিয়ে ফেললেই যে গাছগুলো তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে তা নয়।

অপর লেখক জেনিফার ফিলিপস বলছিলেন, তারা দেখেছেন শব্দদুষণ বন্ধ করা হলেও একবার যখন সেখান থেকে পাখ-পাখালি চলে যেতে শুরু করে সেটাই অব্যাহত থাকে। বিশেষ করে ফুলের মধু আরোহনকারী পাখিগুলো বেশ স্পর্শকাতর। আর একবার কোনো স্থান ছাড়লে, সেখানটা ফের বেছে নিতে পাখিরা যথেষ্ট সময় নেয়। 

আমরা ঠিক জানিই না কতটা সময় তারা নিতে পারে, বলেন ফিলিপস। 

অবকাঠামো নির্মাণের নামে প্রকৃতিকে ধ্বংস করা হচ্ছে, সেটা মেনে নিয়েই পরিকল্পনাবিদরা কিছু কিছু বিষয়ে আজকাল সতর্ক থাকছেন। কিন্তু তাদের মাথায় শব্দদুষণের এই ক্ষতিগ্রস্ততার দিকটি কখনোই থাকে না, যা থাকা প্রয়োজন, বলেন গবেষণাবিদরা। 

তারা মনে করেন, শব্দ সৃষ্টি ও কৃত্রিম আলোর কারণে পাখ-পাখির অভিবাসন প্রকট হয়ে ওঠে। যা খুব সহজে, কিংবা কখনোই আর স্বাভাবিক পর্যায়ে ফেরে না। 

গবেষকদের দাবি, এই গবেষণার পর সরকারসমূহের এই অনুধাবন হবে যে, জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় শব্দদুষণের বিষয়টিও গুরুত্ব দিতে হবে।