অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

প্যারিস চুক্তিতে জো বাইডেন, এদিকে কোলে-পীঠে বড় হচ্ছে বাঘ বাইডেন!

লেখা ও ছবি: কমল দাশ

প্রকাশিত: ০৮:৩৪ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০২১ মঙ্গলবার  

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জো বাইডেন এক ব্যাঘ্র শাবক। গত ১৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার বাঘ দম্পতি রাজ-জয়ার কোল আলো করে জন্ম নেয় তিনটি শাবক। জন্মের পরপরই বাচ্চাদের দুধ পান করানো বন্ধ করে দেয় বাঘিনী জয়া। দুটি শাবক মারা গেলে একটিকে বাঁচানোর দায়িত্ব নেয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। নাম দেয় জো বাইডেন। শাবকটিকে বাঘিনীর হিংস্রতা থেকে বাঁচিয়ে আলাদা করে রাখা হয়৷ 

কেমন ছিল শাবকটিকে বড় করার প্রক্রিয়া? কেন তার নাম রাখা হলো জো বাইডেন! জানতে চাইলে বাইডেনের প্রধান তত্বাবধায়ক ডা. শুভ অপরাজেয় বাংলাকে বললেন, "সাধারণত চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়ার এক মাস পর আমরা প্রাণীর নাম দেই। বাঘ শাবকটির জন্ম হয় নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে। আর ডিসেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয় নিশ্চিত হয়। তার নির্বাচনে একটি ওয়াদা ছিল নির্বাচনে জয়ী হলে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে আসবেন তিনি এবং ফিরেও এসেছেন। এছাড়া জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বাঘের সংখ্যা দিন-দিন কমে আসছে। তাই তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাঘটির নাম ‘জো বাইডেন’ রাখা হয়েছে।"


 
বড় করা প্রক্রিয়া সর্ম্পকে তিনি বলেন, "মায়ের কাছ থেকে আলাদা রেখে বাঘের শাবকটিকে লালন পালন করা মোটেও সহজ ছিল না। ছোট শিশুর মতই ফিডারে দুধ খাওয়ানো হতো। বাজারে পাওয়া বিড়ালের দুধ দিয়ে শুরু হলেও পরে ছাগলের দুধের সাথে অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে খাওয়ানো হতো। ঠিক মানব শিশুর মতই মানুষের সংস্পর্শে রেখে ওটিকে বড় করা হয়েছে। 

ঘড়ির কাটা ধরে দুধ খাওয়ানো, বাঘ শাবকটির সাথে খেলাধুলা করা এই সব কিছু মিলেই একটা নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বড় করা হয়েছে। একপর্যায়ে মাংস খাওয়ানোর অভ্যাস করা হয় শাবকটিকে। যার ফলে দ্রতই শারীরিক পরিবর্তন আসতে শুরু করে শাবকটির। এভাবেই ধীরে ধীরে সব বিপদের আশংকা থেকে মুক্ত হয়ে এখন সুস্থ, স্বাভাবিক, সজীব ও চঞ্চল জীবন পেয়েছে  জো বাইডেন।

বয়স এখন পাঁচ মাসের কিছু বেশী। ওজন প্রায় ২২ কেজি। দিনে ৬০০ মিলিলিটার দুধের পাশাপাশি এখন খাওয়ানো হচ্ছে দেড় কেজি করে মাংস।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঘের খাঁচাটি সম্প্রসারণ করে সাড়ে সাত হাজার বর্গফুট করা হয়েছে। এতে বাঘ  যেমন ভালো পরিবেশ পাবে, তেমনি দর্শনার্থীরাও  খোলামেলা জায়গা পাবে। এই সম্প্রসারিত খাঁচায় বর্তমানে রাখা হয়েছে জো বাইডেনকে। 

কেন ওটিকে খাঁচায় স্থানান্তরিত করা হলো? এমন প্রশ্নে ডাঃ শুভ বলেন, "বাইডেনের বয়স এখন পাঁচ মাসের কিছুটা বেশি। এতদিন সেটি মানুষের সংস্পর্শে থেকে মানুষকে আপন করে নিচ্ছিলো। এখন এর সহজাত প্রবৃত্তিতে ফিরে যেতে হবে। খাঁচায় থাকা অন্য বাঘেদের সাথে থেকে তার ভেতর যেন প্রকৃতিগত স্বাভাবিক আচরণে পরিবর্তন আসে, সেই লক্ষ্যেই খাঁচায় রাখা হয়েছে।

মে মাসের ১৪ তারিখ ৬ মাস বয়স পূর্ণ হবে বাঘ শাবকটির। তখন দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে অন্য বাঘেদের মতো খাবার দেওয়া হবে। একই সাথে তখন থেকে ওটিকে খাঁচার বাইরে বের করা বা মানুষের সংস্পর্শে আনা যাবে না।

ছয় মাস বয়স থেকে বাঘ ছানাটির স্বাভাবিক আচরণগত পরিবর্তনের ফলে হিংস্রতা বেড়ে গিয়ে যে কোন দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকবে বলে মনে করেন ডাঃ শুভ। 

করোনা মহামারী শেষ হলে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আগত দর্শনার্থীরা মুগ্ধতা নিয়ে দেখবে মানুষের কোলে পিঠে বড় হওয়া এক বাঘ। দেখবে অন্যান্য বাঘের মতই খাঁচায় বন্দী 'জো বাইডেন'।