লালমনিরহাটে ধানক্ষেতে নেক ব্লাস্ট সংক্রমণ, দুশ্চিন্তায় কৃষক!
হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট
প্রকাশিত: ১০:৫৫ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০২১ শুক্রবার আপডেট: ১০:৫৭ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০২১ শুক্রবার
নেকব্লাস্ট আক্রান্ত ধান
উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে বোরো ধান পাকতে শুরু করেছে। সোনার ধান ঘরে তোলার স্বপ্নে বিভোর কৃষক। এমন সময় ধানের ক্ষেতে বাসা বেঁধেছে ‘নেক ব্লাস্ট’। হুমকির মুখে পড়েছে ধানের ফলন ঘরে তোলা। ফলে দুশ্চিন্তায় রয়েছে চাষিরা।
শনিবার (২৩এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার আবাদি জমির একটা বড় অংশে আঘাত হেনেছে নেক ব্লাস্ট। ধানের এই সংক্রামক রোগ দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে পার্শ্ববর্তী ক্ষেতে। পাকা ধানের শীষগুলো ধীরে ধীরে হালকা সাদা ও পরে চিটায় (চাল বিহীন) পরিণত হচ্ছে। বিভিন্ন কীটনাশক ও ছত্রাক নাশক ব্যবহার করেও নেক ব্লাস্টের প্রতিকার করতে পারছেন না কৃষকরা।
কৃষকরা জানালের, আগামী দু-সপ্তাহের মধ্যে জেলার অধিকাংশ এলাকার পাকা বোরো ধান মাড়াইয়ের পর্যায়ে যাবে। এই সময়ে নেক ব্লাস্ট সংক্রমণ হওয়ায় ধানের ভালো ফলন নিয়ে শঙ্কায় তারা।
কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা এলাকার কৃষক দুলাল মিয়া বলেন, আমার ধান প্রায় পেকে গেছে। ধানের গাছ দেখে ভালো ফলনও আশা করছি। কিন্তু ক্ষেতের কিছু কিছু অংশে ব্লাস্ট সংক্রমণ হওয়ায় কিছুটা দুঃশ্চিন্তায় আছি।
জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ গড্ডিমারী গ্রামের কৃষক আবেদ আলী বলেন, আমার ধান খুব ভালো হয়েছিল। হঠাৎ ব্লাস্ট ধরে ক্ষেতের অনেকাংশের ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। কয়েক প্রকার কিটনাশক ব্যবহার করেও ভালো ফল পাচ্ছি না।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সৈয়দা সিফাত জাহান জানান, এ বছর কালীগঞ্জ উপজেলায় বোরো আবাদ হয়েছে ১৩১৫০হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত জমির পরিমাণ ২.৪৫ হেক্টর। দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডা, এছাড়া অতিরিক্ত নাইট্রোজেন জাতীয় সার ব্যবহারের কারনে এ রোগ বেড়ে যায়। জমিতে পানি রাখতে এবং ট্রাইসাইক্লাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রয়োগের কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
প্রতি শতক জমিতে ছত্রাকনাশকের সাথে ২লিটার পানি ব্যবহার, বিকেলে স্প্রে ও পরিস্কার পানি ব্যবহার করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ব্রি ধান ২৮ এর আবাদ নিরুৎসাহিত করে ব্রি ধান ৭৪ ও ৮৫ আবাদের জন্য বলা হচ্ছে, বলেন এই কৃষিবিদ।
এ মৌসুমে ধানে নেক ব্লাস্ট সংক্রমণ বিষয়ে জানতে চাইলে খামার বাড়ি লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শামীম আশরাফ বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে জেলার পাঁচ উপজেলায় সাতচল্লিশ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে চাষাবাদ হয়েছে সাতচল্লিশ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে (লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা ৪৫০ হেক্টর বেশি)।
তথ্যমতে, চাষাবাদ কৃত ধানে ব্লাস্ট সংক্রমণ হয়েছে ৬.৯ হেক্টর এর মধ্যে বিভিন্ন ছত্রাক নাশক ব্যবহার করে ৪.৫ হেক্টর জমির ব্লাস্ট দমন করা হয়েছে। চলতি মৌসুমের নেক ব্লাস্ট সংক্রমণ ঠেকাতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের নানা ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান শামীম আশরাফ।