অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

অভিনব কৌশলে ব্যবসায়ী উদ্ধার, অপহরণ চক্রের একজন গ্রেফতার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, পাবনা

প্রকাশিত: ০১:০৭ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০২১ শনিবার  

অপহরণের ঘটনায় আটক হওয়া মিরাজুল ইসলাম শেখ।

অপহরণের ঘটনায় আটক হওয়া মিরাজুল ইসলাম শেখ।

ব্যবসায়ী শাহাদাৎ মোল্লাকে (৪০) অপহরণ করে নিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা। সাথে থাকা ৫২ হাজার টাকা নেয়ার পর বিকালে চাওয়া হয় এক লাখ টাকা। সে টাকা দেয়ার কথা বলে বিকাশ এজেন্ট সেজে অভিযান চালায় পাবনা পুলিশ। 

অভিযানে শাহাদাৎ মোল্লাকে উদ্ধার করা হয় এবং আটক করা জয় ঘটনায় মূল হোতা মিরাজুল ইসলাম শেখ (২৮) নামের এক যুবককে। আটককৃত মিরাজুল শেখ সদর উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়নের শালাইপুর গ্রামের আব্দুর রশিদ শেখের ছেলে ও গয়েশপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন মুতাই’র নাতি। তাকে আটকের পর শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে কারাগারে পাঠানো হয়।

অপহৃত শাহাদাৎ এর স্ত্রী আলেয়া বেগমের উপস্থিত বুদ্ধি ও পাবনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খানের দ্রুত পদক্ষেপে এই উদ্ধার কাজ সফল হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ।
 
পাবনার পুলিশ সুপারের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানা যায়, বুধবার (১৩) এপ্রিল বিকেল ৪ টার দিকে এক বয়স্ক মহিলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এসে কান্নাকাটি শুরু করে, এ সময় মহিলা সব ঘটনা খুলে বলে। বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মাসুদ আলমকে নির্দেশনা দেন তিনি। এসপির নির্দেশনা পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম, ডিবির এসআই আবু আব্দুল্লাহ জাহিদকে ডেকে নেন এবং দ্রুত ডিবি টিম রেডি করে ফোর্স পাঠিয়ে দেন। 

পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন সকালে বাড়ী হতে ৫২ হাজার টাকা নিয়ে বের হয় হাজিরহাট যাবার জন্য। মাঝপথে দুর্বুত্তদের হাতে অপহরণের শিকার হন। তারা ফোন করে আরো ১ লক্ষ টাকা দাবী করে। 

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, বিকাশের দোকানদার সেজে অপহরণকারীদের সাথে কথা হয় আমাদের, তারা একটি বিকাশ নাম্বার দিয়ে বলে এক লক্ষ টাকা না দিলে তাকে হত্যা করা হবে। 

মাসুদ আলম আরো বলেন, লোকেশন ট্র্যাকিং করে ডিবি নিয়ে টিম রওনা হই আমরা । নিশ্চিত হওয়া যায় বিকাশ নাম্বারের মালিকই মুলহোতা। তার বাড়ী পাবনা সদর থানার গয়েশপুর ইউনিয়নের হামিদপুরে, তথ্য সঠিক হওয়ার সাথে সাথে অভিযান চালাই। গাড়ী রেখে মোটর সাইকেল নিয়ে সেখানে পৌঁছে দেখা যায় গ্রামের শেষ মাথায় প্রায় বিশ বিঘার প্রাচীন পুকুরের ওপারে ভিকটিমকে আটকে রাখা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম আরো জানান, অপহরণকারীরা আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও ভিকটিম শাহাদাৎ মোল্লাকে ফেলে পালিয়ে যায়। বিশাল পুকুরের কারনেই অপহরণকারী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। অপহৃত শাহাদাৎ কে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। 

অপহৃত ব্যাবসায়ী শাহাদৎ মোল্লার স্ত্রী আলেয়া বেগম পাবনার এসপিকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, পুলিশ সুপার স্যার না হলে আমার স্বামীকে পেতাম না। স্বামীকে তারা মেরে ফেলত। স্যারের এই উপকারের কৃতজ্ঞতা আজীবন মনে রাখব। 

পাবনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বলেন, এই ঘটনার সাথে জড়িত মূলহোতাকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেওয়ার পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরো জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় অপহরণকারীরা দীর্ঘদিন যাবৎ অপরাধ করে চলছে। এই চক্রটি টার্গেট অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের অপহরণ করে, মহিলা দিয়ে আপত্তিকর ছবি তুলে চাঁদাবাজি করা এই চক্রের কাজ। এই চক্রের সবাইকে ধরতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি অচিরেই তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পারব।