সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় কঠোর বিধিনিষেধে দেশ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ১২:৩৪ পিএম, ১৪ এপ্রিল ২০২১ বুধবার আপডেট: ০১:৩৭ পিএম, ১৪ এপ্রিল ২০২১ বুধবার
সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় কঠোর বিধিনিষেধে দেশ
দেশে গত মার্চ থেকে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হচ্ছে। দৈনিক শনাক্ত ও মৃত্যুতে নিয়মিত রেকর্ড হচ্ছে। এই দ্বিতীয় ঢেউয়ের তীব্রতা মোকাবেলায় বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন বুধবার (১৪ এপ্রিল) থেকে দেশ হাঁটছে কঠোর বিধিনিষিধের বেড়াজালে।
সংক্রমণ রোধে গত ৫ এপ্রিল থেকে চলাচল ও সার্বিক কাজে যে নিষেধাজ্ঞা চলেছে, তাতে মহামারি পরিস্থিতিতে কোনও প্রভাব না পড়ায় সরকারের এই পদক্ষেপ। ১৪ এপ্রিলের ভোর ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত যা বলবৎ থাকবে।
বন্ধ যেসব
সরকারি,আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস,বন্ধ। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থল এলাকায় থাকতে হবে।
সব ধরনের পরিবহন, সড়ক, নৌ, রেলপথ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ।
শপিংমলসহ অন্যসব দোকান বন্ধ।
খোলা যেসব
সীমিত পরিসরে ব্যাংক ও শেয়ারবাজার।
বিমান,সমুদ্র ও স্থলবন্দর এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিস।
শিল্প-কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজ ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের আনা-নেয়ায় দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের।
অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া যেমন- ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনা, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকারে বাড়ির বের হওয়া যাবে।
টিকা কার্ড থাকলে টিকাগ্রহণের জন্য যাওয়া যাবে। জরুরি প্রয়োজনে বের হতে হলে থাকতে হবে মুভমেন্ড পাসও।
খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শুধুমাত্র বিক্রি বা সরবরাহ (online/ Takeway) করা যাবে।
কাঁচা বাজার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ এবং দেশের অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রেখে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সীমিত পরিসরে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
পণ্য পরিবহন,উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবা খোলা আছে।
আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা খোলা। এসবের মধ্যে রয়েছে- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) খাদ্যশস্য ও খাদ্য দ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, স্থলবন্দর, নৌবন্দর ও সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থা, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
বোরো ধান কাটার জরুরি প্রয়োজনে কৃষিশ্রমিক পরিবহনের ব্যবস্থা করা যাবে।
মসজিদে তারাবিহ ও ওয়াক্তের নামাজ আদায় করা যাবে তবে তাতে অংশ নিতে পারবেন খতিব, ইমাম, হাফেজ, মুয়াজ্জিন ও খাদেমসহ ২০ জন।
২০২০ সালে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। প্রথমে ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হলেও পরে কয়েক দফায় বাড়িয়ে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ছিল। প্রথমে জরুরি সেবা ছাড়া প্রায় সবকিছু বন্ধ থাকলেও একপর্যায়ে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানাসহ কিছু কার্যক্রম চালু করা হয়।
গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞায় দূরপাল্লার গণপরিবহন ছাড়া প্রায় সবকিছুই চলেছে। সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন যেমন চলছে, তেমনি দোকানপাট এবং শপিংমলও সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা রাখা হয়। শিল্পকলকারখানা এবং সরকারি-বেসরকারি অফিসও খোলা থাকে।
এমন ঢিলেঢালা পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। বরং সংক্রমণ ও মৃত্যুর সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত আছে।