অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

যুক্তরাষ্ট্রে ৬ বাংলাদেশির মৃত্যুতে পাবনার বাড়িতে শোকের মাতম

রিজভী রাইসুল ইসলাম, পাবনা

প্রকাশিত: ০৪:২৯ পিএম, ৬ এপ্রিল ২০২১ মঙ্গলবার  

পাবনা শহরতলীর দোহারপাড়ার মেয়ে আইরিন ইসলাম মেরীর সাথে প্রায় ২৫ বছর আগে বিয়ে হয় পুরান ঢাকার তৌহিদুল ইসলামের। বিয়ের পর থেকেই আমেরীকা প্রবাসী এই দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ছিল সুখী পরিবার। দু’বছর আগে পাবনা থেকে মা আলতাফুন্নেসাকে ডালাসে নিয়ে যান মেরী।

করোনার কারণে আটকে যাওয়ার পর ৭ এপ্রিল দেশে ফিরে আসার ছিল আলতাফুন্নেসার। তাকে বিদায় দিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসায় ডেকে আনা হয় আইরিন-তৌহিদুল কন্যা পারভিন তৌহিদকে। কে জানতো নানিকে বিদায় দেয়ার কালে পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে গোটা পরিবার। 

সোমবার (৫ এপ্রিল) ডালাসের অ্যালেন সিটির বাসা থেকে পরিবারটির ৬ সদস্যের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করে আত্মহত্যা করেছে আইরিন-তৌহিদ দম্পতির দুই ছেলে ফারহান ও তানভীর।

নিহতরা হলেন, পাবনার দোহার পাড়ার মৃত আবুল মোসলেম শেখের স্ত্রী আলতাফুন্নেসা (৭৭) , তার মেয়ে আইরিন ইসলাম মেরী (৫৫), তার স্বামী তৌহিদুল ইসলাম (৫৬) , মেয়ে পারভিন তৌহিদ ( ১৯) ও দুই ছেলে তানভীর তৌহিদ (২১) ও ফারহান তৌহিদ (১৯)।

মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) সকালে স্বজনদের মৃত্যুর সংবাদ পাবনার বাড়িতে পৌঁছানোর পর শুরু হয়েছে শোকের মাতম। স্বজনরা জানান, ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ফারহান, তানভীর। পরিবারেও নেই তেমন কোন সংকট। হতাশার কারণে পরিবারের সবাইকে হত্যা করে তারা আত্মহত্যা করেছে এমন কথা মানতে পারছেন না কেউ।

আকস্মিক এ মৃত্যুর খবরে সকাল থেকেই বাড়িতে ভীড় জমিয়েছেন স্বজন প্রতিবেশীরা। তাদের কান্নার রোলে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। এমন মৃত্যুকে রহস্যজনক বলে, সুষ্ঠু তদন্তও দাবী করেছেন তারা।

নিহত আলতাফুন্নেসার বড় ছেলে আরিফুর রহমান আলফা জানান, আমার বোন কেবল তার পরিবারই নয়, আমাদেরও সবকিছু দেখভাল করতো। তার নিজের সংসারে কখনোই অশান্তি ছিলো না। ছেলে মেয়েরাও প্রতিভাবান, মেধাবী ও ভদ্র। তারা বাবা মায়ের পাশাপাশি সেখানে বেড়াতে যাওয়া তাদের নানীরও ( আমার মা) যত্ন নিত। এমন ছেলেরা বাড়ির সবাইকে হত্যা করেছে তা কিছুতেই বিশ্বস করতে পারছি না।

নিহত আলতাফুন্নেসার ছোট ছেলে আবুল কালাম আজাদ হিরণ বলেন, মা গত বছর আমেরিকায় বোনের বাড়িতে গিয়েছেন। করোনার কারণে আটকে গিয়েছিলেন। আগামী ০৭ এপ্রিল তার পাবনায় ফেরার কথা ছিলো। পরিবারের সবাই মিলে মাকে বিদায় জানাতে টেক্সাস ইউনিভার্সিটি থেকে আমার ভাগ্নি পারভিনকেও নিয়ে এসেছিল । কে জানত তাদের এমন মৃত্যু হবে। হিরণ আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকারের নিকট আমার অনুরোধ বিষয়টি যেন সুষ্ঠু তদন্তের ব্যবস্থা করা হয়।

স্বজনরা জানান, নিউইয়র্ক থেকে নিহত আলতাফুন্নেসার বড় ছেলে টেক্সাস পৌঁছলে তাদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।