অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ভোমরা বন্দরে অচলাবস্থার ৫ম দিন, রাজস্ব ক্ষতি ১৫ কোটি টাকা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ০১:২৮ পিএম, ৬ এপ্রিল ২০২১ মঙ্গলবার  

টানা ৫দিন ধরে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে ট্রাক থেকে পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রায় ১৫ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে ব্যবসায়ী ও লেবার নেতাদের বিবাদে এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে দুই পক্ষ থেকে দুরকম বক্তব্য পাওয়া গেছে।  

ভোমরা স্থলবন্দরের হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ট্রাক প্রতি লেবার ঠিকাদাররা তাদের বিল দেন ৩৮০ টাকা। প্রায় ৪০ টন পণ্য খালাসে এই টাকা কিছুই না। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় শ্রমিকদের। এতদিন ট্রাক প্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা বকশিস দিতেন ব্যবসায়ীরা। এই বখশিসের টাকা বন্ধ করে দেওয়াতে শ্রমিকেরা গত বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) থেকে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত থেকে একটি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করলে তা ছাড় করানোর সময় লেবার বিল ও রাজস্ব একই সাথে পরিশোধ করতে হয়। সরকারের কাছ থেকে বিল তুলে নিয়ে লেবারদের বিল পরিশোধ করেন লেবার ঠিকাদার। এরপর পণ্য খালাসের সময় আবারও বিল দিতে হয় লেবারদের। ফলে একই পণ্যে দুইবার লোড-আনলোড বিল গুনতে হয় আমদানিকারকদের। যে কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ব্যবসায়ীরা আমদানি-রপ্তানিকৃত পণ্য খালাসে লেবারদের ডাকছেন না।

হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের আরেকাংশের সভাপতি পরিতোষ ঘোষ জানান, ভোমরা স্থলবন্দরে ১০ জন করে ১২০টি দল রয়েছে। শ্রমিক হিসেবে সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ২০০ জন। পণ্যভেদে ট্রাক প্রতি ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকা পায় শ্রমিকরা। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ ট্রাক পণ্য লোড-আনলোড হয়। ফলে বখশিস না পেলে একজন শ্রমিক ৩০০ টাকার বেশি পাবেননা। আর সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে যে টাকা তিনি পাবেন, তা দিয়ে তার সংসারও চলবেনা।

স্থলবন্দরের শ্রমিক আলাওল ইসলাম জানান, সারাদিন খেটে-খুটে ৫০০-৬০০ টাকা পাওয়া যায়। এখন শোনা যাচ্ছে, মালিকরা (ব্যবসায়ীরা) বখশিস দেবেনা। তাহলে সংসার চলবে কীভাবে।

ভোমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারি পরিচালক মাহমুদুল হাসান জানান, সরকার নির্ধারিত ৬০ টাকা ২০ পয়সা হারে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কর্তন করা হয়। অন্যদিকে টেন্ডারকৃত লেবারদের জন্য পরিশোধ করা হয় ২৭ টাকা ৭৪ পয়সা। কিন্তু এই টাকা লেবাররা পান কিনা তা নিশ্চিত করবেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। ৪০ টনের একটি ট্রাক থেকে লেবারদের পাওয়ার কথা ১ হাজার ৮০ টাকা। অথচ তারা পান মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানান, ঢাকাস্থ ড্রপ কমনিকেশন কোম্পানী লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠান বন্দরে লেবার নিয়োগের ঠিকাদার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিল। অথচ সেই প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী সোহরাব হোসেন গত ৫-৭ মাস পূর্বে সাতক্ষীরার এক জনপ্রতিনিধির ছেলের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দেয়।

এরপর গত ৩ মার্চ বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এক চিঠিতে ব্যবসায়ীদেরকে অবগত করেন যে, ১ এপ্রিল থেকে ডাবল লেবার বিল কার্যকর করা হবে। এ উপলক্ষে গত ২৩ মার্চ বাংলাদেশ স্থলবন্দর কৃর্তপক্ষের সচিবের উপস্থিতিতে ও বন্দরের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে একটি কার্যকরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিষয়টি মিমাংসা হওয়া পর্যন্ত ওই আদেশ চালু না করার জন্য সচিব, জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেন ব্যবসায়ীরা।

এছাড়া ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার জন্য লিখিতভাবে অনুরোধ জানান তারা। তারপরও ডাবল বিল চালু করা হয়। যাতে প্রতি ট্রাকে শুধুমাত্র লেবার সংক্রান্ত ব্যয় হবে ১০ হাজার ৯২০ টাকা। যা বাংলাদেশের আর কোন বন্দরে নেই।

বিষয়টি সম্পর্কে ভোমরা স্থলবন্দর আমদানী ও রপ্তানীকারক এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো: আবু হাসান জানান, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরটি বাংলাদেশে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এই বন্দর থেকে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা আয় করে থাকে। অথচ ব্যবসায়ী হয়েও শান্তিতে ব্যবসা করতে পারছি না। তিনি আরও জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পণ্য খালাসের জন্য আমাদের লেবার সরবরাহ না করে বন্দরের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে আমরা আমদানীকারকগণ বাইরের লেবার সংগ্রহ করে ট্রাক প্রতি দুই হাজার টাকা দিয়ে পণ্য খালাস করাচ্ছি। ফলে পণ্য খালাসে আমারা দুই বার লেবার বিল পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছি। বিভিন্ন সময়ে এর প্রতিবাদ করেও কোন প্রতিকার পাইনি। । তাদের হাত থেকে বন্দরকে বাঁচানোর স্বার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানান জন্য ভোমরা স্থল বন্দরের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলামের সেল ফোনে একাধিক বার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিফ করেননি।